কোন জেলা কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যিক নানা ধরনের ভিন্নতায় সমৃদ্ধ একটি দেশ। এদেশের আছে সমৃদ্ধ ইতিহাস,ঐতিহ্য,আঞ্চলিক ভাষার বিভিন্নতা প্রভৃতি। জেলা ভিত্তিক খাবারের বৈচিত্র্য এদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে যোগ করেছে ভিন্নমাত্রা। প্রতিটি জেলার রয়েছে নিজস্ব খাবার যা ঐ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার। আজ আলোচনা করব বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে।
এই আর্টিকেলে আমি আরো যেসকল বিষয়ে আলোচনা করেছি:
- বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার
- ঢাকা বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- রাজশাহী বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- রংপুর বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য।
আর্টিকেল সূচিপত্র - কোন জেলা কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত
- বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার
- ঢাকা বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- রাজশাহী বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- রংপুর বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার।
- খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
- আর্টিকেল সম্পর্কে প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১. বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার রয়েছে খাদ্য ভিত্তিক নিজস্ব ইতিহাস, ঐতিহ্য, স্বকীয়তা ও সংস্কৃতি। প্রত্যেক জেলার যেসব ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে সেগুলোর উপর ভর করেই তৈরি হয়েছে এ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা। এদিক থেকে দেশের সাংস্কৃতিক পরিগঠনে প্রত্যেক জেলার মানুষের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।কারণ প্রত্যেক জেলার মানুষ এক্ষেত্রে নিজ জেলার সংস্কৃতি ধারণ করে আছেন।
তাই আমাদের নিজ দেশকে চিনতে হলে সর্বপ্রথম নিজ দেশের সংস্কৃতিতে কী কী বিষয় রয়েছে তা জানা একান্ত কর্তব্য।আর যেকোনো দেশের সংস্কৃতিতে খাদ্যের দিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর খাদ্যের সাথেই জড়িয়ে থাকে ভোজন ও রসনাবিলাসের বিষয়। আজকে আমি ভোজনরসিক বাঙালিদের নিকট আলোচনা করব দেশের কোন জেলার কোন খাবার বিখ্যাত সে সম্পর্কে।
দেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার এই আর্টিকেলটি না টেনে পুরোটা পড়বেন। আশাকরি দেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
২. ঢাকা বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
ঢাকা বিভাগ বাংলাদেশের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত দেশের প্রধান প্রশাসনিক বিভাগ। ঢাকা বিভাগের জেলা রয়েছে মোট ১৩ টি।পূর্বতন ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর জেলা নিয়ে নবীনতম ময়মনসিংহ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এ বিভাগের বর্তমান জেলা সংখ্যা ১৩ টি। ঢাকা বিভাগের প্রত্যেক জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের বর্ণনা নিম্নরূপ:
- ঢাকা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: ঢাকা জেলা বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ,পদ্মা ,শীতলক্ষা ও বংশী নদী বিধৌত বাংলাদেশের একেবারে মধ্যস্থলে অবস্থিত রাজধানীর জেলা। বাংলাদেশের রাজধানী ও প্রধান শহর ঢাকা এ জেলার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত এ শহরটি উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন শহর। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাকরখানি ও বিরিয়ানি।
- নারায়ণগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: ঢাকা বিভাগের নারায়ণগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত দিক থেকে একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ জেলা। সুলতানী আমলের ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁও ও ব্রিটিশ আমলের মসলিন কাপড় বিক্রয়ের বৃহত্তম কেন্দ্র পানামনগর নারায়ণগঞ্জ জেলায় অবস্থিত। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: রসমালাই।
- মুন্সীগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: মুন্সীগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত পদ্মা ও মেঘনা নদী বিধৌত প্রশাসনিক জেলা। সেন আমলের পূর্ব বাংলার রাজধানী বিক্রমপুর এ জেলায় অবস্থিত।এ জেলার পূর্বনাম বিক্রমপুর। সুলতানী আমলের বহু পুরনো ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে ভাগ্যকুলের মিষ্টি।
- মানিকগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: মানিকগঞ্জ জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত পদ্মা ও যমুনা নদী বিধৌত একটি জেলা। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে খেজুরের গুড়।
- গাজীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত গাজীপুর জেলা বারোভুঁইয়াদের অন্যতম ভুঁইয়া বা জমিদার ভাওয়াল রাজার স্মৃতিবিজড়িত ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধের জেলা । জাতীয় চার নেতার একজন শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ এ জেলার কৃতি সন্তান।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে কাঁঠাল ও পেয়ারা।
- নরসিংদী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: নরসিংদী জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত ও মেঘনা নদী বিধৌত বাংলাদেশের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল । এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে সাগর কলা।
- টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন জেলা এবং সুলতানী, মুঘল ও ব্রিটিশ আমলের বহু ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক ও বাহক এবং যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী বিধৌত ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক জেলা টাঙ্গাইল জেলা।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে পোড়াবাড়ির চমচম মিষ্টি।
- কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:বালিশ মিষ্টি।
- ফরিদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: খেজুরের গুড়।
- গোপালগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: রসগোল্লা ও ছানার জিলাপি,
- রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: চমচম মিষ্টি ও খেজুরের গুড়।
- মাদারীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: খেজুরের গুড় ও রসগোল্লা।
- শরীয়তপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বিবিখানা পিঠা।
৩. চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম বিভাগে মোট ১১ টি জেলা রয়েছে। এসব জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সমূহ নিম্নরূপ:
- চট্টগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগীয় শহর ও বন্দরনগরীর জেলা এই চট্টগ্রাম জেলা।এ জেলাকে বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার বলা হয়। বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ও প্রথম জেলা এবং বারো আউলিয়ার শহর এই চট্টগ্রাম জেলা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সাথে চট্টগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঐতিহ্যবাহী খাবার: মেজবান।
- কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তের জেলা এই কক্সবাজার ।এই জেলার মাতারবাড়ি এলাকায় নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর । বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে অবস্থিত । বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এ জেলার সর্বদক্ষিণের ইউনিয়ন।
- রাঙ্গামাটি জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:কলা ও আনারস।
- খাগড়াছড়ি জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: হলুদ।
- বান্দরবান জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: মুন্ডি ও তামাক।
- কুমিল্লা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: রসমালাই।
- নোয়াখালী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:খোলাজা পিঠা ও নারকেলের নাড়ু।
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: তালের বড়া ও ছানামুখী মিষ্টি।
- চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: ইলিশ।
- ফেনী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: মহিষের দুধ ও খন্ডলের মিষ্টি।
- লক্ষ্মীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: সুপারি।
৪. সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের জেলা সংখ্যা মোট চারটি।এ চার জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের বর্ণনা নিম্নরূপ:
- সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের সর্বউত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের প্রধান জেলা ও বিভাগীয় শহর সিলেট। ৩৬০ আউলিয়ার দেশ বলা হয় সিলেটকে। বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান মালনীছড়া চা বাগান সিলেট জেলায় অবস্থিত। জাফলং সহ বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে এ জেলায়। ঐতিহ্যবাহী খাবার চা কমলালেবু এবং সাতকড়ার আচার।
- সুনামগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:দেশবন্ধুর মিষ্টি।
- মৌলভীবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:ম্যানেজার স্টোরের রসগোল্লা, খাসিয়া পান ও সাত রঙের চা।
- হবিগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:চা।
৫. ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
বাংলাদেশের উত্তর মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ময়মনসিংহ বিভাগের জেলার সংখ্যা ৪টি। এসব জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নরূপ:
- ময়মনসিংহ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল ময়মনসিংহ জেলার একটি উপজেলা। এ উপজেলার দরিরামপুর গ্ৰামে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন কবি নজরুল। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে মুক্তাগাছার মণ্ডা।
- জামালপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: মুক্তিযুদ্ধের দুই নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফ এই জেলার ইসলামপুর উপজেলার কৃতি সন্তান।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:পোলাও ও পায়েস।
- শেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:ছানার পায়েস ও চপ।
- নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:বালিশ মিষ্টি।
৬.রাজশাহী বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় পদ্মা,যমুনা ও করতোয়া নদীবিধৌত একটি বিভাগ রাজশাহী বিভাগ। এ বিভাগে বর্তমানে আটটি জেলা রয়েছে। পূর্বেকার রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড় সহ রংপুর বিভাগের জেলাগুলো আলাদা হয়ে যাওয়ার পর রাজশাহী বিভাগের জেলার সংখ্যা কমে আটটি হয়েছে।এ বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নরূপ:
- রাজশাহী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:মু্ক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নেতার একজন নেতা শহীদ এ এইচ এম কামরুজ্জামান এ জেলার কৃতি সন্তান। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে আম।
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের সমাধি এ জেলার ছোট সোনামসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত । এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে আম,কলাইরুটি ও শিবগঞ্জের চমচম।
- বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের বিখ্যাত ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিমের বাড়ি বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকায় অবস্থিত।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে দই।
- নাটোর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: কাঁচাগোল্লা।
- নওগাঁ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:চাল,প্যারা সন্দেশ।
- জয়পুরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: চটপটি ও লতিরাজ কচু।
- পাবনা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:ঘি ও প্যারা সন্দেশ।
- সিরাজগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: পানতোয়া।
৭. রংপুর বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের রংপুর বিভাগের জেলার সংখ্যা আটটি।এ আটটি জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের বর্ণনা নিম্নরূপ:
- রংপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্ৰামে জন্মগ্ৰহণ করেন। কারমাইকেল কলেজ এ জেলার প্রধান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে তামাক,আখ, হাঁড়িভাঙ্গা আম,পেলকা,সিঙ্গারা হাউজের সিঙ্গারা ও নিরঞ্জনের মিষ্টি।
- দিনাজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: লিচু, কাটারিভোগ চাউল ও চিড়া।
- ঠাকুরগাঁও জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:সূর্যপুরী আমি।
- লালমনিরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বাংলাদেশের প্রথম এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহিম এ জেলার কৃতি সন্তান।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে বাদাম ও আখের রস।
- পঞ্চগড় জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: পঞ্চগড় জেলাকে হিমালয়ের কন্যা বলা হয়। এ জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ের চূড়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে চা ও ডিম ভুনা।
- নীলফামারী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:ডোমারের সন্দেশ।
- গাইবান্ধা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: রসমঞ্জুরী।
- কুড়িগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: চমচম ও পাবনা ভাগ্যলক্ষ্মী ক্ষীরমোহন।
৮. খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাসমূহের ঐতিহ্যবাহী খাবার
খুলনা বিভাগ
খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত।এ বিভাগের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার বেশিরভাগ অংশ নিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্ৰোভ বন সুন্দরবন গঠিত হয়েছে। এ বিভাগের জেলার সংখ্যা দশটি। এ জেলাগুলোর ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত নিম্নরূপ:
- খুলনা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:চুকনগর গণহত্যার জেলা খুলনা জেলা। এ জেলার খুলনা বিভাগীয় শহরে গণহত্যা জাদুঘর অবস্থিত । খুলনা জেলার দক্ষিণাংশে সুন্দরবন অবস্থিত ।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে সন্দেশ, নারিকেল,গলদা চিংড়ি ও চুইঝালের মাংস।
- যশোর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: খই, খেজুরের গুড় ও জামতলার মিষ্টি।
- বাগেরহাট জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: নারিকেল, সুপারি ও চিংড়ি।
- সাতক্ষীরা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:ঘোষ ডেইরির সন্দেশ।
- চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:পান, তামাক ও ভুট্টা।
- ঝিনাইদহ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:হরি ও ম্যানেজারের ধান।
- কুষ্টিয়া জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: কুষ্টিয়া জেলার ছেঁউড়িয়ায় লালন একাডেমি অবস্থিত । এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি এ জেলার শিলাইদহে পদ্মানদীর তীরে অবস্থিত। এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে তিলের খাজা।
- মাগুরা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এ জেলার কৃতি সন্তান।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম হচ্ছে রসমালাই।
- নড়াইল জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ ও বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এ জেলার কৃতি সন্তান।এ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার হচ্ছে পেড়ো সন্দেশ, খেজুরের গুড় ও রস।
- মেহেরপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার:মিষ্টি সাবিত্রী ও রসকদম্ব।
বরিশাল বিভাগ
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল বিভাগ অবস্থিত। এ বিভাগের মোট জেলার সংখ্যা ছয়টি। এসব জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের বর্ণনা নিম্নরূপ:
- বরিশাল জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বরিশাল জেলা বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন জেলা। দিনাজপুরের ভাতুড়িয়া পরগণার জমিদার রাজা গণেশ এ জেলার নাম চন্দ্রদ্বীপ রাখেন।এরপর বিভিন্ন সময়ে এ জেলার নাম পরিবর্তন করে ইসমাইলপুর,বাকলা ও বাকেরগঞ্জ রাখা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এ জেলার সন্তান ছিলেন। ঐতিহ্যবাহী খাবার :আমড়া।
- বরগুনা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: চুইয়া পিঠা,চ্যাবা পিঠা ও মুইট্টা পিঠা।
- ঝালকাঠি জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: আটা।
- পটুয়াখালী জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: মহিষের দুধের দই।
- ভোলা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্মস্থান। ঐতিহ্যবাহী খাবার:নারিকেল ও মহিষের দুধের দই।
- পিরোজপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার: পেয়ারা, সুপারি, নারিকেল ও আমড়া।
৯. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
প্রশ্ন ১: বাংলাদেশের কোন বিভাগের জেলাসমূহের খাবারের বৈচিত্র্য বেশি?
