OrdinaryITPostAd

নাটোরের পূর্ব নাম কি? | নাটোর জেলার ইতিহাস

নাটোর জেলার ইতিহাস এবং নাটোরের পূর্ব নাম কি এ সম্পর্কে অনেকে জানতে আগ্রহী। তাই আজকে আমরা আপনাদের সাথে নাটোরের পূর্ব নাম কি এবং নাটোরের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। নাটোরের ইতিহাস সম্পর্কে এবং নাটকের পূর্ব নাম কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।



আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. নাটোর জেলা সম্পর্কে ধারণা
  2. নাটোর জেলার পটভূমি
  3. নাটোর জেলার নামকরণের ইতিহাস
  4. নাটোর রাজবংশ
  5. নাটোর রাজবাড়ী
  6. লেখকের মন্তব্য

১.নাটোর জেলা সম্পর্কে ধারণা | নাটোরের পূর্ব নাম কি

নাটোর জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি জেলা। জেলার উত্তরে নওগাঁ জেলা ও বগুড়া জেলা, দক্ষিণে পাবনা জেলা ও কুষ্টিয়া জেলা, পূর্বে পাবনা জেলা ও সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে রাজশাহী জেলা অবস্থিত। জেলাটির আয়তন ১৯০৫.০৫ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলাটি মূলত বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমের আটটি জেলার মধ্য একটি জেলা। আয়তনের দিক দিয়ে নাটোর বাংলাদেশের ৩৫ তম জেলা। নাটোর বনলতা সেন,রাণী ভবানী,নাটোর রাজবাড়ী, উত্তরা গণভবন,কাঁচাগোল্লা,চলনবিল,হালতি বিলএবং গ্রীণভ্যালী পার্কের জন্য বিখ্যাত জেলা। নাটোর জেলা দূর্যোগপ্রবণ এলাকা না হলেও সিংড়া উপজেলা ও লালপুর উপজেলায় আত্রাই নদী এবং পদ্মা নদীতে মাঝে মাঝে বন্যা দেখা দেয়। সদর ও নাটোরের সকল উপজেলার আবহাওয়া একই হলেও লালপুরে গড় তাপমাত্রা তুলনামূলক বেশি। চলুন জেনে নেয়া যাক নাটোরের পূর্ব নাম কি ছিল এই সম্পর্কে।

২.নাটোর জেলার পটভূমি | নাটোরের পূর্ব নাম কি

ভারতবর্ষের ইতিহাসে নাটোর একটি বিশিষ্ট স্থানের নাম। নাটোরের ইতিহাস জানার আগে নাটোরের পূর্ব নাম কি তা জানতে হবে। এই নাম তার শাসকশ্রেণী এবং তার অধিবাসীদের জীবনসংগ্রাম আর সংস্কৃতির কারণেই ইতিহাস বিখ্যাত । পাঠান-মোঘল-ইংরেজ এমনকি পাকিস্তানি দুঃশাসনের ইতিহাসে যুগে যুগে শোষণ বঞ্চণা আর নির্যাতনের বিরুদ্ধে আত্ম অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য হয়ে আছে । ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২ এর সাম্প্রদায়িক শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন , ৬৬ এর ছয় দফার সমর্থনে আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এবং ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নাটোরবাসির অবদান দেশের অপরাপর জেলাগুলোর চেয়ে কম নয় । সে কারণে নাটোর ঐতিহাসিকভাবে শুধু ভারতবর্ষের ইতিহাসেই নয়, সভ্য দুনিয়ার সকল দেশে তার স্বতন্ত্র্য পরিচিতি আছে ।

৩.নাটোর জেলার নামকরণের ইতিহাস | নাটোরের পূর্ব নাম কি

নাটোর জেলার পূর্ব নাম কি এবং নাটোর জেলার নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে এই অংশে আলোচনা করা হয়েছে। প্রাচীন ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক ঐশ্বর্য্য মন্ডিত বরেন্দ্র ভূমি সংলগ্ন নাটোর জেলা। ২৪.২৬০ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.৯০ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নারদ নদের উত্তর তীরে নাটোর শহর অবস্থিত। আধুনিক কালের এ শহরটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এক অধ্যায় । একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সামন্তরাজ ও এক মহীয়সী নারীর রাজ্য শাসন ও জনকল্যান ব্যবস্থা। কথিত আছে মোঘল আমলের পাঠান জমিদার লস্কর খাঁ তাঁর সৈন্য সামন্তদের জন্য যে সহান (বর্তমান পুঠিয়া এলাকা) হতে রসদ সংগ্রহ করতেন, কালক্রমে তার নাম হয় লস্করপুর পরগনা। এই পরগনার একটি নীচু জলাভূমির নাম ছিল ছাইভাংগা বিল। ১৭১০ সনে রাজা রাম জীবন রায় এ সহানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী স্থাপন করেন। কালত্রুমে তা প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান, মন্দির ও মনোরম অট্রালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নগরিতে পরিনত হয়।

মোঘল আমলের কিছুকাল বর্তমান নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা গ্রামে চাপিলা পরগনার কেন্দ্র এবং পরবর্তীতে জেলা সদর ছিল বলে জানা যায়। পরে চাপিলা অস্বাস্থ্যকর স্থান বিবেচিত হওয়ায় জেলা সদর নাটোরে স্থানান্তরিত হয়। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত নাটোরে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার সদর কার্যালয় ছিল। স্বাস্থ্যগত কারণে বিশেষকরে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাবের কারণে ইংরেজ সরকার ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে জেলা সদর নাটোর হতে রামপুর বোয়ালিয়ায় (বর্তমান রাজশাহী) স্থানান্তর করেন। নাটোর মহকুমা সৃষ্টি হয় ১৮৪৫ সালে। নাটোরকে স্বাস্থ্যকর করে গড়ে তোলার জন্য ১৮৬৯ সালে নাটোর পৌরসভা স্থাপিত হয়। ১৯৮৪ সালে নাটোর মহকুমা থেকে জেলায় রূপান্তরিত হয়।

কথিত আছে যে, বর্তমান নাটোর শহরের উপরেই এক সময় চলন বিল বিস্তৃত ছিল। জনৈক রাজা নৌকাপথে সেই স্থানের নিকট দিয়ে যাবার সময় একটি ব্যাঙ কর্তৃক সাপকে ধরা দেখে নৌকার মাঝিদের ‘নাও ঠারো’- অর্থাৎ নৌকা থামাও; মতান্তরে ‘ন ঠারো’- অর্থাৎ নৌকা থামিও না বলেন। এরূপ বলার কারণ, তখন জলপথে দস্যু-তস্করের আক্রমন হতো। তারাও দস্যু কবলিত হতে পারেন- এই আশংকায় তাড়াতাড়ি উক্ত স্থান ত্যাগ করাই হয়তো শ্রেয় মনে করেন। আবার হিন্দু ধর্মমতে ব্যাঙ সাপকে ধরলে মনসাদেবী ক্রোধান্বিত হন। সুতরাং নৌকা থামিয়ে মনসা পুজা করাই হিন্দু রাজার পক্ষে অধিক সংগত। তাই জন্য ‘নাও ঠারো’ অথবা ‘ন ঠারো’ কথা হতেই নাটোর নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।

৪.নাটোর রাজবংশ | নাটোরের পূর্ব নাম কি

ঐতিহাসিকদের মতে অষ্টাদশ শতকে নাটোর রাজবংশের উৎপত্তি। উত্তরবংগের জমিদারগনের মধ্যে নাটোর রাজ মান-মর্যাদা ও বিষয় সম্পত্তিতে ছিলেন অগ্রগন্য। রাজা রামজীবন রায় নাটোর রাজ বংশের প্রতিষ্ঠাতা। রামজীবনের পালিত পুত্র রামকান্ত রায়ের সাথে বগুড়া জেলার ছাতিয়ান গ্রামের আত্মারাম চৌধুরীর একমাত্র কন্যা ভবানীর বিবাহ হয়। রাজা রামজীবন রায় ১৭৩০ সালে মৃত্যুবরন করেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি রামকান্ত রায়কে রাজা এবং দেওয়ান দয়ারাম রায়কে তার অভিভাবক নিযুক্ত করেন। রামকান্ত রাজা হলেও প্রকৃত পক্ষে সম্পূর্ণ রাজকার্যাদি পরিচালনা করতেন দয়ারাম রায়। তাঁর দক্ষতার কারনে নাটোর রাজবংশের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ঘটে। ১৭৪৮ সালে রাজা রামকান্ত পরোলোকগমন করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর রাণী ভবানী জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেন। নাটোরের ইতিহাসে তিনি জনহিতৈষী মহারাণী হিসাবে অভিহিত এবং আজো তাঁর স্মৃতি অম্লান। বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ্‌-দৌলার সংগে রাণী ভবানীর আন্তরিক সুসম্পর্ক ছিল। কথিত আছে পলাশীর যুদ্ধে রাণী ভবানী নবাবের পক্ষ অবলম্বন করেন।

