বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে?
বর্তমানে বাংলাদেশের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া একটি জনপ্রিয় শ্রমবাজার। কেননা এই দেশে কাজের ভিসায় যাওয়ার খরচ তুলনামূলক কম এবং কাজের বেতন বেশি। কাজের ভিসা ছাড়াও স্টুডেন্ট ভিসা, বিজনেস ভিসা ইত্যাদি ভিসায় দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার প্রবণতাও অনেক বেড়ে গেছে। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা নিয়ে আলোচনা করব। যারা বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা জানতে চান তারা আর্টিকেলটি পড়ুন।
আর্টিকেল সূচিপত্র
- বাংলাদেশ থেকে কোরিয়া যাওয়ার খরচ
- দক্ষিণ কোরিয়ার এক টাকা বাংলাদেশের কত টাকা
- লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায়
- সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার উপায়
- দক্ষিণ কোরিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১.বাংলাদেশ থেকে কোরিয়া যাওয়ার খরচ
বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা নির্ভর করে কোন মাধ্যমে সাউথ কোরিয়া যাওয়া হবে তার উপর। সাধারণত দুইটি উপায়ে বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যাওয়া যায়, সরকারিভাবে এবং বেসরকারিভাবে।
সরকারিভাবে মূলত বোয়েসেলের মাধ্যমে সাউথ কোরিয়া যাওয়া যায়। বোয়েসেলের মাধ্যমে সরকারিভাবে সাউথ কোরিয়া যেতে ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়। এর মধ্যে বোয়েসেলের সার্ভিস চার্জ বাবদ ১৫০০০ টাকা, ভ্যাট, ট্যাক্স, ভিসা স্মার্ট কার্ড, কল্যান তহবিল, বীমা রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি বাবদ ১৫০০০ টাকা, জামানত ফি ১ লক্ষ টাকা (ফেরতযোগ্য, তবে নির্ধারিত সময় শেষে ফেরত না আসলে জামানত ফি বাজেয়াপ্ত করা হবে), বিমান ভাড়া ৭৫,০০০ টাকা, মেডিকেল ফি ও অন্যান্য খরচ সহ সর্বোমোট ২ লক্ষ ৫০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
বেসরকারিভাবে এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে ১২ লক্ষ থেকে ১৪ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে। কোরিয়া উন্নত দেশ হওয়ায় এই দেশের ভিসা, এন্ট্রি ফি, ওয়ার্ক পারমিট, রেসিডেন্স পারমিট সহ সকল খরচ বেশি। তাই বেসরকারিভাবে সাউথ কোরিয়া যাওয়ার খরচ বেশি হয়।
আরও পড়ুনঃ ইউরোপের কোন দেশে যেতে কত টাকা লাগে?
২.দক্ষিণ কোরিয়ার ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুদ্রার নাম ও মান ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা নিয়ে আর্টিকেলের প্রথম অংশে আমরা আলোচনা করেছি। এই অংশে আমরা সাউথ কোরিয়ার ১ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা তা নিয়ে আলোচনা করব।
দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার নাম ওন। আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে বাংলাদেশের টাকার চাইতে দক্ষিণ কোরিয়ার ওন এর মান বেশি। তবে এই কথাটি একদম সত্য নয়। দক্ষিণ কোরিয়াটর টাকার মান বাংলাদেশের টাকার তুলনায় কম। গুগল ফাইন্যান্সের আজকের রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ার ১ ওন সমান বাংলাদেশের ০.০৮৪ টাকা। অর্থাৎ দক্ষিণ কোরিয়ার ১ ওন বাংলাদেশের ৮ পয়সার সমান। সেই হিসেবে বাংলাদেশের ১ টাকা সমান দক্ষিণ কোরিয়ার ১১.৯০ ওন। দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রার এই মান সময়ের সাথে কম বেশি হয়ে থাকে। তাই ওন থেকে টাকায় রুপান্তরের উপায় জেনে নিলে আমরা খুব সহজেই ওন ও অন্যান্য মুদ্রার মান জেনে নিতে পারব। এজন্য-
- প্রথমেই https://bn.valutafx.com/ লিংক থেকে অথবা গুগলে অনলাইন মুদ্রা বিনিময় রুপান্তরকারী লিখে সার্চ করলেই এই ওয়েবসাইট চলে আসবে।
- কাঙ্ক্ষিত ওয়েবসাইটে গিয়ে "রুপান্তর করুন" নামক অপশনে যে পরিমান মুদ্রা রুপান্তর করতে চান তা লিখতে হবে।
- এরপর "হতে" অপশনে যে দেশের টাকা রুপান্তর করতে চান তার নাম সিলেক্ট করতে হবে ।
- সবশেষে " প্রতি " অপশনে যে দেশের টাকায় রুপান্তর করতে চান তা সিলেক্ট করলেই কাঙ্ক্ষিত ফলাফল চলে আসবে।
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণ কোরিয়া লটারি কবে ছাড়বে
৩.লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায়
লটারি ছাড়া কোরিয়া যেতে হলে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে যেতে হবে। আর্টিকেলের শুরুতে আমরা বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই অংশে আমরা লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
লটারি ছাড়া কোরিয়া যেতে বিভিন্ন এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এক্ষেত্র কয়েকটি ধাপে কোরিয়া যাওয়া যায়-
- কোরিয়া যাওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মান কমপক্ষে এইচএসসি বা সমমান হতে হবে।
- নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে আবেদনের ফি জমা দিতে হবে।
- কোরিয়ান ভাষার ট্রেনিং নিতে হবে।
- প্রার্থী দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা তার জন্য বিভিন্ন স্কিল টেস্ট নেওয়া হয়, এসব টেস্টে পাস করতে হবে।
- ভিসা ফরম জমা দিতে হবে। এবং আবেদনকারী দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছেন কিনা তা সেখানকার সরকার থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে।
এইসব স্কিল টেস্টের পরীক্ষায় ভালোভাবে উত্তী তাদের আশানরূপ হলে আপনি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হবেন।
