কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক হল বাংলাদেশের একটি সম্পূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংক। কৃষক ও কৃষি শিল্পকে সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে এই ব্যাংক কাজ করে যায়। হতদরিদ্র এবং সহায় সম্বলহীন অনেকেই এই ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে পোল্ট্রি ফর্ম, ডেইরি ফার্ম করতে চান তবে কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম না জানার কারনে নিতে পারেন না। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম ও আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
আর্টিকেল সূচিপত্র
- কৃষি ব্যাংক লোনের খাতসমূহ
- কৃষি ব্যাংক গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম
- কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার শর্তাবলি
- কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- কৃষি ব্যাংক সুদের হার কত
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১.কৃষি ব্যাংক লোনের খাতসমূহ
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মূলত তিন ধরনের ঋণ প্রদান করে থাকে। স্বল্প মেয়াদি, মধ্যম মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ। কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম মধ্যম মেয়াদি ঋণের অন্তর্ভুক্ত।
স্বল্প মেয়াদি ঝণ
- শস্য ঋণ : বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ, মৎস্যচাষ , চিংড়ি চাষ , একুয়াকালচার , রেণু উৎপাদন , লবণ চাষ, শস্যগুদাম ও বাজারজাতকরণের জন্য এ ঋণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও চা উৎপাদন, নগদ মুলধন ঋণ, রপ্তানী ঋণ , আলু সংরক্ষণ , কৃষি পণ্যের বিপণন , সার ও কীটনাশক ঔষধের ডিলার , কৃষি পণ্যের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী , অন্যান্য (এসএমই খাত সহ) আর্থ-সামাজিক কার্যাবলী-আইফাদ বা স্বনির্ভর ঋণ কর্মসূচীর আওতায় স্বল্প মেয়াদি ঋণ প্রদান করা হয়। এই ঋণ সর্বোচ্চ ১৮ মাসের ভিতর পরিশোধ করতে হয়।
মধ্যম মেয়াদী ঋণ
- গাভী, হাঁস, মুরগি, ছাগল সহ সকল গৃহপালিত পশুপাখি পালন এবং খামার, গ্রামীন যানবাহন, ফল ও অন্যান্য অর্থকরী ফসলের দীর্ঘমেয়াদি বাগান, পানবরজ, মিশ্র খামার, রেশম চাষ এর জন্য মধ্যম মেয়াদি ঋণ প্রদান করা হয়। এছাড়াও স্বনির্ভর ঋণ কর্মসূচী ও শিক্ষিত বেকার যুবক উন্নয়ন কর্মসূচী যেমন : সেচ যন্ত্রপাতি, প্রকল্প আকারে চিংড়ি চাষ, সামুদ্রিক মৎস্য চাষ, কুটির/তাঁত শিল্প, পল্লী বিদ্যুতায়ন ইত্যাদি খাতে এ ঋণ প্রদান করা হয়। এই ঋণ ১৮ মাসের বেশি কিন্তু ৫ বছরের কম সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হয়।
দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ
- কৃষি ভিত্তক শিল্প, দুগ্ধ খামার ,গবাদী পশুপাখি খামার , মৎস্য খামার , ফলের বাগান , ছোট আকারের কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন সহ চা বাগান উন্নয়ন, রাবার চাষ, প্রকল্প ঋণ এর মতো বড় বড় খাতে এই ঋণ প্রদান করা হয়। এই খাতে প্রদেয় ঋণের মেয়াদ প্রকল্পের পরিধির উপর নির্ভর করে ধার্য করা হয়। তবে সাধারণত ৫ বছরের উপরে এর মেয়াদ থাকে।
আরও পড়ুনঃ কর্মসংস্থান ব্যাংকের সুযোগ সুবিধা
২.কৃষি ব্যাংক গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম
কৃষি ব্যাংক গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম জানলে খুব সহজেই অভাবগ্রস্থ মানুষ লোন নিয়ে গাভী কিনে লালন পালনের মাধ্যমে স্বচ্ছল হতে পারে। কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন পাওয়া যায় মধ্যম মেয়াদি ঋণ হিসেবে। এই ঋণের জন্য দুইভাবে আবেদন করা যায়, সরাসরি কৃষি ব্যাংকে গিয়ে এবং অনলাইনের মাধ্যমে।
কৃষি ব্যাংকে গাভী লোন পেতে অফলাইনে আবেদনের জন্য আবেদনকারীর নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের শাখায় যোগাযোগ করে আবেদন ফরম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে।
আবেদন ফরমে যেসব তথ্য দিতে হয় তা হলো : আবেদনকারীর নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্মতারিখ, পিতামাতার নাম, যে ধরনের প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে চায় তার নাম, যে ব্যক্তি ঋণ আবেদনকারীর জামিনদার হবে তার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ইত্যাদি।
ফরম সঠিকভাবে পূরণ করে ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় সকল নথি সংযুক্ত করে জমা দিলেই আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
অনলাইন আবেদন :
অনলাইনে আবেদন করতে কৃষি ব্যাংকের এ্যাপস BKB Janala ডাউনলোড করে এ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এরপর লোন এপ্লিকেশন ফর্ম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে।
আবেদন ফর্মের শুরুতেই প্রজেক্ট এরিয়া সিলেক্ট করতে হবে। এখানে আবেদনকারীর নিজ এলাকা সিলেক্ট করতে হবে এবং ওই এলাকার ভিতর কৃষি ব্যাংক এর যে শাখা রয়েছে তা সিলেক্ট করতে হবে।
আবেদনকারীর পুরো নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মোবাইল নাম্বার, পিতা মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
লোন আবেদন করার জন্য একজন জামিনদার নির্ধারণ করতে হবে। আবেদন পত্রের নির্ধারিত স্থানে সেই জামিনদারের নাম এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রদান করতে হবে।
