OrdinaryITPostAd

পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি [আধুনিক চিকিৎসায়]

 পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কী?

নারীদেহে সাধারণত পুরুষালি হরমোন এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে নির্দিষ্ট কিছু উপসর্গ যোগে নারীর স্বাভাবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া বিঘ্নিত হাওয়াই হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম।



পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হলে পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তৃক অতিরিক্ত লুটিনাইজিং হরমোন নিঃসরণ ও ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের এর উপস্থিতিতে ডিম্বাশয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি হতে থাকে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর প্রভাবে নারীদেহে ডিম্বাশয় বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক দেখা যায়। এতে বন্ধত্ব ,অনিয়মিত মাসিক ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

অনুচ্ছেদ সূচি

  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কী?
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয়? 
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও অনিয়মিত মাসিক
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও প্রেগনেন্সি
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণ
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর লক্ষণ
  • নারীদেহে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম সনাক্তকরণ এর উপায়
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর চিকিৎসা
  • পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির পদ্ধতি 

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয়? পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি

আমাদের দেশের অধিকাংশ নারীই অজ্ঞ যে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয় এই বিষয়ে!  পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয় এই ব্যাপারে মেয়েদের স্পষ্ট ধারণা থাকা উচিৎ।কারণ অধিকাংশ সময় পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কেন হয় এই ব্যাপারে সম্মম জ্ঞান না থাকাও নারীদের যৌন স্বাস্থ্য কে হুমকির মুখে দাঁড় করায়!

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হলে পিটুইটারি গ্রন্থি কর্তৃক অতিরিক্ত লুটিনাইজিং হরমোন নিঃসরণ ও ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের এর উপস্থিতিতে ডিম্বাশয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন তৈরি হতে থাকে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর প্রভাবে নারীদেহে ডিম্বাশয় বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক দেখা যায়। এতে বন্ধত্ব ,অনিয়মিত মাসিক ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পলি শব্দের অর্থ হচ্ছে বহু বা অনেক। অর্থাৎ পলিসিস্টিক মানে অনেক বা বহু সিস্ট। পলিসিস্টিক  ওভারি সিনড্রোম এর প্রধান ও মুখ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জরায়ু থেকে ডিম্বাণু নির্গত না হওয়া। 

হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে জরায়ুতে ডিম্বাণু নির্গত হয় না এবং ডিম এর চারপাশে তরল জমে সিস্ট এ পরিণত হয়। ডিম্বাশয়ে এরুপ বহু সিস্ট সৃষ্টি হওয়ার কারণেই এই রোগকে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বলা হয়। তবে বিরল কিছু ক্ষেত্রে ডিম্বাশয় একাধিক নাও থাকতে পারে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও অনিয়মিত মাসিক! পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আক্রান্ত মহিলাদের শরীরে উচ্চমাত্রায় পুরুষ হরমোন গুলো উপস্থিত থাকে, যার মধ্যে অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।

 এন্ড্রোজেন হরমোন এর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেলে মাত্রাতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ফলে ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক সিস্ট তৈরি হতে থাকে।

 অপরদিকে প্রতিমাসে নারীদেহে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যার ফলে নারীদের মাসিক নিয়মিত থাকে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা , তা  সিস্ট এর কারণে বের হয়ে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এক সময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। 

অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক না হয়ে অনেকগুলো ডিম্বাণু একসাথে পরিপক্ক হওয়ার চেষ্টা করে। যার ফলে কোনো ডিম্বাণুই পর্যাপ্ত পরিপক্ক হতে পারে না। যার কারণে ডিম ফুটে বের হয়ে আসতে পারে না। ফলশ্রুতিতে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে মাসিক হয় না এমন সমস্যায় নারীরা অধিক হারে ভুগতে থাকে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও প্রেগনেন্সি - পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম ও প্রেগনেন্সি তে সমস্যা নারীদেহে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নারীদেহে প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম।

পরিপক্ক ডিম্বাণু ও অনিয়মিত মাসিক চক্রের কারণে নারীদেহ সন্তান জন্মদানে অনুর্বর হয়ে পড়ে এবং নারীর প্রেগনেন্সিতে সমস্যা সৃষ্টি হয়। বর্তমান সময়ে প্রেগনেন্সিতে সমস্যা ও সন্তান জন্মদানে ব্যর্থ নারীদের মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম আক্রান্ত মহিলাদের শরীরে উচ্চমাত্রায় পুরুষ হরমোন গুলো উপস্থিত থাকে, যার মধ্যে অ্যান্ড্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।মাত্রাতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ফলে ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক সিস্ট তৈরি হতে থাকে। 

