OrdinaryITPostAd

অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কী?

বর্তমানে আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়েই জীবন এর কোনো না কোনো পর্যায়ে মাসিকজনিত সমস্যায় ভুগে। যার মধ্যে অন্যতম অনিয়মিত মাসিক হওয়া।কিন্তু অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কী?অনিয়মিত মাসিক কেন হয়? এই বিষয়ে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই।আজকের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কী বা অনিয়মিত মাসিক কেন হয়- তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।তাহলে,অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কী? বা অনিয়মিত মাসিক কেন হয়? - তা জানার জন্য এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়ুন। 


একজন মেয়ে বা নারীর জীবনে মাসিক বা পিরিয়ড একটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক বিষয়। নারীদের প্রজনন সুস্থতা প্রকাশ্যে মাসিক এর গুরুত্ব মাসিকের গুরুত্ব অপরিসীম। তবুও এখনো আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ মাসিক নিয়ে সরাসরি কথা বলতে লজ্জাবোধ করে। যার কারণে কিশোরী ছাড়াও অধিকাংশ নারীর মধ্যে মাসিক সম্পর্কিত অজ্ঞতা থেকেই যায়। যার ফলশ্রুতিতে নারীদের নানা ধরনের মাসিক বা পিরিয়ড জনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মাসিক কোনো রোগ নয় বা নারীর মাসিক লজ্জার কোনো বিষয় নয়। নিয়মিত মাসিক নারীর প্রজনন সুস্থতা নির্দেশ করে।আর অনিয়মিত মাসিক নারীর প্রজনন অসুস্থতা নির্দেশ করে। 

অনুচ্ছেদ সূচিঃ 

  • মাসিক কী?  
  • মাসিকের সময়কাল
  • মাসিক শুরু হওয়ার লক্ষণ
  • মাসিক চক্র ও মানসিক পরিবর্তন 
  • মাসিকের অস্বাভাবিক লক্ষণ
  • অনিয়মিত মাসিক 
  • অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ?  অনিয়মিত মাসিক কেন হয়?  

মাসিক কী?  

বিভিন্ন যৌন হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের জরায়ু নিঃসৃত রক্ত ও তরল পদার্থ যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে যাকে মাসিক বা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলে।

মাসিক নারীদেহের একটি জৈবিক প্রক্রিয়া । মাসিক শুরুর মাধ্যমে একজন নারীর সন্তান জন্মদানের জন্য প্রাথমিক ক্ষমতা অর্জিত হয়। যদিও মাসিক নিয়ে মেয়েদের মধ্যে অনেক সংকোচবোধ দেখা যায়। তবে মাসিক মেয়েদের জীবনে সংকোচ বোধের বিষয় না, মাসিক একটি স্বাভাবিক বিষয় বরং মাসিক একটা নারীর গর্ব। কারণ মাসিক হয় বলেই একজন নারী মা হওয়ার গৌরব অর্জন করতে সক্ষম হয়।

মাসিকের সময়কাল

নারীদেহে গোনাডোট্রপিক হরমোন এর প্রভাবে 12 থেকে 15 বছর বয়সে মাসিক চক্রের সূত্রপাত ঘটে এবং 45 থেকে 50 বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। তবে মেয়েদের শারীরিক গঠন ও হরমোনের প্রভাবে অনেক সময় মাসিক শুরু হওয়ার সময়ের তারতম্য হতে পারে।

মেয়েদের মাসিক সাধারণত 2-7 দিন স্থায়ী হয়। তবে অধিকাংশ মেয়েদের মাসিকের সময়কাল 4-5 দিন হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে মাসিক সর্বোচ্চ 10 দিন পর্যন্ত চলতে পারে। যদি কারোর মাসিক সাত দিনের পরও চলতে থাকে তাহলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত মাসিক হিসেবে পরিগণিত হয়। প্রত্যেক মাসিকের পরিমাণ 30 থেকে 40 মিলিমিটার।

সাধারণত মাসিক চক্রের সময়কাল 28 দিন। তবে অনেক ক্ষেত্রে 21 থেকে 35 দিনও হতে পারে। মাসিক চক্রের সময়কাল যদি 21 দিনের কম অথবা 42 দিনের বেশি হয় ,তাহলে তা অস্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।

