OrdinaryITPostAd

ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪

 

বাংলাদেশে ইতালি স্পন্সর ভিসার চাহিদা অনেক বেশি। তাই সবাই ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়। যারা ইতালি স্পন্সর ভিসা নিয়ে ইতালি যেতে চান তাদের জন্য একটি দারুণ সুখবর দিলো ইতালি সরকার। ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এর ক্লিক ডে খুব শীঘ্রই ঘোষণা করবে ইতালি সরকার। তাই ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এর আলোকে ইতালি স্পন্সর ভিসা কখন আসবে তার আপডেট, কিভাবে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সময় কত তা নিয়ে সামগ্রিক আলোচনা করব। তাই যারা ইতালি স্পন্সর ভিসা ২০২৪ এর মাধ্যমে ইতালিতে কাজের জন্য যেতে চান তারা আজকের আর্টিকেলটি পড়ুন। 



আর্টিকেল সূচিপত্র

  1. ইতালি স্পন্সর ভিসা মানে কি
  2. ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ফরম
  3. ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের সময়
  4. ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন
  5. স্পন্সর ভিসায় ইতালি যেতে কত টাকা লাগে
  6. স্পন্সর ভিসায় ইতালিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি
  7. ইতালি স্পন্সর ভিসায় বেতন কত
  8. ইতালি সিজনাল ভিসা আবেদনের সময়
  9. ইতালি সিজনাল ভিসা আবেদনের নিয়ম 
  10. ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন
  11. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর 
  12. লেখকের মন্তব্য

১.ইতালি স্পন্সর ভিসা মানে কি

ইতালিতে স্পন্সর ভিসায় কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য অনেকেই আগ্রহী থাকেন। অনেকে আবার এই ভিসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন না। তাই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা মানে কি তা নিয়ে আলোচনা করব যাতে করে সকলে স্পন্সর ভিসা সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পারে এবং ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ খুব সহজেই করতে পারে।

স্পন্সর মানে হলো পৃষ্ঠপোষক, জামিন বা কোনো প্রস্তাবের উত্থাপক। ইতালীর কোনো নাগরিক, প্রতিষ্ঠান কিংবা ইতালী বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি কোনো উদ্দেশ্যে বিদেশী কোনো নাগরিককে ইতালীতে প্রবেশের জন্য নিজ দায়িত্বে জামিন হয়ে ভিসা প্রদান করে তাহলে তাকে ইতালি স্পন্সর ভিসা বলে। সাধারণত ভ্রমণ, শিক্ষা, ব্যবসাজনিত ভ্রমন, চিকিৎসা কিংবা চাকরির উদ্দেশ্যে স্পন্সর ভিসা প্রদান করা হয়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরি বা অন্যান্য কাজের জন্য ইতালিতে স্পন্সর ভিসায় অনেক লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর হাজার হাজার লোক ইতালিতে স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে যায় এবং ভালো বেতনে চাকরি করে ইতালি স্পন্সর ভিসার স্পন্সর বা গ্যারেন্টর নিরোগকৃত ব্যক্তিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে। তবে গ্যারেন্টরকে অবশ্যই ইতালির একজন আইনী বাসিন্দা হতে হবে। ইতালি স্পন্সর ভিসার বিশেষত্ব হলো এই ভিসা কোনো একজন ইতালিয়ান নাগরিকের দ্বারা স্পন্সর হবে এবং ভিসার যাবতীয় খরচ উক্ত গ্যারেন্টর প্রদান করবেন। সেই সাথে নিয়োগকৃত কর্মীর নিরাপত্তার নিশ্চয়তাও নিরোধকারী গ্যারেন্টর দিয়ে থাকেন। স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে ইতালি গেলে ১ থেকে দুই বছর অবস্থান করা যাবে। তবে এই মেয়াদ পরবর্তীতে বাড়ানো যাবে। মেয়দ বৃদ্ধি করে সর্বোচ্চ ৫ বছর ইতালিতে থাকা যাবে। এবং কাজ করা যাবে। 

কাজের ভিসা বাদে অন্যান্য উদ্দেশ্য যেমন ভ্রমন কিংবা ইতালিতে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্যও স্পন্সর ভিসা ব্যবহার করা যায়। এক্ষেত্রে প্রথম আত্মীয় : বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, সন্তান কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্য ইতালির নাগরিক হলে তাদের দ্বারা স্পন্সর ভিসা গ্রহন করা যাবে। এক্ষেত্রে জামিন হবে ইতালিন নাগরিকত্ব পাওয়া আত্মীয়। নাগরিকত্ব পাওয়ার উদ্দেশ্য ইতালি স্পন্সর ভিসায় ইতালি গেলে এই ভিসার মেয়াদ আজীবন হতে পারে এবং ভ্রমনকারী গ্যারেন্টরের সাহায্যে ইতালির নাগরিকত্ব নিতে পারবে।

২.ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ফরম

ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ অনুযায়ী আবেদনের সময় একটি আবেদন ফর্ম পূরন করে তা জমা দিতে হয়। ফর্মটি সঠিকভাবে, নিয়মঅনুযায়ী পূরণ করতে না পারলে আবেদন গ্রহন  হবে না এবং নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। তাই সঠিকভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করার জন্য আর্টিকেলের এই অংশটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। 

