সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে আপনারা অনেকে জানতে চেয়েছেন। তাই আজকে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠন এর পক্ষ থেকে আজকে আপনাদের সাথে সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে জানতে এবং সরস্বতী পূজা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আজকের আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।
আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)
- সরস্বতী পূজা
- ইতিহাস
- সরস্বতী পূজার উপকরণ বা ফর্দ
- বিদ্যারম্ভের উপকরণ বা হাতেখড়ির ফর্দ
- উৎসবের গুরুত্ব
- সরস্বতী (দেবী)
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১.সরস্বতী পূজা | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
সরস্বতী পূজা হিন্দু বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি প্রত্যুষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সার্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সার্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়। পূজার পরের দিনটি শীতলাষষ্ঠী নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে কোনো কোনো হিন্দু পরিবারে সরস্বতী পূজার পরদিন অরন্ধন পালনের প্রথা রয়েছে।
শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়। সরস্বতীর পূজা সাধারণ পূজার নিয়মানুসারেই হয়। তবে এই পূজায় কয়েকটি বিশেষ উপচার বা সামগ্রীর প্রয়োজন হয়। যথা: অভ্র-আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত-কলম ও যবের শিষ। পূজার জন্য বাসন্তী রঙের গাঁদা ফুলও প্রয়োজন হয়। লোকাঁচার অনুসারে, ছাত্রছাত্রীরা পূজার পূর্বে কুল ভক্ষণ করেন না। পূজার দিন কিছু লেখাও নিষিদ্ধ। যথাবিহিত পূজার পর লক্ষ্মী, নারায়ণ, লেখনী-মস্যাধার (দোয়াত-কলম), পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রেরও পূজা করার প্রথা প্রচলিত আছে। এই দিন ছোটোদের হাতেখড়ি দিয়ে পাঠ্যজীবন শুরু হয়।পূজান্তে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রথাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের দল বেঁধে অঞ্জলি দিতে দেখা যায়।
পূজার পরদিন পুনরায় পূজার পর চিড়ে ও দই মিশ্রিত করে দধিকরম্ব বা দধিকর্মা নিবেদন করা হয়। এরপর পূজা সমাপ্ত হয়। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে?
২.ইতিহাস | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিক কালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীন কালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্রেরা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, শ্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত। গ্রামাঞ্চলে এই প্রথা বিংশ শতাব্দীতেও প্রচলিত ছিল। শহরে ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই সরস্বতীর প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করতেন। বর্ধমান মহারাজার পূজায় বিশেষ সমারোহের আয়োজন করা হয়। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ এই পূজার বিসর্জন দেখতে আসত। পূজা উপলক্ষে দুই ঘণ্টা আতসবাজিও পোড়ানো হত। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।
৩.সরস্বতী পূজার উপকরণ বা ফর্দ | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
সিদ্ধি , সিন্দূর , পুরোহিতবরণ ১ , দিল , হরিতকী , পঞ্চগুঁড়ি , পঞ্চশস্য , পঞ্চরত্ন , পঞ্চপল্লব ১ , ঘট ১ , কুন্ডহাঁড়ি ১ , তেকাঠা ১, দর্পণ ১ , তীরকাঠি ৪ , ঘটাচ্ছাদন গামছা ১ , বরণডালা , সশীষ ডাব ১ , একসরা আতপচাউল , পুষ্পাবি , আসনাঙ্গুরীয়ক ২ , মধুপর্কের বাটী ২ , নৈবেদ্য ২ , কুচা নৈবেদ্য ১ , সরস্বতীর শাটী ১, লক্ষীর শাটী ১ , চন্দ্রমালা ১ , বিল্বপত্রমাল্য ১ , থালা ১ , ঘটি ১ , শঙ্খ ১ , লৌহ ১ , নথ ১ , রচনা , আমের মুকুল , যবের শীষ , কুল, আবির , অভ্র , মস্যাধার (দোয়াত) ও লেখনী , ভোগের দ্রব্যাদি , বালি , কাষ্ঠ , খোড়কে , গব্যঘৃত এক সের , পান , পানের মশলা , হোমের বিল্বপত্র ২৮ , কর্পূর , পূর্ণপাত্র ১ , দক্ষিণা।
আরও পড়ুনঃ ইংরেজি শেখার সহজ উপায়
৪.বিদ্যারম্ভের উপকরণ বা হাতেখড়ির ফর্দ | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