প্রতিমাসে নারীদেহে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যার ফলে নারীদের মাসিক নিয়মিত থাকে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা , তা সিস্ট এর কারণে বের হয়ে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এক সময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সময় স্বাভাবিকভাবে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক না হয়ে অনেকগুলো ডিম্বাণু একসাথে পরিপক্ক হওয়ার চেষ্টা করে। 

যার ফলে কোনো ডিম্বাণুই পর্যাপ্ত পরিপক্ক হতে পারে না। যার কারণে ডিম ফুটে বের হয়ে আসতে পারে না। জরায়ুতে পরিপক্ক ডিম্বাণুর অনুপস্থিতি দেখা যায়। এদিকে প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মিলিত হয়ে নিষিদ্ধ হওয়া অত্যাবশ্যকীয় প্রক্রিয়া। 

যার ফলে নারী দেহে পরিপক্ক ডিম্বাণুর উপস্থিতির অভাবে শুক্রাণু নিষিদ্ধ হতে পারে না। ফলে নারীদের প্রেগনেন্সি তে সমস্যা দেখা যায়। নারীদেহে অনুর্বরতার কারণে প্রেগনেন্সিতে সমস্যা হয়। জরায়ুতে পরিপক্ক ডিম্বাণুর অভাবে নারীদেহে  প্রেগনেন্সি এর স্বাভাবিক সকল কার্যক্রম বিঘ্নিত বাা বাধাগ্রস্ত হয় ।নারীদের প্রেগনেন্সি তে সমস্যা হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণ - পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি

রজঃনিবৃত্তি কাল অর্থাৎ 18 থেকে 44 বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে এন্ডোক্রিন গ্রন্থি এর সবচেয়ে কমন রোগ হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম। হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য মহিলাদের উর্বরতা কমে যাওয়াই হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোম এর প্রধান কারণ । রজঃনিবৃত্তিকালে 2 থেকে 20 শতাংশ নারী এই রোগে আক্রান্ত।

অধিকাংশ সময়ে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম সাধারণত দুই কারণে লক্ষ্য করা যায়: 

  • জীনগত কারণ 
  • পরিবেশগত কারণ
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর পূর্ববর্তী প্রজন্মের কেউ অর্থাৎ মা দাদী বা কেউ পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই রোগ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে। একে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর জীনগত কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আবার অনেক সময় সাধারোনত বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নারীরা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হতে পারে। 
এছাড়াও নারীদের মাত্রাতিরিক্ত দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ , অতিরিক্ত ফাস্টফুড ও জাঙ্ক ফুড ইত্যাদি গ্রহণ, শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই না করা বা একেবারে কম করা ইত্যাদি নারীদেহে  একে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হওয়ার পরিবেশগত কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ সময়ই পরিবেশগত কারণে নারীরা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়।
জীনগত ত্রুটি সম্পন্ন নারীর অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ ও পরিশ্রম না করা ইত্যাদি এসব গুণগুলো পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর ঝুঁকি অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয় । পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম হচ্ছে নারীদেহে জীনগত ও পরিবেশগত ত্রুটির সমাহার।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর লক্ষণ - পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি

আপনার শরীরের নির্দিষ্ট কিছু লক্ষণ প্রকাশিত হলে আপনাকে বুঝে নিতে হবে যে আপনি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত। স্পেসিফিক কিছু লক্ষণ এর  মাধ্যমে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের সনাক্ত করা যায়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে নারীদেহে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য লক্ষণ সমূহ নিম্নরূপ: 

অনিয়মিত মাসিক

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে এর অন্যতম লক্ষণ হচ্ছে অনিয়মিত মাসিক। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের দেহে এন্ড্রোজেন হরমোন এর মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেলে মাত্রাতিরিক্ত এন্ড্রোজেন হরমোন নিঃসরণ এর ফলে ডিম্বাশয়ের বিভিন্ন আকৃতির বহুসংখ্যক সিস্ট তৈরি হতে থাকে।  প্রতিমাসে নারীদেহে একটি ডিম্বাণু পরিপক্ক হয়ে ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যার ফলে নারীদের মাসিক নিয়মিত থাকে। প্রতি মাসে ডিম্বাশয় থেকে যে ডিম্বাণু বের হওয়ার কথা , তা  সিস্ট এর কারণে বের হয়ে আসতে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এক সময় ডিম বের হওয়া বন্ধ হয়ে যায়।  ফলশ্রুতিতে মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে মাসিক হয় না এমন সমস্যায় নারীরা অধিক হারে ভুগতে থাকে।