পরবর্তীতে রাণী ভবানী নায়েব দয়ারামের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে দিঘাপতিয়া পরগনা উপহার দেন। দিঘাপতিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান উত্তরা গণভবনটি দয়ারামের পরবর্তী বংশধর রাজা প্রমদানাথের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। কালক্রমে এই রাজপ্রাসাদটি প্রথমতঃ গভর্নর হাউস ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের পরে উত্তরা গণভবনে পরিনত হয়।

৫.নাটোর রাজবাড়ী | নাটোরের পূর্ব নাম কি

নাটোর মোগল শাসনামলের শেষ সময় থেকে বাংলার ক্ষমতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয় । বিশেষ করে নবাবী আমলে তার ব্যাপক ব্যাপ্তি ঘটে । বাংলার সুবেদার মুর্শিদ কুলী খানের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বরেন্দ্রী ব্রাহ্মণ রঘুনন্দন তার ছোটভাই রামজীবনের নামে এতদ অঞ্চলে জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন । রাজা রামজীবন রায় নাটোর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। কথিত আছে লস্কর খাঁতার সৈন্য-সামন্তদের জন্য যে স্থান হতে রসদ সংগ্রহ করতেন, কালক্রমে তার নাম হয় লস্করপুর পরগনা। এই পরগনার একটি নীচু চলাভূমির নাম ছিল ছাইভাংগা বিল। ১৭১০ সনে রাজা রামজীবন রায় এই স্থানে মাটি ভরাট করে তার রাজধানী স্থাপন করেন। কালক্রমে মন্দির, প্রাসাদ, দীঘি, উদ্যান ও মনোরম অট্টালিকা দ্বারা সুসজ্জিত নগরীতে পরিণত হয়। ধীরে ধীরে ছাইভাংগা বিলের উপরে প্রতিষ্ঠিত হয় নাটোর শহর। সুবেদার মুর্শিদ কুলী খানের সুপারিশে মোঘল সম্রাট আলমগীরের নিকট হতে রামজীবন ২২ খানা খেলাত এবং রাজা বাহাদুর উপাধি লাভ করেন ।

নাটোর রাজ্য উন্নতির চরম শিখরে পৌছে রাজা রামজীবনের দত্তক পুত্র রামকান্তের স্ত্রী রাণী ভবানীর রাজত্বকালে । ১৭৮২ সালে ক্যাপ্টেন রেনেল এর ম্যাপ অনুযায়ী রাণী ভবানীর জমিদারীর পরিমাণ ছিল ১২৯৯৯ বর্গমাইল । শাসন ব্যবস্থার সুবিধার জন্য সুবেদার মুর্শিদ কুলী খান বাংলাকে ১৩ টি চাকলায় বিভক্ত করেন । এর মধ্যে রাণী ভবানীর জমিদারী ছিল ৮ চাকলা বিস্তৃত । এই বিশাল জমিদারীর বাৎসরিক আয় ছিল দেড় কোটি টাকার অধিক । বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, যশোর এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা, মুর্শিদাবাদ ও বীরভূম জেলাব্যাপী বিস্তৃত ছিল তার রাজত্ব । এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার পুখুরিয়া পরগণা এবং ঢাকা জেলার রাণীবাড়ী অঞ্চলটিও তার জমিদারীর অন্তর্গত ছিল । এ বিশাল জমিদারীর অধিশ্বরী হওয়ার জন্যই বোধহয় তাকে মহারাণী উপাধী দেয়া হয় এবং তাকে অর্ধ-বঙ্গেশ্বরী হিসাবে অভিহিত করা হতো । একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ সামন্তরাজ এবং এক মহিয়ষী নারীর রাজ্যশাসন ও জনকল্যাণ ব্যবস্থা।

৬.লেখকের মন্তব্য | নাটোরের পূর্ব নাম কি

নাটোরের পূর্ব নাম কি এবং নাটোর জেলার ইতিহাস নিয়ে আজকে আমরা আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করছি নাটোর জেলার পূর্ব নাম কি এবং নাটোর জেলার ইতিহাস সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি তথ্য আপনারা জানতে পেরেছেন। নাটোর জেলার পূর্ব নাম কি এ সম্পর্কে আপনাদের যে কোন প্রশ্ন অথবা মতামত আমাদের জানাতে পারেন। নাটোর জেলা সম্পর্কে অন্য যে কোন তথ্য জানতে হলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। নাটোর ছাড়াও অন্য যে কোন জেলা সম্পর্কিত তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট THE DU SPEECH ভিজিট করুন।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা 
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url