বিষ্ণু পূজার ধুতি ১, লক্ষী ও সরস্বতী পূজার শাটি ২, বালকের পরিধেয় বস্ত্র ১, মধুপর্কের কাংস্য বাটী ৩, আসন ৩, রূপার অঙ্গুরীয়ক ৩, দধি, মধু,তিল, হরিতকী, ফল, সিঁদুর, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য ৩, কুচা নৈবেদ্য ১, ফল, স্লেট, রাম খড়ি ১, বর্ণমালা পুস্তক ১ খনি, তুলসী, বিল্বপত্র, দূর্বা ও পুষ্পাদি, দক্ষিণা।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন মুড সুইং এর আসল কারণ
৫.উৎসবের গুরুত্ব | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
বসন্তের আগমনে ফুটে ওঠে প্রকৃতির প্রতিটি কণা। এমনকি পশু-পাখিরাও আনন্দে ভরে ওঠে। প্রতিদিন নতুন উদ্যমে সূর্যোদয় হয় এবং নতুন চেতনা দিয়ে পরের দিন আবার আসার আশ্বাস দিয়ে চলে যায়।
যদিও এই পুরো মাঘ মাস উৎসাহজনক, কিন্তু বসন্ত পঞ্চমী (মাঘ শুক্লা পঞ্চমী) এর উত্সব ভারতীয়দের কাছে নানাভাবে প্রভাবিত করে। প্রাচীনকাল থেকে, এটি জ্ঞান ও শিল্পের দেবী সরস্বতীর জন্মদিন হিসাবে বিবেচিত হয়। যে শিক্ষাবিদরা ভারত এবং ভারতীয়তাকে ভালবাসেন তারা এই দিনে মা সারদেকে পূজা করেন এবং আরও জ্ঞানী হওয়ার জন্য তাঁর কাছে প্রার্থনা করেন। শিল্পীদের কী হবে? সৈন্যদের অস্ত্র এবং বিজয়াদশমীর জন্য যে গুরুত্ব রয়েছে, পণ্ডিতদের তাদের বই এবং ব্যাস পূর্ণিমা, তাদের দাঁড়িপাল্লা, ওজন, বই এবং দীপাবলির ব্যবসায়ীদের জন্য, বসন্ত পঞ্চমীর মতো শিল্পীদের জন্যও একই গুরুত্ব রয়েছে। কবি হোক বা লেখক, গায়ক হোক বা যন্ত্রশিল্পী, নাট্যকার বা নৃত্যশিল্পী, প্রত্যেকেই তাদের যন্ত্রের আরাধনা এবং মা সরস্বতীর পূজা দিয়ে দিন শুরু করেন।
৬.সরস্বতী (দেবী) | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
সরস্বতী হলেন হিন্দুধর্মে জ্ঞান, সংগীত, শিল্পকলা, বাক্য, প্রজ্ঞা ও বিদ্যার্জনের দেবী। সরস্বতী, লক্ষ্মী ও পার্বতী হিন্দুধর্মে ‘ত্রিদেবী’ নামে পরিচিত। দেবী রূপে সরস্বতীর প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায় ঋগ্বেদে। বৈদিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত হিন্দুধর্মে তিনি একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবীর স্থান অধিকার করে রয়েছেন। সরস্বতী সাধারণত দ্বিভুজা বা চতুর্ভুজা মূর্তিতে পূজিতা হন। দ্বিভুজা মূর্তিতে তাঁর হাতে থাকে বীণা ও পুস্তক অথবা লেখনী/ কলম ও পুস্তক; চতুর্ভুজা মূর্তিতে থাকে পুস্তক, অক্ষমালা, সুধাকলস ও বীণা; অথবা ব্যাখ্যা মুদ্রা,বীণা, সুধাকলস ও পুস্তক; অথবা অক্ষমালা, দুটি শ্বেত পদ্ম ও পুস্তক; অথবা পাশ, অঙ্কুশ , বিদ্যা বা পুস্তক ও অক্ষমালা। হিন্দুধর্মে এই প্রত্যেকটি বস্তুরই প্রতীকী অর্থ রয়েছে।
হিন্দুদের একাংশ সরস্বতীর পূজা করেন শ্রীপঞ্চমী বা বসন্তপঞ্চমীর (মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি, এই দিনটি ভারতের বিভিন্ন অংশে সরস্বতী পূজা বা সরস্বতী জয়ন্তী নামেও পরিচিত) দিন। এই দিনটিতে শিশুদের হাতেখড়ি অনুষ্ঠানের (প্রথম অক্ষর শিক্ষার অনুষ্ঠান) আয়োজন করা হয়। পশ্চিম ও মধ্য ভারতে জৈন ধর্মাবলম্বীরাও সরস্বতীর পূজা করেন। এছাড়া বৌদ্ধদের কোনও কোনও সম্প্রদায়েও সরস্বতী পূজা প্রচলিত।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায়
৭. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
প্রশ্ন ১:সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি কোন কালে প্রচলিত হয়েছে?
উত্তর:সরস্বতী পূজা বর্তমান রূপটি আধুনিক কালে প্রচলিত হয়েছে।
প্রশ্ন ২:শ্রীপঞ্চমীর দিন কখন সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়?
উত্তর:শ্রীপঞ্চমীর দিন সকালেই সরস্বতী পূজা সম্পন্ন করা যায়।
প্রশ্ন ৩:আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় কোন শতাব্দীতে?
উত্তর:আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরস্বতী পূজার প্রচলন হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
৮. লেখকের মন্তব্য | সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করছি সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে আপনারা সকল কিছু ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন। সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে সেটি আমাদের জানাতে পারেন। তাছাড়া এ বিষয়ে আপনার কি মতামত সেটিও আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। সরস্বতী পূজা ছাড়াও অন্য যে কোন বিষয় জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
জেলা: নাটোর
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাতের সমস্যায় যা যা করবেন