OrdinaryITPostAd

কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

 

কানাডাকে বলা হয় ইমিগ্রেন্ট তথা অভিবাসীদের জন্য স্বর্গের দেশ। অভিবাসন প্রত্যাশীদের কাছে কানাডা একটি স্বপ্নের নাম। অনেকেই জনপ্রিয় দেশ কানাডায় নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উদগ্রীব থাকি৷ এর মূল কারণ কানাডার উন্নত জীবন ব্যবস্থা। প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আলোচনা করবো বহুল প্রতীক্ষিত কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কে।


এছাড়াও, আমরা আর্টিকেলটিতে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো- কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়, কানাডার নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয়তা, কানাডা সিটিজেনশিপ, কানাডায় সর্বনিম্ন বেতন কত, কানাডার নাগরিকত্ব পেতে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র, কানাডার নাগরিকত্ব পেতে খরচ কত, কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের নিয়ম সম্পর্কে। 

আর্টিকেল সূচিপত্র - কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

১. কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়

কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কে বলতে হলে কানাডার কতকগুলো প্রোগ্রাম সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। নিচে আমরা কানাডার নাগরিকত্ব পেতে কতগুলো প্রোগ্রামের উল্লেখ করেছি এবং কানাডার নাগরিকত্ব পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। 
  • এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম: নতুন অভিবাসীদের কাছে জনপ্রিয় ও সব থেকে দ্রুত কানাডায় স্থায়ী বসবাসের জন্য একটি পথ হলো এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোগ্রাম। এটি একটি সহজতর প্রক্রিয়া। প্রতিবছর হাজারো অভিবাসন প্রত্যাশীরা কানাডায় এক্সপ্রেস এন্ট্রির মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজের সুযোগ পেয়ে থাকেন। এই প্রোগ্রামে আবেদন করার ধাপ দুটো। ধাপ-১: এটি আপনার প্রোফাইলকে নির্দেশ করছে। এখানে আপনাকে আপনার যে কাগজপত্র জমা দিতে হবে তা হলো- আপনার আইএলটিএস এর ফলাফল, শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রশংসাপত্র ও মূল্যায়ন প্রতিবেদন এবং পাসপোর্ট। ধাপ-২: উপরোক্ত কাগজপত্র জমা দেয়ার পর মূল্যায়ন শেষে আপনি একটি আমন্ত্রণ পত্র পেতে পারেন। তখন আপনি এর সঙ্গে রেফারেন্স লেটার, বিস্তারিত পরিচয়পত্র, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এবং মেডিকেল পরীক্ষার ফলাফল(স্বাস্থ্য পরীক্ষা) ইত্যাদি জমা দিতে হবে।
  • প্রাদেশিক নমিনি প্রোগ্রাম(পিএনপি): প্রাদেশিক নমিনি প্রোগ্রাম(পিএনপি) হলো অর্থনৈতিক শ্রেণির অভিবাসীদের কানাডায় যাওয়ার পরবর্তী একটি সাধারণ উপায়। কানাডায় প্রায় প্রতিটি প্রদেশ ও অঞ্চলগুলো পিএনপি পরিচালনা করে থাকে। প্রত্যেকটি প্রদেশের নিজস্ব নির্বাচনের মানদন্ড রয়েছে। নিম্নোক্ত উপায়ে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়টি পরিচালিত হয়। ধাপ-১: সফল আবেদনকারীরা একটি প্রাদেশিক মনোনয়নের প্রশংসাপত্র পাবেন। ধাপ-২: প্রশংসাপত্রটি স্থায়ীভাবে আবাসনের আবেদনপত্রের সঙ্গে আইআরসিসিতে জমা দিবেন। এখানে উল্লেখ্য, আপনি যদি এক্সপ্রেস এন্ট্রির জন্য যোগ্য হয়ে থাকেন তবে এক্সপ্রেস এন্ট্রি প্রোফাইলও জমা দেয়াটা অধিকতর ভালো। এটি আপনার স্থায়ী হওয়ার জন্য এক্সট্রা পয়েন্ট হিসেবে যুক্ত হবে। মার্কিন নাগরিক এবং বাসিন্দাদের জন্য আরও বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে তার মধ্যে কুইবেক ইমিগ্রেশন সিস্টেমের পাশাপাশি কানাডার ফেডারেল এবং ব্যবসায়িক অভিবাসী ব্যক্তিদের জন্য প্রাদেশিক বিকল্প উপায় রয়েছে। 
