OrdinaryITPostAd

বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত [ইতিহাসের আলোকে]


করতোয়ার কূল ঘেঁষে বাংলাদেশের অতি প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী একটি শহর বগুড়া। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত বগুড়া জেলা একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক নগর। বগুড়া কে বলা হয় উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার। অনেক সময় বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী ও বলা হয়ে থাকে। বগুড়ার প্রাচীন নাম পুন্ড্রনগর। মৌর্যদের  শাসনামলে এটি ছিল বাংলার রাজধানী। ইতিহাস ঐতিহ্যে ভরপুর এ শহরকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সোসাইটি আজকের আয়োজন - বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত।

আর্টিকেলটিতে আরো থাকছে বগুড়ার অবস্থান, বগুড়ার বিস্তৃতি, বগুড়ার ইতিহাস ঐতিহ্য, বগুড়ার বিখ্যাত খাবার, বগুড়ার বিখ্যাত স্থান, বগুড়ার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ ,বগুড়ার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।

আর্টিকেল সূচিপত্র - বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত 


১. বগুড়ার ভৌগলিক অবস্থান

বগুড়া বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলা। বগুড়া জেলা রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত। বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা। দক্ষিণে রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। পশ্চিমে নওগাঁ জেলা এবং পূর্বে যমুনা নদী ও জামালপুর জেলার অবস্থান। জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সাথে বগুড়ার স্থল এবং জলপথে সংযোগ রয়েছে।
বগুড়া জেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। উত্তর থেকে দক্ষিনে প্রবাহিত হয়ে করতোয়া বগুড়াকে দুটি ভাগে ভাগ করেছে।
এছাড়াও বগুড়ার ভিতর দিয়ে চলে গেছে একটি জাতীয় মহাসড়ক। সাধারণত ঢাকা থেকে  উত্তরাঞ্চলের বেশিরভাগ জেলায় যেতে হলে বগুড়াকে অতিক্রম করে যেতে হয়। অনেক বগুড়াকে বলা হয় "উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার"।

২.বগুড়ার আয়তন ও জনসংখ্যা

বগুড়া জেলার আয়তন ৬৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার অথবা ২৬.৮৬ বর্গমাইল। বগুড়া জেলায় মোট বারোটি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হল-

  • বগুড়া সদর উপজেলা
  • সারিয়াকান্দি উপজেলা
  • শিবগঞ্জ উপজেলা
  • শেরপুর উপজেলা
  • ধূনট উপজেলা
  • সোনাতলা উপজেলা
  • কাহালু উপজেলা
  • দুপচাচিয়া উপজেলা
  • গাবতলি উপজেলা
  • শাজাহানপুর উপজেলা
  • আদমদিঘি উপজেলা
  • নন্দীগ্রাম উপজেলা 
এছাড়া বগুড়া জেলায় মোট বারোটি পৌরসভা রয়েছে। এগুলো হলো-
  • বগুড়া পৌরসভা
  • শেরপুর পৌরসভা
  • সান্তাহার পৌরসভা
  •  শিবগঞ্জ পৌরসভা
  • কাহালু পৌরসভা
  • দুপচাচিয়া পৌরসভা
  • নন্দীগ্রাম পৌরসভা
  • গাবতলী পৌরসভা
  • ধুনট পৌরসভা
  • সারিয়াকান্দি পৌরসভা 
  • সোনাতলা পৌরসভা 
  • তালোড়া পৌরসভা 
২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বগুড়া জেলায় জনসংখ্যা মোট ৪,০০,৯৫৯

