মাথাব্যথা খুব কমন একটা সমস্যা। জীবনে কখনো মাথাব্যথায় ভোগেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব।কিন্তু মাথাব্যথা কমানোর উপায় কী? এই বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়ে থাকেন।মাথাব্যথা হলেই কী পেইনকিলার নিতে হবে না প্রাকৃতিক কিছু পন্থা অবলম্বন ও মাথাব্যথা কমানোর উপায় হতে পারে? মাথাব্যথা কমানোর উপায় বা প্রাকৃতিক ভাবে মাথাব্যথা কমানোর উপায়,মাথাব্যথা কত প্রকার বা মাথাব্যথার ধরন সহ মাথাব্যথা সম্পর্কিত বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়ুন।
World Health Organisation (WHO) এর রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিবছর কমপক্ষে একবার হলেও পৃথিবীর সমস্ত পূর্ণবয়স্ক মানুষের অর্ধেক মাথা ব্যথা সমস্যার সম্মুখীন হয়। এজন্যই মাথাব্যথা নিয়ে জনসমাজে একটি বহুল প্রচলিত বাক্য হচ্ছে, ' মাথা থাকলে মাথাব্যথা থাকবেই।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে মাথা ব্যথার কারণ, মাথাব্যথার প্রকৃতি এবং মাথাব্যাথা কমানোর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আশা করি এই আর্টিকেল পড়ে আপনার সকল প্রশ্ন ও সমস্যার সমাধান পাবেন।
অনুচ্ছেদ সূচি-
- মাথাব্যথা হওয়ার কারণ
- মাথাব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
- মাথাব্যথা কমানোর আধুনিক উপায়
- মাথাব্যথার ধরন
- প্রাইমারি মাথাব্যথা
- সেকেন্ডারি মাথাব্যথা
- মাথাব্যথা নির্ণয়
- মাথাব্যথার চিকিৎসা
- হোম রেমেডি
- যেসব খাবার মাথাব্যথার সম্ভাবনা কমায়
- মাথাব্যথা দূর করতে করণীয়
মাথাব্যথা হওয়ার কারণ
নানা কারণে মাথাব্যথা হতে পারে, তার মধ্যে অন্যতম -
- মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে।
- বিষন্নতার কারণে মাথাব্যথা হতে পারে। এটি সাধারণত মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়।
- মাইগ্রেন বা হাই ব্লাড প্রেসারের কারণে মাথাব্যথা দেখা পারে।সারা বিশ্বে প্রায় 15% মানুষের মাথা ব্যথা মাইগ্রেন জনিত।
- মাথার চামড়া, মাংস, হাড্ডি, মস্তিষ্কের পর্দা বা মেনিনজেস, মস্তিষ্কের রক্তনালী অথবা মাথার ভিতরে থাকা তরল পদার্থ সেরেব্রাস্পাইনাল ফ্লুইডে কোনো সমস্যা থাকলে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
- এছাড়া সাইনুসাইটিস ব্যথা,ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া,দাঁতের ব্যথা, ব্রেনের টিউমার, ব্রেইনের ইনফেকশন ইত্যাদির কারণেও মাথাব্যথা হতে পারে।
- জীবন যাপনের পদ্ধতি ও মাথাব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে। অনেকে শুয়ে থেকে ল্যাপটপ বা ডেস্বাকটপ ব্যবহার করেন।এতে ডেস্কটপের পজিশন ঠিক থাকে না। এগুলো বিরতিহীনভাবে করতে থাকলে ঘাড়,চোখ ও মস্তিষ্কে চাপ সৃষ্টি হয়। এতে মাথাব্যথা হতে পারে।