45 থেকে 50 বছরের পরে মেয়েদের রজঃনিবৃত্তি কাল শেষ হয়ে যায় বা মাসিক চক্র বন্ধ হয়ে যায়, একে মেনোপজ বলা হয়। মেনোপজের সাথে সাথে নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা হারায়।

মাসিক মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা সূচনা ঘটায়। নারীর সন্তান ধারণ ক্ষমতা নির্দেশ করে, মাসিক প্রতিমাসে একবার গর্ভধারণের সুযোগ সৃষ্টি করে। নিয়মিত মাসিক মেয়েদের প্রজননিক সুস্থতার বহিঃপ্রকাশ। অনিয়মিত মাসিক মেয়েদের বিভিন্ন শারীরিক ও যৌন সমস্যা সৃষ্টি করে।

মাসিক শুরু হওয়ার লক্ষণ 

মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার পূর্বে কিছু কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হয়। মাসিক শুরু হবার পূর্বের সময় মেয়েদের শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত বিশেষ কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। মাসিক শুরু হবার পূর্বে এই বিশেষ লক্ষণগুলোকে প্রেমেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা মাসিক পূর্বকালীন লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রতিমাসে মেয়েদের মাসিক হওয়ার পূর্বে শারীরিক, মানসিক ও আচরণগত যেসকল লক্ষণ দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম লক্ষণ গুলো হলো-

  • তলপেটে ব্যথা 
  • মাঝে মাঝে বমি বমি ভাব 
  • ঘুমে অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে 
  • হালকা জ্বর হতে পারে 
  • মাথাব্যথা হতে পারে 
  • মেজাজ খিটখিটে হতে হয়
  • ঘন ঘন মুড সুইং হয়।

মাসিক শুরু হওয়ার পূর্বে সাধারণত মেয়েদের ঘন ঘন মেজাজ বা আচরণ এর তারতম্য দেখা যায়। এছাড়াও  অনেকের মাসিক শুরু হওয়ার আগে হালকা পেট ব্যথা বা বমি বমি ভাব দেখা যায়।

নারীর মাসিক চক্র ও মানসিক পরিবর্তন! 

মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়ার 1-2 সপ্তাহ আগের সময়কে পিএমএস হিসেবে গণ্য করা।প্রে-মেনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম  বা পিএমএস এর সাথে মুড সুইং এর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা স্ত্রী হরমোনকেই পিএমএস  এর জন্য দায়ী করেছেন। মেয়েদের শরীরে থাকা স্ত্রী হরমোন সমূহ একেক সময় একেকটি নির্দিষ্ট অনুপাতে নিঃসরিত হয়। আর এই হরমোন নিঃসরণের তারতম্যের কারণে মেয়েদের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটে। কখনোবা হাসিখুশি কখনো ভীষণ বিষন্ন এগুলো সবই  মেয়েদের হরমোনের তারতম্যের কারণে ঘটিত মুড সুইং এর ফসল।

মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল 28 দিন এমন নারীদের জরায়ু এন্ডোমেট্রিয়ামের পরিবর্তনের ভিত্তিতে মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল কে চার ভাগে ভাগ করা যায়-

1. নিরাময় পর্ব ( Regenerative phase) 

মাসিক শেষ হওয়ার পর প্রথম সপ্তাহ নিরাময় পর্বের অন্তর্ভুক্ত। মাসিক পর্ব শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পর্ব শুরু হয় ।এই সময়ে স্ত্রী হরমোন FSH,LH, ইস্ট্রোজেনের মাত্রা অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে । ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে মেয়েদের মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক বা অল্প অল্প করে প্রফুল্ল হতে থাকে হতে থাকে।এবং মুড সুইং ক্রমশ কমতে থাকে। 

2. বৃদ্ধি পর্ব (Proliferative phase) 

মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল এর 7-14 তম দিন পর্যন্ত এই পর্ব হিসেবে গণ্য করা হয়। এ সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং 12 তম দিনে তা সর্বোচ্চ হয়। 13-14 তম দিনের মাথায় ইস্ট্রোজেন হরমোন ক্ষরণ আবার পুনরায় হৃাস পেতে শুরু হয়। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকায় এই পর্বে মেয়েদের মানসিক অবস্থা সবচেয়ে বেশি প্রফুল্ল থাকে।

3. প্রাক-রজ:স্রাবীও পর্ব(Pre- menstrual Syndrome) 