৩.  বগুড়ার ইতিহাস ঐতিহ্য 

ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ  বগুড়া।  প্রাচীনকাল থেকেই  এই অঞ্চলের আলাদা গুরুত্ব ছিল। মৌর্য ,গুপ্ত থেকে শুরু করে পাল ও সেন বংশের রাজাদের প্রশাসনিক এলাকা ছিল এই বগুড়া অঞ্চল। পরবর্তীকালে এটি হিন্দু সামন্ত রাজাদের রাজধানী ছিল। জানা যায়, দিল্লির সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের দ্বিতীয় পুত্র সুলতান নাসির উদ্দিন বগরা খানের
নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম হয়েছে বগুড়া। তবে নামকরণের পিছনে এটি ছাড়াও আরো নানা গল্প প্রচলিত রয়েছে।
অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই বগুড়া শহরে। ঐতিহাসিক সমৃদ্ধির কারণে ২০১৬ সালে সার্ক
দক্ষিণ এশিয়ার সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে বগুড়ার মহাস্থানগড় কে নির্বাচন করেছিল।
বগুড়া জেলা হিসেবে প্রথম  গঠিত হয়েছিল ১৮২১ সাল। তবে বগুড়া একটি পূর্ণাঙ্গ জেলায় পরিণত হয় ১৮৫৯ সালে। এ সময়ের মাঝে বিভিন্ন এলাকা বগুড়া জেলার মাঝে সংযোজিত অথবা বিয়োজিত হয়েছে। ১৮৫৯ সালে ম্যাজিস্ট্রেট এবং কালেক্টরেট নিয়োগের মাধ্যমে বগুড়াকে তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এবং এর মধ্য দিয়ে বগুড়া একটি পূর্ণাঙ্গ জেলার রূপ পায়।

৪. বগুড়ার বিখ্যাত খাবার 

বগুড়ার নাম শুনলেই সবার আগে যে জিনিসটার কথা মাথায় আসে সেটি হচ্ছে "দই"। তবে শুধু দই নয় বগুড়ায় প্রচলিত রয়েছে আরো কিছু বিখ্যাত খাবার। বগুড়ার বিখ্যাত খাবারগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো-বগুড়ার দই
দুই মূলত একটি দুগ্ধজাত খাবার। দই সারা বাংলাদেশেই কমবেশি পাওয়া যায়। তবে বগুড়ার দই  স্বাদে অনন্য। বগুড়ার দইয়ের খ্যাতি ব্রিটিশ আমল থেকেই  । শুধু দেশের গণ্ডিতেই নয় বিদেশেও জনপ্রিয় এই বগুড়ার দই।৬০ এর দশকে ব্রিটিশরাণী এলিজাবেথের মনোরঞ্জনের জন্যেও গিয়েছিল এই দই ।
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় প্রথম দই তৈরি হয়েছিল বগুড়ার শেরপুরে ,এখন থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে। টক দই থেকে সময়ের সাথে চিনি পাতা বা মিষ্টি দইয়ে পরিণত হয় এটি।
উল্লেখ্য বগুড়ার বিখ্যাত এই দই ২০২৩ সালে ভৌগলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের মর্যাদা পেয়েছে।
বর্তমানে বগুড়ার বারোটি উপজেলাতেই কমবেশি দই উৎপাদিত হয়। তবে বগুড়া জেলা সদর এবং শেরপুর দইয়ের জন্য বেশি জনপ্রিয়। দই প্রস্তুতকারী জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে আকবরিয়া, এশিয়া সুইটস, রফাত দই ঘর, ফুড ভিলেজ, মহররম আলীর দই ইত্যাদি।
মহাস্থানগড়ের কটকটি
দইয়ের পাশাপাশি বগুড়ার আরেকটি বিখ্যাত খাবার হল "কটকটি"। কটকটির প্রধান উপাদান আটা। আটার সঙ্গে বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে খামির তৈরি করে ছাঁচে কেটে নেওয়া হয়। এরপর ঘি-ডালডা এবং ভোজ্য তেলে ভাজা হয়। ভাজা শেষে গুড়ের রসে ডুবিয়ে দিলেই তৈরি কটকটি। এরপর ঠান্ডা হলেই তা খাওয়ার উপযোগী হয়ে যায়।
বগুড়ার মহাস্থানগড় এই কটকটি বিক্রির জন্য বিখ্যাত। মহাস্থানগড়ে অসংখ্য দোকান রয়েছে কটকটির।
স্পন্জ মিষ্টি
বগুড়ার সাথে বিভিন্ন রকমের মিষ্টান্নের নাম যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এরই মাঝে একটি বিশেষ মিষ্টি হল স্পঞ্জ মিষ্টি।
স্পঞ্জ মিষ্টি মূলত এক ধরনের রসগোল্লা। বগুড়ার স্পন্জ মিষ্টি অন্য এলাকার রসগোল্লার তুলনায় অনেকটাই আলাদা। খুবই নরম তুলতুলে রসে ভরপুর বলেই হয়তো এর নাম স্পঞ্জ মিষ্টি।

