লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত লুক্সেমবার্গ নামক দেশটিতে বর্তমানে ৩ লক্ষের মত শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। উচ্চ মাথাপিছু আয়, মোটা অঙ্কের বেতন এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধার জন্য অনেকেই লুক্সেমবার্গ যেতে চান। বাংলাদেশ থেকেও অনেকে লুক্সেমবার্গ কাজের জন্য যেতে চান তবে লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। আজকের আর্টিকেলে তাই লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আর্টিকেল সূচিপত্র
- লুক্সেমবার্গ কাজের ভিসা
- লুক্সেমবার্গ কাজের ভিসা আবেদনের নিয়ম
- লুক্সেমবার্গ সিজনাল কাজের ভিসা
- লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- লুক্সেমবার্গ কাজের বেতন কত
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১.লুক্সেমবার্গ কাজের ভিসা
লুক্সেমবার্গে সাধারণত স্বল্পমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী এই দুই ধরনের ভিসা পাওয়া যায়। তবে কাজের উদ্দেশ্যে লুক্সেমবার্গ গেলে অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদী ভিসা নিয়ে যেতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করার আগে তাই লুক্সেমবার্গ কাজের ভিসা নিয়ে আলোচনা করব।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট পেতে গেলে তিন মাস এর অধিক মেয়াদি কাজের অফার পেতে হবে। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইমিগ্রেশনের সাধারণ বিভাগে অস্থায়ী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এই কাজটি সাধারণত নিয়োগকারী কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা করে থাকেন। অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশের লুক্সেমবার্গ দূতাবাসে যোগাযোগ করতে হবে এবং লুক্সেমবার্গের টাইপ ডি ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। সকল কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে লুক্সেমবার্গ যাওয়ার পর ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট নিতে হবে। ওয়ার্ক পারমিট হলো লুক্সেমবার্গে কাজের অনুমতি পত্র, আর রেসিডেন্স পারমিট হলো লুক্সেমবার্গে বসবাসের অনুমতি পত্র। লুক্সেমবার্গ পৌছানোর পর নিয়োগকারী কোম্পানির প্রতিনিধির সহযোগীতা নিয়ে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে লুক্সেমবার্গের প্রশাসনিক দফতরে গিয়ে ওয়ার্ক ও রেসিডেন্স পারমিট এর জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর সকল কাজ সম্পন্ন হলে উক্ত অফিস কতৃক পারমিটগুলো ডেলিভারি করা হবে। লুক্সেমবার্গে বৈধভাবে থাকা এবং কাজ করার ক্ষেত্রে এই পারমিটগুলো অবশ্যই প্রয়োজন।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে?
২.লুক্সেমবার্গ কাজের ভিসা আবেদনের নিয়ম
কয়েকটি সহজ ধাপে বাড়িতে বসেই লুক্সেমবার্গ কাজের ভিসা আবেদন করা যায়। যারা কাজের ভিসায় লুক্সেমবার্গ যেতে চান আর নিজে নিজে আবেদন করতে চান তাদের জন্য লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার নিয়ম নিয়ে আর্টিকেলের এই অংশে আমরা আলোচনা করব।
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনলর নিয়ম
- চাকরি নিশ্চিত করা : কাজের ভিসায় লুক্সেমবার্গ যাওয়ার প্রধান শর্ত হলো চাকরি পাওয়া। এজন্য প্রথমেই সার্কুলার দেখে একটি কাজের অফার খুঁজতে হবে। কাজের অফার পেয়ে গেলে আপনার নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই ন্যাশনাল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি (Agence pour le développement de l’emploi – ADEM) থেকে একটি সার্টিফিকেট পেতে হবে। এই সার্টিফিকেট পেয়ে গেলেই কর্মচারী নিয়োগকর্তার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারবে এবং আপনার চাকরি নিশ্চিত হবে।
- অস্থায়ী অনুমোদন: প্রথম ধাপে ইমিগ্রেশন ডিরেক্টরেটের মাধ্যমে লুক্সেমবার্গে থাকার একটি অস্থায়ী অনুমোদনের জন্য আবেদন করা করতে হবে। এটি সাধারনত নিয়োগকারী কর্মকর্তা করে থাকেন কেননা আপনি লুক্সেমবার্গে পৌঁছানোর আগে এই আবেদনটি অবশ্যই জমা দিতে হবে এবং অনুমোদিত হতে হবে।
- ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন: এরপর নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই আপনার হয়ে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করার পর আপনাকে পারমিট পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কোন উত্তর না পাওয়া যায় তাহলে আবেদনটি বাতিল বলে গণ্য হবে।আর ওয়ার্ক পারমিটের আবেদন অনুমোদিত হলে, নিয়োগকারী ওয়ার্ক পারমিট ডাকযোগে পাবেন এবং আপনার পারমিশন নিশ্চিত করবেন।
- ডি ভিসার জন্য আবেদন : লুক্সেমবার্গের টাইপ ডি ভিসা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা। কাজের ক্ষেত্রে এই ভিসার প্রয়োজন হয়। তাই অস্থায়ী অনুমোদন পাওয়ার পর আপনাকে এই টাইপ ডি লং স্টে ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের লুক্সেমবার্গ দূতাবাসে গিয়ে যোগাযোগ করে ভিসা আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