মাথাব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক উপায়মাথাব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক এবং ঔষধ প্রয়োগ দুই উপায়ই অধিক ব্যবহৃত। তবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এমন মাথাব্যথা কমানোর কেন, প্রায় প্রতিটা রোগেরই আধুনিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।তাহলে মাথাব্যথা কমানোর উপায় কী? মাথা ব্যাথা কমানোর জন্য প্রাকৃতিক উপায়ের কোনো জুড়ি নেই।
মাথা ব্যথা কমানোর জন্য আরও কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে। এগুলো স্বল্প সময়ের মধ্যে মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। পদ্ধতি গুলো হলো -
আকুপ্রেশার
ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথাব্যথা কমানোর জন্য আকুপ্রেশার পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে মাথা ব্যথা সারাতে সাহায্য করে।
এক হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনীর মাঝখানের অংশে অন্য হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল ও তর্জনী দিয়ে চাপ দেওয়া এবং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করার পদ্ধতির নাম আকুপ্রেশার পদ্ধত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদ্ধতি খুব দ্রুত মাথাব্যথা কমাতে সক্ষম। এটি মাথাব্যথা কমানোর অন্যতম উপায়।
পানি পান করা
মাথাব্যথা কমানোর আরেকটি প্রাকৃতিক উপায় হচ্ছে পানি পান করা।
শরীরে পানি স্বল্পতার কারনেও মাথাব্যথা হতে পারে। এই সময় পানি পান করলে শরীরে আদ্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাথাব্যথা কমতে পারে। এই জন্য তীব্র মাথা ব্যথার সময় পানি পান করা যেতে পারে।
লবঙ্গ
রান্না সুঘ্রানযুক্ত ও সুস্বাদু করা ছাড়াও ঔষধি গুণের দিক থেকে লবঙ্গ অনন্য। মাথাব্যথার সময় কয়েকটি লবঙ্গ গরম করে লবঙ্গ গুলো কাপড় অথবা রুমালের মধ্যে নিয়ে তার ঘ্রাণ নেওয়া যেতে পারে। এতে অনেক সময় মাথা ব্যথা চলে যায়।এটি মাথাব্যথা কমানোর উপায় গুলোর মধ্যে অধিক জনপ্রিয়।
আদা
মাথা ব্যথা দূর করার ক্ষেত্রে আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ না। এটি তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত ও বাজে স্বাদের হলেও মাথাব্যথা রোধের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । মাথাব্যথার সময় কিছুক্ষণ আদা চিবালে মাথা ব্যথা দূর হতে পারে। এই পদ্ধতিও আপনি মাথাব্যথা কমানোর উপায় হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
লবণযুক্ত আপেল
আপেলে উপস্থিত উপাদানসমূহ মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথাব্যথা কমানোর জন্য সামান্য লবণ ছিটিয়ে এক টুকরো আপেল চিবানো যেতে পারে। এতে মাথাব্যথা অনেকটা কমে যেতে পারে।
হাসিখুশি মন
সুস্থ, সতেজ,হাসিখুশি ও ইতিবাচক মন মাথাব্যথা রোধ করতে সাহায্য করে। এজন্য সবসময় হাসিখুশি থাকা উচিৎ। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করাও হতে পারে আপনার মাথাব্যথা কমানোর একটা প্রাকৃতিক উপায়।
মাথাব্যথা কমানোর আধুনিক উপায়
