OrdinaryITPostAd

দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার নিয়ম!

দুধের সর ত্বক উজ্জ্বল করে, রুক্ষ-শুষ্ক ভাব দূর করে আর্দ্রতা ফেরায়, বলিরেখা ও দাগছোপ দূর করে, ত্বক নরম মসৃণ রাখে। এমনকি খুব ভাল ক্লিনজার হিসেবেও কাজ করে দুধের সর। আজকে আমরা দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো।দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে জানতে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. দুধের সরের ব্যাবহার
  2. ট্যান দূর করতে ও ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে
  3. ত্বক আর্দ্র রাখতে এবং ত্বক নরম ও তুলতুলে রাখতে
  4. স্ক্রাব হিসেবে দুধের সরের ব্যবহার
  5. ত্বকের ব্রণ কমাতে এবং মৃত কোষের আবরণ সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে
  6. দুধের সর ব্যবহার করার নিয়ম
  7. অন্য উপাদানের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ব্যবহার
  8. লেখকের মন্তব্য

১.দুধের সরের ব্যাবহার | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

নিয়মিত দুধ খেলে যেমন শরীর চাঙা থাকে, তেমনই দুধ ফোটানোর সময় যে সর পাওয়া যায়, সেটা ত্বকের যত্নে নানাভাবে কাজে আসে। বিশেষজ্ঞদের মতে,দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন করলে সরে উপস্থিত স্যাচুরেটেড ফ্যাট এক নয়, একাধিক ভাবে ত্বকের জেল্লা বাড়ায়। এই গরমে ত্বকের যাতে কোনও ক্ষতি হতে দেয় না। এমন প্যাচপ্যাচে গরমেও যদি ত্বকের জেল্লা ধরে রাখতে হয়, তাহলে প্রায় দিনই দুধের সর মুখে লাগিয়ে মালিশ করতে হবে।জীবন যাত্রার অভ্যাস এবং সূর্যের অত্যধিক সংস্পর্শের কারণে এরকম ঘটতে পারে। ত্বকের সৌন্দর্য বলতে দাগ ছোপহীন ও রোদে পোড়া ভাব নেই এমন চকচকে ত্বককে বোঝায়।

২.ট্যান দূর করতে ও ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

গরমে বাড়ির বাইরে বের হওয়া মাত্র ত্বক পুড়ে কালো হয়ে যায়। সঙ্গে মুখে দেখা যায় কালো ছোপ ছোপ দাগ। ফলে ত্বকের জেল্লা কমে যায়। সৌন্দর্যও কমতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ত্বকের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে নিয়মিত দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন শুরু করুন। ফল মিলবে হাতে-নাতে। এক্ষেত্রে, দুই চামচ দুধের সরের সঙ্গে এক চামচ বেসন মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর তা সারা মুখে লাগিয়ে সার্কুলার মোশনে অন্তত পাঁচ মিনিট মাসাজ করতে হবে। এরপরে দশ মিনিট অপেক্ষা। সময় হলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে কমপক্ষে তিনবার এই পেস্ট মুখে লাগালে দাগ- ছোপ তো কমবেই, সঙ্গে ট্যানও দূর হবে।

ত্বকে বয়সের ছাপ কমাতে দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন করা শুরু করতে পারেন। এতে উপস্থিত প্রোটিন, ভিটামিন এবং উপকারী ফ্যাট ত্বকের ভিতরে যাওয়া মাত্র কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিমেষে উধাও হয়ে যায় ত্বকে উপস্থিত বলিরেখা। সঙ্গে ত্বকের ইলাস্টিসিটিরও উন্নতি ঘটে, যে কারণে ত্বকের বয়স কম মনে হয়। পাশাপাশি বাড়ে উজ্জ্বলতা।

৩.ত্বক আর্দ্র রাখতে এবং ত্বক নরম ও তুলতুলে রাখতে | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

যাদের সারা বছরই ত্বক শুষ্ক থাকে তারা দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন করতে ভুলবেন না। কারণ, দুধের সর হল প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার, যা ত্বকের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। পাশাপাশি স্কিন সেলের নানা ক্ষত ও দূর করে। ফলে ত্বক সুন্দর হয়ে ওঠে। উপকার পেতে এক চামচ দুধের সরের সঙে সম পরিমাণ মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। সময় হলে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে অন্তত দুইবার এই ভাবে ত্বকের যত্ন নিতে হবে।

এক চামচ দুধের সরের সঙে সম পরিমাণে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে কমপক্ষে বিশ মিনিট অপেক্ষা করুন। সময় হয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ভাল করে মুখ ধুয়ে নিন। একদিন পরপর যদি এইভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়, তাহলে ত্বকের ভিতরে অ্যান্টিঅক্সিডান্ট এবং উপকারী ফ্যাট সহ একাধিক উপকারী উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যে কারণে অল্প সময়ই ত্বক নরম এবং তুলতুলে হয়ে ওঠে। সঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। একইসাথে ত্বকে কোনো দাগ ছোপ থাকলে তারাও মিলিয়ে যায়।

৪.স্ক্রাব হিসেবে দুধের সরের ব্যবহার |  দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন  

প্রতিনিয়ত আমাদের ত্বকের উপরে মৃত কোষ জমা হয়, যে কারণ ত্বকের জেল্লা বা উজ্জ্বলতা কমে। তাই সৌন্দর্য ধরে রাখতে মৃত কোষ তুলে ফেলতে হয়। আর সেই কাজটা করতে অনায়াসেই কাজে লাগানো যেতে পারে দুধের সরকে। এক্ষেত্রে প্রথমেই এক চামচ ওটস নিয়ে মিহি করে গুঁড়ো করে নিতে হবে। তারপর তাতে সম পরিমাণে দুধের সর মিশিয়ে তৈরি পেস্ট মুখে লাগিয়ে পাঁচ মিনিট ভালো করে ঘষতে হবে। এবার দশ মিনিট অপেক্ষা করে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। সপ্তাহে দুইবার এভাবে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। এভাবে দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন করতে হবে।

