পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা
"যুদ্ধ জীবন,যুদ্ধ'ই সর্বজনীন " হিটলারের এমন উক্তির প্রভাব আমরা বিশ্বের প্রতিটি দেশে দেখতে পাই।নানা কারণে তাঁরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়,যার ফলাফল কখনও কল্যাণ বয়ে আনে না।তবুও মানুষ যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চায়।পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ ও বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ, আর বাঙ্গালি হিসেবে অনেকে তা জানতে আগ্রহী। আজ আমাদের আর্টিকেলটি হল পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ। পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
আর্টিকেলের সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)
- পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধের স্থায়ীত্ব
- পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধের কারণ
- পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধ চলাকালীন দেশের অবস্থা
- পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের ফলাফল
- পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি
- শান্তি চুক্তির ধারা সমূহ
- পার্বত্য চট্রগ্রামের শান্তি চুক্তির ভূমিকা
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন -উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
আরও পড়ুনঃ আমেরিকা ফ্যামিলি ভিসা
1.পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের স্থায়ীত্ব |পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধ, বাংলাদেশের পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকায় সৃষ্ট একটি রাজনৈতিক সংঘাত।বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমতি ও তাঁর সশস্ত্র উগ্র অঙ্গ সংগঠন শান্তি বাহিনীর মধ্যে এ দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।পার্বত্য চট্রগ্রামের বিভিন্ন উপজাতিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার আদায়ের প্রেক্ষিতে এ সংঘাত ঘটে।মানুষ সামাজিক জীব হিসেবে বেচেঁ থাকার জন্য কিছু অধিকার ভোগ করার ন্যায্য অধিকার রাখে।যখনই সে তার প্রাপ্ত অধিকার ভোগ করতে ব্যর্থ হবে,তখনই সে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।এটাই মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি।তারই ফল হিসেবে ,১৯৭৭ সালে সামরিক শাসনামলে সামরিক সরকারের সাথে শান্তি বাহিনী প্রত্যক্ষভাবে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে নিজেদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে।।এ যুদ্ধের স্থায়ীত্ব ছিলো দীর্ঘ ২০ বছর।দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধ, ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অবসান হয় এবং উপজাতিদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার প্রদান করা হয় লিখিত অর্থাৎ সাংবিধানিক ভাবে।
আরও পড়ুনঃ হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল
2.পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের কারণ|পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধের পিছে নানা কারণ রয়েছে।তার মধ্যে কিছু কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
