জ্বর কমানোর ১০টি ওষুধ
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই যেন জ্বর-ঠান্ডা প্রকোপটা আরও বেশি বেড়ে যায়। এর বাইরেও এখন হুটহাট করেই ভাইরাসজনিত জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। জ্বর কমানোর ওষুধ হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ না জেনেই সেবন করেছেন প্যারাসিটামল এবং অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিয়ে নিচ্ছেন এন্টিবায়োটিক। প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আলোচনা করবো জ্বর কমানোর ওষুধ নিয়ে।
এছাড়া, আর্টিকেলটিতে আরও থাকছে- জ্বর কমানোর ওষুধ, জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের নাম, অতিরিক্ত জ্বর কমানোর উপায় বা দ্রুত জ্বর কমানোর উপায়, জ্বর কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি, ১০৩/১০৫ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়, জ্বর কমানোর এন্টিবায়োটিক কখন খাবেন, জ্বরের ওষুধ, জ্বর কমানোর এন্টিবায়োটিক, বার বার জ্বর আসার কারণ ও জ্বর হলে কী খাওয়া উচিত।
আর্টিকেল সূচিপত্র - জ্বর কমানোর ওষুধ
১. জ্বর কমানোর ওষুধ
চিকিৎসকদের মতে, জ্বর সাধারণত নিজে কোন সমস্যা নয় তবে কোন ধরনের রোগের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে জ্বর আসতে পারে। জ্বর কমানোর ওষুধ হিসেবে আমরা বেশিরভাগ সময় অপেক্ষা না করেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামল সেবন করে থাকি।
আদতে চিকিৎসকরা বলেন, এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে পারে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাসের সেট পয়েন্ট কমিয়ে দিয়ে। এটি কেবল সিম্পটম রিলিভ করতে পারে। জ্বরের কারণটি জীবানু হিসেবে দেহে থেকেই যায়! তখন রোগটি নির্মূলে ডাক্তাররা এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
তাঁরা বলেন, সাধারণত বেশিরভাগ জ্বরই ভাইরাস জনিত। এর জন্য কোন ওষুধ সেবন করার প্রয়োজন নেই কেননা পাঁচ থেকে সাতদিন পর জ্বর এমনিতেই সেরে যায়। এই জ্বর সারাতে শরীরের নিজস্ব কিছু প্রক্রিয়া আছে।
নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থার ওপর অবশ্যই আস্থা রাখতে হবে। এ সময় প্যারাসিটামল খেলে তেমন ক্ষতি নেই তবে কোন মতেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত দোকানের এন্টিবায়োটিক সেবন করা যাবে না। বরং জ্বর কমানোর ওষুধ ছাড়াই তরল, পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের মাধ্যমে ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে এবং কিছু ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর কমানোর উপায় মেনে চলাই বেশি ভালো।
আরও পড়ুনঃ দুধের সরের পুষ্টিগুন
২. জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের নাম
জ্বর কমানোর ওষুধ হিসেবে ডাক্তাররা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটগুলো দিয়ে থাকেন।
এরকম পাঁচটি এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট এর নাম উল্লেখ করছি–
- এরিথ্রোমাইসিন ট্যাবলেট (Erythromycin tablet)
- এজিথ্রোমাইসিন (Azithromycin tablet)
- এমোক্সিসিলিন ক্যাপসুল( Amoxicillin)
- সেফিক্সিম (Cefixime)
- ডক্সিসাইক্লিন ক্যাপসুল (Doxycycline)
এখানে কিছু এন্টিবায়োটিক শিশুদের জন্য কিছু আছে যারা পূর্ণ বয়স্ক তাদের জন্য। অনেকেই আছেন যারা না জেনে ‘ডক্সিসাইক্লিন’ শিশুদের খাইয়ে দেন এটা একদমই অনুচিত। কেননা এটি পূর্ণ বয়স্কদের জন্য প্রেফার করা একটি এন্টিবায়োটিক।
অবশ্যই এ বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। জ্বর কমানোর এন্টিবায়োটিক রেসিসট্যান্স প্যারাসিটামল এর মতো ফার্মেসী থেকে নিয়ে আসলেই হবে না, আপনাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ওষুধ কিনে তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে হবে।
৩. অতিরিক্ত জ্বর কমানোর উপায়
