The DU Speech
https://www.duspeech.com/2022/12/victory-day-history.html
১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
১৯৭১ সালে বাংলার ইতিহাসে বর্ণিত দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত ভাবে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় লাভ করে। তখন থেকেই ১৬ই ডিসেম্বর কে মহান বিজয় দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।তাই আমরা অনেকেই ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস এ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী।বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস সম্পর্কে সকল তথ্য জানা সম্ভব। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস সে সম্পর্কে । তাই ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে সম্পূর্ণ পড়ুন।
আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)
১.স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা|১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ এবং সেই সাথে অসংখ্য মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক দেশটি পাই। পৃথিবীর ইতিহাসে এটি যেমন জায়গা করে নিয়েছে ঠিক তেমনি বিশ্বের মানচিত্রে আলাদা একটি দেশ ও জাতি হিসেবে নিজেদের স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। ১৯৭১ সালে সংঘটিত তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র যে সংগ্রাম তা ইতিহাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হিসেবে বর্ণিত।আর এর মাধ্যমেই স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা তখনই হয় যখন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
২.১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস|১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
বাংলাদেশে প্রতি বছর বিশেষ দিন হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর কে বিজয় দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদ্যাপন করা হয় এই দিনটিকে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি থেকে।এছাড়াও ১৬ ডিসেম্বর দিনটি কে সরকারীভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রায় ৯১,৬৩৪ পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্য , বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে একত্রে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। ফলশ্রতিতে বাংলাদেশ নামে পৃথিবীর বুকে একটু নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা এই দিনটিকে পালন করে থাকে।
বাংলাদেশে প্রতি বছর এই দিবসটি বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে পালিত হয়ে থাকে। ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমেই ১৬ ডিসেম্বর ভোরে দিবসের সূচনা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ,বাংলাদেশ নৌবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সদস্যরা জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত সামরিক কুচকাওয়াজে যোগ দেয়।দেশের প্রধান রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী কুচকাওয়াজের অংশ হিসেবে তারা সালাম গ্রহণ করেন।এইদিনে প্রচুরসংখ্যক মানুষ জড়ো হয়ে থাকে কুচকাওয়াজ দেখার জন্য ।
এছাড়াও ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী,বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকে।
৩. বিজয় দিবসের বিশেষ ঘটনা সমূহ | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
১৯৭১ সাল : ১৯৭১ এ,স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
১৯৭২ সাল : এ বছর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এর প্রথম সংবিধান প্রকাশিত করা হয়।
১৯৭২ সাল : এবং ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গ্যাজেটের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা বিশেষ অবদান রেখেছে তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব ঘোষণা করা হয়।
১৯৯৬ সাল : ১৯৯৬ সালে ২৫ বছর স্বাধীনতা পূর্তি উদযাপন করা হয়।
২০১৩ সাল : এ বছর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার সবুজ ও লাল ব্লক নিয়ে একত্রে জড়ো হয়ে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড করে থাকে।
২০২১ সাল : এ বছর বাংলা দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়।
৪. পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ |১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
১৯৭১ সালে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে পাক বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি পাকিস্তান এর পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন । জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা যৌথবাহিনীর প্রধান তার কাছে আত্মসমর্পণ করেন পাক বাহিনী। এই সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের আবদুল করিম খোন্দকার যিনি মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন ছিলেন।কিন্তু আত্মসমর্পণের সময় মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী তখন উপস্থিত ছিলেন না।
৫. স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রাম সমূহ | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির ইতিহাসে একজন অবিসংবাদিত নেতা যিনি দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাঙালি জাতিকে মুক্তির আকাঙ্খায় উজ্জীবিত করে।এবং মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই মহান স্বাধীনতা ও মুক্তযুদ্ধের সংগ্রাম সমূহের মধ্যে রয়েছে
৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন
৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ
৫৬-এর সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন
৫৮-এর মার্শাল ’ল বিরোধী আন্দোলন
৬২-এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন
৬৬-এর বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফার আন্দোলন
৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা
৬৯-এর রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান
৬-দফা ভিত্তিক
৭০-এর ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে অবধারিত করে তোলে।
এসব আন্দোলনের সকল নেতৃত্ব দেন অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
৬. বিজয় দিবসের তাৎপর্য | ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস
বাঙালির ইতিহাসে বিজয় দিবস এক মহান তাৎপর্যপূর্ণ দিন। দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধের পর এ দিনটিতে অবশেষে বাঙালি তার পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্তি লাভ করে। ত্রিশ লক্ষ জীবনের আত্মত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই মহান স্বাধীনতা। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় ও অসংখ্য মানুষের অশ্রু তে পাওয়া এ স্বাধীনতা আমাদের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। বাঙালিরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা বয়ে চলছে তাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পতাকা ও সেই সাথে গাইছে বিজয়ের গৌরবগাথা। তাই বাঙালির জন্য বিজয় দিবস এর গুরুত্ব অপরিসীম।
১৬ ডিসেম্বর প্রতিবছর এই দিনটি পালনের মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযযাদ্ধাদের কথা, বীর শহীদদের কথা পুরো বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয় ।
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের সাথে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস এ সম্পর্কে বা যেকোনো বিষয়ে আপনাদের কোনো অভিযোগ বা মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠন The DU Speech এর সাথেই থাকবেন। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ এর ইতিহাস এ সম্পর্কে হোক বা যেকোনো বিষয়ে আমরা আপনাদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবো।
লেখক: খাদিজা খা
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জেলা: শরিয়তপুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন