শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ইতিহাস ও বর্তমান পরিক্রমা
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হওয়ার গুলো রয়েছে স্বতন্ত্র ইতিহাস। তারই ধারাবাহিকতায় শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলেরও রয়েছে স্বতন্ত্র ইতিহাস। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম হলগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুসলিম শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল গুলোর মধ্যে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সর্ববৃহৎ হল। গ্রামীণ মনোরম পরিবেশের জন্য শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল কে বলা হয় 'ঢাবির একখন্ড গ্রাম'। আজকের এই আর্টিকেলে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ইতিহাস এবং বর্তমান পরিক্রমা আপনাদের জানাবো।
আর্টিকেল সূচী (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)
- ইকবাল হল পরিক্রমা
- ইকবাল হল থেকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নামকরণের ইতিহাস
- মুক্তিযুদ্ধে ইকবাল হল অর্থাৎ শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এর ইতিবৃত্ত
- শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের জীবনী
- হলের বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচিতি
- জহুরুল হক হলের বিভিন্ন স্থাপনা ও স্মৃতি চত্বর
- হলের বিল্ডিং বা ভবন পরিচিতি
ইকবাল হল পরিক্রমা|শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ইতহাস
'শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল' এই নাম হলের প্রতিষ্ঠালগ্নে ছিলনা। তৎকালীন অর্থাৎ ১৯৫৭ সালে হলের নাম ছিল ইকবাল হল। স্যার মুহাম্মদ ইকবালকে অধিকাংশই আল্লামা ইকবাল নামে চেনেন। মোহাম্মদ ইকবাল ১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের পাঞ্জাবের শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন। এবং ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ বৃটিশ-ভারতীয় হিসেবেই তিনি ২১ এপ্রিল ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে ৬০ বছর বয়সে পাঞ্জাবের লাহোরে মৃত্যুবরণ করেন।
আল্লামা ইকবাল শুধু পাকিস্তান বা বাংলাদেশের কবি নন তিনি ছিলেন অবিভক্ত ভারত বর্ষের কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও ব্যারিস্টার ।
তার অন্যতম একটি দর্শন ও চিন্তা ছিল ভারতবর্ষে মুসলমানদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন। তাঁর জীবদ্দশায় সম্ভব না হলেও ইকবালের মৃত্যুর পর সৃষ্টি হয় পাকিস্থান। ইকবালের প্রকৃত নাম মুহম্মদ ইকবাল হলেও তিঁনি আল্লামা ইকবাল নামেই অধিক পরিচিত। আল্লামা শব্দের অর্থ হলো শিক্ষাবিদ। আল্লামা ইকবালের এই স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের ধারণা পরবর্তীতে বাস্তবে রুপান্তরিত হলে তার সম্মানে ১৯৫৭ তৎকালীন পাকিস্থান শাসনামলে সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নাম রাখা হয় ইকবাল হল।
ফার্সি ও উর্দুতে তার অবদানের জন্য আধুনিক ফারসি ও উর্দু সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে মনে করা হয়। পাকিস্তান সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মোহাম্মদ ইকবাল কে পাকিস্তানের জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মোহাম্মদ ইকবালের জন্মদিনকে ইকবাল দিবস হিসেবে পাকিস্তানি পালন করা হয় এবং উত্তর দিন সরকারি ছুটি হিসেবে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করেছেন।
মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের নামানুসারে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে অর্থাৎ সালে ইকবাল ১৯৭২ সালে হলের নাম পরিবর্তন করে 'সার্জেন্ট জহুরুল হক হল' করা হয়। পরিশেষে 'শহীদ' যুক্ত করে হালের নাম রাখা হয় 'শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল'।
ইকবাল হল থেকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নাম পরিবর্তনের ইতিহাস
এই অনুচ্ছেদের পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদে আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল সম্পর্কে বলা হয়েছে। ইকবাল হল থেকে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নামের পরিবর্তন কেন হয়েছে? শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক আসলে কে ছিলেন? এই বিষয় গুলো জানলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন নাম পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার 17 নম্বর আসামি হিসেবে জহুরুল হক এর নাম উল্লেখ করা হয়। এই আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার এক নম্বর আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ আরো 34 জন ভারতের আগরতলায় একটি গোপন বৈঠকের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার অপচেষ্টা করছে। এই অভিযোগের কারণে রাষ্ট্রপক্ষ 35 জনের বিরুদ্ধে মামলা করে।
তিনি কৈশোরকালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন এবং এক সময় তিনি সার্জেন্ট পদে উন্নীত হন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় আসামি হয়ে তিনি কারাগারে বন্দী হন। এবং কুর্মিটোলা সেনানিবাসে বন্দি থকা অবস্থায় প্রহরার দায়িত্বে নিয়োজিত পাকিস্তানি সৈনিকের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। পাহারায় নিয়োজিত পাকিস্তান সৈনিকের হাতে সার্জেন্ট জহুরুল হক হল গুলিবিদ্ধ হওয়ার একটা কারন ছিল-
সেদিন অর্থাৎ ১৪ই ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে বাঙালি শিশুরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর খাদ্যের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহের জন্য ভিড় করে সেনানিবাসে। শিশুদের ভিড়ের কারণে বিরক্ত হয়ে কয়েকজন অবাঙালি সৈনিক অভুক্ত শিশুদের ধরে এনে অমানবিক প্রহার শুরু করে। পাকিস্তানি সেনাদের এই অমানবিক আচরণ দেখে কয়েকজন বন্দি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানালে হাবিলদার মজনুর শাহ বন্দীদের কামরায় ফেরত যেতে আদেশ করেন কিন্তু জহুরুল হক সে আদেশ উপেক্ষা করে মজনুর শাহের সঙ্গে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়েন একসময় মজনুর শাহ প্রচন্ড রাগান্বিত হয়ে রাইফেলের বেওনেট লাগিয়ে তার দিকে ধেয়ে আসতে থাকেন কিন্তু জহুরুল হক পাশকাটিয়ে আক্রমণকারীর হাত থেকে রাইফেল ছিনিয়ে নেন এবং বীরের এর মতো তার কামরায় গিয়ে রাইফেল ফেরত দিয়ে আসেন।
পরদিন অর্থাৎ ১৫ই ফেব্রুয়ারি ভোরবেলা জহুরুল হক যখন ঘর থেকে বের হচ্ছেন ঠিক সেইসময় মজনুর শাহ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে এবং জহুরুল হকের পেটে বিদ্ধ হয় সঙ্গে সঙ্গে তাকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে ওই দিন রাত 9:55 তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অর্থাৎ রাগারাগির বশে মজনুর শাহ সার্জেন্ট জহুরুল হককে গুলি করেন এবং তার গুলিতেই শাহাদাত বরণ করেন বাঙালি বীর সার্জেন্ট জহুরুল হক।
সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর পর তৎকালীন ঊনসত্তের গণ আন্দলনের গতি আরও বেগবান হয়। এবং এই আন্দোলনের তোপে পড়ে আইয়ুব খান ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয় এবং ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসেন। এই আন্দোলনের কারণেই আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় পাকিস্থান সরকার।
স্বাধীনতা অর্জনে সার্জেন্ট জহুরুল হক এর অবদানের কারণে সবার প্রত্যাশা অনুযায়ী ১৯৭২ সালে এই ইকবাল হলের নামকরণ করা হয় 'সার্জেন্ট জহুরুল হক হল' নামে। এবং সর্বশেষ ২০১৩ সালে এই হলের নামকরণ করা হয় 'শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল' নামে।
মুক্তিযুদ্ধে ইকবাল হল অর্থাৎ শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন ইকবাল হল অর্থাৎ বর্তমানের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের অসামান্য অবদান ছিল। এই হল ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ একটি হল। বাঙালির মুক্তির জন্য এই হলেই গড়ে উঠে 'জয় বাংলা বাহিনী'। বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরি হয়েছিল শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একটি কক্ষে।যেটা ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ছাদে উত্তোলন করা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে নিজ এলাকায় চলে গেলেও কিছু সংগ্রামী শিক্ষার্থী অসহযোগ আন্দোলনসহ পাক শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কলের কক্ষ্যে অবস্থান করেন। বিশেষ করে তৎকালীন সময়ে ইকবাল(শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ও জগন্নাথ হলে স্বাধীনতাকামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সে সময় বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল। তৎকালীন ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ ইকবাল হলের(শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।
অন্যদিকে মৌলবাদী বা ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সমর্থক ছিলো না জগন্নাথ হলের শিক্ষার্থী। এই কারণে ২৫ মার্চ রাতে পাক-বাহিনী যে গণহত্যার পরিকল্পনা করে তাতে তাদের টার্গেট ছিলো জহুরুল হক হল এবং জগন্নাথ হল। সেই কালরাতে এই দুই হল রুপ নিয়েছিলো মৃত্যুপুরীতে। যার বর্ণনা পাওয়া যায় তৎকালীন কিছু প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বিখ্যাত ব্যক্তিদের পরিচিতি
স্বাধীনতা থেকে শুরু করে বর্তমান বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের বিভিন্ন স্থাপনা ও স্মৃতি চত্বর
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এর বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও স্মৃতি চত্বর রয়েছে।
হলের বিল্ডিং বা ভবন পরিচিতি
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দুইটি বিল্ডিং একটি টিনশেড আবাসিক ভবন রয়েছে।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ক্যান্টিন পরিচিতি
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তিনটি ক্যান্টিন বিদ্যমান।
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের রিডিং রুম পরিচিতি
এই হলে যেমন তিনটি বিল্ডিং তিনটি ক্যান্টিন আবার তিনটি মসজিদও রয়েছে।
সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মসজিদ পরিচিতি
এই হালের তিনটি ভবনে তিনটি মসজিদ রয়েছে। একটি জামে মসজিদ ও দুইটি ওয়াক্ত মসজিদ রয়েছে।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url