অতিরিক্ত জ্বর কিংবা দ্রুত জ্বর কমাতে অনেকেই অনেক ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকি। চলুন, জ্বর কমানোর ওষুধ আর্টিকেলটির এ পর্যায়ে আমরা এমনই কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো। দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় ও জ্বর কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি হতে পারে-
- জ্বর মাথায় পানিপট্টি দেয়া: জ্বর হলে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমানোর অন্যতম কার্যকরী একটি পদ্ধতি হলো মাথায় পানি দেয়া। এটি অনেক পুরনো একটি পদ্ধতি। তবে খেয়াল রাকতে হবে একটি পরিষ্কার, নরম সুতোর রুমাল ভাজ করে সেটিকে পরিষ্কার নরমাল পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। মিনিট দুয়েক পর পর রুমালটি ভিজিয়ে কপালের উপর রাখুন। এভাবে কয়েকবার করার ফলে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা খানিক স্বাভাবিক হয়ে নিয়ন্ত্রণে আসবে।
- জ্বরে তুলসি পাতার ব্যবহার: অনেকেই জানেন তুলসি পাতা কাশির জন্য খুব ভালো কিন্তু এটা জানেন না যে শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমিয়ে রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে থাকে! ৮-১০-টি তুলশি পাতা নিবেন। এবার পাতাগুলো পরিষ্কার করে একটি পাত্রে পানি গরম হতে দিন। এবার পরিষ্কার করা তুলসি পাতাগুলো গরম পানিতে দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এই পানি সকালে এক কাপ করে খাবেন। তুলসি পাতায় থাকা এন্টি ব্যাক্টেরিয়াল এবং এন্টিবায়োটিক উপাদান জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা, ব্রংকাইটিস, ম্যালেরিয়ার মতো অনেক রোগের উপশমে সাহায্য করে থাকে। তুলশি পাতা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে আপনার শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করবে।
- দ্রুত জ্বর কমাতে মধুর ব্যবহার: মধুর পুষ্টিগুন সম্পর্কে সবাই কমা বেশি জানেন। কিন্তু জানেন কী, মধু দ্রুত জ্বর কমাতেও সহায়তা করে থাকে? এক চা চামচ মধু, অর্ধেক লেবুর রস ও এক কাপ গরম পানি নিন। এবার সব একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি দিনে দুইবার পান করুন। মধুতে আছে এন্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান, যা শরীরের ব্যাক্টেরিয়াকে ধ্বংস করে থাকে। এর ফলে ভাইরাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে লেবুর রস ও মধু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসবই শরীরের অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
- অতিরিক্ত জ্বর কমাতে রসুন: এক কোয়া রসুন ও এককাপ গরম পানি নিন। রসুন কুচি করে নিয়ে গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন দশ মিনিট। একটি ছেঁকনির সাহায্য পানিটুকু ছেঁকে চায়ের মতো খেয়ে নিন। এভাবে দিনে দুইবার খেতে পারেন। অনেকেই হয়তো জ্বর কমাতে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। রসুনের কোঁয়াগুলো ছেঁচে তার সঙ্গে অলিভ ওয়েল মিশিয়ে নিয়ে উক্ত মিশ্রণটি পায়ের তালুতে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এরপর পাতলা কাপড় দিয়ে সারারাত ধরে পেঁচিয়ে রাখুন। দেখবেন সকালেই আপনার অতিরিক্ত তাপমাত্রা কমে যাবে।
- জ্বর কমানোর ওষুধ হিসেবে আদা: জ্বর কমানোর ওষুধ হিসেবে আদাকে আমরা ঘরোয়া ওষুধ বলতে পারি৷ অনেকেই নিয়মিত জিঞ্জার শট নিয়ে থাকেন যা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারী। আধা চা চামচ আদা বাটা ও এক চা চামচ মধু নিন। এক কাপ গরম পানিতে আদা বাটা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর এর সঙ্গে মধু মেশান।এই মিশ্রণটি দিনে তিন চারবার পান করতে হবে।
আরও তথ্য জানতে এখানে পড়ুন- Ayurvedic Remedies for Fever। উল্লেখ্য, গর্ভবতী নারী বা শিশুদের জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা যাবে না।
আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিকভাবে ফর্সা হওয়ার উপায়
৪. ১০৩/১০৫ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়