  • ফ্যামিলি ক্লাস স্পন্সরশীপ: কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালার একটি হচ্ছে ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন। এর মাধ্যমে কানাডায় বসবাসরত পরিবারের সদস্যরা স্থায়ীভাবে বসবাসের আমন্ত্রণ জানাতে পারেন। যাকে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন- স্বামী বা স্ত্রী, ২২ বছরের কম বয়সী সন্তান। তবে সুপার ভিসার আওতায় বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে কানাডায় নেয়া যায়। এছাড়াও কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়া সবচেয়ে সহজ ও নিশ্চিত উপায় হলো কানাডা কোন জন্মসূত্রে নাগরিককে বিয়ে করা। এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে যে অবশ্যই কোন ভুয়া বা অসততার আশ্রয় নেয়া যাবে না নতুবা কঠিন শাস্তি পেতে হবে। বিয়ে করার দুবছর তাকে অপেক্ষা করতে হবে। এ দুবছর সরকারি কর্তৃপক্ষ তাকে অবজারভেশনে রাখবে৷ পাসপোর্ট, ভিসা ও সরবারহযোগ্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে থাকতে হবে।
  • কানাডিয়ান ইনভেস্টর ইমিগ্রেশন বা উদ্যোক্তা/বিনিয়োগকারী ভিসা : এ ভিসা সাধারণত তারাই পেয়ে থাকেন যারা কানাডায় বিনিয়োগ করতে সক্ষম এবং তার একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা রয়েছে। তখন তাকে ফেডারেল ইনভেস্টর প্রোগ্রাম ও কুইবেক প্রোগ্রাম এ দুটোর মাধ্যমে আবেন করতে হবে। এটি পাঁচ বছরের জন্য দেয়া হয়। 
  • এলএমআইএ ওয়ার্ক ভিসা: এই প্রক্রিয়াটি অপেক্ষাকৃত কঠিন একটি প্রক্রিয়া। তবে এর মাধ্যমে কানাডায় স্থায়ী হওয়া সহজ হয়। ওয়ার্ক ভিসায় আবেদন করে চাকরি অফার নিয়ে তাদের যেতে হয়। এক্ষেত্রে তাকে ‘লেবার মার্কেট ইম্প্যাক্ট এসেসমেন্ট(এলএমআইএ) এর আওতায় আবেদন জমা দিতে হবে। 
  • আইইসি: চাকরির অফার লেটার ছাড়াই ১৮-৩৫ বছরের যুবকরা ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স কানাডা অর্থাৎ আইসিসি এর আওতায় কানাডায় যেতে পারে। তবে এ সুবিধা সব দেশের নাগরিকরা প্রাপ্ত হবেন না। দক্ষ কর্মী নেয়ার জন্য বিশেষ ভিসার সুবিধা চালু আছে। প্রায় ৩৪৭ টি পেশায় যেমন- হেয়ার স্টাইলিস্ট, বিক্রয়কর্মী এবং প্রসাশনিক সহকারী ইত্যাদি। 
  • স্ট্যাডি ভিসা: কানাডায় যাওয়ার একটি অন্যতম সহজ প্রক্রিয়া এটি। তবে এজন্য কানাডার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগেই ভর্তিপ্রক্রিয়া সেরে ফেলার পর আপনি যে স্টেটে পড়ালেখা করেছেন সেখানেই চাকরি করতে হবে। এই ভিসার সুযোগ পৃথিবীর সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। 
  • ভ্রমণ ভিসা: এ ভিসায় কানাডাা যাওয়া সহজ। তবে ভিসা পেতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। দূতাবাসে সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় কী জন্য যেতে চান সেটি জিজ্ঞেস করা হবে যদি তার মনে হয় ভিসার মেয়াদ শেষে হলেও আপনি আর আসবেন তখন এ ভিসা আর পাবেন না। 
উপরোক্ত ভিসা প্রোগ্রাম ছাড়াও কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় এর ক্ষেত্রে আপনি ব্যবসার মাধ্যমে কানাডার নাগরিকত্ব পেতে পারেন- যেমন আপনি সেখানকার কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে বিশেষ নাফটা ভিসা রয়েছে। এছাড়াও কানাডা ইকোনমিক ভিসাও আহ্বান করে থাকে।