মাথা ব্যথা কমানোর জন্য সবচেয়ে কার্যকরী মেডিসিন হিসেবে টাফলিন অথবা এই গ্রুপের যে কোনো মেডিসিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
টাফলিনঃ
টাফলিন বা টলফেনামিক এসিড 200 মিলিগ্রাম[ unit price - 10 tk per piece ]
দেহের যে কোন স্থানে ব্যথা বা প্রদাহের জন্য দায়ী প্রস্টাগ্লান্ডিন। টলফেনামিক এসিড প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন কে কেবল বাধা দেয় না, বরং প্রস্টাগ্লান্ডিন বিসেন্টেরকেও এন্টাগোনাইজ করে।
মাত্রা ও সেবন বিধি
মাথাব্যথা কমানোর জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে -
তীব্র মাইগ্রেন ব্যথাঃ মাইগ্রেনের তীব্র মাথাব্যথা কমানোর জন্য টাফলিন ট্যাবলেট 200 মিলিগ্রাম ব্যবহার করা যেতে পারে।
হালকা থেকে মধ্যম ব্যথাঃহালকা থেকে মধ্যম ব্যথা কমানোর জন্য টাফলিন 100-200 মিলিগ্রাম নেওয়া যেতে পারে।
টাফলিন বা টলফেনক এসিড খাদ্য গ্রহণের সময় বা পরে গ্রহণ করা উচিত।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
মাথাব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত বা মাত্রাতিরিক্ত টাফলিন জাতীয় মেডিসিন গ্রহণের ফলে যে সমস্যাগুলো হতে পারে তা নিম্নরূপ -
- বমি বমি ভাব
- বমি
- এপিগাস্ট্রিক ব্যথা
- ডায়রিয়া
- মাথা ঘোরা
- ঘুম ঘুম ভাব
- ক্ষুধামন্দা
- রক্তের উপাদান গুলোর হৃাস বৃদ্ধি
- তীব্র প্রক্রিয়ার ফলে বৃক্ক বৈকল্য ও যকৃতের ক্ষতি হতে পারে।
শিশু,গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকালীন সময়ে এ ধরনের মেডিসিন ব্যবহার করা না করা উত্তম।
মাথাব্যথার ধরন
International Headache Society (IHS) মাথাব্যথাকে দুইভাগে ভাগ করেছে-
- প্রাইমারি মাথাব্যথা
- সেকেন্ডারি মাথাব্যথা।
কোনো কারণ ছাড়া যে মাথাব্যথা হয়,তা প্রাইমারি মাথাব্যথা। আর অন্য কোনো সমস্যার কারণে যদি মাথাব্যথা দেখা দেয়,তাহলে সেটা সেকেন্ডারি মাথাব্যথা।
1. প্রাইমারি মাথাব্যথা
মানসিক চাপ,মাত্রাতিরিক্ত কাজ করা অথবা মাথার পেইন সেনসিটিভ স্ট্রাকচারে সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা থাকার ফলে সাধারণত প্রাইমারি মাথাব্যথা হয়। এছাড়া মস্তিষ্কের রাসায়নিক কার্যক্রমে অস্বাভাবিকতার ফলেও মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে।
প্রাইমারি মাথাব্যথার উদাহরণ
টেনসন হেডেক
সাধারণত ,মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে প্রাইমারি
মাথাব্যথা দেখা যায়,তারমধ্যে টেনসন হেডেক অন্যতম।
টেনসন হেডেকের ক্ষেত্রে -
- মাথার দুপাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
- মাথায় একটা টাইট ব্যান্ড পড়লে যেমন অনুভূত হয়, এই হেডেকে তেমন অনুভূত হয়।
- মাথাব্যথা ধীরে ধীরে ঘাড়ে বা ঘাড় থেকে ছড়াতে পারে।
এই মাথাব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দুপুরের দিকে শুরু হয়।
এই মাথাব্যথা অল্প কয়েকঘন্টা স্থায়ী হলে তাকে এপিসোডিক টেনশন হেডেক বলে, আর যদি একটানা 10-15 দিন স্থায়ী হয়, তাহলে তাকে ক্রনিক টেনসন হেডেক বলে।
মাইগ্রেইন