মেনস্ট্রুয়াল সাইকেলের 15-21 তম দিন পর্যন্ত প্রাক রজঃস্রাবীয় পর্বের অন্তর্ভুক্ত। এ সময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা তরতরিয়ে কমতে থাকে ।ইস্ট্রোজেনের এই উথান-পতন মেয়েদের মানসিক অবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে যা মুড সুইং এ ভোগায়। যাকে প্রি-মেন্সট্রুয়াল সিনড্রোমও বলে। এ সময় মেয়েদের মাঝে হতাশা, অবসাদ, বিষন্নতা ,অল্পতে রেগে যাওয়া, কান্নাকাটি করা ,খিটখিটে মেজাজ  ইত্যাদি যাবতীয় নেতীবাচক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়।

এছাড়াও পিএমএস এর সময় শারীরিক যেসব লক্ষণ দেখা যায়-

  • খেতে অনিচ্ছা
  •  পেটের পেশিতে ব্যথা 
  • মাথা ব্যথা 
  • বমি বমি ভাব
  •  ঘুম না হওয়া ইত্যাদি।
এই লক্ষণগুলি পুনরায় পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগাম খবর জানান দেয়।

পরবর্তী মাসিক শুরু হওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি চলে এই পর্বে। এজন্য এসময় অধিকহারে শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেয়। ফলশ্রুতিতে মেয়েরা এই সময়ে অধিক পরিমাণে মুড সুইং এর শিকার হয় । ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা তরতরিয়ে কমে যাওয়াকে এর জন্য দায়ী করা হয়।

4.ব্লিডিং পর্ব (Bleeding phase)

মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল এর 22-28 তম দিন এই পর্বের অন্তর্ভুক্ত। এই সময় মেয়েদের দেহে স্ত্রী হরমোন FSH,LH,ইস্ট্রোজেন ,প্রজেস্টেরন ইত্যাদির মাত্রা সর্বনিম্ন থাকে। এছাড়াও এ সময় রক্তক্ষরণের কারণে শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয় ‌।ফলে মেয়েদের মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং মুড সুইং ঘনঘন দেখা দেয় ।খুব সামান্য কারণে তীব্র মন খারাপ ,কান্নাকাটি ইত্যাদি সব লক্ষণ এ সময় অধিকহারে প্রকাশিত হয় ।শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা যত কমতে থাকে মানসিক অবস্থা ও ততো ভারসাম্যহীন হতে থাকে।

মাসিকের অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ সমূহ

অধিকাংশ নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক সংকোচ বোধের বিষয়। এই সংকোচ বোধের কারণে তারা মাসিক সম্পর্কিত সঠিক ধারণা ও সচেতনতা থেকে দূরে থাকে।অনেকে অনিয়মিত মাসিক নিয়েও বিচলিত হয় না। মাসিকের অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ রয়েছে, যা আপনার মধ্যে দেখা গেলে খুব দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। মাসিকের অস্বাভাবিক কিছু লক্ষণ নিম্নরূপ- 

  • 7 থেকে 10 দিনের বেশি সময় ধরে মাসিক চলতে থাকা
  • মাসিক চলাকালীন সময়ে বা মাসিক শুরুর পূর্বে  তলপেটে তীব্র ব্যথা অনুভব করা
  • মাসিকে মাত্রা অতিরিক্ত রক্তপাত
  • মাসিকের রক্তের সাথে ঘন ও কালো রক্ত যাওয়া
  • মাসিক চলাকালীন সময়ে তীব্র জ্বর হওয়া
  • মাসে একাধিকবার মাসিক হওয়া
  • দুই মাসিকের মাঝখানে মাসিক হওয়া 
  • অনিয়মিত মাসিক হওয়া
  • দীর্ঘদিন মাসিক না হওয়া ইত্যাদি
উল্লেখ্য লক্ষণসমূহ হচ্ছে মাসিকের অস্বাভাবিক লক্ষণ। আপনার মধ্যে এই মাসিক জনিত অস্বাভাবিক  লক্ষণসমূহ দেখা দিলে অতি শীঘ্রই স্ত্রী বা হরমোন  বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁত কী?
 

