আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা! [পুষ্টিগুণ সহ]
খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে এবং রক্তে লৌহের পরিমান ঠিক রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে আয়রন গ্রহনের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার আমাদের দেহের আয়রনের অভাব পূরন করে। তাই প্রত্যেকের আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী খাবার তালিকা তৈরি করতে হবে। আজকের আর্টিকেলে আমরা মোটামুটি ভাবে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা প্রদানের চেষ্টা করব।
সংক্ষেপে জেনে নিন | |
---|---|
প্রশ্ন | আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা |
উত্তর ধাপ ০১. | আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, সামুদ্রিক মাছ, কলা ইত্যাদি। |
উত্তর ধাপ ০২. | গর্ভাবস্থায় আয়রন গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কেননা এটি রক্তকণিকার মাধ্যমে নবজাতকের দেহে অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে |
উত্তর ধাপ ০৩. | রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠন, শরীরে তাপ উৎপাদন, মস্তিষ্কের সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করা, শরীরে এন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করা ইত্যাদি আয়রনের কাজ। আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়। |
উত্তর ধাপ ০৪. | ছোট বাচ্চাদের দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৪-৩২ গ্রাম এবং গর্ভবতী মায়েদের ৪০ গ্রাম আয়রনের প্রয়োজন হয়। |
আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)
- আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
- বয়স অনুযায়ী আয়রনের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা
- গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজনীয়তা
- মানবদেহে আয়রনের কাজ ও অভাবজনিত রোগ
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১.আয়রন সমৃদ্ধ খাবার - আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
সংক্ষেপেঃ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গুলো হলো পালং শাক, ডিম, মুরগির মাংস, ছোলা, খেজুর, সামুদ্রিক মাছ, কলা ইত্যাদি। প্রানী ও উদ্ভিদ উভয় উৎস থেকে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার পাওয়া যায়।
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন থাকা আবশ্যক। তাই আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরী। আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে এখানে শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদির একটি তালিকা প্রদান করব।
আয়রন সমৃদ্ধ শাক সবজি :
- কলার মোচা
- পালংশাক
- ব্রোকলি
- ডালজাতীয় খাবার
- কুমডার বীজ
- সিদ্ধ আলু
- বাঁধাকপি
- শিমের বিচি
- মটরশুঁটি
- কচু শাক
- বীট
- লেটুস পাতা
- কাচকলা
- গমের রুটি
- মশুর ডাল
- মাশরুম
- লাল শাক
- টমেটো
- অক্টোপাস
- স্যামন
- সার্ডিন
- কুটেল মাছ
- সামুদ্রিক মাছ
- টুনা মাছ
- ম্যাকেলের
- চিংড়ি মাছ
- মলা মাছ
- মাগুর মাছ
- টাকি মাছ
- শিং মাছ
- কড ফিশ
আয়রন সমৃদ্ধ মাংস :
- গরুর মাংস
- কলিজা
- মুরগির মাংস
- টার্কি মুরগীর মাংস
- কবুতরের মাংস
- খাসির মাংস
- মহিষের মাংস
- ভেড়ার মাংস
- হাসেঁর মাংস
- কলা
- জলপাই
- শুকনা কিসমিস
- আপেল
- কমলা
- কালো জাম
- চেরি
- পেয়ারা
- পেপে
- আনারস
- তরমুজ
- বেদানা
- এপ্রিকট
- স্ট্রবেরি
- কিউই
- খেজুর
- বেরি
- আম
- পিচ
- লেবু
- এভোকাডো
- নারকেল
- কাঠবাদাম
- আঙুর
- কিসমিস
অন্যান্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবার :
- রাজমা
- সয়াবিন
- ছোলা
- ডার্ক চকলেট
- ডিম
- মসুর ডাল
- ফর্টিফাইড সিরিয়াল
- কাজু বাদাম
- সূর্যমুখী তেল
- বাদাম তেল
- বাদামী চাল
- চিয়া সিড
আরও পড়ুনঃ করোনা পরবর্তী বাজেট ও স্বাস্থ্যখাত
২.বয়স অনুযায়ী আয়রনের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয়তা - আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
সংক্ষেপেঃ ছোট বাচ্চাদের দৈনিক ২০-২৫ গ্রাম, প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৪-৩২ গ্রাম এবং গর্ভবতী মায়েদের ৪০ গ্রাম আয়রনের প্রয়োজন হয়।
মানবদেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য আয়রনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা দেখার সাথে সাথে আমার দৈনন্দিন আয়রনের চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বিভিন্ন বয়সের মানুষের জন্য দৈনন্দিন কত গ্রাম আয়রন প্রয়োজন হয় তা নিয়ে আলোচনা করব।
ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন। কিশোর কিশোরীদের জন্য দৈনন্দিন
২০ থেকে ৩৫ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন । প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ২৪ গ্রাম এবং প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ক্ষেত্রে দৈনিক ৩২ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় ৪০ গ্রাম এবং দুগ্ধ প্রদানকারী মায়েদের জন্য দৈনিক ৩২ গ্রাম আয়রন প্রয়োজন।
৩.গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজনীয়তা - আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
সংক্ষেপেঃ গর্ভাবস্থায় আয়রন গ্রহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কেননা এটি রক্তকণিকার মাধ্যমে নবজাতকের দেহে অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে।
আর্টিকেলের প্রথম অংশে আমরা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা সম্পর্কে জেনেছি। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা গর্ভাবস্থায় আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করব।