টেনসন হেডেকের পরে যে প্রাইমারি মাথাব্যথা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় তা হচ্ছে মাইগ্রেইন।আমেরিকান ন্যাশনাল হেডেক ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাদের দেশে প্রায় 40 মিলিয়ন মানুষ মাইগ্রেইনে আক্রান্ত। মাইগ্রেইনকে নিউরোলজিক্যাল সমস্যাও বলা হয়।
মাইগ্রেইনের ক্ষেত্রে যেসব উপসর্গ লক্ষ করা যায়-
- মাথার নিচের অংশে একপাশে প্রচুর ব্যথা হয়
- বমি বমি ভাব
- তীব্র ব্যথার কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে না পারা
- মাথা হালকা হালকা লাগা
- দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাইগ্রেইনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ফোটোফোবিয়া বা আলোর সমস্যা অথবা ফোনোফোবিয়া বা জোরে শব্দতে সমস্যা লক্ষ করা যায়।এগুলোকেও মাইগ্রেইনের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মাইগ্রেইন কয়েক ঘন্টা থেকে 2-3 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
মাথাব্যথা কমানোর জন্য মাইগ্রেইনে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের নিয়মিত ঘুমানো ও ব্যায়াম প্রয়োজন। এছাড়া ফল,মাছ,মাংস,মসুর, সালাদ ইত্যাদি খাওয়া এবং জাঙ্কফুড বা অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার পরিহার করা এই মাথাব্যথা কমানোর জন্য সহযোগিতা করে।
সেকেন্ডারি মাথাব্যথা
অন্য কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যার প্রভাবে যখন মাথাব্যথা দেখা দেয়, তখন তাকে সেকেন্ডারি মাথাব্যথা বলে। যেমন স্ট্রোকের জন্য মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত প্রবাহের অভাবে মাথাব্যথা দেখা দিতে পার, এই ধরনের মাথাব্যথা গুলোকে সেকেন্ডারি হেডেক বা সেকেন্ডারি মাথাব্যথা হিসেবে গণ্য করা হয়।
যেসব কারণে সেকেন্ডারি মাথা ব্যথা হতে পারে -
- ব্রেইন টিউমার
- মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা
- মস্তিষ্কে বা ব্রেইনে রক্তক্ষরণ
- মাথায় আঘাত পাওয়া
- দাঁতে ব্যথা
- ধুমপান
- মদ্যপান
- এ্যালার্জি
- গ্লোকোমা
- ডেঙ্গুজ্বর
- ম্যালেরিয়া
- ডিহাইড্রেশন
- বিভিন্ন বিষাক্ত গ্যাসের সংস্পর্শে থাকা
- স্ট্রোক অথবা অন্য করোনারি রোগ
- অতিরিক্ত ব্যাথা নাশক মেডিসিন নেওয়া ইত্যাদি।
শরীরে উল্লেখিত রোগ বা সমস্যার কারণে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে, যা সেকেন্ডারি মাথাব্যথার অন্তর্ভুক্ত।
সেকেন্ডারি মাথাব্যথার মধ্যে রয়েছে -
রিবাউন্ড হেডেক
সেকেন্ডারি মাথাব্যথায় আক্রান্ত রোগীরা সবচেয়ে বেশি রিবাউন্ড হেডেকে ভোগে।রিবাউন্ড মাথা ব্যথার মূল কারণ মাথাব্যথা কমানোর জন্য অথবা অন্যকোনো ব্যথা কমানোর জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ ব্যথানাশক মেডিসিন ব্যবহার করা। এই মাথাব্যথায় মেডিসিন নেওয়ার ফলে ব্যথা সাময়িকভাবে ভালো হলেও মেডিসিন না নিলে তা আবার ফিরে আসতে পারে।
রিবাউন্ড হেডেক এর উপসর্গ -
- তীব্র মাথা ব্যথা হওয়া
- নাক বন্ধ হয়ে আছে এমন অনুভূত হওয়া