আবেদন ফর্ম এ যেসব তথ্য দিতে হবে : 
প্রথমেই আবেদন ফর্ম ডাউনলোড করতে হবে। আবেদন ফর্ম ডাউনলোড লিংক https://visa.vfsglobal.com/bgd/en/ita/apply-visa
এরপর এটি পূরণ করতে হবে। 
  • প্রথমেই স্যারনেম বা পদবি লিখতে হবে৷ এক্ষেত্রে পরিবারের দেওয়া নাম ও পদবি লিখতে হবে।
  • এরপর স্যারনেম এ্যাট বার্থ দিতে হবে, তারপর ফার্স্ট নেম দিতে হবে। কারো যদি নামের দুইটি অংশ থাকে তাহলে তাকে ২ নম্বর অপশন অর্থাৎ স্যারনেম এ্যাট বার্থ বাদ দিতে হবে। এই অপশনটি বাদ দিয়ে নামের প্রথম অংশ এবং পদবি লিখতে হবে। 
  • নামের পর জন্ম তারিখ দিতে হবে। সঠিক এবং নির্ভুলভাবে জন্মতারিখ দিতে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট এ যে তারিখ দেওয়া আছে সেইটা প্রদান করতে হবে। এরপর জন্মস্থান দিতে হবে। এখানে মূলত স্বাভাবিকভাবে জেলা, থানা বা যে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করতে হবে। অনেকে আছে যারা পিতার পৈতৃক আবাস ছেড়ে অন্য এলাকায় বা অন্য দেশে গিয়ে শিশু জন্মগ্রহন করে থাকে। তাই এখানে সঠিক জন্মস্থান এবং এরপরের অপশনটিতে যে দেশে জন্ম হয়েছে তা দিতে হবে। 
  • এরপরের অপশনটিতে আবেদনকারীর জাতীয়তা দিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে যদি কেউ ইতালিতে যেতে চায় তবে তার জাতীয়তা অবশ্যই বাংলাদেশী হতে হবে।
  • এরপরের অপশনটিতে লিঙ্গ সিলেক্ট করতে হবে। এখানে মহিলা এবং পুরুষ এই দুইটি অপশন থাকবে। এরপরের অপশনটিতে বৈবাহিক অবস্থা দিতে হবে, অর্থাৎ বিবাহিত, অবিবাহিত, বিধবা, ডিভোর্সী, সেপারেটেড নাকি অন্য কিছু তা দিতে হবে।
  • উপরোক্ত তথ্যসমূহ যদি কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে একই হয়ে থাকে অর্থাৎ আবেদনকারী ব্যক্তিটি যে স্থানে জন্মগ্রহণ করেছে সেই স্থানের ঠিকানা প্রদান করেন তাহলে ঠিক থাকবে। আর যদি ব্যক্তির জন্মস্থান এবং বর্তমান ঠিকানা একই না হয়ে থাকে তাহলে ১০/১১ নম্বর অপশন পূরণ করতে হবে। আর যদি ১০/১১ নম্বর অপশনের প্রয়োজন না হয় তাহলে N/A ( Not Applicable) সিলেক্ট করতে হবে।
  • এরপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অপশন হচ্ছে ট্রাভেল ডকুমেন্টস এর টাইপ নির্ধারণ। ১২ নম্বর অপশনে পাসপোর্টের টাইপ দিতে হবে। এখানে সাধারণ, অফিসিয়াল, কুটনৈতিক, স্পেশাল ইত্যাদি ধরণ দেওয়া থাকবে। এখান থেকে সাধারণ আবেদনকারীদের সাধারণ ( অর্ডিনারী পাসপোর্ট) সিলেক্ট করতে হবে। এরপর নাম্বার অফ ট্রাভেল ডকুমেন্টস এর ঘরে পাসপোর্ট এর নাম্বার দিতে হবে। তারপরের অপশনে পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ, কার দ্বারা পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে তার নাম এবং পাসপোর্টটির কতদিন পর্যন্ত মেয়াদ আছে তা দিতে হবে। এরপরের ধাপে আবেদনকারীর বাসার ঠিকানা দিতে হবে ( পাসপোর্টে যে ঠিকানা দেওয়া আছে সেই ঠিকানা) এবং ইমেইল এ্যাড্রেস দিতে হবে। তারপর মোবাইল নাম্বার দিতে হবে। 
  • এরপর ১৭ নম্বর অপশনে আবেদনকারী যদি নিজের দেশ বাদে অন্য কোনো দেশে অবস্থানরত থাকেন তাহলে Yes আর যদি নিজ দেশে বাদে অন্য কোথাও অবস্থান না করে থাকেন তাহলে No সিলেক্ট করতে হবে।
  • ১৮ নম্বর অপশনে আবেদনকারীর পেশা উল্লেখ করতে হবে। এখানে পাসপোর্টের উল্লেখ করা পেশাটিই দিতে হবে। 
  • ১৯ নম্বর অপশনে আবেদনকারীর স্পন্সর বা ভিসা প্রদানকারী কোম্পানির মালিকের ঠিকানা ও তথ্য প্রদান করতে হবে। স্পন্সর ভিসার ক্ষেত্রে এই অপশনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • ২০ নম্বর অপশনে ট্রাভেলের উদ্দেশ্য দিতে হবে। স্পন্সর ওয়ার্ক ভিসার ক্ষেত্রে এখানে Salaried employment অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।
  • ২১ নাম্বার অপশনে ইতালির কোন জায়গায় (শহর,কোম্পানির ঠিকানা) যাবেন তার ঠিকানা দিতে হবে। এটা সার্কুলারে উল্লেখ করা থাকে। তারপরের অপশনে আবেদনকারীর গন্তব্য শহরটি সেনজেনভুক্ত কি না তা দিতে হবে। সেনজেন এলাকাভুক্ত দেশের তালিকায় যেহেতু ইতালি রয়েছে সেহেতু ইতালিতে আবেদনকারীকে এই অপশনটি পূরণ করতে হবে।
  • ২৩ নম্বর অপশনে কতবার এন্ট্রি করবেন তা দিতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় সাধারনত একবারই এন্ট্রি হয়, তাই এখানে ১ দিতে হবে।
  • এরপর কয় তারিখে ইতালিতে প্রবেশ করবেন তা দিতে হবে। এই তারিখটি সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব নয় কেননা ভিসা প্রস্তুত হওয়ার পূর্বেই এই আবেদনটি করা হচ্ছে। তাই আবেদন ফর্ম পূরণে ১ /২ মাস পরের যেকোনো একটি তারিখ দিলেই হবে এখানে।
  • আবেদন ফর্মের ২৬- ২৮ নম্বর অপশনে স্পন্সর বা গ্যারান্টরের তথ্য প্রদান করতে হবে যেমন : স্পন্সরের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল আইডি,  হোস্ট কোম্পানির ঠিকানা এবং স্পন্সর কতৃক আবেদনকারীর ভ্রমনের খরচ প্রদানের ধরন ( ক্যাশ, চেক, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদি)। 
  • ২৯-৩০ নম্বর অপশনে আবেদনকারীর কোনো নিকটআত্মীয় বা পরিবারের কেউ ইতালিতে বা ইউরোপে স্থায়ী বাসিন্দা হলে তার তথ্য দিতে হবে। যদি কেউ না থেকে থাকে তাহলে এখানে N/A দিতে হবে।
  • ৩১ নাম্বার অপশনে আবেদনকারী যে ঠিকানা হতে আবেদন করছেন এবং কত তারিখে আবেদন করছেন তা দিতে হবে।
  • সবশেষে ৩২ নাম্বার অপশনে সাইন দিতে হবে।
  • এরপর তিন নাম্বার পৃষ্ঠায় গিয়ে পুনরায় সাইন করতে হবে এবং তারিখ দিতে হবে। তাহলেই আবেদন ফর্ম পূরণ হয়ে যাবে। 

৩.ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের সময়

ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এর সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত সার্কুলারে ইতালি স্পন্সর ভিসার ক্লিক ডে ঘোষণা করেছে ইতালি সরকার। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের সময় নিয়ে আলোচনা করব। 