পাঠক, জ্বর কমানোর ওষুধ আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা জানবো ১০৩/১০৫ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয় কী। জ্বর সাধারণত ১০৫ ডিগ্রির ওপরে উঠে গেলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এছাড়া অতিরিক্ত কাশি, পেট ব্যথা, প্রস্রাবে জ্বালা, বমি বেশি হলে, জ্বরের ঘোরে অসংলগ্ন আচরণ করলে বা অচেতন হয়ে পড়লে অবশ্যই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এছাড়া ১০৩ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয় হতে পারে-
- বিশ্রাম: অসুস্থ অবস্থায় যত শারীরিক কাজে থাকবেন তত শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে এবং আপনি দূর্বল হয়ে পড়বেন। তাই যথাসম্ভব বিশ্রামে থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কমবে এবং রোগমুক্তি দ্রুত হবে। মৌসুমি সর্দি-জ্বর, কাশি হলে সবসময় ওষুধ প্রয়োজন নেই তবে ১০২ ডিগ্রি, ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলাই ভালো।
- গোসল: জ্বর হলে অনেকেই গোসল করতে চান না তাদের ধারণা এ সময় গোসল করলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। কপাল এবং ঘাড়ের পেছনে একটি নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে জলপট্টি দিলে অতিরিক্ত জ্বর কমে যায়। এটি জ্বর কমাতে অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। পুরোদস্তুর গোসল না করলেও কুসুম গরম পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে শরীর মুছিয়ে দিলে সেটিও দ্রুত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। তবে ঠান্ডা পানিতে গোসল করার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিতে হবে। তা না হলে শরীরে কাঁপুনি হতে পারে এবং জ্বর আরও বেড়ে যেতে পারে।
- পুষ্টিকর ও তরল খাবার: চিকিৎসকরা জ্বর হলে প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবার খেতে উপদেশ দিয়ে থাকেন৷ অবশ্যই ফলের রস বা অন্যান্য তরল ও পানি খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন মুড সুইং এর আসল কারণ
৫. জ্বর কমানোর এন্টিবায়োটিক কখন খাবেন?
পাঠক, অনেকেই এখন জানেন যে জ্বর হলে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিজের মতো ফার্মেসী থেকে এন্টিবায়োটিক খাওয়া যাবে না। আমরা জ্বর কমানোর ওষুধ প্রতিবেদনে এ পর্বে আলোচনা করবো- জ্বর কমানোর এন্টিবায়োটিক কখন খাবেন এবং কখন খাবেন না।
শুধু জ্বরের পাশাপাশি গায়ে ব্যথা ইত্যাদি হলো ভাইরাল জ্বরের লক্ষণ। এক্ষেত্রে, আপনি শুরুতেই এন্টিবায়োটিক নেয়ার প্রয়োজন নেই৷ প্রথমে লক্ষণ বুঝে সে অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। যেমন– খুব বেশি ব্যথা সহ্য করতে না পারলে প্যারাসিটামল খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা, বিশ্রাম নেয়া এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা।
ঘরোয়াভাবেই জ্বর তাহলে সেরে যাবে তখন আর চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তবে এরপরও শরীরের তাপমাত্রা না কমতে চাইলে, ব্যথা না কমলে, আরও কোন উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে তখন এন্টিবায়োটিক প্রেফার করলে আপনি এন্টিবায়োটিক সেবন করতে পারেন। আসলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন ধরনের এন্টিবায়োটিকই নেয়া উচিত নয়।
কারণ হলো, না জেনে এন্টিবায়োটিক খেলে আপনার অন্য কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অন্য সমস্যা হয়ে যেতে পারে যা বিরাট কোন রোগের কারণ হিসেবে প্রকট হতে পারে। একই ওষুধ কারো ক্ষেত্রে কাজে লাগে কারো ক্ষেত্রে কাজে লাগে না। আবার কারো কারো খাওয়া উচিত, কারো খাওয়া উচিত না। ডাক্তার প্রথমে দেখে থাকেন কী ধরনের জীবাণু উক্ত ক্ষেত্রগুলোতে কিভাবে কাজ করে থাকে। চিকিৎসক অবস্থা বুঝে কোন ধরনের এন্টিবায়োটিক আপনার জন্য প্রয়োজন সেটি প্রফার করলে তবেই এন্টিবায়োটিক সেবন করুন।
আরও পড়ুনঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
৬. জ্বরের ওষুধ
চলুন, জ্বর কমানোর ওষুধ হিসেবে সচারাচর আমরা যে ওষুধগুলো সেবন করে থাকি তার তালিকা দেখে নিই–
- প্যারাসিটামল (Paracetamol)
- নাপা(Napa)
- অ্যাসপিরিন (Aspirin)
- এইস(Ace)
- এইস প্লাস( Ace Plus)
- ইকোস্পিরিন(Ecosprin)
- এডমল(Admol)
- ক্যালপল(Calpol)
