OrdinaryITPostAd

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম [সর্বশেষ আপডেট]

বাংলাদেশের বিভিন্ন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড সেবা প্রদান চালু করেছে। ক্রেডিট কার্ড মূলত লেনদেনের হিসাব রাখে এবং ব্যাক্তিকে লোন বা বাকি ব্যবহার করতে দেয়।অনেকই ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে চায়। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব - ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম সম্পর্কে জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

এছাড়াও আরো আলোচনা করব - ক্রেডিট কার্ড কি, ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা, ক্রেডিট কার্ড খরচ, ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাব,ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম, ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায়। 

আর্টিকেল সূচিপত্র - ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম

১. ক্রেডিট কার্ড কি 

ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে একটি চিপ-ভিত্তিক প্লাস্টিকের কার্ড।ক্রেডিট কার্ডে কার্ডধারীর নাম, কার্ডের মেয়াদের শেষ তারিখ, ব্যাক্তির স্বাক্ষর, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, সিভিভি, কাস্টমার কেয়ারের বিবরণ ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ থাকে। 

ক্রেডিট কার্ডের প্রধান কাজ হচ্ছে টাকা ব্যায়ের সুবিধা নিশ্চিত করা। যদি কোনো অর্থ প্রদানের জন্য ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন,তাহলে সেই টাকা আপনার বর্তমান একাউন্ট থেকে কাটা হবে না। কারণ যেই টাকা খরচ করবেন সেই অর্থ ক্রেডিট কার্ড ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক বাকিতে লেনদেন করার সুযোগ দিয়ে থাকে। ক্রেডিট কার্ড মূলত ব্যবহারকারীর বাকিতে লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে। প্রত্যেকটি ক্রেডিট কার্ডের পূর্বনির্ধারিত একটি লিমিট থাকে।সেই লিমিট শেষ হওয়ার পর ক্রেডিট কার্ড থেকে আর টাকা খরচ করা যায় না।যদি পুনরায় ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করেন তাহলে এটি আবার ব্যবহার করতে পারবেন। কার্ডের এক মাসের বিল পরের মাসের যেকোন সময়ে প্রদান করা যায়। 

২. ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের নিয়ম 

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সঠিক নিয়ম নিচে আলোচনা করা হলো:
  • সবসময় আপনার ব্যবহৃত ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের অনুপাত কম রাখা। 
  • সঠিক সময়ে ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করুন।যদি আপনি ক্রেডিট কার্ডের উচ্চ সুদ থেকে বাচতে চান এবং আপনার কার্ডের স্কোর ঠিক রাখতে চান তাহলে  অবশ্যই autopay enable করে রাখতে পারেন।এতে করে কার্ডের  due date এর আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার একাউন্ট থেকে পেমেন্ট হয়ে যাবে।
  • সবসময় মিনিমামের চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করুন।
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম টাকা তোলা এড়িয়ে চলুন। কারণ এটিএম থেকে যদি টাকা তোলেন আপনাকে চরা সুদ ও ভারী চার্জ গুনতে হতে পারে। এছাড়া টাকা তোলার সময় কোনো ছাড়  পাওয়া যায় না। 
  •  renewal ফি এবং Joining ফি  এর ব্যাপারে সতর্ক হন। 
  • শুধুমাএ জরুরী এবং দরকারী জিনিস কার্ডের মাধ্যমে কেনাকাটা করুন।