২০২৪ সালে নতুন ক্লিক ডে ঘোষণা করেছে ইতালি সরকার। এই ঘোষণা অনুযায়ী নতুন ক্লিক ডে হলো ১৮,২১ এবং ২৫ মার্চ ২০২৪।  এখানে ক্লিক ডে মানে হলো এ্যাপ্লিকেশন শুরুর তারিখে। অর্থাৎ দিন ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন করার সময় শুরু হবে ঐ দিনই ক্লিক ডে। এখানে তিনটি ক্লিক ডে তিন রকমের ভিসার জন্য প্রযোজ্য। এগুলো হলো :
  1. ১৮ মার্চ সকাল ৯:০০ টা থেকে: ইতালির সাথে সহযোগিতা চুক্তি আছে এমন দেশের নাগরিকদের নন-সিজনাল অধস্তন কর্মসংস্থানের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ। বাংলাদেশ থেকে যেসব লোক ইতালিতে স্পন্সর ভিসায় যেতে আগ্রহী তাদের মধ্যে অধঃস্তন কর্মসংস্থানে কাজ করতে আগ্রহী কর্মীরা এই দিন তাদের আবেদন ফর্ম জমা দেবেন।
  2. ২১ মার্চ সকাল ৯:০০ টা থেকে: পারিবারিক এবং সামাজিক স্বাস্থ্যসেবা সেক্টর সহ অন্যান্য অধস্তন কর্মসংস্থানের জন্য নন-সিজনাল ভিসা আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ এইটা। আগ্রহী প্রার্থীরা এই দিন অনলাইনে তাদের আবেদন ফর্ম জমা দিতে পারবেন।
  3. ২৫ মার্চ সকাল ৯:০০ টা থেকে: মৌসুমী (সিজনাল) ভিসায় ইতালি যেতে আগ্রহী কর্মীদের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার তারিখ। যারা ইতালি স্পন্সর সিজনাল ভিসায় যাবেন তারা এই দিন তাদের আবেদন ফর্ম জমা দিতে পারবেন।  
যারা ইতালি স্পন্সর ভিসায় যেতে চান তারা উল্লিখিত সময়ের মধ্যেই আবেদন ফর্ম জমা দেবেন। অনেকেই ভিসার ধরন বুঝতে পারেন না৷ তাদের জন্য ভিসা আবেদনের ক্লিক ডে বোঝা একটু কঠিন। তাই যে এজেন্সি কতৃক আবেদন করবেন সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে নেবেন। সিজনাল ভিসায় ইতালি গেলে ৬ মাসের বেশি অবস্থান করা যাবে না। তাই ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিকভাবে আবেদন ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। 

৪.ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন 

ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এর পুরো প্রক্রিয়া জানাটা আবশ্যক। কেননা পুরো প্রক্রিয়া না জানলে ভিসা এবং স্পন্সর পাওয়া কঠিন। আবার অনেক সময় এজেন্সি বা দালাল কতৃক প্রতারণা হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এতে করে নিজেরাই ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন করতে পারবেন, আবার এজেন্সি কতৃক আবেদন করলেও প্রতারিত হওয়া থেকে নিরাপদ থাকবেন।

ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে এখানে উল্লেখ করা হলো:
  • ইতালিয়ান কোম্পানি কতৃক হায়ার হওয়া (স্পনসর পাওয়া) : ইতালি স্পন্সর ভিসা পাওয়ার মূল শর্ত হলো স্পন্সরশীপ পাওয়া। এজন্য ইতালির যে কোম্পানিতে কর্মী সংকট রয়েছে তারা কর্মীর জন্য স্পন্সরশীপের ব্যবস্থা করবে। প্রথমেই কোম্পানি ইতালির সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ANPAL এ তাদের কর্মী সংকট ও কর্মী চাহিদার কথা বলবে তারপর সকল শর্তাবলি পূরণ করে একটি অনাপত্তি পত্র নেবে। এটি মূলত কোম্পানির কর্মী হায়ারের সম্মতি প্রদান করে। অনাপত্তিপত্র পাওয়ার পর কোম্পানি বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগ করে কর্মী খুজে থাকে এবং কর্মীদের হায়ার করে থাকে।
  • কোম্পানি কতৃক PREFATTURA তে আবেদন: কর্মী বাছাইয়ের পর উক্ত কোম্পানি তাদের নিজস্ব ইমেইল এ্যাড্রেস থেকে স্থানীয় প্রসাশনিক অফিসে নিয়োগ করার উদ্দেশ্যে বাছাই করা কর্মীর পাসপোর্ট এবং জীবনবৃত্তান্ত (সিভি) জমা দিয়ে অনুমতি পাওয়ার জন্য আবেদন করবে।
  • NULL-OSTA পাওয়া : PREFATURA কতৃক অনুমতি পাওয়ার পর উক্ত কোম্পানি ইতালি সরকার কতৃক অনুমতি পেয়ে গেলে আবেদনকারী কর্মীর জন্য  ইতালি সরকারের ছাড়পত্র ইস্যু করে যাকে NULL-OSTA বলে। এটি পেয়ে গেলে বুঝতে হবে যে আবেদনকারী কর্মীকে হায়ার করার জন্য ঐ কোম্পানির আর কোনো আইনি জটিলতা নেই।
  • ভিসা আবেদন ফর্ম জমা দেওয়া : NULL-OSTA পাওয়ার পর ইতালির উক্ত কোম্পানিটি যে কর্মীকে হায়ার করার অনুমতি পেয়েছেন তাকে মেইল করে উক্ত ছাড়পত্রটি দেবেন এবং সাথে কি কি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন তা জানাবে। এই ইমেইলটি পাওয়ার পর কর্মীকে বুঝতে হবে যে তার স্পন্সরশীপ কনফার্ম হয়েছে। এরপর কর্মীকে তার প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস সহ ভিসা আবেদন ফর্মটি বাংলাদেশের ইতালি দূতাবাসে জমা দিতে হবে। এরপর দূতাবাসে ভিসা ফি সহ যাবতীয় খরচ জমা দিলেই ভিসা ইস্যু করা হবে।
  • ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট নেওয়া : ইতালিতে যাওয়ার পর প্রধান কাজ হল ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট নেওয়া। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এবং এটি না করলে ইতালিতে অবৈধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। স্পন্সর ভিসায় ইতালিতে গেলে ইতালিতে ল্যান্ড করার পর স্পন্সারকারী কোম্পানির প্রতিনিধি নিয়োগকৃত কর্মী অর্থাৎ যারা স্পন্সর ভিসায় ইতালি যাবে তাদের সাথে দেখা করে। নিয়োগকারি কোম্পানির উক্ত প্রতিনিধিকে নিয়ে ইতালির স্থানীয় প্রসাশনিক অফিস প্রেফেতুরাতে যোগাযোগ করে ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে। এখানে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা জমা দিয়ে ফি প্রদান করলেই তারা ওয়ার্ক এবং রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু করে আবেদনকারীর ঠিকানায় প্রেরণ করবে। এই ওয়ার্ক এবং রেসিডেন্স পারমিট পেলেই কেবল একজন বিদেশি কর্মী ইতালিতে থাকতে পারবে ও কাজ করতে পারবে, নচেৎ নয়। তাই এই পারমিট নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 
ইতালি স্পন্সর ভিসা পাওয়ার এই প্রক্রিয়াটি এজেন্সি কতৃক করা হয়ে থাকে। যারা ইতালি যেতে আগ্রহী থাকেন তারা একটি এজেন্সি ঠিক করে তাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে টাকা দিয়ে দেন। তবে কেউ যদি নিজে থেকে ইতালি স্পন্সর ভিসা পেতে চান তাহলে তাকে প্রথমেই ইতালির বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে এবং সার্কুলার প্রকাশিত হওয়ার পর উপরে উল্লিখিত নিয়মে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।