- নাপা এক্সট্রা (Napa Extra)
অনেকেই জানতে চান, জ্বর কত হলে ওষুধ খাওয়া উচিত। শরীরে ১০০-১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা হলে ভরপেট প্যারাসিটামল বা উক্ত জ্বর কমানোর ওষুধগুলো খেতে পারেন। ১০৩-১০৫ ডিগ্রি বা তার বেশি হলে অবশ্যিই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সাপোজিটরি কিংবা অন্যান্য ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ সেক্স বৃদ্ধির উপায় ও ওষুধ
৭. বার বার জ্বর আসার কারণ
জ্বর কমানোর ওষুধ আর্টিকেলটির এ পর্যায়ে, বার বার জ্বর আসার কারণ আলোচনা করছি। মূলত, এটির জন্য এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে। অনেকের জ্বর আসলে তার জন্য চিকিৎসক যে কয়দিনের ওষুধ দিচ্ছেন সেটি কয়েকদি খাওয়ার পর ভালো বোধ করলে ওষুধের কোর্স আর সম্পন্ন করতে চান না। পলে কিছুদিন ভালো হয়ে যাওয়ার পর আবার জ্বর আসে। এছাড়া, ঠান্ডাজনিত কোন সমস্যায় সাধারণত ঘনঘন জ্বর আসতে পারে।
এ বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেন, জ্বর আসলে কোন রোগ নয়, বরং এটি রোগের একটি লক্ষণ বা উপসর্গ। ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনে, টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, প্রস্রাবের রাস্তায় ইনফেকশন হলে, পিরিয়ডের কারণে, আকস্মিক ভয় পেলে বা মানসিক আঘাত পেলে, এমনকি স্ট্রেসে থাকলেও জ্বর হতে পারে। করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়ার মতো রোগেরও প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর আসা।
বিশেষ করে শিশুদের ঘন ঘন জ্বর আসে। তখন ডাক্তাররা সাধারণত দুটি জিনিস পরীক্ষা করে থাকেন- যে শিশুর অপুষ্টি রয়েছে কি না এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কি না। মনে রাখবেন প্যারাসিটামল খাওয়ার পরও বারবার জ্বর আসলে এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রা না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৮. জ্বর হলে কী খাওয়া উচিত
জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রোটিন ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার প্রতিবেলা ও প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা উচিত। জ্বর কমানোর ওষুধ আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা জানবো- জ্বর হলে কী খাওয়া উচিত। মাছ, মাংশ ডিম ছাড়াও
বিভিন্ন ধরনের ডাল এছাড়াও-
- বাদাম,
- মটরশুঁটি,
- ছোলা,
- সয়ামিট,
- মাশরুম
- তিসি
- চিয়াসিড ইত্যাদি খাবারে বেশ ভালো পরিমাণে প্রোটিন আছে।
- মাংস দিয়ে স্যূপ রান্না করে খেলেও এটি শরীরে শক্তি জুগিয়ে দূর্বলতা কমাবে।
- প্রচুর তরল পান করা।
ঋতু পরিবর্তনে বা মৌসুমি জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে প্রথম উপদেশ হিসেবে পাবেন, অন্যান্য প্রচুর তরল ও পানি পান করার। এর কারণ হলো জ্বরের কারণে তাপমাত্রা বাড়লে শরীর দ্রুত পানিশূন্যতার দিকে চলে যায়। তাই পর্যাপ্ত পানির সরবরাহ বাইরে থেকে গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু জ্বর কমানোর ওষুধ হলেই চলবে না। তরল হিসেবে যা গ্রহণ করতে পারেন–
- কুসুম গরম পানি
- ফলের সরবত
- ডাবের পানি
- চা- বা অন্য কোন ধরনের পুষ্টিকর তরল খাবারে কোন বাধা নেই।
অনেকে সর্দি হলে পানি খেতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না।
সর্দি- জ্বর হলে প্রতিদিন লক্ষ্য হওয়া উচিত ৮- ১২ গ্লাস পানি খাওয়া। আর বেশি বেশি তরল পান করলে সাধারণত তা দেহ থেকে জীবানুকে বের করে দিতে সহজ হয়।
শুধুমাত্র জ্বর কমানোর ওষুধ খেলেই চলবে না এ সময় শরীরে পানির পরিমাণে ভারসাম্য রাখতে হয়। প্রচুর ডাবের পানি ও বিভিন্ন ফলের রস পান করলে বেশ উপকার পাবেন। এছাড়া, নরম সেদ্ধ জাউ ভাত, পাতলা খিচুড়ি, বিভিন্ন সবজি দিয়ে বানানো স্যূপ ইত্যাদি রোগীকে খাওয়াতে হবে। এ সময় আদা দিয়ে চা খেলে বেশ উপকার পাবেন। কেননা আদা শরীরের জীবাণু দূর করে শরীরকে টক্সিন মুক্ত করে।
আরও পড়ুনঃ মাথা ব্যথা কমানোর উপায়
৯. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: জ্বরের সবচেয়ে ভালো ওষুধ কোনটি?
