OrdinaryITPostAd

সংক্ষেপে আহমদ ছফার 'ওঙ্কার' উপন্যাস ; ওঙ্কার উপন্যাসের বিষয়বস্তু

 

আহমদ ছফা 'ওঙ্কার' উপন্যাসে আইয়ুব শাসনের প্রেক্ষাপট এত সুন্দর কাব্যময় ভাষায় লিখেছেন যে উপন্যাসটা  শেষ করে বিমোহিত হয়েছি। এখানে এক তালুকদার পুত্রের জবানিতে আহমদ ছফা উপন্যাস বিবৃত করেছেন। 

যুক্তফ্রন্টের পরবর্তী পরিবর্তিত রাজনীতির অভিঘাতে জমিদারি প্রথা দূরীভূত হলে তালুকদারির প্রতিভূ  প্রতাপ আইনে প্রশমিত হয়ে যায়। এমন সংকটকালীন জবুথবু অবস্থায় তালুকদারের কাছের মানুষসহ প্রজারা দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে। 
তালুকদার পুত্র তখন সবে বিএ পরীক্ষা সমাপ্ত করেছে। এমন অবস্থায় তালুকদারের বিশ্বস্ত মোক্তার বা উকিল তার দুর্বলতার সুযোগের সৎ ব্যবহার করে নিবুনিবু সামান্য সম্পত্তির অধিকারী হয়ে ওঠে।  তালুকদার পুত্র এমন দিশেহারা অবস্থার দিক নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়ে উঠলে স্বয়ং মোক্তার সাহেব তার পরিবারের কাছে তারা বোবা মেয়ের সঙ্গে তালুকদার পুত্রের বিয়ে ও পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের প্রস্তাব দিলে সাপুড়ের কাছে সাপের অসহায় আত্মসমর্পণের ন্যায় সে নিজেকে সঁপে দেয়। 
এদিকে মোক্তার তার সূক্ষ্ম চালাকি ও ধূর্ততায় আইয়ুব খানের ক্ষমতার ছোটখাটো এক উৎসে পরিণত হয়। তার ছিটেফোঁটা তার জামাই তালুকদার পুত্রও পেতে থাকে। বোবা মেয়ের সাথে বিয়ের এক পর্যায়ে সে বড়ই রিক্ততা অনুভব করে। বন্ধুদের স্ত্রীর সংস্পর্শে এসে সে নিজের স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চায় ও গান শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। 
এক পর্যায়ে সে তার ছোট বোনকে গান শেখানোর জন্য হারমোনিয়াম ক্রয় করে দেয় এবং স্ত্রীর অপূর্ণতা বোনের মাধ্যমে পাওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। তার বোন অসাধারণ গান শিখে ফেলে এবং নিয়মিত গান চর্চা করতে থাকে। 
তালুকদার পুত্র স্ত্রী বিমুখ হয়ে বোনের সংস্পর্শে বেশ আনন্দ পায়। এ অবস্থা অবলোকন করে বোবা স্ত্রী। এক রাতে অফিস থেকে ফিরতে দেরী হয়ে যায়, সে ঘরে ফিরে এসে দেখে তার বোন রুম বন্ধ করে গানের চর্চা করছে, এদিকে স্ত্রী দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কাঁপছে এবং গো গো শব্দ করছে। এ অবস্থা অবলোকন করে, প্রথমে সে ভাবে তার স্ত্রী কি অসুস্থ হয়ে পড়েছে? আরও কিছুক্ষণ ভালোভাবে নিরীক্ষণ করে বুঝতে সক্ষম হয় তার স্ত্রী গানের তালে তালে নিজেও গান গাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু শারীরিক অযোগ্যতায় সক্ষম না হয়ে গো গো শব্দ বের হচ্ছে শুধু। কিন্তু এ অক্ষমতা যেন দেহের প্রতিটি অনু-পরমানু মেনে নিতে পারছে না ফলে শরীর কেঁপে ঘর্মাক্ত অবস্থার সৃজন হয়েছে। 
এ প্রচেষ্টা দেখে নিশ্চুপে নিজের কক্ষে চলে যায় এবং বোবা স্ত্রীর প্রতি তার অসীম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জন্মে। রাতে স্ত্রীকে ভীষণ আদর করে যা বোবা মেয়েটি সৎ মায়ের এবং অদ্যাবধি বিয়ের সংসারে পায়নি। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে সে দেখে তার স্ত্রী ভীষণ কান্না করছে, সুখের কান্না। 
এরপর দেশ জুড়ে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন দানা বেঁধে উঠলে দেশের প্রতিটি শহরে মিছিলের বন্যা নামে। মিছিলের শব্দবোমা তার নিজের বড় অপছন্দের হলেও তার স্ত্রী ভীষণ ভালোবাসে মিছিলের অনুকরণ করতে থাকে ফলে গো গো শব্দ ও কাঁপতে থাকে। একদিন শোনা যায় আসাদ নামে কেউ শহিদ হয়েছে।ফলে আন্দোলন রুপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।
একদিন রাস্তা দিয়ে মিছিল যাচ্ছিলো এমন সময় জানালার কাছে গিয়ে স্বভাবতই মিছিলের অনুকরণ করার চেষ্টা করতে এবং জীবনের প্রথম বাংলা কথাটি উচ্চারণে সক্ষম হয় কিন্তু তাৎক্ষণিক গলা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে লুটে পড়ে তার স্ত্রী। তখন সে ভাবতে থাকে আসাদের রক্ত বেশি লাল নাকি তার স্ত্রীর।
এখানে তালুকদার পুত্র - পাকিস্তানের দালাল
স্ত্রী- বাংলার দামাল ছেলে।
কেননা আপাতদৃষ্টিতে আমাদের ছেলেরা আন্দোলন করে পাকিস্তানের ভীত কাঁপিয়ে দিতে পারবে এমনটা কেউই আশা করেনি। কিন্তু অক্ষমতা সত্ত্বেও আন্দোলন করে বাংলাদেশ নামক শব্দটিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে কিন্তু শহীদ হতে হয়েছে লাখো জনতাকে। যা তালুকদার  পুত্রের স্ত্রীর 'বাংলা' শব্দের উচ্চারণ ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়াকে একই সুতায় গাঁথতে চেয়েছেন আহমদ ছফা। 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও লেখক
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। 
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url