মুড সুইং কী,কেন হয়,কখন হয়, মুড সুয়িং থেকে মুক্তি ও এর লক্ষণসমুহ!
মুড সুইং কী? এটা সম্পর্কে হয়ত আপনারা অনেকেই জানেন না। মুড সুইং ব্যক্তি জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি শব্দ। পুরুষ বা নারী উভয়ের ক্ষেত্রে, জীবন দশায় অবশ্যই মুড সুইং এর সম্মুখীন হতে হয়। তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে সাধারণত মুড সুইং কম হয় এবং নারীরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি মুড সুইং এর এর শিকার হয়। তবে মুড সুইং কোনো শারীরিক বা মানসিক রোগ নয়। মুড সুইং মানুষের বিশেষ এক মনস্তাত্ত্বিক পর্যায়।
পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে মুড সুইং এর সময় হঠাৎ করে মেজাজ বা আবেগ পরিবর্তিত হতে দেখা যায়। যা আমাদের ব্যক্তি জীবনকে প্রভাবিত করে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানবদেহের মনস্তাত্ত্বিক বিশেষ পর্যায়ে মুড সুইং কে অনেককে ' ন্যাকামি' বলে অভিহিত করে। কিন্তু মুড সুইং এর সময়ে ব্যক্তির মানসিক অবস্থার বোঝা ও গুরুত্ব দেওয়া খুবই প্রয়োজন। মুড সুইং কোনো ন্যাকামি বা আদিখ্যেতা না। পর্যাবৃত্তির একটি বিশেষ পর্যায় মুড সুইং। এই আর্টিকেল পড়লে, মুড সুইং কী? মুড সুইং কেন হয়? মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? মুড সুইং কখন হয়? মুড সুইং অর্থ কী? আপনাদের এই প্রশ্নগুলোসহ বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অনুচ্ছেদ সুচি-
- মুড সুইং কী ?
- মুড সুইং এর কারণসমুহ
- মুড সুইং এর লক্ষণসমু মুড সুইং, মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল ও প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম!
- পুরুষের মুড সুইং বা IMS(Irritable Male Syndrome)
- মুড সুইং নিয়ন্ত্রণের উপায়সমুহ
- মুড সুইং এর শিকার ব্যক্তিদের প্রতি আমাদের করণীয়!
মুড সুয়িং কী? এই বিষয়ে এই অংশে আপনাকে জানাবো। কোনো কারণ ছাড়া হঠাৎ মেজাজ পরিবর্তন হওয়া অর্থাৎ হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া বা তুচ্ছতম কোনো কারণে রেগে যাওয়া, হঠাৎ কান্নাকাটি কর, বিষণ্ণতায় ভোগে অথবা তীব্র হতাশা অনুভব করা ইত্যাদিকে মুড সুইং বলা হয়। আপনি অনেক সময় লক্ষ্য করলে দেখবে, কেউ আপনার সামনে অনেক হাসিখুশি আছে কিন্তু হঠাৎ করে অকারণে অথবা যুক্তিহীন কোন বিষয়ে রাগান্বিত বা বিষন্ন হয়ে পড়ল। হঠাৎ করে আবেগের এই নাটকীয় পরিবর্তনই মুড সুইং। মুড সুয়িং কী? আশা করছি এটা এখন বুঝতে পেরেছেন।
অধিকাংশ সময় মুড সুইং এর শিকার নারী অথবা পুরুষ অনবরত বিপরীতধর্মী সব আবেগের মধ্য দিয়ে যেতে পারে।খুব স্বল্প সময়ের বিরতিতে মন ভালো, তারপরে মন অল্প খারাপ, তারপর ভীষণ মন খারাপ, তারপর তীব্র হতাশা অথবা বিষন্নতা অথবা রাগান্বিত অবস্থা, আবার কিছুক্ষণের মধ্যে অনেক খুশি এমন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে পারে মুড সুইং হলে। মুড সুইং এর বেশিরভাগ সময় বাহ্যিক কোনো কারণ ছাড়াই এসব লক্ষ্য করা যায়। মুড সুইং চলাকালীন সময়ে নারী বা পুরুষ অধিকাংশ সময়ই যেকোনো বিষয় নিয়ে অভার রিয়েক্ট করে বসে। কখনো চারপাশের সবকিছুই ভালো লাগে, আবার খানিক সময় বিরতিতে কখনোবা সবকিছু বিরক্ত লাগে - অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক আবেগের এই পরিবর্তনই মুড সুইং হিসেবে পরিচিত। মুড সুয়িং কী? এটা জানার জন্য আশা করছি এতোটুকুই যথেষ্ট।
মুড সুইং কখন হয়? কারণ কী?
