OrdinaryITPostAd

ভারতের প্রথম মহিলা পাইলট সরলা ঠকরাল

 অনেকেই জানেন না ভারতের প্রথম মহিলা পাইলটের নাম কী? ভারতের প্রথম মহিলা পাইলট হলেন সরলা ঠকরাল । অন্যদিকে  বিশ্বের প্রথম মহিলা পাইলট এর নাম হলো অ্যালেন শেফার্ড ।    গুগল এক বিবৃতিতে বলেছে সরলা ঠকরাল ভারতীয় পরবর্তী প্রজন্মের একজন অনুপ্রেরণার নাম।  Sarla Thukral  পরবর্তী ভারতীয় নারী প্রজন্মের আকাশে উড্ডয়নের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার পথকে সুগম করেছে।  বুঝতেই পারছেন আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব একজন অনুপ্রেরণাময়ী ভারতীয় নারীর জীবনী নিয়ে। যিনি প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে ২১ বছর বয়সে আকাশে উড্ডয়ন করতে সক্ষম হন।


এই আর্টিকেলে আপনি যা যা পাবেন

  • সরলা ঠকরালের জন্ম ও বিবাহ 
  • বিশ্বের প্রথম মহিলা পাইলট ও সরলার জীবন 
  • সরলার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির পূর্ণ সমর্থন
  • সরলা ঠকরালের  আকাশে উড্ডয়ন
  • ভারতীয় নারীদের অনুপ্রেরণার নাম সরলা ঠকরাল
  • সরলার স্বামীর মৃত্যু
  •  সরলার ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা
  • ঠকরালের লাহোর থেকে দিল্লি প্রত্যাবর্তন
  • আর.কে. সরলার সাথে নতুন বিয়ে
  • সরলা ঠকরাল পরবর্তী জীবনে কি পাইলট হতে পেরেছেন?

সরলা ঠকরাল এর জন্ম ও বিবাহ 

Sarla Thukral ১৯১৪ সালে অবিভক্ত ভারতের নয়া দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন ভারতবর্ষে একজন বালকের সাথে একজন বালিকার মূল্যায়ন যেন পাপ স্বরুপ, এমনকি অনেক পিতা-মাতা কণ্যা শিশুকে গলা টিপে হত্যা করত নইলে গঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ করতো। এমন প্রেক্ষাপটে খুব স্বাভাবিকভাবেই মাত্র ১৬ বছর বয়সে সরলা ঠকরালের বিয়ে হয়ে যায়। 

বিশ্বের প্রথম মহিলা পাইলট কে? তার সাথে সরলার জীবনের পার্থক্য ও সাদৃশ্য


সরলা ঠকরালের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির পূর্ণাঙ্গ সমর্থন

Sarla Thukral এর ভাগ্য ছিল সুপ্রসন্ন কেননা সে সময়ে ভারতবর্ষ কুসংস্কারচ্ছন্ন থাকলেও,  সরলা ঠকরালের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির  সবাই ছিলেন আধুনিকমনা।   Sarla Thukral এর স্বামী পি. ডি. শর্মা ছিলেন একজন পাইলট। 

Sarla Thukral এর স্বামী শুধু পাইলটই নয় তিনি ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম এয়ারমেইল পাইলট লাইসেন্স অর্জনকারী। তার রুট ছিল করাচি টু লাহোর। sarla thakral প্রথম ভারতীয় হিসেবে আকাশ জয়েরর জন্য তার স্বামী পি. ডি. শর্মার শতভাগ সমর্থন পেয়েছিলেন।

সরলা ঠকরালের আকাশে উড্ডয়ন 

১৯৩৬ সাল এমন একটি সময় যখন ভারতবর্ষে নারীদের জন্মের পর নদীতে নিক্ষেপ করা হতো বা পুঁতে ফেলা হতো। তাই সে সময় সরলা ঠকরাল করবেন আকাশ জয় এটা যেন একটা স্বপ্ন। যাইহোক সরলা ঠকরাল এবং তাঁর স্বামীর যৌথ প্রচেষ্টায় সরলা স্বপ্নের পেছনে ছোটা শুরু করলেন।

একপর্যায়ে ১৯৩৬ সালে লাহোর ফ্লাইং ক্লাব থেকে এক হাজার ঘন্টার ফ্লাইং শেষ করে 'এ' ক্লাস লাইসেন্সও লাভ করলেন সরলা ঠকরাল। Sarla Thukral এরএই সফলতায় তার আধুনিকমনস্ক পরিবারের সবাই খুশি হলেন। 

ভারতীয় নারীদের অনুপ্রেরণার নাম সরলা ঠকরাল

সরলা ঠকরাল ১৯৩৬ সালের যে সময়টায় আকাশ জয় করেছিলেন,  সে সময় নারীদের অবস্থা ছিল গৃহবন্দী। Sarla Thukral  নারী হয়েও সে সময়ে অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। 