২. কানাডার নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয়তা

কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় আর্টিকেলটির এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করবো কানাডার নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে। 
  • নিশ্চয়তা: একবার কানাডার নাগরিকত্ব পেলে আপনি স্থায়ী বসবাসের লাইসেন্স পেয়ে যাবেন যেটির ফলে আপনার নাগরিকত্ব সহজে আর যাবে না। বিশেষভাবে ট্রুডো সরকারের আমল থেকে নাগরিকত্ব পাকাপোক্ত করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এছাড়া আপনি নাগরিকত্বের আবেদনের সময় সেখানকার পেশাদারদের কাছ থেকে সুবিধা পাবেন।
  • ভ্রমণ অধিকার : বিশ্বে কানাডা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও খ্যাতিমান উন্নত দেশ। কানাডিয়ান নাগরিকরা বিনা ভিসাতেই বিশ্বের অনেকগুলো দেশ ভ্রমণ করতে সক্ষম। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, শেনজেন দেশগুলো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো। 
  • শক্তিশালী পাসপোর্ট: বর্তমানে শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় ৬ষ্ট স্থানে আছে কানাডিয়ান পাসপোর্ট। এই পাসপোর্টধারীকে কানাডা সংবিধান অনুযায়ী সুরক্ষিত থাকার অধিকার প্রদান করে থাকে
  • শিশুদের জন্য সুবিধা : এই নাগরিকত্ব পাওয়ার পর তিনি তার আগত বংশের মাঝেও এই সুযোগ সুবিধা স্থানান্তরিত করতে পারবেন। শিশুটি কানাডার মধ্যে বা বাইরে যেখানেই জন্ম নিক না কেন সেও একজন কানাডার নাগরিক হবেন।
  • কাজের সুযোগ: সব ধরনের চাকরি যেটি একজন ইমিগ্রেন্ট পেতেন না সেগুলো কানাডা তাদের নাগরিকদের একচেটিয়া সুযোগের মাধ্যমে প্রদান করে থাকে। 
  • রাজনৈতিক অংশগ্রহণ: আপনার ‘বাক স্বাধীনতা’ থাকবে অন্যান্য কানাডিয়ানদের মতোই। আপনিও ফেডারেল পার্মানেন্টে ভোট প্রদান ও সমান রাজনৈতিক সুবিধা পাবেন। এমনকি নির্বাচনে সরকার প্রধান পদপ্রার্থী হতে চাইলেও এক্ষেত্রে কোন প্রকার বাঁধা নেই। 
  • দ্বৈত নাগরিকত্ব: আপনি আপনার বর্তমান অন্যদেশের নাগরিকত্ব বজাায় রেখেও কানাডার নাগরিকত্ব পেতে পারেন। অর্থাৎ আপনি একই সঙ্গে দুই দেশের নাগরিক। কানাডা মূলত দ্বৈত নাগরিকত্বকে বৈধতা প্রদান করে। 

৩. কানাডা সিটিজেনশিপ

পাঠক, কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে হলে আগে আমাদের জানা জরুরি কানাডার সিটিজেনশিপ বিষয়টি। ১৯৬৭ সালের দিকে অভিবাসীরা শ্রম বাজারের উন্নতি করতে পারে কি না সেটি মূল্যায়ন করার জন্য প্রথম অভিবাসন ব্যবস্থা চালু করে কানাডা। কানাডায় অভিবাসনের জন্য ১২০ টি ভিন্ন উপায় প্রদান করে থাকে।

চলতি বছরসহ (২০২৩ থেকে) তিন বছরে ১৩ লাখ মানুষকে পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে (স্থায়ীভাবে বসবাসের ভিসা) কানাডায় নেয়া হবে। কানাডাকে বলা হয় অভিবাসীদের দেশ কেননা প্রতিবছর গড়ে প্রায় তিন থেকে চার লাখ মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এসে এখানে বসবাস করেন।