আলুর ঘাটি
বগুড়ার সাধারণ মানুষের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার হল আলুর ঘাটি। শুধুমাত্র আলু দিয়েই রান্না হয়ে যায় এই ভীষণ মজার পদটি।
আলু সিদ্ধ করে নিয়ে হাত দিয়ে চটকে ভর্তা করে রাখা হয়। অন্যদিকে ডিম বা মাছ ভেজে আলাদা করে রাখা হয়। এরপর কড়াইয়ে তেল দিয়ে সব ধরনের মসলা কষিয়ে নিতে হয়। তাতে সিদ্ধ করে রাখা আলু দিয়ে কিছুক্ষণ কষিয়ে নিয়ে তাতে ঝোলের জন্য পানি দিয়ে এবং আগের ভেজে রাখা মাছ অথবা ডিম দিয়ে ফুটিয়ে নিলেই হয়ে গেল সুস্বাদু আলু ঘাটি।
খুবই সাধারণ একটি রান্না কিন্তু বগুড়ার মানুষের কাছে এটি ভীষণ পছন্দের একটি খাবার।
দই ,কটকটি , স্পঞ্জ মিষ্টি কিংবা আলুঘাটি ছাড়াও বগুড়া আরো কিছু খাবারের জন্য বিখ্যাত। যেমন হাতে ভাজা লাচ্ছা সেমাই, ক্ষীর,কাবাব, আঠা আলু ইত্যাদি। এছাড়াও ইদানিং বগুড়া লাল মরিচের জন্য অনেক বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।

