সারা বছরই ত্বকের যত্নের প্রয়োজন হয়। শীতকালে সাধারণ যত্নের পাশাপাশি বাড়তি যত্নের দরকার।শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকে এবং আবহাওয়া ঠান্ডা থাকার কারণে ত্বক অনেক নাজুক হয়ে থাকে। অনেকে শীতে ত্বকের যত্নের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করতে চায়।আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আলোচনা করব শীতে ত্বকের যত্নে ঘরোয়া উপায় নিয়ে। সুতরাং আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
এছাড়াও আরো আলোচনা করব - শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়, শীতে ত্বকের যত্নে ক্রিম, শীতে ত্বকের শুষ্কতা দূর করার উপায়, শীতে চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায়।
শীতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, এর ফলে ত্বক হয়ে পরে রুক্ষ। চিন্তার কিছু নেই।কিছু ঘরোয়া পদ্ধিতি মেনে চললে খুব সহজেই এসব সমস্যা দূর করা সম্ভব । আসুন তাহলে শীতে ত্বকের যত্নে কতগুলো ঘরোয়া উপায় জেনে নেই :
শসা
আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয়ে থাকে তাহলে শসার রস ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। শশার রসের সাথে মুলতানি মাটি এবং চন্দনের গুঁড়া মিশিয়ে ভালো করে মিশিয়ে হাত পা ও মুখের ত্বকে লাগিয়ে রাখুন।পেস্টটি ১০ মিনিট ত্বকে লাগিয়ে রেখে দিন। শুকিয়ে যাওয়ার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফলবেন।এতে দেখা যাবে যে ত্বকের তৈলাক্ততা অনেক কমে যাবে এবং উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
পেঁপে
পাকা পেঁপে ত্বকের জন্য খুবই ভালো। প্রথমে পাকা পেঁপে সংগ্রহ করে পেস্ট তৈরি করে নিন।মুখের ত্বকে পেস্টটি লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।নির্দিষ্ট সময় পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এক সপ্তাহ দিনে দুইবার ব্যবহার করলে দেখা যাবে যে আপনার ত্বকে রোদে পোড়া দাগ থাকলে দূর হয়ে যাবে।
কলা,মধু ও টমেটো:
ত্বকের যত্নে কলা,মধু ও টমেটো খুব ভালো কাজ করে। এই উপাদন গুলো শীতকালে ত্বকের যত্নে ব্যবহার করতে পারবেন। প্রথমে কলা পেস্ট করে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিন।ত্বকে দেওয়ার পর পেস্টটি যখন শুকিয়ে আসবে তখন কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।কিছুক্ষণ পর দেখা যাবে আপনার ত্বকে উজ্জ্বলতা।
দুধের ক্রিম ও টকদই :
দুধ ও টকদই সব ধরনের ত্বকের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। দুধ এবং টকদই এর ব্যবহার পদ্ধতি খুবই সহজ। প্রথমে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল টক দই এবং ক্রিমে মেশান। মিশ্রণটি চামচ দিয়ে নেড়ে নিন। পেস্টটি ব্যবহার করার আগে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। পনেরো থেকে বিশ মিনিট মিশ্রণটি রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারের করলে খুব ভালো ফলাফল পর্যবেক্ষণ করবেন।
গাজর :
শীতের সময় ত্বক কোমলতা ও আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। এসময় যদি গাজর ব্যবহার করেন তাহলে ত্বকের কোমলতা ফিরে পাবেন। গাজর ব্যবহার করার জন্য প্রথমে গাজরের পেস্ট করে সামান্য চন্দন মেশান। মিশ্রণটি লাগিয়ে ১০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন। দশ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।নিয়মিত ব্যবহারে দ্রুত আপনার ত্বকে কোমলতা ফিরে আসবে।
নরকেল তেল:
ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে নারকেল তেল খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এজন্য নিয়মিত ত্বকে নারকেল তেল লাগান। পানি কুসুম গরম করে পানিতে সুতির রুমাল ভিজিয়ে নিংড়ে নিন।১০ মিনিট রুমালটি মুখের উপর রেখে গোলাপজল দিয়ে নিন।সব ধরনের ত্বকে এটি ভালো কাজ করে।
শীতের সময় যদি অল্প কিছু নিয়ম মেনে চলেন তাহলে ত্বক থাকবে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত।তাহলে চলুন দেখে নেই শীতে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে।
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা:
স্কিন পরিষ্কার করা নারী- পুরুষ উভয়ের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।শীতে ত্বক অনেক শুষ্ক হয়ে যায়, তাই ভালো মানের ক্লিনজার ব্যবহার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে ময়েশ্চারাইজার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ঠিক রাখে। এই রকম পরিস্থিতিতে ত্বকের বাড়তি ক্ষতি এড়াতে এবং ময়েশ্চারাইজিং করতে হাইড্রেটিং ক্লিনজার খুবই ভালো। শীতকালে এমন একটি ময়েশ্চারাইজার নির্বাচন করতে হবে যাতে ভিটামিন- ই এবং হায়ালুরোনিক এসিড বিদ্যমান।এছাড়াও ময়েশ্চারাইজার হিসেবে বাটারমিল্ক, অলিভ অয়েল এবং নারকেল তেল বেছে নিতে পারেন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার:
শীতকালে আবহাওয়া কুয়াশাচ্ছন্ন থাকার কারণে সূর্য দৃশ্যমান হয় না। তবুও নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে। সূর্যের রশ্মিতে ত্বকের অনেক ক্ষতি হতে পারে। এর ফলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা যেমন সানস্পট,পিগমেন্টেশন হতে পারে।