কানাডায় কেউ আসেন সরাসরি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে, কেউ শিক্ষার্থী হিসেবে এসে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে কানাডায় স্থায়ী হতে সিটিজেনশিপ নেন। কেউ কেউ রিফিউজি হিসেবে, কেউ ভিজিট ভিসা এবং অনেকেই ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কয়েক বছর চাকরি করে কানাডায় নাগরিকত্ব লাভ করেন। নাগরিকত্বের জন্য কানাডা বিশ্বের অন্যতম প্রবেশযোগ্য পথ প্রদান করে থাকে। যেমন, অভিবাসীরা প্রাথমিকভাবে তিনবছর থাকার পর স্থায়ী বসবাস ও কানাডার নাগরিকত্বের যোগ্য হতে পারেন। 

৪. কানাডায় সর্বনিম্ন বেতন কত

কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় আলোচনার এ পর্যায়ে আমরা জানবো কানাডার সর্বনিম্ন বেতন কত। কানাডার বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে সর্বনিম্ন বেতন (প্রতি ঘন্টা হিসেবে) নিচে দেওয়া হলো- 
  • অন্টারিও -১৫.৫০$ বাংলাদেশি টাকায়- ১২৪৪.৮৯ টাকা
  • ব্রিটিশ কলাম্বিয়া- কলাম্বিয়া-১৫.৬৫$ বাংলাদেশি-১২৫৬.৯৪ টাকা
  • আলবার্তা- ১৫$ বাংলাদেশি- ১২০৪.৭৩ টাকা
  • প্রিন্স এডওয়ার্ড দ্বীপ- ১৩.৭০$ বাংলাদেশি- ১১০০.৩২ টাকা 
  • কেবেক- ১৪.২৫$ বাংলাদেশি- ১১৪৪.৪৯ টাকা
  • সাকাচুয়ান-১৩$ বাংলাদেশি -১০৪৪.১০ টাকা
  • নোভা স্কশিয়া- ১৩.৩৫$ বাংলাদেশি- ১০৭২.২১ টাকা
  • মেনিটোবা- ১২.৩৫$ বাংলাদেশি- ৯৯১.৮৯ টাকা।*উল্লেখ্য যে, মুদ্রাস্ফীতি অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন পরিবর্তন হতে পারে।