অনিয়মিত মাসিক 

প্রতিমাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে মেয়েদের মাসিক শুরু ও শেষ হয়। এই নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পিছে মাসিক শুরু হওয়া কে অনিয়মিত মাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে 21 দিনের আগে অথবা 35 দিনের পরে মাসিক শুরু হওয়া অস্বাভাবিক বা অনিয়মিত মাসিক হিসেবে মনে করা হয়। অনিয়মিত মাসিক এর অনেক কারণ রয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ নিম্নরূপ: 

  • পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রম 
  • হরমোনগত কারণ
  • উচ্চচাপ 
  • মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমানো 
  • স্থূলতা
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল
  • মানসিক চাপ
  • মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম করা
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ
  • কোনো মেডিসিন এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 
  • মেয়েদের জরায়ু পলিপ
  • ফাইব্রয়েড টিউমার 
  • জরায়ু প্রদাহ 
  • এন্ড্রোমেট্রিওসিস
  • বয়স

অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ কী?  অনিয়মিত মাসিক কেন হয়?  

অনিয়মিত মাসিকের উল্লেখযোগ্য কিছু কারণ!

১. পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম

বর্তমান সময়ে নারী দেহে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পলিসিস্টিক অভারি সিন্ড্রোম।নিন্মে পলিসিস্টিক অভারি সিন্ড্রোম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো -

নারীদেহে এন্ড্রোজেন (পুরুষ হরমোন) এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে সংঘটিত হরমোনজনিত ব্যাধির নাম হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম। 

পলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম হলে পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তৃক অতিরিক্ত লুটিনাইজিং হরমোন নিঃসরণ ও ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের এর উপস্থিতিতে ডিম্বাশয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি হতে থাকে।

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর প্রভাবে নারীদেহে ডিম্বাশয় বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক দেখা যায়। এতে বন্ধত্ব ,অনিয়মিত মাসিক ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পলি শব্দের অর্থ হচ্ছে বহু বা অনেক। অর্থাৎ পলিসিসটিক মানে অনেক বা বহু সিস্ট। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর প্রধান ও মুখ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নির্গত না হওয়া। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে জরায়ুতে ডিম্বাণু নির্গত হয় না এবং ডিম এর চারপাশে তরল জমে সিস্ট এ পরিণত হয়। ডিম্বাশয়ে এরুপ বহু সিস্ট সৃষ্টি হওয়ার কারণেই এই রোগকে পলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম বলা হয়। তবে বিরল কিছু ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় একাধিক নাও থাকতে পারে।

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম ও অনিয়মিত মাসিক

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম আক্রান্ত মহিলাদের শরীরে উচ্চমাত্রায় পুরুষ হরমোন গুলো উপস্থিত থাকে, যার মধ্যে অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এন্ড্রোজেন হরমোন এর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেলে মাত্রাতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ফলে ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক সিস্ট তৈরি হতে থাকে। অপরদিকে প্রতিমাসে নারীদেহে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যার ফলে নারীদের মাসিক নিয়মিত থাকে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা , তা  সিস্ট এর কারণে বের হয়ে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এক সময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক না হয়ে অনেকগুলো ডিম্বাণু একসাথে পরিপক্ক হওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে কোনো ডিম্বাণুই পর্যাপ্ত পরিপক্ক হতে পারে না। যার কারণে ডিম ফুটে বের হয়ে আসতে পারে না। ফলশ্রুতিতে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে মাসিক হয় না এমন সমস্যায় নারীরা অধিক হারে ভুগতে থাকে।

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণ

রজঃনিবৃত্তি কাল অর্থাৎ 18 থেকে 44 বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে এন্ডোক্রিন গ্রন্থি এর সবচেয়ে কমন রোগ হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য মহিলাদের উর্বরতা কমে যাওয়াই হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর প্রধান কারণ । রজঃনিবৃত্তিকালে 2 থেকে 20 শতাংশ নারী এই রোগে আক্রান্ত।

অধিকাংশ সময়ে পলিসিসক ওভারি সিন্ড্রোম সাধারণত দুই কারণে লক্ষ্য করা যায়: 