৫.বগুড়ার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান

ইতিহাস ঐতিহ্য ভরপুর বগুড়ায় দেখার মত বহু জজ বিখ্যাত জায়গা রয়েছে। বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মহাস্থানগড়, ভাসু বিহার, বৈরাগীর ভিটা,বেহুলা লক্ষিন্দরের বাসর ঘর, রাজা পরশুরামের প্রাসাদ,খেরুয়া মসজিদ,নওয়াব প্যালেস,শাহ সুলতান বলখির মাজার, গোবিন্দ ভিটা ,মান কালীর কুন্ড, যোগীর ভবন, রাণী ভবানীর বাড়ি, আদমের মাজার ও আদমদিঘির বিখ্যাত দীঘি,পোড়াদহ মেলা ইত্যাদি।
বর্তমানে বগুড়ায় আরো কিছু নতুন ভ্রমণস্থান যোগ হয়েছে। যেমন মম ইন রিসোর্ট, ওয়াটার ল্যান্ড পার্ক,নাজ গার্ডেন ইত্যাদি। চলুন জেনে নেয়া যাক কিছু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ।
মহাস্থানগড়
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার উত্তরে করতোয়া নদীর তীরে শিবগঞ্জ উপজেলায় এই মহাস্থানগড় অবস্থিত। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে গড়ে ওঠা পুন্ড্র নামের এক প্রাচীন জনপদের রাজধানী ছিল মহাস্থানগড়। মহাস্থান গড় সম্পর্কে প্রচলিত রয়েছে নানা কিংবদন্তি। আসুন সংক্ষেপে জানি মহাস্থান গড়ের ইতিহাস-
প্রাচীনকালের পুন্ড্রনগর বা বর্তমানের মহাস্থানগড় সমৃদ্ধি লাভ করেছিল মূলত খ্রিস্টপূর্ব ৩ শতক থেকে খ্রিস্টাব্দ ১৫ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। এসময়ের মাঝে অসংখ্য হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজা এ অঞ্চলকে শাসন করেছে। এর মাঝে রয়েছে মৌর্য ,গুপ্ত ,পাল ও সেন বংশের রাজারা। বিভিন্ন সময় এ অঞ্চলে ইসলাম ধর্মের প্রচারকরা এসেছিলেন ধর্মীয় সংস্কারের কাজে। শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত ছিল প্রাচীনকালের এই পুন্ড্র নগর।  জ্ঞান অর্জন করার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে আগমন ঘটত জ্ঞান অনুরাগীদের। এখানে অবস্থিত ভাসু বিহার বৌদ্ধ শিক্ষার জন্য বিখ্যাত ছিল সেসময়। সুদূর চীন থেকে পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এখানে এসেছিলেন ৬৩৯ থেকে ৬৪৫ এর মধ্যবর্তী সময়ে। তার লেখা ভ্রমণ কাহিনীতে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
জনশ্রুতি রয়েছে, দশম শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই অঞ্চল শাসন করতেন হিন্দু রাজা পরশুরাম। রাজা পরশুরাম ছিলেন অত্যাচারী শাসক। তার রাজ্যে গো-হত্যা বা গরু জবাই করা নিষিদ্ধ ছিল বলে কথিত রয়েছে। সে সময় এ অঞ্চলে আগমন ঘটেছিল হযরত শাহ সুলতান বলখি মাহি সাওয়ার এর। জানা যায়, তিনি প্রাচীন পুন্ড্রনগরে এসেছিলেন একটি বিশাল মাছ আকৃতির নৌকায় করে করতোয়া নদী পাড়ি দিয়ে। কারণেই তাকে মাহি সাওয়ার বলা হয় ।
এ অঞ্চলে এসে তিনি ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তার হাত ধরে মুসলিম হন এ অঞ্চলের অনেক মানুষ।তবে রাজা পরশুরামের কিছু সেনা এবং মন্ত্রী ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হলে রাজা পরশুরামের সাথে শাহ সুলতান বলখি মাহি সাওয়ারের দন্দ্ব শুরু হয়। এবং একপর্যায়ে দু পক্ষের মাঝে যুদ্ধ শুরু হয়।এ যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত হন রাজা পরশুরাম।
প্রাচীন পুন্ড্রনগর ছিল বিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। প্রাচীন পুন্ড্রনগর বা মহাস্থান গড়ের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় জিনিসগুলো হল-
.পরশুরামের প্রাসাদ
মহাস্থানগড়ের ভিতরে যে সকল প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে তার মাঝে পরশুরামের প্রাসাদ অন্যতম। স্থানীয়ভাবে এটি পরশুরাম প্যালেস নামে পরিচিত। প্রাচীনকালের স্থাপনায় যে নান্দনিকতা তা পরশুরামের প্রাসাদে লক্ষণীয়।
২. হযরত শাহ সুলতান বলখির মাজার
মহাস্থানগড়ের একটি উল্লেখযোগ্য  দর্শনীয় স্থান হযরত শাহ সুলতান বলখির মাজার। শাহ সুলতান বলখি ছিলেন একজন ইসলাম প্রচারক। জানা যায় সম্রাট আওরঙ্গজেব ১৬৮০ খ্রিস্টাব্দে এই মাজার তত্ত্বাবধানের উদ্যোগ নেন। ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা হযরত শাহ সুলতান বলখিকে অনেক শ্রদ্ধা করেন। প্রতিবছর হাজারো মুসলিম শাহ সুলতান বলখির মাজার জিয়ারত করতে মহাস্থানগড়ে আসেন।
৩. বৈরাগির ভিটা
পরশুরামের বাড়ি থেকে প্রায় ২০০ গজ দূরে মহাস্থানগড় এর উত্তর-পূর্ব কোণে বৈরাগির ভিটা অবস্থিত। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটিতে প্রাচীনকালে ব্যবহৃত বহু জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। যেমন- পোড়া মাটির বল, পোড়া মাটির বদনা, বিভিন্ন ভাঙা জিনিসের অংশ, গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন তৈজসপত্র, বিভিন্ন নকশা করা পিরামিড আকৃতির ইটের স্তুপ ইত্যাদি।
৩. ভাসু বিহার
মহাস্থানগড় থেকে সাত কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে ভাসু বিহারের অবস্থান।এটি মূলত একটি বৌদ্ধ বিহার ছিল। সুদূর চীন ,তিব্বত থেকে বৌদ্ধভিক্ষুরা এখানে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আসতো।
৪. গোবিন্দ ভিটা
এটি মূলত একটি মন্দির।যা মহাস্থানগড়ের উত্তর দিকে অবস্থিত। অনুমান করা হয়, গোবিন্দ ভিটা খ্রিস্টীয় সাত শতকে নির্মিত হয়েছিল।
৫. শিলা দেবীর ঘাট ও জিওৎ কুন্ড
করতোয়া নদীর তীরে শিলাদেবীর ঘাট যা মহাস্থানগড়ের পূর্ব পাশে অবস্থিত। এই শিলা দেবীর ঘাটে প্রতিবছর মেলা বসে এবং প্রতিবছর একটি দিনে হিন্দুরা এই ঘাটে স্নান করে। শিলা দেবী ছিলেন মূলত রাজা পরশুরামের বোন। কথিত আছে শাহ সুলতান বলখি মাহি সাওয়ার কর্তৃক রাজা পরশুরাম পরাজিত হলে তার বোন শিলা দেবী এই ঘাটে এসে আত্মহত্যা করেন।