- অস্থিরতা অনুভব করা
- ঘাড়ে বা ঘাড়ের নিচের দিকে ব্যথা হওয়া
- ঘুমের অপর্যাপ্ততা।
এই মাথাব্যথা সাধারণত সকালে শুরু হয় এবং সারা দিন স্থায়ী হয়।রিবাউন্ড হেডেক এর ফলে মাথাব্যথা বিভিন্ন দিন ভিন্ন রকম হতে পারে। রিবাউন্ড হেডেকের মূল কারণ যেহেতু অতিরিক্ত ব্যথা নাশক মেডিসিন ব্যবহার করা, তাই স্বাস্থ্যসচেতনতায় আমাদের মাত্রাতিরিক্ত ব্যথা নাশক মেডিসিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত।
ক্লাস্টার হেডেক
ক্লাস্টার হেডেকে সাধারণত তীব্র চোখের পিছনে হয়।চোখের পিছনে কোনো কিছু খোঁচা দিচ্ছে এমন মনে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যথা মাথার একপাশে অথবা এক চোখে বা চোখের আশেপাশে দেখা দেয়।ব্যথার তীব্রতার কারণে একে সুইসাইড হেডেকও বলে। সাধারণত 20 থেকে 40 বছর বয়সী মানুষেরা এই মাথাব্যথায় বেশি আক্রান্ত হয়। এই মাথাব্যথা 15 মিনিট থেকে 3 ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে।এটা প্রতিদিন 8 বার এবং কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
ক্লাস্টার হেডেক এর উপসর্গ -
- মাথার এক সাইডে বা এক চোখের আশেপাশে তীব্র ব্যথা হওয়া।
- অস্থিরতা ও ক্লান্তি অনুভব করা
- ঘাম হওয়া
- শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া।
- চোখ লাল হয়ে যাওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া।
- চোখের পিউপিল ছোট হয়ে আসা।এতে তীব্র আলোর দিকে তাকাতে না পারা।
- আলোক সংবেদনশীলতা।
নারীদের থেকে পুরুষদের এই মাথাব্যথা বেশি দেখা দেয়।বিশেষকরে অতিরিক্ত ধূমপান ও মদ্যপান করা ব্যক্তিরা ক্লাস্টার মাথাব্যথায় বেশি আক্রান্ত হয়। আবার ক্লাস্টার হেডেক চলাকালীন সময়ে ধূমপান এবং অ্যালকোহল পান শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই মাথাব্যথা কমানোর জন্য ও সুস্থ জীবনযাপনের জন্য ধুমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকা উচিত।
থান্ডারক্ল্যাপ হেডেক
খুব তীব্র, কষ্টদায়ক ও ভয়ানক মাথাব্যথার নাম হচ্ছে থান্ডারক্ল্যাপ মাথাব্যথা। থান্ডারক্ল্যাপ মাথাব্যথায় আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির থেকে শুনলে বোঝা যায় যে, এই মাথাব্যথার থেকে তীব্রতর কোন মাথাব্যাথা কেউ কখনো অনুভব করেনি।
থান্ডারক্ল্যাপ মাথাব্যথার উপসর্গ -
- ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় এবং তীব্রতর হতে থাকে। এই মাথাব্যথার তীব্রতা এত বেশি হয় যে মনে হয় ব্যথায় মাথা ফেটে যাবে।
- খুবস্বল্প সময়ে অর্থাৎ 1 মিনিটের মধ্যেই অসহনীয় তীব্র মাথাব্যথায় পরিণত হয়।
- সাধারণত 5 মিনিটের বেশি সময় স্থায়ী হয়।
থান্ডারক্ল্যাপ হেডেক সাধারণত -
- ইন্টাসেরিব্রাল হেমারেজ
- সেরিব্রাল ভেনিস থ্রম্বোসিস
- পিটুইটারি এপোপ্লাক্সি
- রিভার্সিবল সেরিব্রাল ভ্যাসোকন্সট্রিকসন
- মেনিনজাইটিস
- একিউট সাইনুসাইটিস
- এস্কোচিক স্ট্রোক
- ইন্টারট্রকলিয়ার হাইপোটেনশন
ইত্যাদি জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ রোগের উপসর্গ হিসেবে মানবদেহে দেখা দেয়।