অতিরিক্ত রক্তস্রাব

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের সাধারণত মাসিক চক্র অনিয়মিত হয়। বেশিরভাগ সময়ই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর দীর্ঘদিন পর পর মাসিক শুরু হয়। মাসিক শুরু হওয়ার পরে মাসিকের সাথে রক্ত স্রাব এর পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং অনেক সময় ও রোগী তলপেটে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করে থাকে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর মাসিক চলাকালীন সময়ে রক্তস্রাব এর পরিমাণ স্বাভাবিক রক্তচাপ এর থেকে অনেক বেশি হয় এবং মাসিক চক্র স্বাভাবিক মাসিকচক্রও থেকে বেশিদিনের হয় । অধিকাংশ সময় পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের অনিয়মিত মাসিক চক্র চলতে থাকে।

বন্ধ্যত্ব

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর কারণে নারীদেহের জরায়ুতে পরিপক্ক ডিম্বাণুর অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় । পরিপক্ক ডিম্বাণু ও অনিয়মিত মাসিক চক্রের কারণে নারীদেহ সন্তান জন্মদানে অনুর্বর হয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ে সন্তান জন্মদানে ব্যর্থতার নারীর মধ্যে অধিকাংশই হচ্ছে পলিসিসটিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত।

মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত লোম

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন এর উপস্থিতিতে মুখে ও শরীরে অতিরিক্ত অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়। এছাড়াও বিভিন্ন হরমোনের ভারসাম্যহীনতার ফলে মুখে ও শরীরের অন্যান্য অংশে দেখা দেয়।কখনো শরীরের বিভিন্ন অংশে (ঘাড় ,বগল ইত্যাদতে)  ঘন কালো স্পট দেখা দিতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত প্রতি চারজন নারীর মধ্যে তিনজন নারীর দেহে উল্লেখ্য লক্ষণ গুলো  লক্ষ্য করা যায়।

মেটাবলিক ডিসঅর্ডার

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর দেহে ইনসুলিন রেজিস্টেন্সের কিছু লক্ষণ দেখা যায় । 

যেমন -

  • দৈহিক ওজন বৃদ্ধি, 
  • ক্ষুধা বৃদ্ধি 
  • দুর্বল অনুভব করা 
  • স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া 
  • রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া 
  • কোলেস্টেরলের স্বাভাবিক মাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি।

এছাড়াও পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের দেহে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে । যার কারণে এদের শরীরে আরো  পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর জন্য উল্লেখযোগ্য কিছু  লক্ষণ দেখা দিতে পারে যার মধ্যে অন্যতম-

  • স্থূলতা 
  • ঘুমের সময় নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া 
  • নাক ডাকা 
  • হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া 
  • জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়া 
  • মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি ।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত অধিকাংশ নারীদের মধ্যে উল্লেক্ষ্য লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। কোন নারীর মধ্যে এই লক্ষণগুলো শনাক্ত করা গেলে তাকে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত বলে গণ্য করা হয়। উল্লেখ্য লক্ষণগুলো কারো দেহে সনাক্ত করা গেলে যত দ্রুত সম্ভব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

নারীদেহে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম সনাক্তকরণ এর উপায়

কোন নারী পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা শনাক্তকরণের জন্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। নির্দিষ্ট কিছু ক্রাইটেরিয়ার ওপর ভিত্তি করে বোঝা যায় নারী পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত কিনা। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম শনাক্তকরণের উল্লেখযোগ্য কিছু ক্রাইটেরিয়া হচ্ছে -

  • নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন টেস্টোস্টেরনের ও এন্ড্রোজেন হরমোন এর উপস্থিতি
  • অনিয়মিত মাসিক
  • ডিম্বাশয় অসংখ্য সিস্ট এর উপস্থিতি
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম শনাক্তকরণের জন্য বহুল ব্যবহৃত উল্লেখযোগ্য কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা নিম্নরূপ:
  • সিরাম টেস্টোস্টেরন  বা এফ এস এইচ
  • আলট্রাসনোগ্রাফি
  • ওজিটিটি।

