করোনা-পরবর্তী বাজেট ও স্বাস্থ্যখাত
আজ (১৩ জুন ২০২২) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট কর্তৃক 'বাজেট ২০২২-২৩ ও আমাদের স্বাস্থ্যখাত' বিষয়ক চলতি বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এর অন্যতম অঙ্গসংগঠন Health Economics Study Alliance (HESA)। অনুষ্ঠানে চলতি বাজেট ও করোনা পরবর্তী স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়নের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সম্পন্ন হয়। উল্লেখ্য,২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৬,৮৬৪ কোটি টাকা।
উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এর নব নির্বাচিত পরিচালক ড. শারমিন মবিন ভুঁইয়া। উক্ত সভার মূল আলোচক হিসেবে বক্তব্য পেশ করেন ড. বে-নজির আহমেদ (সাবেক পরিচালক, রোগ নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়), ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর (অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, উন্নয়ন অধ্যায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান, উন্নয়ন অন্বেষণ), ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ (অধ্যাপক, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) এবং ড. রুমানা হক (অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও নির্বাহী পরিচালক, আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)। বক্তব্যে আলোচকেরা তাদের নিজ নিজ বক্তব্যে বর্তমান অর্থবছরের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট এর পর্যালোচনা করেন এবং স্বাস্থ্যখাতে বাজেটের অপ্রতুলতার কারণ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে হেলথ ইকোনমিকস স্টাডি এলায়েন্স এর পক্ষ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে স্বাস্থ্য বাজেটের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী তাসনিম রহমান এবং জাওয়াদ শামস। তাদের উপস্থাপনা মধ্যে দিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের পর্যালোচনা ফুটে উঠে, বাজেট বাড়লেও তার সঠিক ব্যবহার আমরা কিভাবে করতে পারি, তা নিয়ে আমন্ত্রিত আলোচকদের প্রতি প্রশ্ন করে তারা। তাছাড়া ছাত্রদের পক্ষ থেকে সামনের দিনগুলোতে স্বাস্থ্যের কি কি বিষয়ে আমাদের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন, সেটিও তাদের উপস্থাপনায় ফুটে উঠে।
ড. রুমানা হক তাঁর বক্তব্যে স্বাস্থ্যখাতে ভ্যাকসিনেশন এর সফলতার কথা উল্লেখ করেন এবং স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বরাদ্দের জন্য চাহিদা যাচাই করার উপর জোর প্রদান করেন। তিনি বরাদ্দকৃত বাজেট বাস্তবায়নের গুরুত্বারোপ করেছেন এবং তিনি need assessment এর ভিত্তিতে স্বাস্থ্যখাতে মোট বাজেটের অন্তত ৮ শতাংশের বরাদ্দের আহবান জানান। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বাংলাদেশের স্বাস্থসেবা পাওয়ার জন্য জনগণের নিজস্ব খরচের উচ্চহার এর কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার অতিরিক্ত ব্যয় নিরসণে স্বাস্থ্যসেবার মোট ব্যয়ের ৩২ শতাংশ সরকার কর্তৃক পরিশোধের নীতি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে তা মোট ব্যয়ের মাত্র ২৩ শতাংশ পূরণ করতে পারছে। তবে ২০৩২ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে এ ব্যয় বাড়িয়ে আদিষ্ট লক্ষ্যে পৌছানো সম্ভব বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয়ের ক্ষেত্রে কর ছাড়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ তাঁর বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবায় রোগীদের ব্যক্তিগত খরচ কমানোর ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রতিটি টেস্ট যেন উপজেলা পর্যায়ে সম্পন্ন করা যায় সে ব্যাপারে তাগিদ দেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে গবেষণা খাতকে সমৃদ্ধ করার লক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থায়ন এবং তা তদারকির ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি গবেষণার ক্ষেত্রে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গুলোতে অর্থায়ন এর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন। গবেষনা খাতের প্রাপ্ত ফলাফলকে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে গুরুত্ব দেয়ার ব্যাপারে জোর দাবি জানান। তিনি উপজেলা পর্যায়ে মেডিকেল স্টোরেজ সিস্টেম চালু করার ব্যাপারে মতামত দেন।
ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর তাঁর বক্তব্যে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে দিক নির্দেশনা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করেন, যেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী তাজউদ্দীন আহমেদ প্রদত্ত বাজেটের কথা বিশেষভাবে স্মরণ করেন। তাঁর বক্তব্যে বহিঃস্থ চাপ মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতার অভাবের দিকে দৃষ্টি দেন। তিনি বিশেষ আশাবাদ ব্যক্ত করেন এই বিষয়ে যেন প্রতিটি নাগরিক চিকিৎসা সেবার আওতায় থাকেন।
ড. বে-নজির আহমেদ তাঁর বক্তব্যে অপর্যাপ্ত সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবাকে নাগরিক অধিকার হিসেবে ব্যক্ত করে বিশেষ ইচ্ছা পোষণ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সারের মতো রোগের বিনামুল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন এবং স্বাস্থ্যখাতের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের এই খাত পরিচালনায় দায়িত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে আহবান করেন। তাছাড়া স্বাস্থ্যখাতে উন্নতির জন্য দুটি দিকের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন তা হলো, ইপিআই এর সফলতা এবং জনগণের শিক্ষার হার নিশ্চিত ও নারী ক্ষমতায়ন।
অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে ড. শারমিন মবিন ভুঁইয়া বরাদ্দকৃত বাজেটের সঠিক বাস্তবায়নের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষন করেন। তিনি স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধিতে নজরদারির কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠান শেষে সকল আলোচক, উপস্থিত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url