- স্থানীয় নিবন্ধন: ভিসা আবেদন গ্রহনযোগ্য হলে এবং ফ্লাইট নিশ্চিত হলে আর কোনো কাজ থাকে না বাংলাদেশে। এরপর লুক্সেমবার্গে পৌঁছানোর পর, তিন কার্যদিবসের মধ্যে স্থানীয় প্রশাসন অফিসে উপস্থিতি নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য নিয়োগকারী কোম্পানির কোনো প্রতিনিধির সাহায্য নিতে হবে।
- মেডিকেল পরীক্ষা: চাকরীতে জয়েন করার পর কতৃপক্ষের নির্দেশ হলে মেডিকেল পরীক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে সকল নির্দেশনা কতৃপক্ষ প্রদান করবেন।
- রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন: আবাসনের অনুমতির জন্য রেসিডেন্স পারমিট এর প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য স্থানীয় প্রশাসনিক অফিসে গিয়ে আবেদন জমা দিতে হবে লুক্সেমবার্গে যাওয়ার তিন মাসের মধ্যে।
আরও পড়ুনঃ সাইপ্রাস ভিসা আবেদন
৩.লুক্সেমবার্গ সিজনাল কাজের ভিসা
লুক্সেমবার্গে সিজনাল কাজের ভিসা ৩ মাসের কম এবং তিন মাসের বেশি থেকে এক বছর মেয়াদি ভিসায় কাজের জন্য লুক্সেমবার্গ যাওয়া যায়। সম্প্রতি এক প্রতিবেদন অনুযায়ী লুক্সেমবার্গে বর্তমানে সিনলাজ ওয়ার্কারের প্রচুর সংকট রয়েছে। এটা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা লুক্সেমবার্গ যেতে আগ্রহী রয়েছন তাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ। তাই আমরা লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন এর পাশাপাশি লুক্সেমবার্গ সিজনাল ওয়ার্ক ভিসা নিয়ে আলোচনা করব।
সিজনাল ওয়ার্ক ভিসায় যেসব কাজ করা যায় তা হলো :
- ফসল কাটা (আঙ্গুর ও অন্যান্য সিজনাল ফল ও ফসল)
- কাটা পণ্যের প্যাকেজিং করা।
- অবসর এবং ছুটির প্রশিক্ষক।
- হলিডে ট্যুর গাইড এবং ট্যুরিস্ট গাইড।
- সমুদ্র সৈকত, আউটডোর সুইমিং পুল এবং ক্যাম্পসাইটগুলির নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণ।
- খুচরা দোকান, হোটেল এবং রেস্তোরাঁর কাজ, যেসব শুধুমাত্র বছরের নির্দিষ্ট সময়ে খোলা থাকে।
- পর্যটন কেন্দ্রে গাড়ী চালানো।
আরও পড়ুনঃ কুয়েত কোম্পানি ভিসা বেতন কত
৪.লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নিজস্ব বৈধতা প্রমানের জন্য লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদনের সময় কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। যেমন :
- লুক্সেমবার্গে চাকরির অফার লেটার এবং নিয়োগকর্তার সাথে বৈধ কাজের চুক্তিপত্র।
- জাতীয় কর্মসংস্থান সংস্থা (Agence pour le développement de l’emploi – ADEM) এর নিবন্ধন।
- ক্লিন ক্রিমিনাল রেকর্ড (পুলিস ক্লিয়ারেন্স)
- সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ সহ কর্মসংস্থান চুক্তি।
- বৈধ পাসপোর্ট.
- ভিসা আবেদনপত্র।
- স্বাস্থ্য বীমা.
- ব্যাংক দলিল.
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের ফটোকপি।
- সম্প্রতি তোলা পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
আরও পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়া কাজের ভিসা
৫.লুক্সেমবার্গ কাজের বেতন কত
লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার পূর্বে লুক্সেমবার্গ কাজের বেতন কত তা জানতে হবে।
The legal minimum wage in luxemburg as of January 2024 অনুযায়ী লুক্সেমবার্গে কাজের বেতন :
- অদক্ষ (আনস্কিলড/ যাদের কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই) কর্মী : মাসিক বেতন ২৫৭০ ইউরো বা প্রায় ৩ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা।
- দক্ষ (যাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে) কর্মী : মাসিক বেতন ৩০৮৫ ইউরো বা প্রায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা প্রায়।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায়
৬.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন ১: বাংলাদেশের লুক্সেমবার্গ দূতাবাস কোথায়?
উত্তর: বাংলাদেশে লুক্সেমবার্গ দূতাবাসের ঠিকানা হলো: রোড ১১/এ, হাউজ ৫০/১,
এপার্টমেন্ট ই, ধানমন্ডি আর/এ
ঢাকা -১২০৯
প্রশ্ন ২: কাজের ভিসায় লুক্সেমবার্গ যেতে কত টাকা খরচ হয়?
উত্তর: ইউরোপের অন্যতম ধনী দেশ লুক্সেমবার্গে কাজের ভিসায় যেতে ভিসা ফি ৮০ ইউরো বা প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি টাকা। তবে ভিসা আবেদন ফি, এজেন্সির সার্ভিস চার্জ, মেডিকেল ফি, বিমানের টিকেট, ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য খরচ বাবদ ৫ থেকে ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়।
প্রশ্ন ৩: লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে কতদিন সময় লাগে?
উত্তর: সাধারণভাবে লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা পেতে ১৫ থেকে ৩০ দিন সময় লাগে। তবে বিশেষ কোনো সমস্যার কারনে ৬০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুনঃ তুরস্ক কাজের ভিসা
৭.লেখকের মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলে আমরা লুক্সেমবার্গ ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার নিয়ম ও কাজের বেতন সহ সকল বিষয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে পাঠক উপকৃত হবেন। আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের সমস্যায় যা যা করবেন
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url