৫. কানাডার নাগরিকত্ব পেতে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র

প্রিয় পাঠক, আমরা কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কিত আর্টিকেলের এ পর্যায়ে জানবো কানাডার নাগরিকত্ব পেতে যে ডকুমেন্টস বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে।  
  • পারসনাল ইনফরমেশন ডকুমেন্টস: আপনার সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে আপনার নামের বানান একই থাকতে হবে। আপনার কোথাও নাম-মো: কোথাও মোহাম্মদ/মুহম্মদ এমন থাকা যাবে তেমনি আপনার বাবা-মায়ের নামের বানানও সব জায়গায় একই থাকা লাগবে। আপনার ও আপনার ডিপেন্ডেবলদের(স্ত্রী, সন্তান) মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের আবেদন চলার সময় মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাসের থাকতে হবে। 
  • জন্ম নিবন্ধন: এটি সরকার প্রদত্ত জন্ম নিবন্ধন হতে হবে। আপনার সঙ্গে ডিপেন্ডেবল থাকলে তারও জন্ম নিবন্ধন লাগবে।
  • ভোটার আইডি কার্ড : ১৮ বছরের উপরের সবার ভোটার আইডি কার্ড বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকা লাগবেই।
  • বিবাহ সনদ ও নিকাহনামা: বিবাহিতদের জন্য ইংরেজিতে ইস্যু করা ম্যারেজ সার্টিফিকেট ও নিকাহনামা থাকতে হবে।
  • শিক্ষাগত ও ভাষাগত যোগ্যতা:  প্রতিটি শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র ক্রিডেনশিয়াল করা জরুরি। অর্থাৎ, আপনি যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করুন না কেন কানাডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে সেটির মান কত এটি দেখা হবে। ক্রিডেনশিয়াল করার গাইডলাইন পাবেন Canada Government Citizenship বা কানাডিয়ান সরকারি ওয়েবসাইটে। 
  • আইইএলটিএস স্কোর সার্টিফিকেট : স্টুডেন্ট ভিসার জন্য একাডেমিক আইইএলটিএস ও অন্যান্য ভিসার জন্য জেনারেল আইইএলটিএস সার্টিফিকেট। 
  • ব্যাংক সেটেলমেন্ট: ব্যাংক সেটেলমেন্টের কাগজপত্র অর্থাৎ, তারা যে পরিমান টাকা চাইবে সে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র। আপনার জমি বা বিভিন্ন সম্পত্তির পরিমাণ দেখিয়ে (শিক্ষার্থী হলে বাবা-মায়ের) কাগজপত্রও এর সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন। 
  • ওয়ার্ক এক্সপেরিয়েন্স: ধরুন আপনার এবং আপনার স্পাউসের যদি পাঁচ বছরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে প্রতিটির জন্য আলাদা সনদপত্র যুক্ত করতে হবে। সনদপত্রে অবশ্যই যিনি সনদ দিবেন তাঁর নাম, সাক্ষর, পদবি, ইমেইল ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হবে। 
  • এক পাতার চিঠি: এটি হলো আপনার এক্সপ্রেস অব ইন্টারেস্ট। কানাডায় অভিবাসনের জন্য যোগ্য এ ধরনের একটি ডকুমেন্ট বা চিঠি দিতে হয়। চিঠিটি লিখতে এ বিষয়ে ইউটিউব বা দক্ষ কারো সাহায্য নিতে পারেন। 
  • পুলিশ ক্লিয়ারেন্স: কোন ধরনের অপরাধে সঙ্গে আপনি যে জড়িত নন সেটি লোকাল থানা থেকে স্টেটমেন্ট আবেদন করে দিতে হবে। ও
  • কোভিড-১৯ এর ভেকসিন ডোজের কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
এতক্ষণ কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় আর্টিকেলে আমরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আলোচনা করেছি। মনে রাখবেন আপনার সমস্ত কাগজপত্র স্ক্যান করে পাঠাতে হবে। অনেক সময় নোটারিকৃত কাগজপত্র চাইতে পারে। কাগজপত্রে কোন প্রকার মিথ্যা উল্লেখ করা যাবে না। যে কোন মিথ্যা ও ত্রুটির জন্য আপনার ইমিগ্রেশন আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

৬. কানাডার নাগরিকত্ব পেতে খরচ কত

কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় আর্টিকেলের এ পর্যায়ে থাকছে কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে খরচ কেমন সেই বিষয়টি। খরচের বিষয়টি মূলত বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলোর জন্য ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। ফি এর বিষয়টি কানাডিয়ান সরকার প্রতিবছরের পয়েলা ডিসেম্বর থেকে বিদ্যমান মুদ্রাস্ফিতি অনুযায়ী সংযুক্ত করে থাকে নিচে কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত নাগরিকত্বের বর্তমান আবেদন ফি উল্লেখ করা হলো-
  • প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ এবং তার বেশি বয়সের জন্য) - কানানডিয়ান 630.00 $(প্রসেসিং + নাগরিকত্ব অধিকারের ফি) যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায়- 50,941.8 টাকা 
  • রাষ্ট্রহীন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮ বা তার বেশি) নাগরিকত্ব ফি (যার কানাডিয়ান পিতা-মাতা রয়েছে)- কানানডিয়ান 100$ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় - 8,086 টাকা
  • প্রক্রিয়াকরণ ফি (১৮ বছরের কম বয়সী হলে)- কানাডিয়ান- 100$ যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় - 8,086 টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জন্য ফি সংক্রান্ত পুরো তথ্য পেয়ে যাবেন কানাডিয়ান ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে -Citizenship Fees

