OrdinaryITPostAd

বগুড়া জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি [ইতিহাসের আলোকে]

 


করতোয়ার তীর ঘেঁষে অবস্থিত ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক প্রাচীন নগরী বগুড়া। বগুড়ার প্রাচীন নাম পুন্দ্রনগর। মৌর্য রাজাদের শাসনামলে এই পুন্ড্রনগর ছিল বাংলার রাজধানী। এখান থেকেই বুঝা যায় বগুড়া জেলার ঐতিহাসিক তাৎপর্য। বগুড়ার ভুমিতে বহু জ্ঞানীগুণী পন্ডিত ও মনীষীর জন্ম হয়েছে। সেই সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের প্রচেষ্টা।


আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো বগুড়া জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি,  তাদের জন্ম, কর্ম ও কৃতিত্ব , এবং জীবন বৃত্তান্ত সম্পর্কে। জিয়াউর রহমান, প্রফুল্ল চাকী, মোহাম্মদ আলী ,আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, গাজিউল হক, এম আর আখতার মুকুল, অপু বিশ্বাস ,মুশফিকুর রহিম আরো বরেণ্য ব্যক্তির জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরা হবে এই আর্টিকেলে। অনুরোধ থাকবে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার।

আর্টিকেল সূচিপত্র - কি-ওয়ার্ড

১. জিয়াউর রহমান 

জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাস এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়কালের ইতিহাস এর সাথে যার নাম  ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বিখ্যাত এই ব্যক্তির জন্য ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি ,বগুড়া জেলায়।
জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি এবং প্রাক্তন সেনাপ্রধান। তার আরেকটি বড় পরিচয় হলো তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটা সময় জুড়ে তার ছোট বড় অসংখ্য উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম রয়েছে। শুরুটা ২৫ শে মার্চের কাল রাত্তিরেই। সে রাতে তিনি একজন পাকিস্তানি অধিনায়ক কে বন্দী করেন এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করেন, সেই সাথে সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলেন।
ইনিই সেই বিখ্যাত ব্যক্তি যে কিনা ২৭ শে মার্চ চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে বসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
 ১৯৭১ সালে ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠনের পর জিয়াউর রহমানকে এক নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য, ছাত্র এবং যুবসদস্যদের সংগঠিত করে একটি রেজিমেন্ট গঠন করেন। এই রেজিমেন্টে তিনি যুক্ত করেন প্রথম তৃতীয় এবং অষ্টম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট নামে তিনটি ব্যাটালিয়ন। এটি ছিল মুক্তিবাহিনীর সর্বপ্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড। যা "জেড ফোর্স" নামে পরিচিত । অর্থাৎ,মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান এই জেড ফোর্সেরই  সেক্টর কমান্ডার ছিলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জিয়াউর রহমান একজন সামনের সারির যোদ্ধা। তার এই মহৎ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে "বীর উত্তম" উপাধিতে ভূষিত করেছে। বীরত্বের জন্য যা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার।
জিয়াউর রহমানের একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র প্রতিষ্ঠা । এই দলের যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৮ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর। এই দিনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠ করার মধ্য দিয়ে এই দলটির যাত্রার সূচনা করেন।
এছাড়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তার উল্লেখযোগ্য অনেক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড রয়েছে।
তাকে ঘিরে অসংখ্য সমালোচনা থাকলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র বগুড়ার সন্তান জিয়াউর রহমান

২.  প্রফুল্ল চাকী 

যার নাম শুনলেই ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কথা মনে পড়ে যায়, সেই প্রফুল্ল চাকীর জন্ম আমাদের প্রিয় বগুড়া জেলাতেই।
১৮৮০ সালে বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকীর জন্ম। স্কুল জীবন থেকেই তিনি বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। এ কারণে থেকে স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। নবম শ্রেণীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় পূর্ববঙ্গ সরকারের কারসিলল সার্কুলার এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে জড়িত হওয়ার জেরে তাকে রংপুর জিলা স্কুল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