এই ঘাটের ঠিক পশ্চিম দিকেই রয়েছে একটি বিশাল কূপ।যা জিয়ৎ কুন্ড নামে পরিচিত। কিংবদন্তি রয়েছে, পরশুরামের যুদ্ধাহত সৈনিকরা এই কূপ থেকে পানি পান করে সুস্থ হয়ে যেত। যদিও এর কোন ঐতিহাসিক সত্যতা পাওয়া যায়নি।

৬.খোদার পাথর ভিটা
হযরত শাহ সুলতান বলখির মাজারের পূর্ব পাশে খোদার পাথর ভিটা অবস্থিত। এটি মূলত একটি চারকোনা দীর্ঘ মসৃণ পাথর। এ ধরনের পাথর সাধারণত প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। কথিত আছে রাজা পরশরাম এই পাথরটি নরবলির কাজে ব্যবহার করত। হিন্দু নারীরা এই পাথরটিকে দুধ ও সিঁদুর দিয়ে স্নান করাতো। এখনো এই রীতি কিঞ্চিৎ প্রচলিত রয়েছে।
৭. প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর
মহাস্থানগড়ের একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান হল এখানে অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর। বাংলাদেশ সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ১৯৬৭ সালে মহাস্থানগড় একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা যেমন- দিনাজপুর, শেরপুর ,পাহাড়পুর, নওগাঁ ইত্যাদি এলাকা থেকে উদ্ধারকৃত বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন জায়গা পেয়েছে এই জাদুঘরে। বহু বছরের পুরনো স্বর্ণ, রৌপ্য, লোহা, ব্রোঞ্জ ,তামা, পিতল সহ বিভিন্ন মূল্যবান ধাতব পদার্থের নিদর্শন এখানে রয়েছে। এছাড়াও পোড়া মাটির তৈরি বিভিন্ন মূর্তি, শিকার বা আত্মরক্ষার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্রশস্ত্র, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র জাদুঘরের শোভা পাচ্ছে। মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় এ প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

এগুলো ছাড়াও মহাস্থানগড়ে দেখার মত আরও অনেক জিনিস রয়েছে।যেমন মানকালির ঢিবি, গোকুল মেধ, বেহুলার বাসর ঘর, ভীমের জঙ্গল, বিহার ধাপ ইত্যাদি। বগুড়ার এই মহাস্থানগড় এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রাচীন বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির নানা উপাদান। আর ঠিক কারণেই ২০১৬ সালে এটিকে সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
খেরুয়া মসজিদ
বগুড়া শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে শেরপুর উপজেলায় খেরুয়া মসজিদ অবস্থিত। ১৫৮০ সালের নির্মিত মসজিদ টি প্রতিষ্ঠা করেন জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ শাহ কাকশাল।
প্রায় সাড়ে চারশ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি মুঘল ও সুলতানি আমলের স্থাপত্য শৈলীর আদলে বানানো হয়েছে।
চওড়া দেয়াল এবং শক্তিশালী মিনারের ভিতের কারণে আজও সগৌরবের টিকে আছে প্রাচীন এই স্থাপত্য। মজার বিষয় হলো এখনো নিয়মিতভাবে এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।
খেরুয়া মসজিদ বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

আরো বিভিন্ন  দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে মম ইন রিসোর্ট,নাজ গার্ডেন ইত্যাদি
মম ইন 
বেসরকারি সংস্থা টিএমএসএস এর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এই মম ইন রিসোর্ট। বগুড়া শহর থেকে একটু দূরে মাটি ডালি নামক স্থানে এটি অবস্থিত। মম ইন  মূলত একটি পাঁচ তারকা হোটেল। এটির পাশেই রয়েছে লাগোয়া একটি ইকোপার্ক। ইকোপার্কের পাশাপাশি এখানে রয়েছে একটি ওয়াটার পার্ক। করতোয়া নদীকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত এই রিসোর্ট সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা। ইকোপার্ক ঔ ওয়াটার পার্কে রয়েছে নানা রকমের রাইড এবং বিনোদনের আরো অনেক মাধ্যম। সব মিলিয়ে বেশ উপভোগ্য এই মম ইন রিসোর্ট