৫.স্পন্সর ভিসায় ইতালি যেতে কত টাকা লাগে 

বর্তমানে ইতালিতে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য অনেক মানুষ আগ্রহী থাকে এবং অনেক বেশি টাকা খরচ করে দালালের মাধ্যমে ইতালি যায়। এতে করে দেখা যায় প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি টাকা খরচ হয়, তাছাড়া এতে করে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এর সার্কুলার অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে স্পন্সর ভিসায় ইতালি যেতে কত টাকা খরচ হতে পারে তার একটা হিসাব তুলে ধরার চেষ্টা করব।

কেউ যদি নিজে নিজে সব রকমের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ইতালিতে যেতে চায় তাহলে তার খরচ খুব সামান্যই হবে। আর্টিকেলের শুরুতে আমরা যে প্রক্রিয়ায় আবেদনের কথা বলছি সেই প্রক্রিয়ায় ইতালিতে যাওয়ার খরচ :
  • নুলস্থা ৩০০ ইউরো বা প্রায় ৩৫,০০০ বাংলাদেশি টাকা
  • ভিসা ১৬০ ইউরো বা  প্রায় ১৮ হাজার টাকা
  • বিমানের টিকেট  ৬০০ ইউরো বা ৭০ হাজার বাংলাদেশি টাকা
  • ওয়ার্ক এবং রেসিডেন্স পারমিট ৩০০ ইউরো বা ৩৫ হাজার টাকা প্রায়
  • এ্যাডমিনিস্ট্র্যাটিভ ফি ও ট্যাক্স স্ট্যাম্প বাবদ খরচ ৫০ ইউরো বা ৬ হাজার টাকা।
এই হিসাব অনুযায়ী কেউ যদি নিজে নিজে ইতালি যাওয়ার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চান তাহলে তার মূল খরচ প্রায় ২ লক্ষ টাকা লাগবে। এর সাথে মেডিকেল ফি, পুলিস ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ হিসাব করলে খরচ ৩-৫ লক্ষ টাকা হয়। তবে ইউরো এর রেট কমবেশি হওয়ার কারনে এই খরচেরও তারতম্য হতে পারে। 

ইতালি স্পন্সর ভিসায় খরচ এরকম হলেও বিভিন্ন এজেন্সি বিভিন্ন রকম টাকার পরিমাণ দাবি করে থাকে। অনেক এজেন্সি বা দালালের দ্বারা ইতালি যেতে ১৪ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এই খরচ অনেক সময় ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্তও হতে পারে। খরচের এই বিশাল তারতম্য হয় শুধুমাত্র এজেন্সির জন্য। অনেক সময় দেখা যায় এজেন্সি কতৃক সরাসরি কাজ করা হয় না, ফলে তারা পুনরায় দালাল বা এজেন্সিকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়। এতে করে যারা ইতালি যেতে চান তাদের খরচের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই এজেন্সি বা দালালের দ্বারা কাজ করিয়ে নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালো করে যাচাই বাছাই করে টাকা দিতে হবে।

৬.স্পন্সর ভিসায় ইতালিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি 

ইতালিতে কাজের জন্য যাওয়া এখন অনেকের কাছেই স্বপ্নের মতো। তবে ইতালিতে গেলেই হবে না কোন কাজে ইতালিতে গেলে ভালো অর্থ উপার্জন করা যাবে এবং সফল হওয়া যাবে তা জানতে হবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা ইতালি স্পন্সার ভিসা আবেদন ২০২৪ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আর্টিকেলের এই অংশে স্পন্সার ভিসায় ইতালিতে কোন কাজের চাহিদা বেশি তা নিয়ে আলোচনা করব। 

বাংলাদেশ থেকে যেসব মানুষ কাজের ভিসা ইতালিতে যায় তার বেশিরভাগই কৃষি বা এগ্রিকালচার ভিসায় গিয়ে থাকে। এই ভিসায় ইতালি যাওয়া তুলনামূলক সহজ এবং ইতালিতে এই ভিসায় লোকের অনেক চাহিদা রয়েছে। এগ্রিকালচার ভিসায় সিজনাল এবং ননসিজনাল উভয় য়েইপাই যাওয়া যায়। 

কৃষি ভিসার পাশাপাশি সড়ক পরিবহন খাতে কাজের জন্য শ্রমিকের অনেক চাহিদা রয়েছে। তবে ইতালির সঙ্গে বাংলাদেশের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর চুক্তি না থাকায় বাস, ট্রাক কিংবা হেভি যানবাহন চালক হিসেবে কাজ করার জন্য যেতে পারবে না। এছাড়াও বিভিন্ন কোম্পানিতে শূন্যপদ পূরনের জন্য শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে থাকে স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে। অভিজ্ঞতা থাকলে এসব কোম্পানিতেও ভালো বেতনে চাকরির জন্য যাওয়ার সুযোগ আছে। 

এর বাহিরেও বিভিন্ন পেশায় ইতালিতে কাজের চাহিদা রয়েছে। যেমন : মেকানিকস, পর্যটন- হোটেল, নির্মাণ কাজ (জাহাজ নির্মাণ, ভবন নির্মান, সড়ক মেরামত), পণ্য পরিবহনের যানবাহন চালনা, মাছ বাজারজাতকরণ ইত্যাদি। এসব পেশায় নামমাত্র যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে অদক্ষ এবং অনাভিজ্ঞ লোকজন খুব সহজেই ইতালিতে কাজের জন্য যেতে পারে। বিভিন্ন পেশাজীবি সহ নার্স যেতে পারে বৃদ্ধ ও  বাচ্চাদের দেখাশোনা করার জন্য। স্পন্সর ভিসায় এসব কাজে ইতালিতে প্রচুর লোকের চাহিদা রয়েছে।