প্রফুল্ল চাকী যে অভিযানের জন্য বহুল আলোচিত সেটি হচ্ছে- মুজাফফরপুর অভিযান। ঘটনাটি ছিল এরকম-
১৯০৬ সালের দিকে তিনি বিপ্লবী দল যুগান্তরে যুক্ত হন।আসাম ও পূর্ববঙ্গ প্রদেশের প্রথম লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার জোসেফ ব্যামফিল্ড ফুলারকে হত্যা করা ছিল প্রফুল্ল চাকীর প্রথম দায়িত্ব, যা সফল হয়নি।
এরপরে তার পরিকল্পনা ছিল মুজাফফরপুরের ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড কে হত্যা করা। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসুর সাহচর্যে প্রফুল্ল চাকী পরিকল্পনা করেন ১৯০৮ সালের ৩০শে এপ্রিল সন্ধ্যাবেলা কিংসফোর্ড কে হত্যা করা হবে। পরিকল্পনা মাফিক ইউরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কিংসফোর্ডের ঘোড়ার গাড়ির জন্য তারা ওঁত পেতে থাকেন। একটি গাড়ি চলেও আসে। কিংসফোর্ডের গাড়ি ভেবে তারা বোমা নিক্ষেপ করে কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এই গাড়িতে কিংসফোর্ড ছিলেন না। ছিলেন আরেক ব্যারিস্টার কেনেডির স্ত্রীও কন্যা।
ঘটনার পর প্রফুল্ল চাকী এবং ক্ষুদিরাম বসু দুজনে পালিয়ে যান। প্রফুল্ল চাকী ছদ্মবেশ ধারণ করে কলকাতার উদ্দেশ্যে ট্রেনে ওঠেন। কিন্তু সমস্তিপুর রেলস্টেশনে গিয়ে নন্দলাল ব্যানার্জি নামের এক পুলিশ সদস্য তাকে সন্দেহ করেন এবং ধরে ফেলেন। পুলিশের কাছে জিম্মি হওয়ার বদলে তিনি আত্মাহুতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মাথায় পিস্তল দিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেন বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী। 
তবে তিনি আসলেই আত্মহত্যা করেছেন নাকি পুলিশে তাকে মেরে ফেলেছে এ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মাঝে বিতর্ক রয়েছে।
এমনই এক নির্মম উপসংহার এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় বগুড়া জেলার কৃতি সন্তান বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকির উপাখ্যান।

৩.আখতারুজ্জামান ইলিয়াস 

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এর রয়েছে অনেকগুলো পরিচয়। তিনি একাধারে একজন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার এবং একই সাথে একজন অধ্যাপক। মেধাবী এই মানুষটির পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায়। জন্মগ্রহণ করেছেন ১২ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৩।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের রচনাশৈলী অত্যন্ত বাস্তব নির্ভর। এ কারণেই তাকে বলা হয় সমাজবাস্তবতার অন্যান্য রূপকার।
লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কর্মজীবনে অধ্যাপনা করেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গোপন যোগসূত্র ছিল। বাংলাদেশ লেখক শিবিরের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস ছিলেন নূন্যতম একজন।
আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বিখ্যাত ছোট গল্প সংকলন-দুধেভাতে উৎপাত, দোযখের ওম, জাল স্বপ্ন স্বপ্নের জাল ইত্যাদি। এবং বিখ্যাত উপন্যাস -চিলেকোঠার সেপাই, খোয়াবনামা।
বগুড়ার গর্ব আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের ঝুলিতে রয়েছে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক সহ ছোট বড় অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। এই মেধাবী মানুষটির মৃত্যু ৪ জানুয়ারি, ১৯৯৭।

৪. গাজিউল হক 

গাজিউল হক নামে অধিক পরিচিত এই ব্যক্তির পুরো নাম আবু নসর মোহাম্মদ গাজিউল হক। তিনি একাধারে গীতিকার সাহিত্যিক এবং ভাষা সৈনিক। শুধু ভাষা আন্দোলনই নয় কাজী মোতাহার হোসেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সাহচর্যে  তিনি আরো অনেক আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এই গাজিউল হক কিন্তু বগুড়ারই মানুষ।

কর্মজীবনে তিনি ছিলেন একজন আইনবিদ। ১৯৫২ সালের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকা শহর উত্তাল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেসময় গাজিউল হক ছিলেন একজন সক্রিয় আন্দোলন কর্মী।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে যে সকল আন্দোলন কর্মীরা ভাষার দাবি নিয়ে মিছিল বের করেছিলেন তাদের মাঝে গাজিউল হক ছিলেন একজন। এছাড়াও ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন ,'৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান,'৭১ স্বাধীনতা যুদ্ধে গাজিউল হক বিভিন্নভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আশির দশকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ও তিনি ছিলেন সরব।
এছাড়াও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় "আকাশবাণী" এবং "স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র" থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ প্রচারের দায়িত্বে ছিলেন।
তিনি অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে পাওয়া -"একুশে পদক"। ছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক "ডকটর অব লজ" উপাধি দিয়েছেন।

