মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি?
আধুনিক যুগের গোড়ার দিকে এবং মধ্যযুগের শেষের দিকে বাংলা ও আসামের সৈনিক ভূস্বামী জোটকে বারো ভূঁইয়া বলা হয়।স্বাধীন সত্তা নিয়ে প্রতিটি জোট আলাদাভাবে গঠিত ছিল এবং জমিদার দ্বারা প্রতিটি জোট পরিচালিত ছিল। আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি?মোগলদের সাথে বারো ভুঁইয়াদের সংঘাতের কারণ জানতে আর্টিকেলটি পড়ুন।
সংক্ষেপে জেনে নিন | |
---|---|
প্রশ্ন | মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি |
উত্তর ধাপ ০১. | বারো ভূঁইয়াদের সংখ্যা ছিলো ১৩ জন।১৫৭৫ সালের অক্টোবর মাসে বাংলার সুবাদার মুনিম খাঁর মৃত্যু হয়। ফলে আফগান নেতা দাউদ খাঁ কররানি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন নিজ নামে। বাংলা ও বিহারে তিনি খুতবা পাঠ করান। স্বাধীন ভূঁইয়ারা দাউদ খাঁকে অনুসরণ করে মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। |
উত্তর ধাপ ০২. | বারো ভূঁইয়াদের কঠোর হস্তে দমন করেন সুবেদার ইসলাম খান ও সম্রাট জাহাঙ্গীর এবং মোগল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন বাংলায়। |
আর্টিকেল সূচিপত্র - মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি
- মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর - মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি
- লেখকের মন্তব্য - মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি
১.মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ - মোগলদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের সংঘাতের কারণ কি
বারো ভূঁইয়া :
এদের অনেকেই শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলে এবং স্বাধীনভাবে রাজত্ব করা শুরু করে। এই অর্থে ভূমির অধিকারীদের বলা হতো ভৌমিক। পরবর্তী সময়ে এই শব্দ থেকেই তৈরি হয়েছে ভূঁয়া বা ভূঁইয়া। সে সময়ে সমগ্র বাংলাদেশে বহু ভূঁইয়া বিভিন্ন অঞ্চলে শাসন করলেও অপেক্ষাকৃত উল্লেখযোগ্য ভূঁইয়া হিসেবে উল্লেখ করা হয়। সে সময়ের বাংলাকে আকবরের সভাসদ নির্দেশ করেছিলেন 'বারো ভূঁইয়ার দেশ। এঁরা ছিলেন−
- সোনারগাঁওয়ের ঈসা খাঁ
- বিক্রমপুরের ঈসা খাঁর পুত্র মুসা খাঁ
- বিক্রমপুরের কেদার রায়
- খুলনা যশোহরের প্রতাপাদিত্য রায়
- ময়মনসিংহের উসমান
- এিপুরার চাঁদ রায়
- শ্রীহট্টের বায়জিদ কর্রানি
- বাখেরগঞ্জের রামচন্দ্র
- হাম্বিরমল্ল
- পীতাম্বর
- ফজল গাজি
- গণেশ রায়
- লক্ষ্মণমানিক্য
প্রথম বার ভুঁইয়াদের মধ্যে মানসিংহের সাথে যুদ্ধ হয় ঈষা খাঁ'র। যুদ্ধে ঈষা খা জয়ী হন।তিনি মানসিংহের সাথে সম্প্রীতিমূলক সন্ধি করেন। তারপর বিক্রমপুরের ভূঁইয়া কেদার রায়ের বিরুদ্ধে মানসিংহ যুদ্ধাভিযান চালান। এতে কেদার রায় পরাজিত হন। তিনি বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এইভাবে বিক্রমপুরের শ্রীপুর অঞ্চল মোগল শাসনাধীনে চলে আসে।
এই সময় ঈশা খাঁ-এর পুত্র মুসা খাঁ ছিলেন সোনারগাঁয়ের শাসক।তাঁর ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে ঈশা খাঁ'র মৃত্যু হয় এবং তিনি সোনারগাঁও-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের শাসক হন। সন্ধির শর্তানুসারে মানসিংহ তাঁকে বিরক্ত করেন নি। মূলত তাঁর রাজ্যের একটি অংশ কেদার রায়ের মৃত্যুর পর মুসা খাঁ অধিকার করেন।