৭.ইতালি স্পন্সর ভিসায় বেতন কত

কাজের ভিসায় ইতালি যাওয়ার আগে ইতালি স্পন্সর ভিসার বেতন কত তা জেনে নেওয়া জরুরী। আজকের আর্টিকেলে তাই ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০১৪ সার্কুলার অনুযায়ী ইডালির স্পন্সর ভিসায় বেতন কত তা নিয়ে আলোচনা করব। 

চলতি বছরে ইতালিতে সাধারণ ওয়ার্কারদের গড় বেতন ১৪০০ ইউরো বা প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। কাজ এবং কাজের জায়গাভেদে এই বেতনের কম বেশি হতে পারে। তবে যেসব ভিসায় লোক বেশি যায় ইতালিতে সেসব কাজের বেতনের তালিকা :
  • রেস্টুরেন্ট কর্মীদের বিভিন্ন পদে বেতন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সাধারণভাবে বেতন ১০০০ ইউরো ( ১,১৮০০০ বাংলাদেশি টাকা) থেকে ১২০০ ইউরো (১,৪০,০০০ বাংলাদেশি টাকা) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিতে বেতন তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে। এখানেও পদ অনুযায়ী বেতনের ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণভাবে বেতন ১৪০০ ইউরো ( ১,৬০,০০০ টাকা) থেকে ১৫০০ ইউরো (১,৭৫,০০০ টাকা) পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • বিভিন্ন ফ্যাক্টরি এবং গার্মেন্টস শিল্পে কাজের ক্ষেত্রে বেতন হতে পারে ১২০০ ইউরো (১,৪০,০০০ টাকা)  থেকে ১২৫০ ইউরো (১,৫০,০০০ টাকা) পর্যন্ত। 
  • ড্রাইভিং কর্মীর বেতন মাসিক ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
  • কনস্ট্রাকশন কর্মী ১ লক্ষ ১২ হাজার থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পেয়ে থাকে।
  • ফুড প্যাকেজিং কর্মীর বেতন ৮০ হাজার থেকে  ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। 
  • কৃষি কাজের বেতন ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ইতালিতে কাজের বেতন মূলত নির্ভর করে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর। শুরুতে যে বেতনে চাকরি করবেন তা সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পাবে। সেই সাথে অনেক সুযোগ সুবিধাও রয়েছে। অনেক সময় বাঙালি মালিকানায় চাকরি পেলে বেতন কম হতে পারে। আবার ওভারটাইম করলে বেতন বাড়বে। তবে ইতালি যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে বেতন কত এবং চুক্তি কত।

৮.ইতালি সিজনাল ভিসা আবেদনের সময়

ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এর পাশাপাশি ইতালি সিজনাল ভিসায় আবেদনের তারিখও প্রকাশ করেছে ইতালি সরকার। আর্টিকেলের শুরু আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা নিয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইতালি  সিজনাল অর্থাৎ মৌসুমী কাজের ভিসা,  ভিসা খরচ ও সিজনাল ভিসা আবেদনের সময় নিয়ে আলোচনা করব।

ইতালি সিজনাল ভিসা মূলত ঐসব ভিসা যেসব ভিসার মেয়াদ থাকে ২০ দিন থেকে ৯ মাস এবং যে ভিসা বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চালু করা হয়। যেমন ফসলের মৌসুমে কৃষি ভিসা, পর্যটন মৌসুমি পর্যটন খাতে চাকরির ভিসা ইত্যাদি। সিজন বা মৌসুম বলতে এখানে একটি সময়কে বুঝানো হয়েছে যে সময়ে নির্দিষ্ট ঐ কাজটি থাকে। সিজন বা মৌসুমে এসব কাজ থাকে বলে এগুলোকে সিজনাল ভিসা বলা হয়। বছরের যে নির্দিষ্ট সময়ে কাজটি সহজলভ্য হয় সেই সময়ে সিজনাল বা মৌসুমি ভিসা চালু করা হয়। কাজ শেষ হয়ে গেলে ভিসার মেয়াদও শেষ হয়। ইতালিতে সাধারণত দুইটি খাতে সিজনাল ভিসার প্রচলন রয়েছে। 
  1. কৃষি খাত : ফল এবং সবজি বাছাই, অলিভ কাটা এবং বাজারজাতকরণ, কৃষি জমিতে কাজ, শস্য কাটা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং পশুপালনের মতো বিভিন্ন কাজ।
  2. পর্যটন খাত : হোটেল, রেস্তোরা, বার, সৈকত এবং অন্যান্য পর্যটন গন্তব্যে নির্দিষ্ট একটি সময়কালে যখন পর্যটকদের ভিড় থাকে তখন এসব জায়গায় বিভিন্ন কাজের জন্য সিজনাল ভিসা চালু করা হয়।
ইতালির সিজনাল ভিসার মেয়াদ: 

সিজনাল ভিসায় ওয়ার্ক পারমিট একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অনুমোদন দেয়। এই নির্দিষ্ট সময়সীমা হলো সর্বনিম্ন ২০ দিন থেকে সর্বোচ্চ নয় মাস পর্যন্ত। এই নির্দিষ্ট সময়কাল কর্মসংস্থানের কাজের পরিধির সাথে তুলনা করে, নিশ্চিত করে যে ওয়ার্ক পারমিট অনুমোদন কাজের প্রতিশ্রুতির সাথে সুনির্দিষ্টভাবে সঙ্গতিপূর্ণ কি না। সঙ্গতিপূর্ণ হলেই কেবল সিজনাল ভিসার ওয়ার্ক পারমিট দেওয়া হয়। তবে কাজের সময়কাল বৃদ্ধি পেলে পরবর্তীতে নিয়োগকারী মালিকের ব্যবস্থাপনায় এই মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায়। এক্ষেত্রে নতুন করে ওয়ার্ক পারমিট ও রেসিডেন্স পারমিট নিতে হবে। সেই সাথে ভিসার মেয়াদও বৃদ্ধি করতে হবে।