পাকিস্তান শাসনামলে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে এ সংঘাতের সূচনালগ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়।১৯৬২ সালে কাপ্তাই বাঁধ অবকাঠামো নির্মাণের ফলে লক্ষাধিক লোক স্থানচ্যুত হন।তাদের স্থানচ্যুতিতে তৎকালীন সরকার কোন গুরুত্ব দেয়নি ও হাজারো পরিবার ভারতে চলে যায়।বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর পার্বত্য চট্রগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্বায়ত্তশাসন ও ঐ অঞ্চলের জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেবার জন্য দাবী উত্থাপন করেন। লারমা ও অন্যান্য পার্বত্য আদিবাসীর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের সংবিধান খসড়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন।তাদের মতে ঐ সংবিধানে নৃজাতিগোষ্ঠীকে স্বীকৃতিসহ অমুসলিম ও অবাঙালীদের সংস্কৃতিে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি।সরকারের নীতি কেবল বাঙালি সংস্কৃতি ও বাংলা ভাষাকে ঘিরে।এছাড়া ও বাংলাদেশের সকল নাগরিককে বাঙালি হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পার্বত্য চট্রগ্রামের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা'র আলোচনান্তে জানানো হয় যে,পার্বত্য নৃজাতিগোষ্ঠী বাঙালি হিসেবে পরিচিতি লাভে একমত পোষণ করেছেন।এছাড়াও শেখ মুজিব জানিয়েছেন যে,পার্বত্য এলাকায় মুসলিম বাঙালিদের জোরপূর্বক আবাসনের ফলে স্থানীয় বৌদ্ধ ও সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠী মেনে নিতে পারছে না।
উপজাতিদের মতে,বাংলাদেশ সংবিধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত উপজাতিদের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যায়।তাই পার্বত্য চট্রগ্রামের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চাকমা রাজনীতিবিদ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলা হয় ১৯৭৩ সালে, স্বায়ত্তশাসন ও ঐ অঞ্চলের জনগণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ।যার নাম দেওয়া হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)।এই সংগঠনের সশস্ত্র শাখা হলো শান্তি বাহিনি।এ সমিতিতে স্থানীয় আদিবাসী ও উপজাতীয় লোকগণ সংশ্লিষ্ট ছিলেন।পিসিজেএসএসের সশস্ত্র সংগঠন শান্তি বাহিনী সরকারি নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়।শেখ মুজিবের জরুরি শাসনামলে এ সংকটের সূচনা ঘটে।১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যানবাহনে প্রথমারের মতো আক্রমণ করে শান্তি বাহিনী। ভারত সরকার সীমান্তে ঘাঁটি গড়তে শান্তি বাহিনীকে সহায়তা করে।
বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তাদের সংগঠনের উৎপত্তি ঘটলেও, তখন তারা ভয়ংকর রূপ ধারণ করেনি কারণ বঙ্গবন্ধু তাদের ন্যায্য অধিকার প্রদান করার আশ্বাস দিয়েছিলেন।১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্র বদলে গেলো।সামরিক সরকার দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করলো,যা জনকল্যাণমুখী সরকার ছিল না। সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছিল। এমতাবস্থায় পাহাড়ি অঞ্চলের অবস্থা ও ভালো ছিল না।তাই তৎকালীন সরকার অর্থাৎ সামরিক সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগঠনের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।১৯৭৭ সালে সামরিক সরকারের যানবাহনে প্রথমবারের মতো আক্রমণ করে শান্তি বাহিনী, যা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। মূলত এ যুদ্ধের অন্যতম কারণ হলো,পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতিরা তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে লিপ্ত হয়।
আরও পড়ুনঃ ট্রেড লাইসেন্স ফি
3.পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ চলাকালীন দেশের অবস্থা |পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধ
যুদ্ধ চলাকালীন যেকোনো দেশের অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।পার্বত্য চট্রগ্রাম ও তার ব্যতিক্রম নয়।১৯৭৭ সালে এ দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে।যুদ্ধের কারণে তৎকালীন সময়ে দেশের তথা পার্বত্য অঞ্চলের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়।এলাকার মানুষের জীবন ঝুকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। পার্বত্য অঞ্চলের শিশু ও নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে কারণ তাদের পরিবারের সমর্থ পুরুষ ব্যক্তি যুদ্ধে যোগদান করেছিল অধিকার আদায় করার লক্ষে।যেহেতু পরিবারের সমর্থ ব্যক্তি যুদ্ধে গিয়েছে,সেহেতু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক ভাবেই নিম্নমানের হবে।দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করায়, দ্রব্যমূল্যের দামও ব্যাপক বৃদ্ধি পায়।যা তাদের জীবনে খারাপ প্রভাব ফেলে।