আমরা জানি গর্ভাবস্থায় দৈনিক ৪০ গ্রাম আয়রন গ্রহন করতে হয়। কেননা এটি রক্তকণিকার মাধ্যমে নবজাতকের দেহে অধিক পরিমাণ অক্সিজেন পৌঁছাতে সাহায্য করে। সঠিক পরিমানে আয়রনের অভাবে শিশু ও মা দুজনের রক্তস্বল্পতা হতে পারে এবং এছাড়াও অপরিণত শিশু জন্মদান, মায়ের মানসিক অবসন্নতা ও বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
সঠিক পরিমানে আয়রন প্রাপ্তির জন্য আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের কোনো বিকল্প নেই। তবুও গর্ভাবস্থায় আয়রনের চাহিদা পূরন করতে আয়রন ট্যাবলেট গ্রহন করতে হয়। গর্ভকালীন সময়ে প্রতিদিন এবং প্রসব পরবর্তী ৩ মাস পর্যন্ত আয়রন ট্যাবলেট সেবন করতে হয়।
আরও পড়ুনঃ পায়খানা ক্লিয়ার করার ট্যাবলেট এর নাম
৪.মানবদেহে আয়রনের কাজ ও অভাবজনিত রোগ - আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
সংক্ষেপেঃ রক্তে হিমোগ্লোবিন গঠন, শরীরে তাপ উৎপাদন, মস্তিষ্কের সুষ্ঠু বিকাশে সাহায্য করা, শরীরে এন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করা ইত্যাদি আয়রনের কাজ। আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা যায়।
মানবদেহে আয়রনের অনেক কাজ রয়েছে। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা প্রস্তুত ও অনুসরন করলে দেহ সুস্থ থাকে অপরপক্ষে দেহে বাসা বাধে অনেক গুরুতর অসুখ। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা মানবদেহে আয়রনের কাজ ও অভাবজনিত রোগ সম্পর্কে আলোচনা করব।
আয়রনের কাজ :
- অক্সিজেন বহন এবং কোষীয় শ্বসন হলো আয়রনের মূল কাজ
- হিমোগ্লোবিন গঠন করে
- মস্তিষ্কের বিকাশ এবং গঠনে সাহায্য করে।
- শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
- পেশির কার্যকলাপে সাহায্য করে।
- শরীরে এন্টিবডি তৈরিতে সাহায্য করে যা দেহের ইমিউন সিস্টেম হিসেবে কাজ করে।
- স্মৃতি, একাগ্রতা এবং শেখার ইচ্ছা ও ক্ষমতাসহ মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বিকাশ ও রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করে।
- দেহের শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়।
আয়রনের অভাবজনীত রোগ :
- এনিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা : আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে সাহায্য করে তাই এর অভাবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
- রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম : হাত / পায়ে শিরশির অনুভূতি হাওয়া, পা চিবানো, পায়ে নিস্তেজ ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- ফ্যাকাশে বা হলুদ ত্বক
- শ্বাসকষ্ট
- মাথা ঘোরা
- মাথা ব্যথা
- দ্রুত বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
- বুকে ব্যথা
- ঠান্ডা পা এবং হাত
- ভঙ্গুর, ফাটা নখ, নখের ক্ষয়
- চুল পড়া
- ত্বকের সমস্যা
- মুখে ঘা হওয়া
- স্মরণশক্তি কমে যাওয়া
- মাংসপেশিতে ব্যাথা
- অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা
- স্থুলতা
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন মুড সুইং এর আসল কারণ
৫.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর - আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন ১: কোন মাছে আয়রনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: সামুদ্রিক মাছে আয়রনের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি থাকে। সাগরের চিংড়িও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।
প্রশ্ন ২: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের নাম কী?
উত্তর: ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার হলো দুধ, পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার, সবুজ শাক-সবজি যেমন ব্রোকলি, বাঁধাকপি ও ওকড়া ইত্যাদি, সয়াবিন, সামুদ্রিক মাছ, কমলা এবং আঙ্গুরের মতো সাইট্রাস ফল ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩: আয়রন যুক্ত খাবারের সাথে টক ফল খেলে কি হয়?
উত্তর: টক জাতীয় ফলে থাকে ভিটামিন সি যা আয়রন দ্রুত শরীরে শোষণ করতে সাহায্য করে। তাই আয়রন যুক্ত খাবারের সাথে টক ফল খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ৪: আয়রনের অভাবে কোন রোগ হয়?
উত্তর: আয়রের অভাবে দেহে রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া হয়।
প্রশ্ন ৫: শিশুদের ক্ষেত্রে আয়রনের অভাবজনিত এনিমিয়া রোগের লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর: শিশুদের রক্তশূন্যতার প্রধান উপসর্গগুলো হলো শিশুকে ফ্যাকাশে ও দুর্বল দেখায়, ঘুমের পরিমাণ কমে যায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে ওঠে এবং শিশুর জিব, নখ, হাতের তালু ইত্যাদি সাদাটে হয়ে পড়ে। রক্তশূন্যতার মাত্রা বেশি হলে শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়তে পারে, শরীরে পানি আসতে পারে এবং মারাত্মক হৃদ্রোগের (হার্ট ফেইলিওর) মতো জটিলতাও হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
৬.লেখকের মন্তব্য - আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা
আয়রন হচ্ছে অন্যতম একটি খনিজ উপাদান যা খাদ্যের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। মানবদেহের জন্য আয়রনের প্রয়োজনীয়তা অনেক এবং এর অভাবে দেখা দেয় রক্তস্বল্পতার মতো রোগ। তাই আমাদের আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা জরুরী। আজকের আর্টিকেলে আমরা আয়রন সমৃদ্ধ খাবার তালিকা, দেহে আয়রনের কাজ, আয়রনের অভাবজনিত রোগ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করেছি। আয়রনের অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে জানার কোনো বিকল্প নেই। আজকের আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের সমস্যায় যা যা করবেন
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url