ইতালি সিজনাল ভিসা আবেদনের সময়

চলতি বছরে Decreto Flussi প্রোগ্রামের মাধ্যমে সিজনাল ভিসায় প্রায় ৯০ হাজার লোক নিয়োগ দেবে ইতালি। এই ভিসার মাধ্যমে ২০ দিন থেকে ৯ মাস পর্যন্ত ইতালি থেকে কাজ করা যাবে এবং সময় বৃদ্ধি করে চাকরি করা যাবে। কৃষিকাজ, পর্যটন এবং আতিথেয়তা সেক্টরে মৌসুমি কাজের জন্য অনুমোদিত কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে চাকরি রয়েছে। প্রকাশিত সার্কুলার অনুযায়ী Decreto Flussi 2024-এর অধীনে ইতালীয় সিজনাল ভিসার জন্য  ১লা জানুয়ারী, ২০২৪ থেকে ৩১ মার্চ,২০২৪ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকরা আবেদন করতে পারবে। বাংলাদেশের কেউ যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশে গিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে থাকেন তাহলে এই সময়ে আবেদন করতে পারবে। আর নন-ইইউ নাগরিক অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন দেশের নাগরিকের আবেদন ১লা এপ্রিল, ২০২৪ থেকে ৩১ মে, ২০২৪ পর্যন্ত জমা দেওয়া যাবে। বাংলাদেশের নাগরিকরাও এই সময়ে আবেদন জমা দিতে পারবে।

৯.ইতালি সিজনাল ভিসা আবেদনের নিয়ম

আজকের আর্টিকেলে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ এবং ইতালি সিজনাল ভিসা নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন আমারা সিজনাল ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব। 

ইতালি স্পন্সর ভিসা ও সিজনাল ভিসা আবেদনের নিয়ম প্রায় একই রকম শুধু কিছু ভিন্নতা রয়েছে। স্পন্সর ভিসায় কিছু কাজ নিয়োগকারী এবং স্পন্সর কোম্পানি বা ব্যক্তি করে থাকে। তবে সিজনাল ভিসায় আবেদনের সময় স্পন্সরের প্রয়োজন হয় না। ইতালি স্পন্সর ভিসায় আবেদনের নিয়ম :
  • ইতালিতে সিজনাল ভিসা বা যেকোন কাজের ভিসার জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই একটি বৈধ কাজের প্রস্তাব থাকতে হবে। এজন্য সিজনাল ভিসার জন্য যেসব সার্কুলার প্রকাশিত হয় সেসব ভিসায় আবেদন করতে হবে। 
  • আবেদন গ্রহন হলে এবং আপনাকে যদি নিয়োগকারী কোম্পানি মনোনীত করে থাকেন তাহলে তারা ইতালির প্রশাসনিক দফতর প্রিফেতুরাতে গিয়ে ওয়ান স্টপ শপ ফর ইমিগ্রেশন এ কাজ করার অনুমোদনের জন্য আবেদন করবেন যেখানে চাকরি করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি নিয়োগকারী কোম্পানি সম্পন্ন করে থাকে। প্রিফেতুরা থেকে অনুমোদন বা নুল্লা ওস্তা পাওয়ার পর উক্ত কোম্পানি আপনাকে কনফার্মেশন লেটার পাঠাবে। এরপর আবেদন সম্পন্ন হবে।
  • নুল্লা ওস্তা বা চাকরির কনফার্মেশন লেটার পাওয়ার পর ইতালির উক্ত কোম্পানিটি আপনাকে পেয়েছেন তাকে মেইল করে উক্ত ছাড়পত্রটি দেবেন এবং সাথে কি কি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন তা জানাবে। এই ইমেইলটি পাওয়ার পর কর্মীকে বুঝতে হবে যে তার ভিসা কনফার্ম হয়েছে। এরপর কর্মীকে তার প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্টস সহ ভিসা আবেদন ফর্মটি বাংলাদেশের ইতালি দূতাবাসে জমা দিতে হবে। এরপর দূতাবাসে ভিসা ফি সহ যাবতীয় খরচ জমা দিলেই ভিসা ইস্যু করা হবে।
  • এরপরের কাজ সাধারনত দূতাবাস থেকেই করা হয়। ইতালিতে যাওয়ার পরে আপনাকে একটি কাজ করতে হবে। ইতালিতে যাওয়ার পর আপনার প্রধান কাজ হল ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট নেওয়া। এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ এবং এটি না করলে ইতালিতে অবৈধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইতালিতে গিয়ে নিয়োগকারী কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি নিয়ে স্থানীয় প্রসাশনিক অফিস প্রেফেতুরাতে যোগাযোগ করে ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে। এখানে যেসব কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা জমা দিয়ে ফি প্রদান করলেই তারা ওয়ার্ক এবং রেসিডেন্স পারমিট ইস্যু করে আপনার ঠিকানায় প্রেরণ করবে। এই ওয়ার্ক এবং রেসিডেন্স পারমিট পেলেই কেবল একজন বিদেশি কর্মী ইতালিতে থাকতে পারবে ও কাজ করতে পারবে, নচেৎ নয়। তাই এই পারমিট নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইতালিতে স্পন্সর ভিসায় যেতে যত টাকা লাগে সিজনাল ভিসায় যেতে তার থেকে একটু কম টাকা লাগে। যেহেতু এই ভিসার মেয়াদ স্বল্প থাকে তাই ভিসার দামও কম হয়। তবে ভিসা প্রসেসিং নিজে থেকে করতে না পারলে এজেন্সির সাহায্য নিতে হয়। সেক্ষেত্রে ৭-১০ লক্ষ টাকা লাগতে পারে। তবে যদি কোনো পরিচিত ব্যক্তি ইতালি থেকে থাকে তাহলে সিজনাল ভিসায় ২ -৩ লক্ষ টাকায় ইতালি যাওয়া যায়।  
১০.ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন 

পড়ালেখার জন্য ইতালি অন্যতম দেশ। অনেকেই পড়াশোনা করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য ইতালি গিয়ে থাকেন। আজকের আর্টিকেলে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ ও ইতালি সিজনাল ভিসা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই অংশে আমরা ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আলোচনা করব। 

ইতালিতে দুই ধরনের স্টুডেন্ট ভিসা প্রচলিত আছে। এগুলো হলো : 
  • শর্ট স্টে ভিসা (টাইপ সি ভিসা) : এই ভিসার মাধ্যমে ইতালিতে ৯০ দিনের কম সময় অবস্থান করা যাবে এবং শিক্ষামূলক কোর্স করা যাবে। বিভিন্ন রকম কোর্স যেমন ভাষা শেখার জন্য ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স অথবা অন্য যেকোনো কোর্স যাতে ৯০ দিনের কম সময় লাগে এবং কোর্স শেষ করে এই সময়ের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। এ ধরনের ভিসা টাইপ সি ভিসার অন্তর্ভুক্ত। 
  • লং স্টে ভিসা : দীর্ঘ মেয়াদি কোনো শিক্ষামূলক ডিগ্রির জন্য ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসায় গেলে এই ভিসা নিতে হবে। এই ভিসার আওতায় ইতালিতে যেতে গেলে কোর্সে কমপক্ষে সপ্তাহে ২০ ঘন্টা কোর্স অথবা মাসে ৮০ ঘন্টা কোর্স থাকতে হবে এবং কোর্সের মেয়াদ ৯০ দিনের চেয়ে বেশি হতে হবে।
লং স্টে ভিসার আবার কয়েকটি ভাগ আছে। এগুলো কোর্সের সময়সীমা এবং স্টুডেন্টদের যোগ্যতার ভিত্তিতে বিভক্ত করা হয়। যেমন : 