যেহেতু তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে,তাই সরকার ও তাদের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলে।ফলশ্রুতিতে অনেক পাহাড়ি সদস্য প্রতিপক্ষের হাতে মৃত্যবরণ করে,যা তার পুরো পরিবারকে পথে বসাতে ভূমিকা রাখে।যুদ্ধ চলাকালীন উপজাতিদের শিক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ রাখা হয়।যুদ্ধ চলাকালীন সার্বিক দিক বিবেচনায় পার্বত্য চট্রগ্রামের অবস্থা ছিলো ভয়াবহ।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে বিকাশ পেমেন্ট ২০২২
4.পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের ফলাফল |পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ
যুদ্ধ সব সময়ই ভয়াবহ হয়।যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো কল্যাণ বা শান্তির বার্তা আসে না,বরং সাধারণ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।।পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের ফলাফল ও এর ব্যতিক্রম নয়।যেহেতু এ যুদ্ধের স্থায়ীত্ব ছিল ২০ বছর,সেহেতু এ যুদ্ধের ফলাফল আরও ভয়াবহ। এ যুদ্ধে উভয় দলেরই ( সামরিক সরকার ও শান্তি বাহিনী) ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরকারি তথ্য মোতাবেক, এ যুদ্ধে সামরিক বাহিনীর ৪৪ জন সেনা সদস্য নিহত হয়।অপরদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯৮০০ জন সদস্য সম্মুখ যুদ্ধে নিহত হয়,আহত হয় ১৫,৪৩২ এবং গ্রেফতার হয় ১১, ৮৯২ জন সদস্য।উপরের তথ্য মতে দেখা যায়,সরকারি সদস্যদের তুলনায় ১০ গুন বেশি পাহাড়ি সদস্য নিহত হয় কারণ সাধারণত সরকারি সদস্যরা প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত থাকে আর পাহাড়ি সদস্যরা নিজেদের মতো করে যুদ্ধ কৌশল তৈরি করে।
১৯৯৭ সালে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে শান্তি চুক্তির মাধ্যমে।যার মাধ্যমে তাদের ন্যায্য অধিকার সাংবিধানিকভাবে প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুনঃ জাপানে স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
5.পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি|পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ
"পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি (ইংরেজিঃChittagong Hill Tracts Peace Accord) যা পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি নামেও পরিচিত। এটি একটি রাজনৈতিক চুক্তি এবং শান্তি চুক্তি যা বাংলাদেশ সরকার এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি (PCJSS) এর মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ রা ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয়।চুক্তিটি পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলের জনগণ ও উপজাতিদের অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে এবং শান্তিবাহিনী ও সরকারের মধ্যে কয়েক দশক ধরে চলা বিদ্রোহের অবসান ঘটায় বলে মনে হয়।