সব বাঁধা-বিপত্তিকে দূর করে আকাশে সরলা ঠকরাল পাখা উড়িয়ে  প্রমাণ করেছেন, ভারতের নারীরাও একদিন পাখির মত স্বাধীন হবে। Sarla Thukral এর এই সফলতা ও সাহসিকতা অন্যদের অনুপ্রাণিত করে আজও। 

সরলা ঠকরালের স্বামী পি. ডি. শর্মার মৃত্যু

দুঃখের বিষয় হলো সরলা ঠকরালের সফলতার করিগর তথা তা স্বামী পি. ডি. শর্মা ১৯৩৯ সালে আকস্মিকভাবে এক প্লেন দূর্ঘটনায় মারা যান। এতে Sarla Thukral ভেঙে পড়েন। কারণ, শর্মা সরলাকে তার সবটুকু দিয়ে সহায়তা করেছিলেন। দুঃখ কষ্টের মধ্যেও Sarla Thukral  শোক সামলে কমার্শিয়াল পাইলট হওয়ার জন্য আবেদন করলে, তৎকালীন সময়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বেজে ওঠে  ফলে উপার্জনের জন্য সরলা ঠকরালের এ পথ বন্ধ হয়ে যায়। 

সরলা ঠকরালের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টা 

সরলা ঠকরাল একদিকে স্বামীর শোকে বিপর্যস্ত অন্যদিকে দুটি ছোট ছোট মেয়ে নিয়ে দারুণ কষ্টে দিনানিপাত শুরু করলেন। জীবিকার তাগিদে সরলা ঠকরাল লাহোরের বেঙ্গল স্কুল অব পেইন্টিংয়ে ছবি আঁকা শেখানো শুরু করলেন।

তাঁর মনোবল এতোটাই দৃঢ় ছিলো যে এর পাশাপাশি Sarla Thukral  ফাইন আর্টস এর ডিপ্লোমা অর্জনের জন্য  পড়ালেখা চালিয়ে যান।

লাহোর থেকে দিল্লি প্রত্যাবর্তন 

 এদিকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দেশভাগ নিয়ে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ব্রিটিশরা এদেশের শাসনভার ছেড়ে দেয় দুটি রাষ্ট্রের ওপর। তাই দেশভাগ হয়ে গেলে সরলা ঠকরাল পাকিস্তানের লাহোর ছেড়ে নয়া দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়ে আসলেন।

লাহোর ছেড়ে নয়া দিল্লিতে আসায় নতুন করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন।কেননা এতোদিন ছিলেন লাহোরের পরিবেশে এখন দিল্লির নতুন পরিবেশে তার কিছুদিন সমস্যা হলেও দৃঢ়চেতা সরলা ঠকরাল কিছুদিনের মধ্যেই দিল্লির পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিলেন।

এরপর আর পাইলট হিসেবে নিজের স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখতে পারেননি সরলা ঠকরাল। সরলা ঠকরাল আর্য সমাজের একজন নিবেদিত অনুসারী ছিলেন বলে ধারণা করা হয়।এরা এমন একটি সম্প্রদায় যারা বেদের শিক্ষা অনুসরণ করার জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত থাকে। এই সম্প্রদায়ে সরলা ঠকরালের বিয়ের সম্ভাবনা ছিল। 

সরলা ঠকরাল ও আর. পি. ঠকরালের বিবাহ

দিল্লিতে সরলা ঠকরালের সাথে আর.  পি. ঠকরালের পরিচয় হয়। এবং কিছুদিনের মধ্যে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। এর আগে তার স্বামী ছিলেন পি. ডি শর্মা। সরলা ঠকরাল আবার 'মাটি' নামেও পরিচিত ছিলেন।

সরলা ঠকরালের কি পরবর্তী জীবনে আর পাইলট হতে পেরেছেন?

 পরবর্তী জীবনে পাইলটের স্বাদ না পেলেও Sarla Thakral থেমে থাকেননি। পরবর্তীতে সরলা ঠকরাল সফল উদ্যোক্তা ও চিত্রকর হয়ে ওঠেন।  Sarla Thakral এর সফল নারী ব্যবসায়ী হিসেবে খ্যাতি ছিল। সরলা ঠকরাল পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকার নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। ২০০৮ সালে এই সম্ভাবনাময়ী সাহসী ও অনুপ্রেরণাময়ী নারীর মৃত্যু হয়।

২০২১ খ্রিস্টাব্দের ৮ই আগস্ট গুগল সরলা ঠকরালের জন্মদিনে 'গুগুল ডুডল'  এর মাধ্যমে সম্মান জানায়। কারণ তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের পড়া নারীদের অনুপ্রেরণা। 








এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url