সাইনাস হেডেক
সব ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে সবচেয়ে বিরল হচ্ছে সাইনাস হেডেক।প্রায় সময়ে এটা আসলে মাইগ্রেইন যার কারণে মুখোমন্ডলে ব্যথা হয়।
সাইনাস হেডেকের উপসর্গ -
- চোখে এবং মুখোমন্ডলে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা।
- মুখোমন্ডলের চামড়া কিছুটা লালচে হয়ে যাওয়া।
সাইনুসাইটিস অথবা সাইনা ইনফেকশনের কারণে সাধারণত সাইনাস হেডেক দেখা দিতে পারে। এই ধরনের মাথাব্যথা কমানোর জন্য উপসমের জন্য ডিকনজেসটেন্ট স্প্রে অথবা এন্টিহিস্টামিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
এলার্জি হেডেক
এলার্জি হেডেক ঋতুভিত্তিক এবং এই মাথাব্যথা সাইনাসের সাথে সম্পর্কিত। বছরের নির্দিষ্ট একটা সময়ে বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় এই মাথাব্যথা বেশি দেখা যায়।বর্ষাকালে এর সম্ভাবনা বাড়ে।
এলার্জি হেডেকের উপসর্গ -
- মাথাব্যথা হওয়া
- ঠান্ডা বা এলার্জিজনীত কারণে নাক থেকে তরল আসা।
- হাঁচি হওয়া
- চোখ থেকে পানি আসা।
এই মাথাব্যথা কমানোর জন্য এন্টিহিস্টামিন এবং ডিকনজেস্ট্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে।মাথাব্যথা কমানোর জন্য পাশাপাশি এলার্জি প্ররোচক খাবার এড়িয়ে চলা উচিৎ।
মাথাব্যথা নির্ণয়
সাময়িক অথবা দীর্ঘক্ষণিক মাথাব্যথার জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে মাথাব্যথার লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসক মাথাব্যথার ধরন নির্ণয় করেন।মাথাব্যথা জটিল প্রকৃতির হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তা নির্ণয় করা যেতে পারে।
মাথাব্যথার ধরন নির্ণয়ের জন্য যেসব টেস্ট করা যেতে পারে-
- ব্লাড টেস্ট
- এক্সরে
- ব্রেইন স্ক্যান,যেমন সিটি এবং এমআরআই।
এর মাধ্যমে নির্ভুলভাবে মাথাব্যথার ধরন নির্বাচন করে চিকিৎসা গ্রহণ করা যাবে।
মাথাব্যথার চিকিৎসা
লক্ষণ এর উপর ভিত্তি করে মাথাব্যথার ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান করা হয়। মাথাব্যথার চিকিৎসার বেশকিছু স্তর রয়েছে। মাথা ব্যথা তীব্র হলে চিকিৎসা হিসেবে প্রাথমিকভাবে ব্যথা কমানোর জন্য করার জন্য টাফলিন জাতীয়
মেডিসিন ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও সেমাটিপটান গ্রুপের মেডিসিন ব্যবহার করা যেতে পারে মাথাব্যথা কমানোর জন্য। মাইগ্রেইন নিরলস মূলক হিসেবে ন্যাজাল স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, এতে মাথাব্যথা অনেকটা কমানো যায়।
যাদের সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন মাথা ব্যথা থাকে, তাদের মাথাব্যথা কমানোর চিকিৎসা হিসেবে প্রিভেন্টিভ ট্রিটমেন্ট অন্যতম। এ ক্ষেত্রে ভিন্ন গ্রুপের মেডিসিন ব্যবহার করা হয়।
কিছু ক্ষেত্রে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে ম্যাগনেসিয়াম এবং কিছু ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এর অভাবে মাথা ব্যথা হতে পার। এক্ষেত্রে রোগীদের এই উপাদানসমৃদ্ধ মেডিসিন প্রদান করা হয় মাথাব্যথা কমানোর জন্য ।
তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোন মেডিসিন গ্রহণ করা উচিত না। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
হোম রেমেডি
মাথা ব্যাথার প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেব, মাথা ব্যথা কমানোর জন্য ঘরে বসে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।আপনার নেওয়া এই সাধারণ পদক্ষেপ হতে পারে আপনার মাথাব্যথা কমানোর একটা উপায়।আর এতে মাথাব্যথার সম্ভাবনা অনেক কমে যেতে পারে।
যেমন-
- মাথায় এবং ঘাড়ে হাল্কা গরম কাপড় অথবা বরফ জড়ানো কাপড় লাগানো। (এলার্জি, সর্দি, সাইনাসের সমস্যা থাকলে এক্ষেত্রে বরফ ব্যবহার পরিহার করা উচিৎ)।এতে মাথাব্যথা কমানো যেতে পারে।
- কুসুম গরম পানিতে গোসল দিলে মাথাব্যথা কমতে পারে।
- মাথাব্যথার সময় গরম পানিতে পা ডুবিয়ে রাখলে মাথা ব্যথা কমে যায়।
যেসব খাবার মাথাব্যথার সম্ভাবনা কমায়!
মাথা ব্যথা কমানোর জন্য ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যুক্ত খাবার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাথে যেসব ভিটামিন গুলো পানিতে দ্রবণীয় এরা মাথাব্যথা কমানোর জন্য সাহায্য করে। তাছাড়াও খাবার ডায়েট চার্টে ডিম, কলা, মাছ, ডাল,লালশাক, লেবু ও বিভিন্ন এসিড সমৃদ্ধ ফল রাখা মাথাব্যথার সম্ভাবনাকে অনেকটা কমিয়ে দেয়।মাথাব্যথার সম্ভাবনা কমানোর জন্য ডায়েট চার্টে ভিটামিন বি কম্পলেক্স যুক্ত ট্যাবলেট নিয়মিত রাখা যেতে পারে।এছাড়া কফি ও বিভিন্ন চকলেটে উপস্থিত ক্যাফেইন মাথাব্যথা কমাতে অনেক সহায়তা করে।
মাথা ব্যথা দূর করতে করণীয় !
- মাথাব্যথা কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা বা হাঁটার অভ্যাস তৈরি করা।এতে মাথাব্যথার সম্ভাবনা কমে যায়।
- মাথাব্যথা কমানোর জন্য মানসিক চাপ কমানো এবং কোন কিছু নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা থেকে বিরত থাকা ।
- মাথাব্যথা কমানোর জন্য রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো। (কমপক্ষে 6 ঘন্টা )
- বিরতিহীন ভাবে একটানা কাজ করার ফলে অনেক সময় মাথাব্যথা দেখা দেয়। তাই কাজের মধ্যে বিরতি বা বিশ্রাম নেওয়া।এতে মাথাব্যথা কমানো সম্ভব।
- মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, টিভির স্ক্রিন থেকে যে আলো বিচ্ছুরিত হয়,তা চোখের জন্য ক্ষতিকর এবং অনেক সময় মাথাব্যথা সৃষ্টি করে।মাথাব্যথা কমানোর জন্য এসব ব্যবহার সময় নির্দিষ্ট দুরত্ব মেনে চলা।
- মাথাব্যথা কমানোর জন্য বাইরে অথবা রোদে বের হওয়ার সময় ভালো মানের রোদ চশমা ব্যবহার করা। কারণ অতি আলোতে অনেকেরই মাথাব্যথার সমস্যা দেখা দেয়।
আমাদের দেশের প্রায় 90 শতাংশ মানুষ মাথাব্যথায় আক্রান্ত। যেকোনো কারণে শুধু ব্যথানাশক ওষুধ সেবন না করে একটু সচেতনতা অবলম্বন করলেও ভোগান্তির সম্ভাবনা অনেকটা কমানো সম্ভব।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url