১৯৯১ সালে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পর শান্তি আলোচনা শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নতুন দফা আলোচনা শুরু হয়। শান্তি চুক্তি চূড়ান্ত হয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে স্বাক্ষরিত হয়।চুক্তিটি পার্বত্য চট্রগ্রামের উপজাতিদের স্বতন্ত্র জাতিসত্তা এবং বিশেষ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয় এবং পার্বত্য অঞ্চলের তিনটি জেলার স্থানীয় সরকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি আঞ্চলিক পরিষদ প্রতিষ্ঠা করে।পরিষদটি চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা, মুরাং এবং তঞ্চঙ্গ্যা উপজাতির পুরুষ ও মহিলাদের দ্বারা গঠিত হবে;প্রতিনিধিরা পার্বত্য অঞ্চলের জেলা পরিষদ দ্বারা নির্বাচিত হবেন।পাঁচ বছরের মেয়াদের জন্য নির্বাচিত,কাউন্সিলের আইন-শৃঙ্খলা,সামাজিক ন্যায়বিচার এবং উপজাতীয় আইন বজায় রাখার,সাধারণ প্রশাসনের তত্ত্বাবধান,দুর্যোগ ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনার সমন্বয়, ভারী শিল্পের জন্য লাইসেন্স প্রদান এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পের তত্ত্বাবধানের কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব থাকবে।কেন্দ্রীয় সরকারকে পার্বত্য অঞ্চল সংক্রান্ত সমস্ত বিষয়ে আঞ্চলিক পরিষদের সাথে পরামর্শ করতে হবে।এ চুক্তিতে পার্বত্য অঞ্চল সম্পর্কিত বিষয়গুলি পরিচালনার জন্য উপজাতীয় জাতিসত্তার একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্থাপনেরও বিধান রয়েছে।চুক্তিতে বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের জমি ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনা এবং পার্বত্য অঞ্চলে একটি বিস্তৃত ভূমি জরিপ অনুষ্ঠিত হবে।
6.শান্তি চুক্তির ধারা সমূহ|পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধ
পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে সম্পাদিত হয় শান্তি চুক্তি। শান্তি চুক্তির ধারা সমূহ উল্লেখ করা হল নিচেঃ
"
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্রগ্রাম এলাকার আদিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নিয়ে বর্ণিত চার খন্ড(ক,খ,গ,ঘ) সম্বলিত চুক্তিতে উপনীত হইলেন;
১.উভয়পক্ষ পার্বত্য চট্রগ্রাম অঞ্চলকে উপজাতি অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করিয়া এ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ এবং এ অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়ন অর্জন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করিয়াছেন;
২.উভয়পক্ষ এ চুক্তির আওতায় যথাশিগ্রই ইহার বিভিন্ন ধারায় বিবৃত ঐক্যমত্য ও পালনীয় দায়িত্ব অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আইন,বিধানাবলী,রীতিসমূহ প্রণয়ন,পরিবর্তন, সংশোধন ও সংযোজন আইন মোতাবেক করা হইবে বলিয়া স্থিরীকৃত করিয়াছেন;
৩.এ চুক্তির বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ করিবার লক্ষ্যে নিম্নে বর্ণিত সদস্য সমন্বয়ে একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হইবে;
ক) প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক মনোনীত একজন সদস্যঃ আহ্বায়ক
খ) এই চুক্তির আওতায় গঠিত টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যানঃ সদস্য
গ)পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতিঃ সদস্য
৪.এই চুক্তি উভয়পক্ষের তরফ হইতে সম্পাদিত ও সহি করার তারিখ হইতে বলবৎ হইবে।বলবৎ হইবার তারিখ হইতে এই চুক্তি অনুযায়ী উভয় পক্ষ হইতে সম্পাদনীয় সকল পদক্ষেপ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এই চুক্তি বলবৎ থাকিবে।খ.পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ/পার্বত্য জেলা পরিষদ
উভয়পক্ষ এই চুক্তি বলবৎ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন,১৯৮৯( রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন,১৯৮৯,বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন,১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন,১৯৮৯) এবং -এর বিভিন্ন ধারাসমূহের নিম্নে বর্ণিত পরিবর্তন,সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার বিষয়ে ও লক্ষ্যে একমত হইয়াছেনঃ