৫.এম আর আখতার মুকুল 

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রচারিত অসম্ভব জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান চরমপত্রের লেখক, পরিচালক এবং কথক এম আর আখতার মুকুল জন্ম গ্রহণ করেছেন বগুড়া জেলায়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অসম্ভব জনপ্রিয় এম আখতার মুকুলের জন্ম ৯ আগস্ট, ১৯৩০।
 এম আর আখতার মুকুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থাতেই সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হন। ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আমার দেশ ,পাকিস্তান টুডে সহ আরো অনেকগুলো পত্রিকায় তিনি সাংবাদিকতা করেছেন।
এছাড়াও ১৯৭২ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৫ সালের লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাই কমিশনে কাউন্সিলর এর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তার কর্মজীবন শেষ করেন ১৯৮৭ সালে এবং সে সময় তিনি বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে কর্মরত ।

এত কিছু ছাপিয়ে এম আর আখতার  মুকুল চিরকাল জনপ্রিয় ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত তার অনুষ্ঠান চরমপত্রের মধ্য দিয়ে। মূলত অনুষ্ঠানটিতে ব্যঙ্গাত্মক উপায়ে বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানীদের নাজেহাল অবস্থা এবং মুক্তিবাহিনীর ছোট বড় সব সফলতাকে উপস্থাপনের মাধ্যমে সাধারণ বাঙালির মনে আশা, উদ্দিপনা এবং দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা হতো।
 মানসম্মত রেকর্ডিং স্টুডিও ছিল না। কোনমতো টেপ রেকর্ডারের রেকর্ড করে চরমপত্র প্রকাশ করা হতো। যুদ্ধাহত বাঙালি অধীর আগ্রহ নিয়ে চরমপত্র শুনত এবং ভবিষ্যতের হাজারো অনিশ্চয়তার মধ্যেও তাদের মাঝে এক ধরনের অদৃশ্য মনবল জেগে উঠতো।
শেষ জীবনে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। অবশেষে ২০০৪ সালের ২৬ জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন

৬. মুশফিকুর রহিম

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কিংবদন্তি খেলোয়াড় মোহাম্মদ মুশফিকুর রহিম। জন্ম ৯ মে, ১৯৮৭। তিনি বগুড়া জেলার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
একজন খেলোয়ার হিসেবে মুশফিকুর রহিমের ক্যারিয়ারে রয়েছে অসংখ্য উত্থান ও পতনের গল্প। জাতীয় দলে তার পদযাত্রা শুরু হয় ২০০৫ সালে ইংল্যান্ড সফরের মধ্য দিয়ে। শুধু তারই না ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ দলেরও এটিই ছিল প্রথম সফর।
২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেন মুশফিকুর রহিম। সেই সময় সেই দলে খেলেছিলেন ভবিষ্যতের দুই উজ্জ্বল তারকা সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল। সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সেবারে বাংলাদেশ দল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত যেতে সামর্থ্য হয়েছিল।
এরপর ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান ম্যাচ এ তার দুর্দান্ত ৭১ রানের ইনিংসের জন্য তাকে ম্যান অব দ্যা ম্যাচের পুরস্কার দেয়া হয়।
বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্বেই।
মুশফিকুর রহিম ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই এবং সেই সময়ে বাংলাদেশ দল এশিয়া কাপে রানার্স আপ হয়ে সেরা সফলতা দেখিয়েছিল।
মুশফিকুর রহিমের খেলোয়াড় হিসেবে অসংখ্য রেকর্ড রয়েছে। যেমন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি আইসিসি কর্তৃক প্লেয়ার অফ দা মান্থ নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০২১ সালের মে মাসে।
এছাড়া ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকুর রহিমই প্রথম টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন।
২০১৮ সালের নভেম্বরে ইতিহাসের প্রথম উইকেট রক্ষক ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকুর রহিম জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি করে একটি সেরা রেকর্ড করেন।
সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে বগুড়ায় জন্মানো এ বিশ্ব বিখ্যাত খেলোয়াড় টি টুয়েন্টি থেকে অবসর নেন।

৭. অপু বিশ্বাস 

ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ অবন্তি বিশ্বাস অপু ,যিনি কিনা অপু বিশ্বাস নামেই অধিক পরিচিত। ১৯৮৯ সালের ১ন১ই অক্টোবর বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন অপু বিশ্বাস।