নির্দিষ্ট কী কারণে মুড সুইং হচ্ছে তা বলা একটু জটিল। এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেয়। অনেক কিছুর প্রভাবে মুড সুইং হতে পারে। তারমধ্যে অন্যতম -
হরমোনজনীত কারণ
হরমোনজনিত কারণে নারী ও পুরুষ সবথেকে বেশি মুড সুইং এর শিকার হয়। মানবদেহের জৈবিক ও আচরনিক ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে হরমোন। এই হরমোনের তারতম্যের কারণে অধিকাংশ সময় মানুষ মুড সুইং এ ভোগে। বিশেষ করে বয়সন্ধিকাল,মেয়েদের মাসিক চলাকালীন সময় ও গর্ভাবস্থায় মানবদেহে হরমোনের তারতম্য বেশি দেখা দেয়।আর এ সময় ঘন ঘন মুড সুইং লক্ষ্য করা যায়।নারীদেহে মাসিক চলাকালীন সময় ছাড়াও,মাসিক শুরু হওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ যৌন হরমোনের প্রভাবে প্রি মেন্সুয়্যাল সিনড্রোম দেখা দেয়। এ সময় নারীদের মাঝে ইমশনাল ব্রেক-ডাউনের সৃষ্টি হয় ফলে মেজাজ উঠানামা করে। এবং এই সময় নারীরা তীব্র মুড সুইং এর শিকার হয়।বয়সন্ধিকালে হরমোনের প্রভাবে ছেলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক অনেক পরিবর্তন ঘটে। এই সময় তারা মধ্যে খুব সামান্য বিষয়ে আশাবাদী আবার খুব সামান্য বিষয়ে অনেক হতাশা লক্ষ্য করা যায় যা মুড সুইং এর অন্তর্ভুক্ত।তবে বয়সন্ধিকালে ছেলে মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত রাখার জন্য মুড সুইং সম্পর্কে যথার্থ জ্ঞান ও ধারণা থাকতে হবে।
পুষ্টিহীনতা
শারীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের সাথেও পুষ্টির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। দেহে নানারকম পুষ্টি উপাদানের অভাবেও ঘন ঘন মুড সুইং দেখা দিতে পারে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন,আয়রন ও খনিজ পদার্থের অভাবে মুড সুইং হতে পারে। যেমন নারীদের মাসিক চলাকালীন সময়ে রক্তক্ষরণের ফলে দেহে আয়রন এর অভাব দেখা দেয়,ফলে ঘন ঘন মুড সুইং হতে দেখা যায়।খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদানের অভাবে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক প্রভাব পরে, ফলশ্রুতিতে মানুষ শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মুড সুইং এর শিকার হয়।শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা ও মুড সুইং রোধ করার জন্য প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পুষ্টি সম্মত ও সুষম খাবার রাখা উচিৎ।
নানা রোগে আক্রান্ত অবস্থায়
আমাদের দেশে বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ হচ্ছে "সুস্থ দেহে সুস্থ মন! "অর্থাৎ শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকেনা। রোগাক্রান্ত অবস্থায় মানবদেহের স্বাভাবিক রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ বাধাগ্রস্ত হয়। সময় হরমোনের ওঠানামা ও হতে পারে। যার কারনে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। এই মুড সুইং এর কারণেই রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিরা তীব্র হতাশা ও বিষণ্ণতায় ভোগে। এছাড়াও রোগ প্রতিকারের জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন বা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় মুড সুইং এর জন্য দায়ী হতে পারে।
মেডিসিন এর পার্শ্ব পতিক্রিয়া
বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মুড সুইং হতে পারে। মেডিসিন হচ্ছে অনেকগুলো রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার সমষ্টি যা শরীরের কোষ অভ্যন্তরে রাসায়নিক পরিবর্তনের মাধ্যমে রোগ প্রতিকার করে। এ সময় ব্যক্তির দেহে মুড সুইং লক্ষ করা যেতে পারে এবং মুড সুইং এর কারণে তার ঘন ঘন আবেগ ও মেজাজের পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যেমন মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা ,রেগে থাকা, বিষন্ন থাকা ,হতাশ থাকা ইত্যাদি সব মুড সুইং এর কারনে হয়ে থাকে।
মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশন
মানসিক চাপ মন ও মস্তিস্ককে তীব্র ভাবে প্রভাবিত করে। এ সময় ঘনঘন ডিপ্রেশন আসতে পারে। ডিপ্রেশনকে মুড সুইং এর লক্ষণ ও কারণ উভয়ই হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কোনো কারণে অতিরিক্ত চিন্তা ,মানসিক চাপ ও ডিপ্রেশনের কারণে মুড সুইং হতে পারে। মানসিক চাপ ও হতাশা আমাদের মনে দূর্বলতার ছাপ ফেলে। এই সময় ঘনঘন ও তীব্রভাবে মুড সুইং হতে দেখা যায়। ক্ষেত্রে মুড সুইং রোধ করার জন্য মানসিক চাপমুক্ত থাকা, দুশ্চিন্তা না করা এবং সর্বদা হাসিখুশি জীবনযপন করা উত্তম।
অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস
অপর্যাপ্ত ও অনিয়মিত ঘুমের জন্য মুড সুইং হতে পারে। বিশেষ করে নিয়মিত ও দীর্ঘদিন যাবৎ রাত জাগার অভ্যাস মুড সুইং থেকে শুরু করে নানারকম মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক রোগের জন্ম দেয়। বয়স অনুযায়ী প্রতিটা মানুষের একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমানো উচিত। নিয়মিত কমপক্ষে 6 ঘন্টা নিচে ঘুমায় মানুষ বেশি বেশি মুড সুইং এর শিকার হয় ও নানা রকম মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমশ বাড়তে থাকে। শরীরে বেশি বেশি ক্লান্তি অনুভব করে এবং বেশিরভাগ সময় বিষন্নতা বিষাদ ও তীব্র হতাশায় ভুগতে পারে। যা মুড সুইং এর অন্যতম লক্ষণ।
অতিরিক্ত কফি পান
কফির মূল উপাদান ক্যাফেইন যা ঘুম রোধে সহায়তা করে। অতিরিক্ত কফি পান করা অনিয়মিত অপর্যাপ্ত ঘুম এর অন্যতম কারণ। এতে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং সাধারন জীবন যাপন ব্যাহত হতে পারে। ফলে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। এজন্য রাতে ঘুমানোর আগের মুহূর্তে অথবা অতিরিক্ত কফি পান এর অভ্যাস না করাই উত্তম। তাহলে কিছুটা হলেও মুড সুইং রোধ করা সম্ভব হবে।
মাদকাসক্তি
মাদকদ্রব্য গ্রহণ শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর। এতে শারীরিক , মানসিক ও দেহের অভ্যন্তরীণ স্বাভাবিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ঘনঘন মুড সুইং দেখা দিতে পারে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির মারাত্মক মুড সুইং এর শিকার হয়। মাদক গ্রহণের পরপাশাপাশি মদ্যপানও মুড সুইং এর কারণ হতে পারে। এজন্য শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মুড সুইং রোধের জন্যও মাদককে না বলুন।
অতিরিক্ত কাজের চাপ
অতিরিক্ত কাজের চাপের ফলে মুড সুইং হতে পারে। যাবৎ একটানা কাজ করা এবং বিরতিহীন ভাবে কাজ করা মুড সুইং এর একটি কারণ। বিরতিহীন ভাবে একটানা কাজ করার ফলে ব্রেনের কার্যক্ষমতা ক্রমশ কমতে থাকে এবং মনে বিষন্নতা আসে। ফলে মুড সুইং দেখা দেয়। এজন্য মুড সুইং রোধে অতিরিক্ত এবং একটানা কাজ করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
জীবনযাত্রা
শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য সঠিক জীবন-যাপনের পদ্ধতি অনুসরণ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।উশৃংখল জীবনযাপন আপনার ঘনঘন মুড সুইং এর কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত ও অনিয়মিত ঘুম, খাদ্যাভ্যাস, কাজের ধরন ইত্যাদির কারণে মুড সুইং হতে পারে। এজন্য মুড সুইং রোধে নিয়মিত ঘুম ও পুষ্টিকর খাদ্য অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