উত্তর: জ্বরে প্যারাসিটামল সচরাচর গ্রহণ করলে উপকার পাবেন। কেননা এটির খুব একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
প্রশ্ন ২: জ্বর হলে কি করা উচিত ঘরোয়া উপায়?
উত্তর: নরমাল পানিতে নরম কাপড় ভিজিয়ে ঘাড়, কুঁচকি ও বগলের মতো উচ্চতাপমাত্রা সম্পন্ন অংশে মুছিয়ে দিতে হবে। কপালে কয়েক মিনিট পরপর কাপড় বদলিয়ে রাখতে পারেন। রোগীকে তরল খাবার ও বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে।
প্রশ্ন ৩: একজন মানুষের জ্বর সর্বোচ্চ কত ডিগ্রি হয়?
উত্তর: স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৬.৮-৯৯.০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৬-৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর উপরে সাধারণত ১০৫ জ্বর হলেই ডাক্তারের নিকট রোগী শরানাপন্ন হয়ে থাকেন।
প্রশ্ন ৪: কত ঘন্টা পর পর প্যারাসিটামল খাওয়া যায়?
উত্তর: এটি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হয়ে থাকে৷ সাধারণত আমরা সাধারণ ডোজগুলে ৪-৬ ঘন্টা পরপর নিয়ে থাকি।
প্রশ্ন ৫: জ্বর হওয়ার কারণ কি?
উত্তর: যে কোন ধরনের দেহে সংক্রমণের কারণে জ্বর হতে পারে। সাধারনত বেশিরভাগ সাধারণ জ্বর ভাইরাস সংক্রমণে হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ৬: জ্বর কি?
উত্তর: স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়াকে জ্বর বলে।
প্রশ্ন ৭: ভাইরাস জ্বর কতদিন থাকে
উত্তর: এটি ভাইরাসের ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণ ভাইরাল জ্বর ৩-৫ দিনে ভালো হয় কারো কারো এক সপ্তাহ লাগতে পারে যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল।
প্রশ্ন ৮: জ্বরের তাপমাত্রা কত?
উত্তর: স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৬-৯৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর উপরের তাপমাত্রাগুলো সব জ্বরের তাপমাত্রা হিসেবে চিকিৎসকরা উল্লেখ করে থাকেন।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
১০. লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক, আমরা এতক্ষণ আলোচনা করেছি জ্বর কমানোর ওষুধ সম্পর্কে। এছাড়াও, জ্বর কমানোর ওষুধ, জ্বরের এন্টিবায়োটিক ট্যাবলেটের নাম, অতিরিক্ত জ্বর কমানোর উপায় বা দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় (জ্বর কমানোর ঘরোয়া পদ্ধতি), ১০৩/১০৫ ডিগ্রি জ্বর হলে করণীয়, জ্বর কমানোর এন্টিবায়োটিক কখন খাবেন, জ্বরের ওষুধ, বার বার জ্বর আসার কারণ ও জ্বর হলে কী খাওয়া উচিত ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে এবং আপনাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছি। মনে রাখবেন, শারীরিক যে কোন সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া শ্রেয়। আর্টিকেলে ভুল-ত্রুটি হলে উপযুক্ত তথ্য দিয়ে মন্তব্য আশা করছি। আরও আর্টিকেল পেতে The DU Speech এর সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ।
লেখক- তামান্না বেগম
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের সমস্যায় যা যা করবেন
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url