আবেদনকারীর জন্মতারিখ এবং সাল সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে, কেননা কৃষি ব্যাংকে লোন পেতে বয়স অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু কেননা এই ব্যাংক সাধারণত ১৮- ৫০ বছরের আবেদনকরীদের ঋণ প্রদান করে থাকে।
সকল তথ্য সঠিকভাবে প্রদানের পর আবেদনকারীর ঋণ নেওয়ার কারন গাভী পালন / দুগ্ধ খামার প্রকল্পের নাম উল্লখ করতে হবে। এরপর সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আবেদনপত্র সাবমিট হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ কর্মসংস্থান ব্যাংক লোন পদ্ধতি
৩.কৃষি ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার শর্তাবলি
কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম জানার পর আমাদের এই ব্যাংক থেকে লোন পাওয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা বিশেষ কিছু শর্তাবলি পূরণ করেই কেবল এই ব্যাংক থেকে লোন পাওয়া যায়।
- ঋণ গ্রহীতাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
- প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে ( ১৮-৫০ বছর)
- কৃষি ঋণ পাওয়ার জন্য কৃষি কাজে সরাসরি নিয়োজিত হতে হবে।
- যাদের ঋণ খেলাপি রয়েছে তারা নতুন ঋণ পাবেন না।
- ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা থাকতে হবে।
- কোন দেউলিয়া (সহায় সম্বলহীন, নিঃস্ব) ব্যক্তি কৃষি ব্যাংক ঋণের জন্য বিবেচিত হবেন না।
- কোন উন্মাদ বা পাগল ব্যক্তি ব্যাংক ঋণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।
- বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ঋণ নিতে অবশ্যই সৎ, সাহসী, উদ্যমী , পরিশ্রমী, সংশ্লিষ্ট কাজে পেশাদারী অভিজ্ঞতা, ব্যবস্থাপনায় দক্ষ,কারিগরী ও বাজার সম্পর্কিত জ্ঞান সম্পন্ন হতে হবে।
- প্রকল্প ঋণ পেতে শিক্ষিত এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ইংরেজি শেখার সহজ উপায়
৪.কৃষি ব্যাংক গাভী লোন পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
যেকোন ব্যাংক থেকে লোন নিতে গেলে অবশ্যই কিছু ডকুমেন্টস থাকতে হবে। কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়মের মধ্যেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন পরে।
কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
- জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- আবেদনকারীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি। প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত হতে হবে।
- নাগরিকত্ব সনদপত্র।
- জামিনদারের ছবি (পাসপোর্ট সাইজের) ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি।
- খতিয়ানের কপি সমূহ।
- খাজনার দাখিলাসহ মূল কবলা দলিল (কতটুকু জমি রয়েছে তার প্রমানস্বরুপ)
- নিলামের মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির বেলায় খাজনার দাখিলাসহ বিক্রয় এবং দখল প্রদানের সার্টিফিকেট।
- উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে মূল খতিয়ানের কপিসমূহ।
- ক্রয়কৃত সম্পত্তির ক্ষেত্রে মূল দলিল, ভায়া দলিল, খারিজ খতিয়ান, হালসনের খাজনার দাখিলা, মৌজা ম্যাপের ফটোকপি।
- ইজারার মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির বেলায় খাজনার দাখিলাসহ দাতার মুল দলিল এবং দানপত্র দলিল (হেবা)।
- স্ট্যাম্প।
- জামানতি সম্পত্তি অপ্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি হইলে প্রস্তাবিত জামানতি সম্পত্তি ব্যাংকের বরাবরে বন্ধক দেওয়ার জন্য জেলা জজের অনুমতিপত্র ।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন মুড সুইং এর আসল কারণ
৫.কৃষি ব্যাংক সুদের হার কত
সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী কৃষি ব্যাংকের সুদের হার খাত অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি কৃষি ব্যাংকের সুদের হারও জানতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার এর নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এর বিভিন্ন খাতের লোনে সুদের হার ৯.৭০% করা হয়েছে। তবে ডাল, তৈল বীজ, মশলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা চাষ এবং লবন উৎপাদনের জন্য গৃহীত ঋণের সুদের হার ৪% করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে চাষিদের সরকারের নিকট ভর্তুকী দাবী পেশ করতে হবে।
৬.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর - কি-ওয়ার্ড
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন ১: কৃষি ব্যাংক কি সরকারি?
উত্তর: কৃষি ব্যাংক হলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক। এটি সরকারি ব্যাংক।
প্রশ্ন ২: কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সুবিধা কি?
উত্তর: কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার সুবিধা হলো ঋণ গ্রহন সহজ, জটিলতা নেই, সুবিধাজনকভাবে কিস্তি প্রদান করা যায়, আর্থিক চাপ প্রদান করে না, সুদের হার কম ইত্যাদি।
প্রশ্ন ৩: কৃষি ব্যাংকের গাভী লোনের সুদের হার কত?
উত্তর: কৃষি ব্যাংকের গাভী লোনের সুদের হার ৯.৭০%
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
৭.লেখকের মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলে আমরা কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি কৃষি ব্যাংক থেকে গাভী লোন নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে সবাই বুঝতে পেরেছেন। আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলের-
এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের সমস্যায় যা যা করবেন
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url