১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর অসুস্থ হয়ে পড়েন, মানসিংহ তখন দিল্লিতে ফিরে যান। ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থানীয় মোগল শাসকরা মানসিংহের নামেই শাসন করতেন। ইসলাম খাঁ ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে বাংলায় মোগল শাসক হিসেবে আসেন । ইসলাম খাঁ মুসা খাঁর বিরুদ্ধে বড় ধরনের অভিযান চালান । পথিমধ্যে খুলনা-যশোহর অঞ্চলে ভূঁইয়া প্রতাপাদিত্যকে ইসলাম খাঁ আক্রমণের উদ্যোগ নেন, এতে তিনি বশ্যতা স্বীকার করেন, ইসলাম খাঁ মুসা খাঁ-এর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে সাহায্য করার জন্য অঙ্গীকার করেন।
ইসলাম খান ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সীমান্ত রাজ্য কুচবিহার দখল করেন। ক্রমাগত আক্রমণের মুখে পরে ১৬১০ খ্রষ্টাব্দে মুসা খাঁর সামরিক শক্তি হ্রাস পায়। মোগল বাহিনী যাত্রাপুর ও ডাকচারা দুর্গ দখল করে নেয় ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে।মোগলরা ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ঢাকা থেকে সোনারগাঁও আক্রমণ করে। এই আক্রমণে মুসা খাঁ পরাজিত হন এবং তাঁকে বন্দী করা হয়। পরে যখন তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়,তিনি মোগলবাহিনীর কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন এবং তাঁর বাকি জীবন অতিবাহিত করেন।
মোগলরা ময়মনসিংহের ভূঁইয়া উসমানের বিরুদ্ধে ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে অভিযান চালান।উসমান প্রবলভাবে বাধা দেন,তারপরেও উসমান পরাজিত হন। তারপর তিনি পালিয়ে যান এবং শ্রীহট্টের আফগান ভুঁইয়া বায়জিদ কর্রানির আশ্রয়ে আশ্রয় নেন।
ইসলাম খান ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালান। তিনি চুক্তি অনুসারে মুসা খাঁর সাথে যুদ্ধের সময় মোগলদের সাহায্য করেন নি, এই অজুহাতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। প্রতাপাদিত্যের জামাতা ছিলেন বাখেরগঞ্জের ভুঁইয়া রামচন্দ্র । প্রতাপাদিত্যকে রামচন্দ্র যাতে সাহায্য না করতে পারে, সেজন্য একই সাথে রামচন্দ্র-এর বিরুদ্ধে ইসলাম খাঁ অপর একটি সেনাদল পাঠান।
যশোহর রক্ষার জন্য প্রতাপাদিত্য তাঁর নিজ পুত্র উদয়াদিত্যকে নিয়োগ করেন এবং নিজে তাঁর রাজ্যের রাজধানী ধুমঘাটকে প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা নেন। যুদ্ধের সময় প্রথমে উদয়াদিত্য এবং তারপর প্রতাপাদিত্য পরাজিত হন। তাঁকে বন্দী করা হয়। পরে তিনি বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
ইসলাম খান পুনরায় ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে উসমানের রাজ্য আক্রমণ করেন। উসমান যুদ্ধের প্রথম থেকেই ক্রমাগত জয়লাভ করতে থাকে। কিন্তু তীরবিদ্ধ হয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে উসমানের মৃত্যু হয়, মোগলদের কাছে আফগান সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করেন। বাংলায় বারো ভূঁইয়াদের রাজত্ব শেষ এর ভিতর দিয়ে হয়ে যায়।
ভূঁইয়াদের রাজ্যের সম্মান ও প্রতিপত্তি নির্ভর করত ব্যক্তিগত বীরত্ব ও নিজস্ব বাহিনীর শক্তির উপর । তারা রাজস্ব আদায় ও জমিদারী ভোগ দখল নিয়েই শুধু ব্যস্থ থাকতেন না, তারা সীমিত সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় শাসন ও যুদ্ধ পরিচালনা করত শাসন কার্য পরিচালনার জন্য
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url