৫.ত্বকের ব্রণ কমাতে এবং মৃত কোষের আবরণ সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

ত্বকের ব্রণ কমাতে দুধ ও দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন  খুবই কার্যকরী। এক্ষেত্রে দুই চামচ দুধের সরের সঙ্গে এক চামচ মধু এবং অল্প পরিমাণে গরম পানি মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। তারপর সেই পেস্টটা মুখে এবং গলায় লাগিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। এরপর মুখটা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। প্রসঙ্গত, নিয়মিত দুধ খাওয়া শুরু করলেও কিন্তু সমান উপকার পাবেন।

ত্বকের উপরে জমতে থাকা মৃত কোষেদের কারণে ত্বকের সৌন্দর্যটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ত্বকের পরিচর্যায় দুধের সরকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না। এক্ষেত্রে অল্প পরিমাণ পানি নিয়ে তাতে এক চিমটি লবণ দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর তাতে দুধের সর মিশিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপর সেই মিশ্রনটি মুখে লাগিয়ে ভাল করে মাসাজ করলেই ফল পাওয়া যাবে।

৬.দুধের সর ব্যবহার করার নিয়ম | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

প্রথমত বলা যায় যে, দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন একটি ফেসিয়াল মাস্ক হিসেবে কাজ করে থাকে। সাধারণ অনেকে দুধের সরকে সরাসরি ত্বকে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকে এভাবে
  1. প্রথমে ph এর মাত্রা কম এমন একটি ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
  2. আঙুলের নরম অংশ দিয়ে দুধের সর নিয়ে, তা আলতো করে সারা মুখে লাগিয়ে নিতে হবে। 
  3. ১০ থেকে ২০ মিনিট মুখে দিয়ে রাখতে হবে।
  4. মুখ শুকিয়ে গেলে, হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলে নিতে হবে।
  5. পরবর্তীতে একটি পরিষ্কার টাওয়াল দিয়ে তা পুরো মুখ মুছে নিতে হবে।

৭.অন্য উপাদানের সাথে দুধের সর মিশিয়ে ব্যবহার | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

রূপচর্চার ক্ষেত্রে, স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য, যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করে আসছে মধু, এলোভেরা, হলুদ এবং দুধ। গবেষণায় বলা হয়,দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন করার পাশাপাশি নিম্নোক্ত উপাদানসমূহ আপনার স্কিনের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে ভূমিকা পালন করে থাকে।

  • মধু

মধু ত্বকের কালো দাগ দূর করে, ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলে। এছাড়া, ত্বকের মধ্যে ভাজ পরা কিংবা কোমল করে।মধু ত্বকের বলিরেখা কমিয়ে তারুণ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। দুধের সরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক ময়েশ্চারাইজ হবে এবং তারুণ্যতা বজায় থাকবে।১ টেবিল চামচ দুধের সরের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ মধু ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি পুরো মুখে সমানভাবে লাগান। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন।

  • এলভেরা

সামান্য পরিমাণে এলোভেরার আপনার স্কিনকে হাইড্রোইড করতে সাহায্য করে। কারণ এলোভেরাতে বিদ্যমান রয়েছে এন্টি এরেন্থিন। এরেন্থিন ত্বকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন কিংবা ক্ষত থেকে সেরে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করে থাকে।অ্যালোভেরা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে, ছিদ্র আঁটসাঁট করে এবং ব্রণ ও বলিরেখা কমায়। এটি শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতাও ফিরিয়ে আনে। দুধের সরের সঙ্গে অ্যালোভেরার মিশ্রণ ত্বককে হাইড্রেট করে এবং তারুণ্যতা বজায় রাখে।২ টেবিল চামচ দুধের সরের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর ঠান্ডা জলে মুখ ভাল ভাবে ধুয়ে ফেলুন।

  • হলুদ

হলুদে বিদ্যমান রয়েছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল, এন্টি ফেলমেন্টরি এন্টিঅক্সিডেন্ট।যা আমাদের ত্বক ভাল রাখে।দুধের সরের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হবে। ১ চা চামচ দুধের সরের সঙ্গে ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে সারা মুখে সমানভাবে লাগান। কয়েক মিনিট রাখুন। তবে ১০ মিনিটের বেশি রাখবেন না, কারণ হলুদের কারণে ত্বকে দাগ পড়তে পারে। তারপর মুখ ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন।

৮.লেখকের মন্তব্য | দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন 

যদি আপনার স্কিনে কোন ধরণের এলার্জি জনিত সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে আপনি দুধের সর ব্যবহার করলে এলার্জির তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। আপনি যদি জেনে না থাকেন যে, দুধের আপনার এলার্জি আছে কিনা? তাহলে কোন ডাক্তার কিংবা ডার্মাটোলজিস্ট এর কাছে শরণাপন্ন হতে পারেন। ত্বকে যেকোনো ধরণের নতুন কোন পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আজকে আমরা আপনাদের সাথে দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করছি দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবে জানতে পেরেছেন।দুধের সর দিয়ে ত্বকের যত্ন সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্ন অথবা মতামত আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ত্বকের যত্ন সম্পর্কে আরো জানতে আমাদের ওয়েবসাইট THE DU SPEECH ভিজিট করতে পারেন।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা 
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url