মুড সুইং এর লক্ষণ
পুরুষ বা নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই মুড সুইং এর সময়- হঠাৎ রেগে যাওয়া, কান্নাকাটি করা, বিষন্নতা, ডিপ্রেশন বা অবসাদ, হতাশা, উদ্বেগ বা এনজাইটি ইত্যাদি লক্ষণ গুলো লক্ষ্য করা যায়। মুড সুইং বলতে আমরা আবেগের এই তৎক্ষণাৎ নাটকীয় পরিবর্তন কি বুঝি।
মুড সুইং এর অন্যতম লক্ষণ সমূহ-
হঠাৎ অকারণে রেগে যাওয়া
কোন কারণ ছাড়া অথবা তুচ্ছ কোন কারণে হঠাৎ রেগে যাওয়া বা ওভার রিয়েক্ট করা মুড সুইং এর লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুড সুইং এর সময় ব্যক্তি স্বাভাবিক বিষয় সাধারন ভবে মেনে নিতে পারে না ।স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে ওভার রিয়েক্ট করে বসে।
কান্নাকাটি করা
অনেকেই অনেক সময় সামান্য বিষয় নিয়ে কান্নাকাটি করে ,বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি লক্ষ্য করা যায় । এগুলোকে মুড সুইং এর লক্ষন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মেয়েদের প্রি-মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রম ও মাসিক চলাকালীন সময়ে এধরনের বেশি দেখা যায়।
বিষন্নতা
অকারণে অথবা ছোটখাটো যুক্তিহীন কোনো কারণে আপনার মন খারাপ হয়ে থাকলে বুঝবেন আপনি মুড সুইং এ ভুগছেন। এই সময় অনেকের ক্ষেত্রে বিষণ্নতা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে। নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রে-মেনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রমের সময় হরমোনের তারতম্যের কারণে এটি বেশি বেশি হয়।
ডিপ্রেশন বা অবসাদ
কোনো বিষয় নিয়ে যদি আপনার অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা হয় এবং চারপাশের সবকিছু অর্থহীন মনে হয়, কোনো কিছুতে মন বসে না- এমন অনুভূত হলে সেই মানসিক অবস্থা কে ডিপ্রেশন বা অবসাদ হিসেবে গণ্য করা হয়। এটা মুড সুইং এর অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য। মুড সুইং এর শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে হাসিখুশি থাকতে থাকতেই মনে ডিপ্রেশন বা অবসাদ নেমে আসে ।এসময় ব্যাক্তিরা অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
হতাশা
আপনি অনেক আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ ।কিন্তু একটা সময় কোন কাজ করতে গিয়ে আপনার হঠাৎ মনে হলো যে এসব আপনাকে দিয়ে হবে না ।হঠাৎ করে আপনার আত্মবিশ্বাস শূন্যের কোঠায় নেমে গেল। এর মানে আপনি তাৎক্ষণিকভাবে মুড সুইং এর শিকার। মুড সুইং এর শিকার ব্যক্তিরা খুব দ্রুত হতাশ হয়ে পড়ে। তবে মেয়েদের প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম ও মাসিক চলাকালীন সময়ে মুড সুইং এর এই লক্ষণ বেশি দেখা যায়।
উদ্বেগ বা এনজাইটি
কোন কিছু নিয়ে অভার থিংকিং, মানসিক অস্থিরতা, উদ্বেগ ইত্যাদির কারণে কোনো কাজে মনোযোগী হতে না পারা ইত্যাদির সব মুড সুইং এর লক্ষণ । মুড সুইং এর ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ বা মানসিক চাপের জন্য এবং নারীদের ক্ষেত্রে প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম এর জন্য রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা বা দিনের বেশিরভাগ সময় এই উদ্বেগ তৈরি হতে দেখা যায়।
নারীদের মুড সুইং, মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল ও প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোম!
মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার 1-2 সপ্তাহ আগের সময়কে পিএমএস হিসেবে গণ্য করা।প্রে-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিএমএস এর সাথে মুড সুইং এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা স্ত্রী হরমোনকেই পিএমএস এর জন্য দায়ী করেছেন। মেয়েদের শরীরে থাকা স্ত্রী হরমোন সমূহ একেক সময় একেকটি নির্দিষ্ট অনুপাতে নিঃসরিত হয়। আর এই হরমোন নিঃসরণের তারতম্যের কারণে মেয়েদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। কখনোবা হাসিখুশি কখনো ভীষণ বিষন্ন এগুলো সবই মেয়েদের হরমোনের তারতম্যের কারণে ঘটিত মুড সুইং এর ফসল।
মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল 28 দিন এমন নারীদের জরায়ু এন্ডোমেট্রিয়ামের পরিবর্তনের ভিত্তিতে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল কে চার ভাগে ভাগ করা যায়-
1. নিরাময় পর্ব ( Regenerative phase)
মাসিক শেষ হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহ নিরাময় পর্বের অন্তর্ভুক্ত। মাসিক পর্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পর্ব শুরু হয় ।এই সময়ে স্ত্রী হরমোন FSH,LH, ইস্ট্রোজেনের মাত্রা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে । ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে মেয়েদের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক বা অল্প অল্প করে প্রফুল্ল হতে থাকে হতে থাকে।এবং মুড সুইং ক্রমশ কমতে থাকে।
2. বৃদ্ধি পর্ব (Proliferative phase)
মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল এর 7-14 তম দিন পর্যন্ত এই পর্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং 12 তম দিনে তা সর্বোচ্চ হয়। 13-14 তম দিনের মাথায় ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণ আবার পুনরায় হৃাস পেতে শুরু হয়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকায় এই পর্বে মেয়েদের মানসিক অবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রফুল্ল থাকে।
3. প্রাক-রজ:স্রাবীও পর্ব(Pre- menstrual Syndrome)
মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের 15-21 তম দিন পর্যন্ত প্রাক রজঃস্রাবীয় পর্বের অন্তর্ভুক্ত। এ সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা তরতরিয়ে কমতে থাকে ।ইস্ট্রোজেনের এই উথান-পতন মেয়েদের মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে যা মুড সুইং এ ভোগায়। যাকে প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোমও বলে। এ সময় মেয়েদের মাঝে হতাশা, অবসাদ, বিষন্নতা ,অল্পতে রেগে যাওয়া, কান্নাকাটি করা ,খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি যাবতীয় নেতীবাচক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।
এছাড়াও পিএমএস এর সময় শারীরিক যেসব লক্ষণ দেখা যায়-
- খেতে অনিচ্ছা
- পেটের পেশিতে ব্যথা
- মাথা ব্যথা
- বমি বমি ভাব
- ঘুম না হওয়া ইত্যাদি।
পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি চলে এই পর্বে। এজন্য এসময় অধিকহারে শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে মেয়েরা এই সময়ে অধিক পরিমাণে মুড সুইং এর শিকার হয় । ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা তরতরিয়ে কমে যাওয়াকে এর জন্য দায়ী করা হয়।
4.ব্লিডিং পর্ব (Bleeding phase)
মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল এর 22-28 তম দিন এই পর্বের অন্তর্ভুক্ত। এই সময় মেয়েদের দেহে স্ত্রী হরমোন FSH,LH,ইস্ট্রোজেন ,প্রজেস্টেরন ইত্যাদির মাত্রা সর্বনিম্ন থাকে। এছাড়াও এ সময় রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় ।ফলে মেয়েদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মুড সুইং ঘনঘন দেখা দেয় ।খুব সামান্য কারণে তীব্র মন খারাপ ,কান্নাকাটি ইত্যাদি সব লক্ষণ এ সময় অধিকহারে প্রকাশিত হয় ।শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা যত কমতে থাকে মানসিক অবস্থা ও ততো ভারসাম্যহীন হতে থাকে।
পুরুষের মুড সুইং বা IMS(Irritable Male Syndrome)
নারীর ন্যায় পুরুষেরও মুড সুইং হয়। বিশেষজ্ঞরা এর নাম দিয়েছেন IMS(Irritable Male Syndrome)। নারীদের ক্ষেত্রে যেমন মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের নির্দিষ্ট একটা সময় মুড সুইং বাড়তে থাকে পুরুষদের ক্ষেত্রে তেমন নির্দিষ্ট কোনো সময় নেয়। পুরুষদের এর মুড সুইং এর রেগুলার কোনো প্যাটার্ন নেয়। মুড সুইং এর সময় পুরুষেরও আবেগিক নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। বেশিরভাগ সময়ই পুরুষদেরও হরমোনের তারতম্যের কারণে মুড সুইং হয়।
পুরুষের মুড সুইং এর কারণ
টেস্টোস্টেরন হচ্ছে পুরুষের দেহের প্রধান প্রজনন হরমোন। এছাড়াও পুরুষের দেহে ফিমেল সেক্স হরমোন ইস্ট্রোজেনও থাকে । পুরুষের দেহে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকলে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমতে থাকে। পুরুষের দেহে ফ্যাট এর প্রভাবে টেস্টোস্টেরন হরমোন ভেঙ্গে এস্ট্রোজনে রূপান্তরিত হয়। পুরুষের দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোন মেয়েদের দেহের ইস্ট্রোজেন হরমোন এর বিপরীত। অর্থাৎ মেয়েদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমতে থাকায় সাথে সাথে মুড সুইং বাড়তে থাকে এবং পুরুষদের ইস্ট্রোজেন হরমোন মাত্রা কমতে থাকা সাথে সাথে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা বাড়তে থাকে ফলশ্রুতিতে মুড সুইং বা আইএমএস এর সম্ভাবনা কম থাকে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ এর তারতম্যের কারণে মুড সুইং বা IMS দেখা যায়। পুরুষের শরীরে অনবরত এই হরমোনের মাত্রা পরিবর্তিত হতে থাকে। প্রতি ঘণ্টায় 4/5 বার এর মান ওঠানামা করতে পারে । ভোরবেলায় পুরুষের শরীরে টেসটোসটেরনের মাত্রা সর্বোচ্চ ও সন্ধ্যাবেলায় সর্বনিম্ন থাকে। আবার বার্ষিক ভাবে বিবেচনা করলে, এপ্রিল মাসে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা সর্বনিম্ন থাকে এবং নভেম্বরে সর্বোচ্চ থাকে।
তবে যে পুরুষের শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন এর মান যত বেশি তার মুড সুইং বা আইএমএস এর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তত কম।
এছাড়াও বয়স বৃদ্ধি ,মানসিক প্রেসার, কাজের চাপ ,খাদ্যাভ্যাস, ওজনের পরিবর্তন ,অনিয়মিত অপর্যাপ্ত ঘুম, শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতার কারণেও পুরুষের মুড সুইং বা আইএমএস হতে পারে।
পুরুষের মুড সুইং বা আইএমএস এর লক্ষণ সমূহ
মেয়েদের মন সুইং এর সময় যেমন কিছু লক্ষণ দেখা দেয় ,পুরুষের ক্ষেত্রে তেমন-
পুরুষের মুড সুইং এর উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহ
- বিনা কারণ রাগ ও বিরক্তি
- অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি অনুভব করা
- হতাশা ও আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
- মন খারাপ বা বিষণ্ণতায় ভোগে
- অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা
- যৌন চাহিদার পরিবর্তন ইত্যাদি ।
বাহ অনেক সুন্দর কথাগুলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ! 🖤🖤
অনেক কিছু জানতে পারলাম
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।