এক্সফোলিয়েট:
ত্বকের বাইরের স্তর থেকে মৃত কোষ অপসারণ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় এক্সফোলিয়েট।এটি ত্বকের ময়লা অপসারণ করে ত্বককে উজ্জ্বল করে। তবে এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে, নয়তো উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। যদি ত্বককে এক্সফোলিয়েট করেন তাহলে অবশ্যই নিরাপদভাবে করা সবচেয়ে ভালো।
বডি বাটার:
ত্বক সুপার ড্রাই হলে ত্বককে অনেক বেশি ময়েশ্চারাইজ করতে হবে।তার জন্য বডি বাটার সবচেয়ে ভালো সল্যুশন। বডি বাটার স্কিনের প্রোটেক্টিভ লেয়ার হিসেবে বডি বাটার ভালো কাজ করে ,এটি দিনভর স্কিনকে সফট এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বকের উপরিভাগের পাশাপাশি ত্বকের ডিপ লেয়ারে গিয়েও কাজ করে।
আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব শীতে ত্বকের যত্নে কোন কোন ক্রিম ব্যবহার করবেন -
লাইকোরিস কোল্ড ক্রিম:
শীতকালে আপনি এই কোল্ড ক্রিমটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। নরমাল বা ড্রাই স্কিনের জন্য এটি খুব ভালো কাজ করে। এই ক্রিমটিতে রয়েছে ভিটামিন ই, অলিভ অয়েল এবং জোজোবা অয়েল। এই ক্রিমটি শীতের রুক্ষতা থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। এতে থাকা ভিটামিন ই ত্বককে উজ্জ্বল এবং ফর্সা করবে।
নারিশিং কোল্ড ক্রিম :
এই কোল্ড ক্রিমটি ত্বক ডাল, খসখসে এবং রুক্ষ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। এই সকল সমস্যার জন্য এই ক্রিমটি অল ইন ওয়ান সলিউশন। এছাড়াও এটি ত্বকের বয়স কমাতে সাহায্য করে।
ফ্যাব ইন্ডিয়া সিল্ক প্রোটিন :
অর্গানিক প্রোডাক্ট মানেই ফ্যাব ইন্ডিয়া সিল্ক প্রোটিন। সেনসিটিভ স্কিনের জন্য এটি খুবই ভালো। আপনার স্কিন যদি শীতকালে খসখসে হয়ে যায় তাহলে এই ক্রিমটি হবে আপনার জন্য পারফেক্ট। এতে থাকে ভিটামিন ই,সেরিসিন এবং অলিভ অয়েল। ক্রিমটিতে বিদ্যমান ভিটামিন ই ত্বককে উজ্জ্বল এবং মসৃণ করবে। এসব বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ক্রিমটি হতে পারে শীতকালে আপনার একমাত্র সঙ্গী।
শীতকালে আদ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বকের উপর বিরাট প্রভাব ফেলে। যাদের ত্বক তৈলাক্ত শীতকালে তেল নিঃসৃত না হলেও মুখ ধোয়ার পরই ত্বকে টান অনুভব করবে। শুষ্কতা দূর করার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠে ভালো মানের একটি ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে হবে। তারপর সঙ্গে সঙ্গে মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে এবং রাতে গ্লিসারিন যুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।শীতকালে গরম পানি দিয়ে গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ অতিরিক্ত গরম পানি ত্বকের আর্দ্রতা নষ্ট করে।গোসল করার পর শরীরে বিভিন্ন ধরনের তেল যেমন নারকেল তেল এবং অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।ত্বক যাতে আর্দ্র না হয় সেজন্য প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি ফলের রস, সবুজ শাকসবজি এবং ডাবের পানি খেতে পারেন। এগুলো ত্বককে শুষ্কতা হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
শীতকালে আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় চুলে অনেক খুশকি হয় এবং চুল গোড়া থেকে আগলা হয়ে যায়।চলুন তাহলে শীতে চুলের যত্নে ঘরোয়া কিছু উপায় জেনে নেই।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট :
এটি শীতকালে চুলের জন্য খুবই কার্যকরী। নারকেল তেল এবং ক্যাস্টর অয়েল একসাথে মিশিয়ে গরম করে সপ্তাহে তিন দিন আলতো করে মাসাজ করুন।
ডিম মধু :
একটি পাত্রে দুটি ডিম এবং তিন চামচ মধু নিয়ে ফেটিয়ে গোসল করার আগে চুলে লাগিয়ে এক দুই ঘন্টা রেখে দিন। তারপর ধুয়ে ভালো কোন ক্ষারবিহীন কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।এই প্যাকটি রুক্ষ এবং তেলতেলে ত্বকের জন্য খুবই কার্যকরী ।
টক দই- মধু :
তিন চামচ মধু এবং দুই চামচ টক দই একসাথে মিশিয়ে একটি প্যাক বানান। তারপর গোসলের আগে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।শুষ্ক চুলের সমস্যায় এটি খুব ভালো কাজ করে।
সুতরাং বলা যায় উপরোক্ত ঘরোয়া উপায় গুলো শীতে চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারেন।
আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে শীতে ত্বকের এবং চুলের যত্নের বিভিন্ন টিপস আলোচনা করেছি। আপনার ত্বককে সুস্থ সুন্দর রাখতে আর্টিকেলে বর্ণিত উপায় গুলো অবলম্বন করতে পারেন। চুল ও ত্বকের যত্ন সম্পর্কিত আপনার মতামত, পরামর্শ কিংবা প্রশ্ন আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে নিয়মিত ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট Th Du Speech। ধন্যবাদ।
এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোসা: কবিতা
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: নরসিংদী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url