৭. কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের নিয়ম

প্রিয় পাঠক, কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা আলোচনা করছি কানাডার নাগরিকত্ব পেতে হলে আবেদনের নিয়ম কেমন হয়ে থাকে। কানাডার নাগরিক হওয়ার আগে একজন বিদেশি নাগরিককে পিআর হতে হয় (কানাডার পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট)। সাধারণভাবে প্রথমেই আপনি কানাডার নাগরিক হতে পারবেন না। পিআর হতে হলে পিআর স্ট্যাটাস প্রাপ্ত হতে হবে যাকে একটি পিআর কার্ড দেয়া হয়। তবে এটি কোন স্থায়ী ডকুমেন্ট নয়।

পিআর স্ট্যাটাস বজায় রাখতে হলে আপনাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। পিআর-কে প্রতি পাঁচ বছরে অন্তত দুই বছর কানাডায় স্ব শরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। তবে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।  পিআর ভিন্নদেশের পাসপোর্টধারী কানাডার নন তাই কানাডিয়ান পাসপোর্ট পেতে কানাডার পিআর কানাডার সুনাগরিকদের মতো বসবাসের পর আরও কিছু শর্তসাপেক্ষে নাগরিকত্ব আবেদন দাখিল করতে হবে। 

আপনি নাগরিকত্বের আবেদনের পুরো প্রসেসটি  ওয়েবসাইট- Citizenship Application গিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে করবেন। যেখানে ‘Canadian Citizenship’ মেন্যু থেকে 'My Application' সিলেক্ট করে আপনাকে ধাপে ধাপে আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হবে।নাগরিকত্ব আবেদন অনুমোদিত হলে কানাডার প্রতি আনুগত্যের শপথ পাঠ করলে কানাডার নাগরিকত্ব সনদ বা সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হবেন। 

০৮. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: কানাডার নাগরিকত্ব পেতে কত বছর সময় লাগে?

উত্তর: পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় ১০৯৫ দিন থাকার পর নাগরিকত্বের আবেন করতে পারেন।

প্রশ্ন ২: কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা কী?

উত্তর: অভিবাসী হিসেবে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে পাঁচ বছর থাকার পর স্ব শরীরে ১০৯৫ দিন থাকলে আপনি নাগরিকত্বের আবেদনের যোগ্য হবেন।

প্রশ্ন ৩: কানাডায় কি ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যাওয়া যায়?

উত্তর:কানাডায় অস্থায়ীভাবে কাজ করার জন্য কানাডিয়ানরা বিভিন্ন ওয়ার্ক পারমিট ভিসার অফার করে থাকে তখন ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় যেতে পারবেন।

প্রশ্ন ৪: কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা হতে সর্বোচ্চ কত সময় লাগে?

উত্তর: কানাডিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হয়। ( প্রক্রিয়ার সময়সূচি পরিবর্তিত হতে পারে)
প্রশ্ন ৫: কানাডার ভাষার নাম কী?
উত্তর: ইংরেজি ও ফরাসি ভাষা

প্রশ্ন ৬: কানাডার পিআর কী?

উত্তর: কানাডার পারমানেন্ট রেসিডেন্ট বা স্থায়ী বাসিন্দা যিনি কানাডার মাটিতে পা রেখেছেন এমন কেউ।

প্রশ্ন ৭: কানাডার কোন ভিসা ভালো?
উত্তর: কানাডার ভিজিটর ভিসা একটি মাল্টিপল এন্ট্রি ভিসা।

০৯. লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায় সম্পর্কিত আর্টিকেলটিতে আপনাদের কানাডার নাগরিকত্ব পাওয়ার উপায়, কানাডার নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয়তা, কানাডা সিটিজেনশিপ, কানাডায় সর্বনিম্ন বেতন কত, কানাডার নাগরিকত্ব পেতে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র, কানাডার নাগরিকত্ব পেতে খরচ কত, কানাডার নাগরিকত্বের জন্য আবেদনের নিয়ম জানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। 
আর্টিকেলটিতে কোন প্রকার ভুলভ্রান্তি থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন এবং উপযুক্ত তথ্য মন্তব্যে প্রদান করার আহ্বান করা হলো। এ সম্পর্কিত আরও আর্টিকেল পড়তে পারেন The DU Speech এ। ধন্যবাদ। 
লেখক- তামান্না বেগম 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url