  • জীনগত কারণ 
  • পরিবেশগত কারণ
পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর পূর্ববর্তী প্রজন্মের কেউ অর্থাৎ মা দাদী বা কেউ পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। একে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর জীনগত কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আবার অনেক সময় সাধারোনত বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীরা পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়াও নারীদের মাত্রাতিরিক্ত দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ , অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই না করা বা একেবারে কম করা ইত্যাদি নারীদেহে  একে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার পরিবেশগত কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ সময়ই পরিবেশগত কারণে নারীরা পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়।
জীনগত ত্রুটি সম্পন্ন নারীর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ ও পরিশ্রম না করা ইত্যাদি এসব গুণগুলো পলিসিস্টক ওভারি সিনড্রোম এর ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয় । পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম হচ্ছে নারীদেহে জীনগত ও পরিবেশগত ত্রুটির সমাহার।
পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর লক্ষণ

আপনার শরীরের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আপনি পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত। স্পেসিফিক কিছু বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত করা যায়। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে নারীদেহে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য লক্ষণ সমূহ নিম্নরূপ: 

অনিয়মিত মাসিক

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের দেহে এন্ড্রোজেন হরমোন এর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেলে মাত্রাতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ফলে ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক সিস্ট তৈরি হতে থাকে।  প্রতিমাসে নারীদেহে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যার ফলে নারীদের মাসিক নিয়মিত থাকে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা , তা  সিস্ট এর কারণে বের হয়ে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এক সময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।  ফলশ্রুতিতে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে মাসিক হয় না এমন সমস্যায় নারীরা অধিক হারে ভুগতে থাকে।

অতিরিক্ত রক্তস্রাব

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের সাধারণত মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়। বেশিরভাগ সময়ই পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর দীর্ঘদিন পর পর মাসিক শুরু হয়। মাসিক শুরু হওয়ার পরে মাসিকের সাথে রক্ত স্রাব এর পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং অনেক সময় ও রোগী তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে থাকে। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর মাসিক চলাকালীন সময়ে রক্তস্রাব এর পরিমাণ স্বাভাবিক রক্তচাপ এর থেকে অনেক বেশি হয় এবং মাসিক চক্র স্বাভাবিক মাসিকচক্রও থেকে বেশিদিনের হয় । অধিকাংশ সময় পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের অনিয়মিত মাসিক চক্র চলতে থাকে।

বন্ধ্যত্ব

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণে নারীদেহের জরায়ুতে পরিপক্ক ডিম্বাণুর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । পরিপক্ক ডিম্বাণু ও অনিয়মিত মাসিক চক্রের কারণে নারীদেহ সন্তান জন্মদানে অনুর্বর হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার নারীর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত।

মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত লোম

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন এর উপস্থিতিতে মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে দেখা দেয়।কখনো শরীরের বিভিন্ন অংশে (ঘাড় ,বগল ইত্যাদতে)  ঘন কালো স্পট দেখা দিতে পারে। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজন নারীর দেহে উল্লেখ্য উপসর্গগুলো লক্ষ্য করা যায়।

মেটাবলিক ডিসঅর্ডার

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর দেহে ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের কিছু লক্ষণ দেখা যায় । 

যেমন -

  • দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, 
  • ক্ষুধা বৃদ্ধি 
  • দুর্বল অনুভব করা 
  • স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া 
  • রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া 
  • কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের দেহে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে । যার কারণে এদের শরীরে আরো  উল্লেখযোগ্য কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে যার মধ্যে অন্যতম-

  • স্থূলতা 
  • ঘুমের সময় নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া 
  • নাক ডাকা 
  • হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া 
  • জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া 
  • মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি ।

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত অধিকাংশ নারীদের মধ্যে উল্লেক্ষ্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। কোন নারীর মধ্যে এই লক্ষণগুলো শনাক্ত করা গেলে তাকে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত বলে গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য লক্ষণগুলো কারো দেহে সনাক্ত করা গেলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

নারীদেহে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম সনাক্তকরণ এর উপায়

কোন নারী পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা শনাক্তকরণের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়ার ওপর ভিত্তি করে বোঝা যায় নারী পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম শনাক্তকরণের উল্লেখযোগ্য কিছু ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে -

  • নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন টেস্টোস্টেরনের ও এন্ড্রোজেন হরমোন এর উপস্থিতি
  • অনিয়মিত মাসিক
  • ডিম্বাশয় অসংখ্য সিস্ট এর উপস্থিতি
পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম শনাক্তকরণের জন্য বহুল ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিম্নরূপ:
  • সিরাম টেস্টোস্টেরন  বা এফ এস এইচ
  • আলট্রাসনোগ্রাফি
  • ওজিটিটি।
রক্তে এন্ড্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি নির্ধারণ করার জন্য সিরাম টেস্টোস্টেরন বা এফএসএইচ টেস্ট করা হয়। এছাড়াও জরায়ুতে সিস্ট এর উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য আল্ট্রাস্লো করা হয়। অসংখ্য সৃষ্টবস্তু থাকলে তা আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে বোঝা যায়।
উল্লেখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম কনফার্ম হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উত্তম।

পপলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম এর চিকিৎসা 

জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও নিয়মিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলে পলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম চিকিৎসা হিসেবে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করাকরি মূল চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুরুষালি হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের মেডিসিন গ্রহণ করা লাগে।

জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন

  • স্থূলতা রোধ করা
  • তেল জাতীয় খাদ্য ফাস্টফুড, জাংক ফুড এড়িয়ে চলা
  • সবুজ ও রঙিন শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
  • শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাবার তালিকায় বেশি রাখা
  • নিয়মিত রঙিন ফলমূল খাওয়া
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা 

চিকিৎসাগত পদ্ধতি

নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ গ্রহন করতে হবে।নারীদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত  পিলগুলোতে স্বল্পমাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন থাকে। যা নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

অপরদিকে মেটফর্মিন নারীদের হরমোনগত কারণে অতিরিক্ত ও অবাঞ্ছিত লোম দূর করার ক্রিম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ছাড়াও পলিসিসটিক সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কিছু ঔষধপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন।

আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতন। এজন্য তারা এই সকল রোগের অধিক ভোগে। অথচ প্রাথমিক অবস্থায় এই সকল রোগ শনাক্তকরণ এর মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করলে খুব তাড়াতাড়ি পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায় 

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। আপনি চাইলে আপনার স্বাভাবিক ও সঠিক জীবন-যাপনের মাধ্যমে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি পেতে পারেন। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায় গুলো আমাদের জীবন যাপনে খুবই সাধারণ কিছু প্রক্রিয়া। আমরা চাইলে অতি সহজেই পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায় গুলো আমাদের ব্যবহারিক জীবনে মেনে চলতে পারি। পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উল্লেখযোগ্য উপায় সমূহ নিম্নরূপ: 

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ
  • ওজন রোধ করা
  • শারীরিক পরিশ্রম করা

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর সর্বপ্রথম করণীয় কাজ সর্বোত্তম ও চিকিৎসা হচ্ছে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। এক্ষেত্রে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীকে সর্বপ্রথম খাদ্য গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে। পলিসিস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীকে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর খাদ্য তালিকায় শর্করার পরিমাণ কম থাকতে হবে এবং শাকসবজির পরিমাণ অধিক থাকতে হবে। তবে শাক সবজির মধ্যে আলু পরিহার করাই শ্রেয়। এছাড়াও রঙিন ফলমূল খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখতে হবে তেল জাতীয় খাদ্য, জাঙ্কফুড ,ফাস্টফুড ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের সুশৃংখল খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য আদর্শ বিএমআই অনুসরণ করতে হবে। স্থূলতা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়, স্থূলতা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । এজন্য পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের তাদের ওজন বৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

এছাড়াও এই রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য নিয়মিত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস থাকতে হবে বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম সফলতার সম্ভাবনা অনেকটাই কমায়। এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে মেটাবলিক ডিসঅর্ডার এর সম্ভাবনা কমায় । এজন্য পলিসিসটিক ওভারি সিন্ড্রোম রোধ করার জন্য শারীরিক পরিশ্রমের ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

২. হরমোনগত কারণ 

বিভিন্ন যৌন হরমোনের অসামঞ্জস্যতার কারণে অধিকাংশ সময় মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক দেখা দেয়। মেয়েদের অনিয়মিত মাসিকের হওয়ার কারণ হিসেবে অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড জনিত হরমোনগুলো অধিকাংশ সময় দায়ী  থাকে। মেয়েদের মাসিক চক্র সম্পূর্ণভাবে হরমোন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মাসিক চক্রের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট হরমোন নির্দিষ্ট পরিমাণে নিঃসরিত হয় এবং মাসিক চক্র নিয়মিত রাখে। এই মাসিক চক্রের যেকোনো সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণের অধিক বা কম পরিমাণে নির্দিষ্ট হরমোন নিঃসৃত হতে থাকলে সমস্যা দেখা দেয় ফলশ্রুতিতে অনিয়মিত মাসিক পরিলক্ষিত হয়।হরমোন গত কারণকে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৩. জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা কোনো মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল নারীদেহের মাসিক চক্রের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে,যা অনেক সময় অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হিসেবে গন্য হয়। বিশেষ করে নিয়মিত পিল গ্রহণ মাসিক চক্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলে হরমোন উদ্দীপক উপাদান থাকে, মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হতে পারে।