রক্তে এন্ড্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি নির্ধারণ করার জন্য সিরাম টেস্টোস্টেরন বা এফএসএইচ টেস্ট করা হয়। এছাড়াও জরায়ুতে সিস্ট এর উপস্থিতি শনাক্তকরণের জন্য আল্ট্রাস্লো করা হয়। অসংখ্য সৃষ্টবস্তু থাকলে তা আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে বোঝা যায়।
উল্লেখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম কনফার্ম হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া উত্তম।

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম এর চিকিৎসা 

জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন ও নিয়মিত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলে পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম চিকিৎসা হিসেবে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করাকরি মূল চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়, পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পুরুষালি হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ধরনের নিয়মিত বা স্বল্পস্থায়ী চিকিৎসা  গ্রহণ করা লাগে।

জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন

  • স্থূলতা রোধ করা
  • তেল জাতীয় খাদ্য ফাস্টফুড, জাংক ফুড এড়িয়ে চলা
  • সবুজ ও রঙিন শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
  • শর্করা জাতীয় খাদ্য কম খাওয়া
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য খাবার তালিকায় বেশি রাখা
  • নিয়মিত রঙিন ফলমূল খাওয়া
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা
  • নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা 

পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি

নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন টেস্টোস্টেরন ও ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ গ্রহন করতে হবে।নারীদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত  পিলগুলোতে স্বল্পমাত্রায় ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরন থাকে। যা নারীদেহে অতিরিক্ত পুরুষালি হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রজেস্টেরন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।

অপরদিকে মেটফর্মিন নারীদের হরমোনগত কারণে অতিরিক্ত ও অবাঞ্ছিত লোম দূর করার ক্রিম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ছাড়াও পলিসিস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে কিছু ঔষধপত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন।

আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ে অসচেতন। এজন্য তারা এই সকল রোগের অধিক ভোগে। অথচ প্রাথমিক অবস্থায় এই সকল রোগ শনাক্তকরণ এর মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করলে খুব তাড়াতাড়ি পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির পদ্ধতি 

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। আপনি চাইলে আপনার স্বাভাবিক ও সঠিক জীবন-যাপনের মাধ্যমে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তি পেতে পারেন। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায় গুলো আমাদের জীবন যাপনে খুবই সাধারণ কিছু প্রক্রিয়া। আমরা চাইলে অতি সহজেই পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায় গুলো আমাদের ব্যবহারিক জীবনে মেনে চলতে পারি। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উল্লেখযোগ্য উপায় সমূহ নিম্নরূপ: 

  • সুষম খাদ্য গ্রহণ
  • ওজন রোধ করা
  • শারীরিক পরিশ্রম করা

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর সর্বপ্রথম করণীয় কাজ সর্বোত্তম ও চিকিৎসা হচ্ছে জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন। এক্ষেত্রে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীকে সর্বপ্রথম খাদ্য গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে। পলিসিস্টিক সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীকে সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীর খাদ্য তালিকায় শর্করার পরিমাণ কম থাকতে হবে এবং শাকসবজির পরিমাণ অধিক থাকতে হবে। তবে শাক সবজির মধ্যে আলু পরিহার করাই শ্রেয়। এছাড়াও রঙিন ফলমূল খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখতে হবে তেল জাতীয় খাদ্য, জাঙ্কফুড ,ফাস্টফুড ইত্যাদি পরিহার করতে হবে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত নারীদের সুশৃংখল খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে নিয়মিত খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এজন্য আদর্শ বিএমআই অনুসরণ করতে হবে। স্থূলতা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়, স্থূলতা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম এর পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ । এজন্য পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের তাদের ওজন বৃদ্ধি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

এছাড়াও পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নিয়মিত হাঁটাহাঁটির অভ্যাস থাকতে হবে বা শারীরিক পরিশ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শারীরিক পরিশ্রম সফলতার সম্ভাবনা অনেকটাই কমায়। এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে মেটাবলিক ডিসঅর্ডার এর সম্ভাবনা কমায় । এজন্য পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম থেকে মুক্তি র  জন্য শারীরিক পরিশ্রমের ও নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
1 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Unknown
    Unknown March 4, 2022 at 1:32 AM

    এই লিখাটা কোন ডক্টর এর?, উনার সাথে consult করতে চাই। ডক্টর এর নাম ও চেম্বার সম্পর্কে জানালে উপকৃত হতাম

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url