  • স্টুডেন্ট ভিসা সাবক্লাস ৫০০ : এই ভিসার মাধ্যমে একজন রেজিস্টার্ড শিক্ষার্থী বিভিন্ন ধরনের কোর্স করতে পারবে। এই ধরনের ভিসা পেতে হলে শিক্ষার্থীর বয়স নিম্নতম ছয় বছর হতে হবে। এছাড়া যে কোন ইতালিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেতে হবে, এবং স্বাস্থ বীমা থাকতে হবে। এ ধরনের স্টুডেন্ট ভিসায় কোন প্রকার স্পন্সরের দরকার হয় না। এই ভিসার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরকম ভিসা নিয়ে ইতালিতে গিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সুন্দরভাবে পার্ট টাইম চাকরিও করা যায়। আপনার ভিসার আবেদন ফরমে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের নাম উল্লেখ করে দিতে পারেন, বা তাদের জন্য আলাদা করেও ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন। এই ধরনের স্টুডেন্ট ভিসায় ৪৫,০০০ থেকে ৫৫,০০০ টাকার মত খরচ হয়।
  • স্টুডেন্ট গার্ডিয়ান ভিসা সাবক্লাস ৫৯০ : স্টুডেন্ট গার্ডিয়ান ভিসা পেতে হলে,আপনার পরিবারের কোনো সদস্যকে পূর্বেই ইতালির অধিবাসী হতে হবে। এছাড়া পড়ালেখা বাবদ সমস্ত খরচের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে। আর যে গার্ডিয়ানের জন্য আবেদন করবেন তার বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। স্পন্সর ছাড়াও এ ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।এ ধরনের ভিসার সর্বোচ্চ পাঁচ বছর মেয়াদ থাকে। এই ধরনের স্টুডেন্ট গার্ডিয়ান ভিসায় আবেদন করতে ৩০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়।
  • স্পেশাল ক্যাটাগরি স্টুডেন্ট ভিসা সাবক্লাস ৪৪৪ : পরিবারের কোনো সদস্য বা আত্মীয় স্বজন ইতালির অধিবাসী থাকলে পড়াশোনার জন্য ইতালিতে এই ভিসায় যাওয়া যায়। এজন্য অবশ্যই ইতালির অধিবাসী আত্মীয়কে ভিসা ম্যানেজ করতে হবে। তবে শিক্ষার্থীর নিজস্ব স্বাস্থ্যবীমা থাকতে হবে। এই ভিসার কোনো মেয়াদ থাকে না উপরন্তু এই ভিসায় যাওয়ার পর পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরিও করা যায়।
ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদনের পদ্ধতি : একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে যেকোনো স্টুডেন্ট ভিসা ক্যাটাগরিতে ইতালি যাওয়া যায়। এক্ষেত্রে ভিসা টাইপ সিলেক্ট করতপ হবে। তারপর :
  • প্রথমেই ইতালির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে এবং আবেদন গ্রহণযোগ্যতা পেলে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ্যাক্সেপ্ট্যান্স লেটার পাঠানো হবে। এই লেটার পাওয়ার পর বুঝতে হবে আপনি উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। 
  • এরপর ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে যেমন :  দুইটি ফাঁকা ভিসা পৃষ্ঠা সহ একটি বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে; ফ্লাইট ভ্রমনের একটি কপি থাকতে হবে; অপরাধ মূলক রেকর্ড পজিটিভ হতে হবে অর্থাৎ পূর্বে আপনি কোনো আইনি  অপরাধের সাথে সংযুক্ত ছিলেন না এমন প্রমাণপত্র থাকতে হবে। 
  • অনলাইন থেকে ইতালি স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ফর্ম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে।
  • এরপর বাংলাদেশের ইতালি দূতাবাস বা কনস্যুলেটে গিয়ে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য ভিসা আবেদন ফর্ম এবং এর সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করে জমা দিতে হবে। 
  • ভিসা আবেদন করার পর ইন্টারভিউ ঠিক করতে হবে। এক্ষেত্রে ভিসা পাওয়ার প্রায় ৪ সপ্তাহ বা ৬ সপ্তাহ আগে ভিসা ইন্টারভিউ দিতে হবে।
ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
  • ভিসার আবেদনপত্র
  • সাম্প্রতিক সময়ে তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
  • বৈধ ভ্রমণ নথি (মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ আবেদন করা ভিসার চেয়ে তিন মাস বেশি হতে হবে।)
  • ইতালিতে থাকার আবাসনের প্রমানপত্র (পড়াশোনার পুরো সময়ের জন্য আপনি কোথায় থাকবেন তার ঠিকানা )
  • ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসায় গিয়ে পড়াশোনার জন্য আর্থিক সামর্থ্য আছে তা প্রমাণপত্র (মাসে অন্তত ৯০০ ইউরো খরচ করার মতো সক্ষমতা)
  • ইতালিতে অধ্যয়নের প্রথম বছরের জন্য 150 EUR এর অর্থ প্রদান করা স্বাস্থ্য বীমা
  • পূর্ববর্তী শিক্ষার সার্টিফিকেটের কপি
  • ইতালীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রহণযোগ্যতা (এক্সেপ্ট্যান্স) চিঠি
  • ভিসা আবেদন ফি এর রসিদ
  • জেনুইন টেম্পোরারি এন্ট্রান্ট (জিটিই) 
  • স্বাস্থ্যবীমা (ওএসএইচসি)
  • ভাষাগত দক্ষতার প্রমাণপত্র 
  • অপরাধমূলক ও ফৌজদারি কাজের প্রমাণপত্র

১১.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর - কি-ওয়ার্ড

আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব। 

প্রশ্ন ১: বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাস আছে কি?

উত্তর: হ্যাঁ, বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাস রয়েছে। বাংলাদেশের ইতালি দূতাবাসের ঠিকানা : ৩ডি ফ্লোর, প্লট -১২, নর্থ এভিনিউ, গুলশান - ২, ঢাকা ১২১২
ওয়েবসাইট: www.ambdhaka.esteri.it
ইমেল: visti.dhaka@esteri.it
টেলিফোন: +880258812781/2/3

প্রশ্ন ২: ইতালি স্পন্সর ভিসায় আবেদনের জন্য কি কি ডকুমেন্টস লাগবে?

