OrdinaryITPostAd

কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ । লক্ষণ । দুর করার খাবার

 

কোষ্ঠকাঠিন্য একটি বিরক্তিকর যন্ত্রণাদায়ক সমস্যা।ছোট বড় বয়সভেদে সব বয়সের মানুষেরই এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।মাঝে মাঝে এই সমস্যা জটিলরুপও ধারণ করতে পারে।তবে একটু সচেতনতা এবং দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি কোষ্ঠকাঠিন্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সক্ষম হবেন


এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে তা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য কি,কারন,লক্ষণ,এর থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়, কোষ্ঠকাঠিন্য হলে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত ইত্যাদি বিস্তারিত বিষয়াবলি।

 সূচিপত্র - কোষ্ঠকাঠিন্যের ওষুধ। লক্ষন।দুর করার খাবার। 

    ১. কোষ্ঠকাঠিন্য কি

    কোষ্ঠকাঠিন্য, ইংরেজিতে বলা হয় কন্স্টিপেশন( Constipation) হলো মানবদেহের এমন একটি অস্বাভাবিক অবস্থা যা হলে একজন ব্যক্তি সহজে মল ত্যাগে সমর্থ হন না।সাধারণত দুই-একদিন পর পর মলের বেগ হওয়া এবং শুষ্ক ও কঠিন মল নিষ্কাশন হওয়াই কোষ্ঠকাঠিন্য। (সূত্রঃ উইকিপিডিয়া)আঁশযুক্ত খাবার কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।চিকিৎসকদের মতে, "কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশযুক্ত খাবার গ্রহণ করার পরও প্রতি সপ্তাহে তিনবারের কম পায়খানায় যায় তখনই এই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।"এমতাবস্থায় পায়খানায় দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও মল পরিষ্কার হয় না। 
    এই বিষয়ে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন যেনো কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় সে অনুযায়ী জীবনযাপন করা।সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপন যেকোনো রোগ থেকেই মুক্তি লাভের সর্বপ্রথম শর্ত।

    ২. কোষ্ঠকাঠিন্য কেন হয়

    দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম এবং জীবনযাপনে নিয়মহীনতা কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম কারণ।সাধারণত শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির ঘাটতি এবং অপর্যাপ্ত আঁশযুক্ত খাবারে গ্রহণের কারণেই কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ গুলো হলো: 
  • অপর্যাপ্ত পরিমান পানি পান করা,
  • আঁশ বা রাফেজযুক্ত খাবার এবং শাকসবজি কম খাওয়া, 
  • দুশ্চিন্তায় ভোগা,
  • কায়িক পরিশ্রমের অভাব,
  • দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকা,
  • অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার,ডায়াবেটিস।

  • অনেক সময় আবার ওষুধ সেবনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণেও কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।এছাড়াও যারা অতিরিক্ত চা কফি পান করেন তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।একই সাথে চর্বি ও আমিষযুক্ত খাবার খেলেও অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।

    ৩. কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণগুলো কি কি

    সাধারণত সপ্তাহে তিনবারের কম সময় পায়খানা হলে তাকে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।
    কি কি সমস্যা দেখা দিলে বুঝবেন কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে:
  • স্বাভাবিকের চেয়ে কম মলত্যাগ করা, 
  • ছোট, শুষ্ক, শক্ত পায়খানা হওয়া, 
  • মল ত্যাগে অত্যন্ত কষ্ট হওয়া, 
  • পায়খানা করতে সময় তুলনামুলক বেশি লাগা,
  • পায়খানা করতে অধিক চাপের দরকার হওয়া, 
  • অধিক সময় ধরে পায়খানা করার পরও পূর্ণতার অনুভূতি না আসা, 
  • পেট ফুলে থাকা, আঙুল, সাপোজিটরি কিংবা অন্য কোনো মাধ্যমের সাহায্যে পায়খানা করা, 
  • মলদ্বারের আশপাশে ও তলপেটে ব্যথার অনুভব হওয়া,
  •  মলদ্বারে চাপের অনুভূতি হওয়া কোষ্ঠকাঠিন্যের লক্ষণ।
  • ৪. কোষ্ঠকাঠিন্য হলে করণীয়