৩. ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা 

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন যে ক্রেডিট কার্ড কারা কারা নিতে পারবেন? বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতা অনেকটাই সাধারণ। যেকোন পেশার মানুষ ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী অর্থাৎ যাদের আয় ও বৈধ কর শনাক্তকরণ নাম্বার (টিআইএন) আছে, তাদের সবাই ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবে। নিচে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার কিছু যোগ্যতা দেওয়া হলো:
  1. প্রার্থীর টিআইএন সার্টিফিকেট
  2. প্রার্থীর এনআইডি কার্ড
  3. প্রার্থী যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকে তাহলে তার স্যালারি সার্টিফিকেট, অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার এবং ৩ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
  4. যারা ব্যবসায়ী তাদের ক্ষেএে ৩ মাসের ব্যাংক ট্রানজেকশন স্টেটমেন্ট, ট্রেড লাইসেন্স এবং  Memorandum of Association থাকতে হবে। 
  5. যদি কোনো ব্যাংকে আপনার ফিক্সড ডিপোজিট থাকে এবং সেই ব্যাংক যদি আপনাকে ক্রেডিট কার্ড দিতে রাজি হয় তাহলে আবেদন করতে পারবেন। 
  6. ব্যাংক বা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার ক্রেডিট কার্ডের লিমিট কত হবে সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেবে।  
একটি ক্রেডিট কার্ড পেতে হলে আপনার উপরোক্ত যোগ্যতাগুলো থাকতে হবে। 

৪. ক্রেডিট কার্ড খরচ 

অধিকাংশ ব্যাংকই বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড বিনামূল্যে ইস্যু করে থাকে।ক্রেডিট কার্ডের বার্ষিক চার্জ কত হবে তা নির্ভর করে থাকে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের উপর।কারণ একেক প্রতিষ্ঠানের খরচ একেক রকম। রিওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে অনেক সময় কিছু চার্জ মওকুফ করাতে  পারবেন । যে ব্যাংক থেকে আপনি ক্রেডিট কার্ড নিতে চান, উক্ত ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে ক্রেডিট কার্ডের খরচ সম্পর্কিত সকল তথ্য দেখে নিবেন।
আপনার কি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আছে? থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

৫. ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পাব 

আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড পেতে চান তাহলে প্রথমে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার যোগ্যতার  ব্যাপারগুলো নিশ্চিত হতে হবে । ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে খুব সহজেই আপনি  ক্রেডিট কার্ড এর জন্য ব্যাংক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবেন।আপনি যে প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রেডিট কার্ড পেতে চান সেই বিভাগের প্রতিনিধির সাথে অবশ্যই  যোগাযোগ করতে হবে। আপনার সকল ডকুমেন্টস যেমন মাসিক আয়, আয়ের উৎস ইত্যাদি জমা দেওয়ার পর পরবর্তী ধাপ সম্পর্কে আপনাকে ক্রেডিট কার্ড বিভাগ থেকে অবহিত করা হবে। 

৬. ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম  

অনেকেই জানতে চান ক্রেডিট কার্ড থেকে কিভাবে টাকা তুলব? আর্টিকেলের এই অংশে আলোচনা করব - ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলার নিয়ম নিয়ে। 

এটিএম বুথ:

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে এটিএম বুথ থেকে সহজেই টাকা তোলা যায়। আপনি  ক্রেডিট কার্ড যে ব্যাংক থেকে  ইস্যু করেছেন, সেই  ব্যাংকের পার্টনার ব্যাংক বা উক্ত ব্যাংক এর এটিএম থেকে সরাসরি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সরাসরি টাকা তুলতে পারবেন। ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বুথ থেকে টাকা তোলা অসুবিধা হওয়ায় টাকা যত কম তোলা যায় ততই ভালো। 

চেক:

চেক ব্যবহার করে ব্যাক্তিগতভাবে যেভাবে কেনাকাটা করা যায় ঠিক তেমনভাবে কার্ড দিয়েও করা যায়।
কার্ডের চেক ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করা যায়। তবে যে তারিখে কার্ডের চেক ব্যবহার করবেন ঐ তারিখ থেকে আপনাকে ইন্টারেস্ট পরিশোধ করতে হবে।এর ইন্টারেস্ট রেট অনেক বেশি। কার্ডের চেক ব্যবহার করে কোনো স্পেশাল অফারের অংশ নিতে চাইলে সকল শর্ত অবশ্যই পড়ে নিবেন। 

মোবাইল ওয়ালেট :