১.পরিষদের আইনে বিভিন্ন ধারায় ব্যবহৃত 'উপজাতি' শব্দটি বলবৎ থাকিবে।
২.পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ' এর নাম সংশোধন করিয়া তদপরিবর্তে এই পরিষদ ' পার্বত্য জেলা পরিষদ' নামে অভিহিত হইবে।
৩.'অ-উপজাতীয় স্থায়ী বাসিন্দা 'বলিতে যিনি উপজাতীয় নহেন এবং যাহার পার্বত্য জেলায় বৈধ জয়গা-জমি আছে এবং যিনি পার্বত্য জেলার সুনির্দিষ্ট ঠিকানায় সাধারণতঃবসবাস করেন তাহাকে বুঝাইবে।
৪.ক)প্রতিটি পার্বত্য জেলা পরিষদে মহিলাদের জন্যে তিনটি আসন থাকিবে।এসব আসনের এক-তৃতীয়াংশ অ-উপজাতীয়দের জন্যে হইবে।
খ) ৪ নম্বর ধারায় উপ-ধারা ১,২,৩ ও ৪ মূল আইন মোতাবেক বলবৎ থাকিবে।
গ) ৪ নম্বর ধারার উপ-ধারা(৫)- এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত 'ডেপুটি কমিশনার ' এবং 'ডেপুটি কমিশনারের'শব্দগুলি পরিবর্তে যথাক্রমে 'সার্কেল চীফ' এবং 'সার্কেল চীফের 'শব্দগুলি প্রতিস্থাপিত হইবে।
ঘ) ৪ নম্বর ধারায় নিম্নোক্ত উপ-ধারা সংযোজন করা হইবে 'কোন ব্যক্তি অ-উপজাতীয় কিনা এবং হইলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তাহা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান/ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান/পৌর সভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের চীফ স্থির করিবেন এবং এতদসম্পর্কে সার্কেল চীফের নিকট হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যক্তি অ- উপজাতীয় হিসেবে কোন অ-উপজাতীয় সদস্য পদের জন্যে পার্থী হইতে পারিবেন না।
৫. ৭ নম্বর ধারায় বর্ণিত আছে যে,চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য পদে নির্বাচিত ব্যক্তি তাহার কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে চট্রগ্রাম বিভাগের কমিশনারের সম্মুখে শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিবেন। ইহা সংশোধন করিয়া 'চট্রগ্রাম বিভাগের কমিশনার '-এর পরিবর্তে ' হাই কোর্ট ডিভিশনের কোন বিচারপতি কর্তৃক সদস্যরা শপথ গ্রহণ বা ঘোষণা করিবেন।
৬. ৮ নম্বর ধারার চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত 'চট্রগ্রাম বিভাগের কমিশনারের নিকট' শব্দগুলির পরিবর্তে 'নির্বাচন বিধি অনুসারে ' শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
৭. ১০ নম্বর ধারার দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত 'তিন বৎসর' শব্দগুলির পরিবর্তে 'পাঁচ বৎসর' শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
৮. ১৪ নম্বর ধারায় চেয়ারম্যানের পদ কোন কারণে শূন্য হইলে বা তাহার অনুপস্থিতিতে পরিষদের অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত একজন উপজাতীয় সদস্য সভাপতিত্ব করিবেন এবং অন্যান্য দায়িত্ব পালন করিবেন বলিয়া বিধান থাকিবে।
৯. 'বিদ্যমান ১৭নং ধারা নিম্নে উল্লেখিত বাক্যগুলি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হইবেঃআইনের আওতায় কোন ব্যক্তি ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইতে পারিবেন, যদি তিনও-(১)বাংলাদেশের নাগরিক হন; (২) তাহার বয়স ১৮ বৎসরের কম না হয়; (৩)কোন উপযুক্ত আদালত তাহাকে মানসিকভাবে অসুস্থ ঘোষণা না করিয়া থাকেন। (৪) তিনি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হন।
১০. ২০ নম্বর ধারার (২) উপ-ধারায় ' নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণ 'শব্দগুলি স্বতন্ত্রভাবে সংযোজন করা হইবে।
১১. ২৫ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) এ পরিষদের সকল সভায় চেয়ারম্যান এবং তাহার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য সদস্যগণ কর্তৃক নির্বাচিত একজন উপজাতীয় সদস্য সভাপতিত্ব করিবেন বলিয়া বিধান থাকিবে।