৬. বগুড়ার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

বগুড়া অঞ্চলে জন্মেছেন বাংলাদেশের অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী মানুষ। এদের মধ্যে রাজনীতিবিদ যেমন রয়েছেন,তেমনি রয়েছেন খেলোয়াড়। এরকম কিছু বিখ্যাত মানুষদের সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো:
  • মোহাম্মদ আলী
১৯৫৩ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্ব করা মোহাম্মদ আলী ১৯০৯ সালের বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
  • জিয়াউর রহমান 
১৯৩৬ সালে বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায় জিয়াউর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জিয়াউর রহমান ১ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। এছাড়াও ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
  • গাজিউল হক
বিখ্যাত ভাষা সৈনিক গাজিউল হক জন্মগ্রহণ করেছেন এই বগুড়ার মাটিতেই। ভাষা সৈনিক ছাড়াও তার আরেকটি পরিচয় হলো তিনি একজন প্রখ্যাত আইনবিদ ছিলেন।
  • আখতারুজ্জামান ইলিয়াস
বিখ্যাত উপন্যাসিক ও গল্পকার আখতারুজ্জামান ইলিয়াস  বগুড়ার বাসিন্দা। তার বিখ্যাত উপন্যাস- চিলেকোঠার সেপাই ,খোয়াবনামা । এবং বিখ্যাত গল্প -দোযখের ওম, দুধে ভাতে উৎপাত ইত্যাদি।
  • এম আর আখতার মুকুল
মুক্তিযোদ্ধা এম আর আখতার মুকুল ১৯৩০ সালে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের তুমুল জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান "চরমপত্র" এর পরিচালক ,লেখক এবং কথক ছিলেন এম আর আখতার মুকুল। এছাড়াও সাংবাদিকতায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০১ সালে তিনি স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করেন।
  • অপু বিশ্বাস
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস ১৯৮৯ সালে বগুড়া সদরে জন্মগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে চলচ্চিত্র জগতে তার প্রথম পদার্পণ। এ যাত্রা এখন পর্যন্ত চলমান। কর্মজীবনে তিনি ছয়টি মেরিল -প্রথম আলো পুরস্কার এবং একটি বাচসাস পুরস্কার পেয়েছেন।
  • মুশফিকুর রহিম
১৯৮৭ সালে বগুড়া সদরে জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশ জাতীয় দলের টেস্ট খেলায় তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন।

যে সকল বিখ্যাত ব্যক্তি বগুড়াকে দেশবাসীর কাছে পরিচিত করেছে তাদের মাঝে উপর্যুক্ত ব্যক্তিরা অন্যতম।

৭.  বগুড়ার বিখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 

অন্যান্য অনেক কিছুর পাশাপাশি বগুড়া জেলা শিক্ষা দীক্ষাতেও বেশি এগিয়ে। বগুড়া জেলার বিখ্যাত কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম নিচে উল্লেখ করা হলো-
  • শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ,বগুড়া
  • সরকারি আজিজুল হক কলেজ ,বগুড়া
  • বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বগুড়া
  • বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, বগুড়া
  • বগুড়া জিলা স্কুল, বগুড়া।
এগুলো ছাড়াও বগুড়া জেলায় আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

৯. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর

প্রশ্ন ১: বগুড়া জেলায় ইউনিয়ন কয়টি?

উত্তর: বগুড়া জেলায় ইউনিয়ন ১১১ টি ।

প্রশ্ন ২: বগুড়া জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল?

উত্তর:  বগুড়া জেলা ৭ নং সেক্টরে ছিল ।

প্রশ্ন ৩: বগুড়া কিসের জন্য বিখ্যাত?

উত্তর: বগুড়া দইয়ের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া প্রাচীন বৌদ্ধবিহার এবং বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শন এর জন্য বিখ্যাত।

প্রশ্ন ৪: বগুড়া কোন বিভাগে অবস্থিত

উত্তর: বগুড়া রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত।

১০. লেখকের মন্তব্য

উত্তরবঙ্গের বগুড়া জেলা অনেক কিছুর জন্যই বিখ্যাত। আর্টিকেলটিতে বগুড়া জেলার বিখ্যাত খাবার, বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান ,ইতিহাস ঐতিহ্য। বগুড়ার উল্লেখযোগ্য সব কিছুই আর্টিকেলটিতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কোন ভুল ভ্রান্তি চোখে পড়লে মন্তব্য ঘরে তা জানানোর অনুরোধ রইল। এমন অসংখ্য আর্টিকেল পেতে  The DU speech এর   সাথেই থাকুন। ধন্যবাদ ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url