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণ কোরিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
৪.সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার উপায়
বাংলাদেশ থেকে সাউথ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা আর্টিকেলের শুরুতে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এই অংশে আমরা সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব।
বর্তমানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বোয়েসেলের মাধ্যমে দুই ভাবে সাউথ কোরিয়ায় যাওয়া যায়-
১) ভাষা শিখে লটারি পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে
২) ভাষা পারদর্শী হিসাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে
এই দুইটি পদ্ধতিতে কোরিয়া যেতে মোটামুটি যেসব সাধারণ ধাপ অতিক্রম করতে হয় তা হলো -
- সরকারিভাবে কোরিয়া যাওয়ার প্রথম ও প্রধান ধাপ হলো কোরিয়া ভাষার উপর পরীক্ষা। এই পরীক্ষা দুইভাবে হয়, রিডিং ও লিসেনিং।
- এরপর সার্কুলার প্রকাশিত হলে প্রাথমিকভাবে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- এরপর নির্বাচিত হলে বোয়েসেল গিয়ে মূল রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে। এই রেজিষ্ট্রেশন থেকে প্রাপ্ত সিরিয়াল নাম্বার ও এডমিট কার্ড পরবর্তী পরীক্ষার জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
- এর পরের ধাপে UBT(Ubiquitous Based Test) পরীক্ষা হবে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পরের ধাপে এগোতে পারবেন।
- স্কিল টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে।
- সব পরীক্ষায় পাস করার পর PRS (Point Recruiting System) এর মাধ্যমে কোটা সমপরিমাণ লোককে বাছাই করা হবে।
- ফাইনাল সিলেকশনে টিকে যাওয়ার পর নোটিস পেলে আবেদনকারীর পাসপোর্টে উল্লিখিত স্থায়ী ঠিকানায় গিয়ে সিভিল সার্জন কতৃক মেডিকেল চেকআপ করে মেডিকেল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে এবং জব ফর্ম পূরণ করে বোয়েসেলে গিয়ে জমা দিতে হবে।
- সকল কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে নির্বাচিত প্রার্থীকে রোস্টারভুক্ত করা হবে। রোস্টারভুক্ত প্রার্থীদের www.eps.go.kr এই ওয়েবসাইটে গিয়ে একটা আইডি খুলতে হবে। প্রার্থীর সকল তথ্য এই আইডিতে পাওয়া যাবে। এরপর থেকে প্রার্থীকে HRD কোরিয়া কতৃক ভিসা ইস্যুর তারিখ জানার জন্য উক্ত আইডিতে খোজ নিতে হবে।
- ভিসা কনফার্ম হওয়ার পর ট্রেনিং, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ফিঙ্গার প্রিন্ট সহ যাবতীয় কাগজ প্রস্তুত করে কোরিয়ান কোম্পানির মালিক কতৃক প্রদত্ত কন্ট্রাক্ট পেপারে সাইন করতে হবে।
- সবশেষে বোয়েসেল নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করে নির্দিষ্ট দিনে বোয়েসেল গমন করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার নিয়ম
৫.দক্ষিণ কোরিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি
বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা জানার পাশাপাশি আমাদের দক্ষিণ কোরিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি তা জানতে হবে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ায় কোন কাজের চাহিদা বেশি তা নিয়ে আলোচনা করব।
দক্ষিণ কোরিয়ায় মোটামোটি সকল কাজের চাহিদা বেশি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন কাজ হলো -
- ওয়েল্ডিং
- গ্রাইন্ডিং
এই দুইটি কাজে লোকের চাহিদা অনেক বেশি। কেননা দক্ষিণ কোরিয়া জাহাজ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বহুল পরিচিত। জাহাজ তৈরির ক্ষেত্রেই এই দুইটি কাজের জন্য লোকবলের চাহিদা অনেক বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়ায় যেসব কাজের চাহিদা বেশি তা হলো-
- ক্লিনিং
- মেকানিক্যাল
- কেয়ারিং
- কৃষিকাজ
- ফ্যাক্টরি
- পাইপ ফিটিং
- বাগানে কাজ
- প্যাকেজিং
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায়
৬.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
আর্টিকেলের এই অংশে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশৃন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
প্রশ্ন ১: দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি ভিসা এবং লটারি কোথায় পাওয়া যায়?
উত্তর: দক্ষিণ কোরিয়ায় সরকারি ভিসা এবং লটারি বোয়েসেলের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া যায়।
প্রশ্ন ২: বাংলাদেশে কি দক্ষিণ কোরিয়ার এম্বাসি রয়েছে?
উত্তর: বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ায় এম্বাসি রয়েছে, ঠিকানা : ৪ মাদানি এভে, ঢাকা ১২১২.
প্রশ্ন ৩: লটারি ছাড়া কি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায়?
উত্তর: হ্যা। লটারি ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়া যায়।
আরও পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে রাশিয়া যাওয়ার সহজ উপায়
৭.লেখকের মন্তব্য
আজকের আর্টিকেলে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে তা নিয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো তথ্য জানতে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরও তথ্যবহুল লেখা পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech ভিজিট করতে পারেন।
এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের সমস্যায় যা যা করবেন
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url