এজন্য যেকোনো জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ব্যবহার এর পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।

জন্মনিয়ন্ত্রন পিল এর পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের জন্য গ্রহণকৃত মেডিসিন ও অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হতে পারে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মেডিসিন গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে। 

৪. স্থূলতা বা ওজনহীনতা বা মাত্রাতিরিক্ত ওজন কমানো! 

নারী দেহের স্থুলতা বা অতিরিক্ত ওজনহীনতা মাসিক চক্রের ওপর প্রভাব ফেলে।ফলশ্রুতিতে অনেক সময় অনিয়মিত মাসিক লক্ষ করা যায়।স্থুলতা নারী দেহে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর সম্ভাবনাও অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়।এক্ষেত্রে নারীরা বড় কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। 

অপরদিকে মাত্রাতিরিক্ত ওজন হীনতাও নারী দেহে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে সাধারণত দীর্ঘদিন নারীর মাসিক বন্ধ থাকে বা মাসিকজনীত নানাবিধ সমস্যা হতে পারে । বিশেষ করে যেসব নারীরা ডায়েট কন্ট্রোল করে,তাদের এই বিষয় টা মাথায় রেখে খাদ্যের গুনগত মান বিচার করে খাদ্য গ্রহণ করা উচিৎ। 

৫. মানসিক চাপ বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম 

একটা মানুষের মানসিক চাপ তার শরীর এর উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে মানব দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়।এতে নানাবিধ হরমোনাল পরিবর্তন আসে এবং মাসিকচক্র স্বাভাবিক থাকে না। ফলশ্রুতিতে অনিয়মিত মাসিক দেখা দেয়।এজন্য মানসিক চাপকে অনিয়মিত মাসিক এর কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। 

অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম এর কারণেও অনিয়মিত মাসিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে,মাসিক চলাকালীন সময়েও অনেক নারীরা অধিক শারীরিক পরিশ্রম করে থাকে যা পরবর্তীতে অনিয়মিত মাসিক, মাসিক চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত ব্যাথা ইত্যাদির কারণ হয়ে থাকে।এজন্য একটা স্বাভাবিক প্রজনন স্বাস্থ্য পরিচালনা করার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম পরিহার করা উচিৎ। 

৬. ফাইব্রয়েড টিউমার

ফাইব্রয়েড হচ্ছে জরায়ু টিউমার।জরায়ু তে ফাইব্রয়েড একটা বা অনেকগুলো হতে পারে। ফাইব্রয়েড এর আকার যত বাড়তে থাকে, শারীরিক জটিলতা বা রোগের উপসর্গও ততই বাড়তে থাকে।ফাইব্রয়েড এর লক্ষন গুলোর মধ্যে রয়েছে তলপেটে মৃদু থেকে তীব্র ব্যাথা,পেটে অস্বস্তি, তলপেটে ভারী ভাব,ইত্যাদি। তবে অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ হিসেবেও দ্বায়ী এই ভাইব্র‍য়েড টিউমার।তবে অনিয়মিত মাসিক মানেই ফাইব্রয়েড ভেবে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া জরুরি প্রথমে। সাধারণত আল্টাসোনোগ্রাম এর মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা সম্ভব। 

৭. বয়স

নারী দেহে বয়সের তারতম্য এর কারণেও অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। বিশেষ করে রজনীবৃত্তি কাল শেষের দিকে অর্থাৎ নারীদের মাসিক বন্ধ্ হওয়ার পূর্বে অনিয়মিত মাসিক দেখা যায়।এছাড়াও কিশোরী বয়সে মাসিক প্রথমদিকে শুরু হওয়ার সময় ও অনেকের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। তবে মাসিকজনীত যেকোনো সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অতীব জরুরী। 

আশা করি, অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url