ক্রেডিট কার্ড দিয়ে মোবাইল ওয়ালেট সেবা ব্যবহার করে নগদ ও বিকাশের মতো টাকা তোলা যায়। কার্ড দিয়ে মোবাইল ওয়ালেটে টাকা এনে খরচ করতে পারবেন তবে ব্যাংকভেদে আপনাকে ট্রান্সফার চার্জ দিতে হবে। ট্রান্সফার করা অর্থ ক্যাশ আউট করলে ক্যাশ আউট ফি প্রদান করতে হবে। 

উপরোক্ত তথ্য থেকে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে যে, কার্ড থেকে টাকা তোলা ততটা লাভজনক নয়। সুতরাং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে টাকা না তোলাই ভালো।

৭. ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার উপায়  

ক্রেডিট কার্ড জীবনকে যেমন সহজ করে তুলেছে,তেমন  অনর্থক ব্যয়ও বাড়িয়েছে। এর সাহায্যে হাতে টাকা না থাকলেও যতখুশি কেনাকাটা করা যায়।অনেক সময় দেখা যায় যে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করা অনেকটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমতাবস্থায় ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করাই বুদ্ধিমানের কাজ।আপনি যদি ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করতে চান তাহলে যে ব্যাংকের কার্ড করেছেন সেই ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে কল করতে পারেন। এছাড়া ব্যাংকের ব্রাঞ্চে গিয়ে বা মোবাইল অ্যাপ বা অনলাইনেও এটি বন্ধের আবেদন করতে পারেন।

 বকেয়া অর্থ অবশ্যই কার্ড বন্ধ করার আগে পরিশোধ করতে হবে। কয়েক দিনের মধ্যে ব্যাংক আপনার অনুরোধে  ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করে দেবে।বন্ধ করার আগে পুরস্কার পয়েন্ট গুলো ব্যবহার করুন বা বাজেয়াপ্ত করুন।অটো পেমেন্ট থাকলে তাও বন্ধ করুন। আপনার সর্বশেষ ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট চেক করে নিতে ভুল করবেন না ।

৮. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর 

প্রশ্ন ১: ক্রেডিট কার্ড কি?

উত্তর: ক্রেডিট কার্ড একটি চিপ ভিত্তিক প্লাস্টিকের কার্ড যা ব্যবহারকারীকে লেনদেনের সুবিধা দিয়ে থাকে। এতে ব্যাক্তির স্বাক্ষর, কার্ডধারীর নাম, কার্ডের মেয়াদের শেষ তারিখ, ব্যাক্তির স্বাক্ষর, ক্রেডিট কার্ড নাম্বার, সিভিভি, কাস্টমার কেয়ারের বিবরণ ইত্যাদি তথ্য সংরক্ষণ থাকে। 

প্রশ্ন ২: ক্রেডিট কার্ডের খরচ কেমন?

উত্তর: ক্রেডিট কার্ডের খরচ নির্ভর করে ব্যাংক বা প্রতিষ্ঠানের উপর। এর কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। একেক প্রতিষ্ঠানের একেক রকম।

প্রশ্ন ৩: কোন কোন মাধ্যমে ক্রেডিট কার্ড থেকে টাকা তোলা যায়?

উত্তর: ক্রেডিট কার্ড থেকে এটিএম বুথ, চেক এবং মোবাইল ওয়ালেটের মাধ্যমে টাকা তোলা যায়। 

প্রশ্ন ৪: ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য কি আবেদন করতে হয়?

উত্তর: অবশ্যই ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে। 

প্রশ্ন ৫: ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার জন্য কি করতে হবে? 

উত্তর: ক্রেডিট কার্ড বন্ধ করার জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ারে কল করতে হবে অথবা ইমেইল বা অনলাইন মোবাইল অ্যাপ দিয়ে আবেদন করতে হবে। 

৯. লেখকের মন্তব্য 

আমাদের আজকের আর্টিকেলে ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার অনেকটা উপকারে আসবে। আর্টিকেল পড়ে আপনার মতামত, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমৃদ্ধ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The Du Speech ভিজিট করতে পারেন। ধন্যবাদ। 

এই আর্টিকেলের-

লেখক: মোসা: কবিতা 
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: নরসিংদী 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url