    প্রাথমিকভাবে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে এবং রাফেজযুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তবে অনেক সময় কোষ্ঠকাঠিন্য জটিল রুপ ধারন করে, সেক্ষেত্রে অতিদ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।না হয় এই সমস্যা গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে।কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি লাভের জন্য করণীয়
    ১. পর্যাপ্ত পানি পান করা: একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সাধারণত দিনে দেড় থেকে দুই লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।শরীরে পানির চাহিদা সঠিক ভাবে পুরন হলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়।
    ২. শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া: কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে বেশি বেশি রঙ্গিন সবজি এবং বিভিন্ন ধরনের শাক নিয়মিত খেতে হবে।শাক সবজি ও আঁশযুক্ত খাবার পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে দেয় এবং মল কে নরম করতে সহায়তা করে।
    ৩. ব্যায়াম ও শরীরচর্চা করা: সুস্বাস্থের অধীকারী হওয়ার জন্য ব্যায়াম ও শরীরচর্চার কোনো বিকল্প নেই।নিয়মিত শরীরচর্চা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের ইমিউন সিস্টেম কে শক্তিশালী করে।কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে নিয়মিত ব্যায়াম করা একটি অন্যতম সমাধান হতে পারে।
    ৪. মানসিক চাপ এবং দুশ্চিন্তা থেকে বিরত থাকা: দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপ,অতিরিক্ত টেনশন এসবের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।তাই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে নিরাময় পাওয়ার জন্য দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ এসব এড়িয়ে চলতে হবে।নিয়মিত পরিমিত পরিমান ঘুম নিশ্চিত করতে হবে।
    ৫. পায়খানার বেগ হলে তা চেপে না রাখা: পায়খানা চেপে রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা গুরুতর হতে থাকে। এর ফলে পাইলস ও এনাল গেজ রোগ সহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই পায়খানার বেগ আসলে যত দ্রুত সম্ভব টয়লেটে চলে যেতে হবে।
    যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের জন্য মলত্যাগের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো প্যান বা লো কমোডে বসা। তাই সম্ভব হলে লো কমোড ব্যবহার করতে পারেন।
    ঘরোয়া উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় না হলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

    ৫. কি খাবেন কি খাবেন না

    কি কি খাবেন-

    ১। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করতে হবে।
     ২। আঁশ বা রাফেজযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য দুরীকরণে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।শাকসবজি হলো আশেঁর অন্যতম উৎস। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় তাজা শাকসবজি রাখতে হবে।লাউ,মিষ্টিকুমড়া,চালকুমড়া, পেঁপে,সালাদ এগুলো খেতে হবে।শাকসবজিতে পানির পরিমাণ অনেক বেশি যা মল কে নরম করতে সাহায্য করে।
    ৩। কোষ্ঠকাঠিন্যের অন্যতম ওষুধ হলো ইসবগুলের ভুসি।ইসবগুলের ভুসি প্রাকৃতিকভাবেই মল নরম করতে, মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে ও সহজে মলত্যাগ করতে সাহায্য করে।সকালে খালি পেটে ১ গ্লাস কুসুম গরম পানিতে ২ চামচ ইসবগুলের ভুসি মিশিয়ে অপেক্ষা না করে সাথে সাথে পান করতে হবে। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে একইভাবে ইসবগুলের ভুসি খেলে সকালে মলত্যাগে কোনো সমস্যা হয় না। তবে ইসবগুলের ভুসি খেলে প্রচুর পানি পান করতে হবে। তা না হলে ইসবগুলের ভুসি শরীর থেকে পানি শোষণ করে মলত্যাগের সমস্যা আরও জটিল করে তুলবে।
    ৪। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা নিরাময়ে ফলমূল আহার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে।আপেল,কলা,নাশপাতি এসকল ফলের অধিকাংশই পানি।খোসাসহ আপেল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সহজেই নিরাময় সম্ভব। ৫। তোকমাও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে উপকারী একটি খাবার। তোকমা পানিতে ভিজিয়ে রেখে ঘণ্টাখানেক পর খেতে হবে।

    কি কি খাবেন না-

    ১।ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খাবার
    ২। রেড মিট বা লাল মাংস
    ৩। পূর্ণ ননিযুক্ত দুধ এবং পনির
    ৪। হিমায়িত খাদ্য

    ৬. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর

    প্রশ্ন ১: কোষ্ঠকাঠিন্যের সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ কোনটি?

    উত্তর : কোষ্ঠকাঠিন্যের সবচেয়ে কার্যকরী দুটি ওষুধ হলো bisacodyl (Correctol, Ducodyl, Dulcolax) এবং sennocides (Senexon, Senokot) ।

    প্রশ্ন ২: পায়খানা নরম করার উপায় কি?

    উত্তর: পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা আঁশ আছে এমন খাবার খেতে হবে। সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, লাল আটা ও লাল চালের মতো গোটা শস্যদানা বেশি করে খাওয়া উচিত।

    ৭. লেখকের মন্তব্য

    সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত পানি পানের কোনো বিকল্প নেই।এছাড়াও নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যয়াম শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করবে। উপরোক্ত আর্টিকেলটি পড়ে পাঠক কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা নিরাময়ের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url