উত্তর: ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় নথি :
  • বৈধ পাসপোর্ট
  • ভিসা আবেদনপত্র
  • সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি 
  • ইতালিতে স্পন্সরের আর্থিক সহায়তার প্রমাণপত্র
  • ইতালিতে স্পনসরের আমন্ত্রণপত্র
  • আবাসনের ব্যবস্থার প্রমাণ (ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট) 
  • ফ্লাইট রিজার্ভেশন
  • স্বাস্থ্য বীমার প্রমাণপত্র
  • একটি অপরাধমূলক রেকর্ড প্রশংসাপত্র (পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট) 

প্রশ্ন ৩: ইতালি স্পন্সর ভিসায় আবেদনের পর ভিসা পেতে কত সময় লাগে?

উত্তর: ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের পর ভিসা পেতে ৯০ থেকে ১২০ দিন সময় লাগে।

প্রশ্ন ৪: ইতালি স্টুডেন্ট ভিসায় কি ভাষাগত দক্ষতার প্রয়োজন হয়?

উত্তর: ইতালিতে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট ভাষার প্রয়োজনীয়তা নেই। যেহেতু এটি একটি ইতালীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বাধ্যতামূলক শর্তগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয় তাই কনস্যুলেটগুলি বিবেচনা করে না যে আবেদনকারীদের ভাষার দক্ষতার কোনও প্রমাণও উপস্থাপন করা উচিত। তবে ইতালীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনার ইংরেজি-পড়ানো ডিগ্রির জন্য, আপনাকে নিম্নলিখিত ইংরেজি ভাষা পরীক্ষাগুলির মধ্যে একটি পাস করতে হবে:

 IELTS একাডেমিক

 পিটিই একাডেমিক

 TOEFL iBT

 ডুওলিঙ্গো

প্রশ্ন ৫: ইতালি স্পন্সর ভিসার জন্য ইন্টারভিউ মিস করলে করনীয় কি? 

উত্তর: ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন করার পর দূতাবাস থেকে একটি ভিসার ইন্টারভিউ নেওয়া হয়। এই ইন্টারভিউ না দিলে ভিসা কনফার্ম করা হয় না। তাই ইন্টারভিউ যথাযথভাবে দেওয়ার জন্য যে দিন ভ্রমণ করতে চান তার কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ পূর্বে ভিসা ইন্টারভিউ এর তারিখ ঠিক করতে হবে। তারপরও যদি ইন্টারভিউ মিস হয়ে যায় তাহলে নিকটস্থ বাংলাদেশের ইতালি কনস্যুলেটে যোগাযোগ করতে হবে এবং পুনরায় ইন্টারভিউ এর তারিখ নির্ধারণ করে ইন্টারভিউ দিতে হবে। 

প্রশ্ন ৬: ইতালি স্পন্সর ভিসার সুবিধা গুলো কি কি?

উত্তর: ইতালি স্পন্সর ভিসার অনেক সুবিধা রয়েছে ইতালি স্পন্সর ভিসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা হচ্ছে নবায়নযোগ্য গ্রীনকার্ড যা Renewable Residence  Permit হিসেবে কাজ করে। ইতালি যাওয়ার ৮ দিনের মধ্যে এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে হয় এবং ৩-৬ মাসের মধ্যে এই গ্রীনকার্ড চলে আসে। এই কারৃডের সুবিধা হলো এটির মাধ্যমে ন্যূনতম ১ বছর ইতালির যেকোনো জায়গায় অবস্থান করা যাবে। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করার মাধ্যমে মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে। এই কার্ড পাওয়ার পর  যেকোনো জায়গায় যেকোন কাজ করা যাবে বিনা বাধায়। আবার যদি স্পন্সর ভিসায় স্পন্সরশীপ প্রদানকারী কোম্পানিতে কাজ না থাকে তবে তা ছেড়ে দিয়ে অন্য কাজ করা যাবে। এই সুবিধাটি ইতালি সিজনাল ভিসা বা কৃষি ভিসায় থাকে না। ইতালি স্পন্সর ভিসার আর একটি সুবিধা হলো বেশি টাকা উপার্জন করার সুযোগ। যেহেতু স্পন্সর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করা যায় এবং নবায়নযোগ্য রেসিডেন্স পারমিট থাকে সেহেতু পূর্বের কাজ ছেড়ে দিয়ে অভিজ্ঞতা থাকা সাপেক্ষে অন্য যেকোনো কাজ যেখানে ভালো বেতন রয়েছে তা করা যায়৷ এই ভিসার অন্যতম সুবিধা হলো কেউ চাইলে ইতালিতে পরিবার নিয়ে যেতে পারে। স্পন্সর ভিসায় ইতালিতে গিয়ে গ্রীনকার্ড পাওয়ার পর ১ বছরের কারো ইনকাম যদি ৯-১৩ হাজার ইউরো এর মধ্যে হয় তাহলে সে চাইলে তার একজন পরিবারের সদস্যকে ইতালিতে নিয়ে যেতে পারে এবং বসবাস করতে পারে। এক্ষেত্রে দুইজন ব্যক্তি নিতে চাইলে এই পরিমান উপার্জন এর দ্বিগুণ এবং তিনজন নিতে চাইলে তিনগুন হতে হবে।

প্রশ্ন ৭: ইতালি স্পন্সর ভিসার অসুবিধাগুলো কি কি?

উত্তর: ইতালি স্পন্সর ভিসার যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ইতালি স্পন্সর ভিসার প্রধান অসুবিধা হলো এই ভিসার দাম অনেক বেশি। যদিও ইতালির সকল কাজের ভিসার দাম সমান তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এক্ষেত্রে সুবিধাভোগী দলটি হলো বিভিন্ন দালাল। নিজে নিজে ভিসা আবেদন করতে পারলে অথবা ইতালিতে যদি কোনো আত্মীয় থেকে থাকে তাহলে এই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় না। 

১২.লেখকের মন্তব্য - কি-ওয়ার্ড

আজকের আর্টিকেলে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন ২০২৪ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। যারা স্পন্সর ভিসায় ইতালি যেতে চান তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি অনেক উপকারী। সেই সাথে আজকের আর্টিকেলে আমরা একদম সঠিক উপায়ে ইতালি যাওয়ার প্রক্রিয়া বর্ণনা করেছি। এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করে খুব সহজেই কেউ ইতালি যেতে পারবে। আর্টিকেলটিতে আমরা ইতালি যাওয়ার খরচ উল্লেখ করেছি যার ফলে কেউ ইতালি যেতে চাইলে দালাল দ্বারা প্রতারিত হবেন না। আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন, পরামর্শ কিংবা মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech ভিজিট করুন।


এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন 
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url