অপু বিশ্বাস পরিচালক আমজাদ হোসেনের "কাল সকালে"-র মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন ২০০৬ সালে। তবে  প্রথম প্রধান অভিনেত্রী হিসেবে অভিনয় করেন তার পরের বছর  ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়া "কোটি টাকার কাবিন" নামে একটি চলচ্চিত্রে। এখানে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিল আরেক জনপ্রিয় তারকা শাকিব খান। এই ছবিটি ব্যবসা সফল হওয়ার পর একের পর এক অভিনয় করে গেছেন অসংখ্য জনপ্রিয় সিনেমায়।
৩৪ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর অনেক বিখ্যাত কিছু সিনেমার মধ্যে রয়েছে কোটি টাকার প্রেম, কিং খান,এক টাকার দেনমোহর, চাচ্চু আমার চাচ্চু, ভালোবাসা এক্সপ্রেস, দুই পৃথিবী, বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না ইত্যাদি সহ আরো অসংখ্য।
ব্যক্তি জীবন নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা থাকলেও বাঙালি ঢাকাই সিনেমা ভক্তদের মাঝে তার জনপ্রিয়তা অপরিসীম।
অভিনয়ের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
এর মধ্যে অন্যতম "বাচসাস" পুরস্কার। উল্লেখ্য যে, তিনি ছয় বার মেরিল প্রথম আলো পুরস্কারে মনোনয়ন লাভ করেছেন।

৮.  মোহাম্মদ আলী 

পুরো নাম সৈয়দ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী হলেও তিনি মোহাম্মদ আলী বগুড়া নামেই বেশি পরিচিত। বগুড়ায় জন্মগ্রহণকারী মোহাম্মদ আলী পেশায় ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তার জন্ম ১৯০৯ সালে।
মোহাম্মদ আলী তৎকালীন রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের একজন কর্মী ছিলেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া শেষ করে মোহাম্মদ আলী রাজনীতিতে যোগদান করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন।
১৯৫৩ সালে তিনি পাকিস্তানী তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার এই প্রধানমন্ত্রীত্ব  শেষ হয় ১৯৫৫ সালে। ইস্কান্দার মির্জা কৌশলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন। ১৯৬২ সালে তিনি আবারও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রিত্ব কালে তিনি সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ নেন।
মোহাম্মদ আলী বগুড়ার একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি হলো কাশ্মীর ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত ভাবে নেহেরু সাহেব কে কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করে দুই দেশের মাঝে কোন্দল সমাধানের আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ আলী বগুড়া মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৩ সালে।

৯. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: বীর উত্তম মোহাম্মদ খাদিমুল বাশার কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: বীরউত্তম মোহাম্মদ খাদিমুল বাশার বগুড়া জন্মগ্রহণ করেন।

প্রশ্ন ২: ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয়ের জন্মস্থান কোনটি?

উত্তর: ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয়ের জন্মস্থান বগুড়া।

প্রশ্ন ৩: বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের পৈতৃক নিবাস কোথায়?

উত্তর: বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলায়।

প্রশ্ন ৪: চ্যানেল আই এর প্রতিষ্ঠাতা ফরিদুর রেজা সাগরের পৈর্ত্রিক নিবাস কোথায়?

উত্তর: চ্যানেল আই এর প্রতিষ্ঠাতা ফরিদুর রেজা সাগরের পৈতৃক নিবাস বগুড়া জেলা।

প্রশ্ন ৫: নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না কোন জেলায় জন্মগ্রহণ করেন?

উত্তর: নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বগুড়া জেলার জন্মগ্রহণ করেন।

১০. লেখকের মন্তব্য

উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত জেলা বগুড়া। একটি অঞ্চল বিখ্যাত হয় বিভিন্ন কারণে। একটি অঞ্চলের খাবার, দর্শনীয় স্থান, ইতিহাস অথবা সেই অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করা জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিত্ব সেই অঞ্চলকে পরিচিত করে অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের কাছে। আজকে সেরকমই একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি বগুড়া জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি, যারা কিনা বগুড়া জেলাকে বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা গুলোর মাঝে আলাদা একটি স্থান দিয়েছে। সেই সকল সম্মানিত ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এই তালিকায় যেমন কবি থেকে শুরু করে রয়েছেন যোদ্ধা, তেমনি খেলোয়ার থেকে অভিনয়শিল্পী কেউই বাদ পড়েননি। আশা করছি একজন পাঠক আর্টিকেলটি পড়ে নিরাশ হবেন না। যেকোনো কি ভুলত্রুটি কিংবা অসঙ্গতি চোখে পড়লে মন্তব্য ঘরে তো জানানোর অনুরোধ রইল। এবং The DU Speech এর অন্যান্য আর্টিকেলগুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url