উত্তর: এটা নির্দিষ্টভাবে বলা বেশ কঠিন। কারণ কোনো বিভাগের জেলাসমূহের খাবারের বৈচিত্র্য নির্ভর করে ঐ বিভাগের জেলার সংখ্যা ও প্রত্যেক জেলায় কত প্রকারের ঐতিহ্যবাহী খাবার পাওয়া যায় তার সংখ্যার উপর।এদিক থেকে খুলনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগকে অনেকটা এগিয়ে রাখা যায়। এগুলো বাদ দিলে সারাদেশের সব বিভাগেই খাবারের বৈচিত্র্য রয়েছে।
প্রশ্ন ২: মেজবান ও শুঁটকির জন্য কোন জেলা বিখ্যাত?
উত্তর: মেজবান ও শুঁটকির জন্য চট্টগ্রাম জেলা বিখ্যাত। এছাড়াও শুঁটকির জন্য কক্সবাজার জেলাও বিখ্যাত।
প্রশ্ন ৩: ঢাকা জেলার কোন কোন খাবার জেলার সুবিশাল ইতিহাস ধারণ করে?
উত্তর: বাকরখানি ও বিরিয়ানি। কারণ বাকরখানি খাবার হিসেবে ঢাকার নবাব পরিবারের বিশাল ইতিহাসের সাক্ষী ও ঢাকা জেলার শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ এবং বিরিয়ানি ঢাকার নবাবী আমলের ঐতিহ্য ধারণ করে। এছাড়াও পুরান ঢাকার ইফতারি সামগ্ৰী ঢাকা জেলার খাবারের শত বছরের ইতিহাস ধারণ করে।
প্রশ্ন ৪: ইলিশ কোন জেলার বিখ্যাত খাবার?
উত্তর: ইলিশ চাঁদপুর জেলার বিখ্যাত খাবার।
প্রশ্ন ৫: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার কি কি?
উত্তর: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো হচ্ছে: আম, কলাইরুটি ও শিবগঞ্জের চমচম।
প্রশ্ন ৬: ময়মনসিংহ জেলা কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: ময়মনসিংহ জেলা মুক্তাগাছার মণ্ডার জন্য বিখ্যাত।
প্রশ্ন ৭:পান ও ভুট্টা কোন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার?
উত্তর: পান ও ভুট্টা চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
প্রশ্ন ৮: কুমিল্লা জেলা কোন কোন খাবারের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর:প্রধানত রসমালাইয়ের জন্য কুমিল্লার খ্যাতি রয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লার আরো অনেক ঐতিহ্যবাহী খাবার রয়েছে।
প্রশ্ন ৯: বরিশাল জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার কোনটি?
উত্তর: আমড়া বরিশাল জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার।
প্রশ্ন ১০: বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম কি?
উত্তর: বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম দই।
আরও পড়ুনঃ কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
১০. লেখকের মন্তব্য
এতক্ষণ আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।এর মধ্যে অনেক খাবারই রয়েছে যেগুলোর নাম বিভিন্ন জেলার ক্ষেত্রে একই রকম । এছাড়াও অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো অনুল্লেখ্য হলেও জেলাগুলোর ঐতিহ্যের প্রমাণ বহন করে। আশাকরি আমার এ আলোচনা থেকে বাংলাদেশের সকল জেলার ঐতিহ্যবাহী খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন।
তাই আমাদের উচিত খাবারের স্বাদ নিতে হলেও এসব জেলা ভ্রমণ করা,বিশেষত ভোজনরসিক বাংলাদেশিদের জন্য খাবারের বৈচিত্র্যময় স্বাদ গ্ৰহণের জন্য এসব জেলায় ভ্রমণ করা কর্তব্য। কারণ এতে আমরা বিভিন্ন জেলার ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার মাধ্যমে আমাদের দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে ঘুরে স্বচক্ষে দেখার সুযোগও হবে।
পুরো আর্টিকেলটি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত তথ্য দিয়ে নিজ ভাষায় লিখেছি।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url