১২.যেহেতু খাগড়াছড়ি জেলার সমস্ত অঞ্চল মং সার্কেলের অন্তর্ভুক্ত নহে,সেহেতু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার আইনে ২৬ নম্বর ধারায় বর্ণিত 'খাগড়াছড়ি মং চীফ'- এর পরিবর্তে ' মং সার্কেলের চীফ এবং চাকমা সার্কেলের চীফ' শব্দগুলি প্রতিস্থাপন করা হইবে।অনুরূপভাবে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সভায় বোমাং সার্কেলের চীফেরও উপস্থিত থাকার সুযোগ রাখা হইবে।একইভাবে বান্দরবান জেলা পরিষদের সভায় বোমাং সার্কেলের চীফ ইচ্ছা করিলে বা আমন্ত্রিত হইলে পরিষদের সভায় যোগদান করিতে পারিবেন বলিয়া বিধান রাখা হইবে।
১৩. এ পরিষদে সরকারের উপ-সচিব সমতুল্য একজন মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা সচিব হিসাবে থাকিবেন এবং এই পদে উপজাতীয় কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার প্রদান করা হইবে বলিয়া বিধান থাকিবে।
১৪. এ পরিষদের কার্যাদি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের নিমিত্ত পরিষদ সরকারের অনুমোদনক্রমে,বিভিন্ন শ্রেণির কর্মকর্ত ও কর্মচারির পদ সৃষ্টি করিতে পারিবে বলিয়া বিধান থাকিবে।(খ) ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে প্রণয়ন করা হইবেঃ 'পরিষদ প্রবিধান অনুযায়ী তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর পদে কর্মচারী নিয়োগ করিতে পারিবেন এবং তাহাদেরকে বদলি ও সাময়িক বরখাস্ত,অপসারণ বা অন্য কোন প্রকার শাস্তি প্রদান করিতে পারিবে।তবে শর্ত থাকে যে,উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার বজায় রাখিতে হইবে'।
১৫. ২৯ নম্বর ধারার উপ-ধারা(৩) এ বিধি অনুযায়ী হইবে বলিয়া উল্লেখ থাকিবে।
১৬. ২০ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) এর তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ' অথবা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অন্য কোন প্রকার' শব্দগুলি বিলুপ্ত করা হইবে।
১৯. ৩০ নম্বর ধারার উপ-ধারা সংযোজন করা হইবেঃ পরিষদ সরকার হইতে প্রাপ্ত অর্থে হস্তান্তরিত বিষয়সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করিতে পারিবে,এবং জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিষদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় /বিভাগ/প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করিবে।
১৭. ২৬(ক) ধারার (১) উপ- ধারার চতুর্থতঃ এর মূল আইন বলবৎ থাকিবে।
(খ) ২৬ নম্বর ধারার (২) উপ- ধারা তে বিধি অনুযায়ী হইবে বলিয়া উল্লেখিত হইবে।
১৮.২৯ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৩) বাতিল করা হইবে এবং উপ-ধারা (৪) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই উপ-ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ কোন অর্থ বৎসর শেষ হইবার পূর্বে যে কোন সময় সেই অর্থ-বৎসরের জন্যে, প্রয়োজন হইলে,একটি বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করা যাইবে।
২০.২৮ ধারার উপ-ধারা (২) এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ' সরকার ' শব্দটির পরিবর্তে 'পরিষদ ' শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
২১. ২৫,২৬,২৭ নম্বর ধারাগুলি বাতিল করিয়া তদপরিবর্তে নিম্নোক্ত ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃএই আইনের উদ্দেশ্যের সহিত পরিষদের কার্যকলাপের সামঞ্জস্য সাধনের নিশ্চয়তা বিধানকল্পে সরকার প্রয়োজনে পরিষদকে পরামর্শ প্রদান বা অনুশাসন করিতে পারিবে।সরকার যদি নিশ্চিতভাবে এইরূপ প্রমাণ লাভ করিয়া থাকে যে,পরিষদ বা পরিষদের পক্ষে কৃত বা প্রস্তাবিত কোন কাজ- কর্ম আইনের সহিত সংগতিপূর্ণ নহে অথবা জনস্বার্থের পরিপন্থী তাহা হইলে সরকার লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরিষদের নিকট হইতে তথ্য ও ব্যাখ্যা চাহিতে পারিবে এবং পরামর্শ বা নির্দেশ প্রদান করিতে পারিবে।
২২.২৭ ধারার (৩) উপ-ধারার 'বাতিল থাকায় মেয়াদ শেষ হইলে ' শব্দগুলি বাতিল করিয়া তদপরিবর্তে 'এই আইন' শব্দটির পূর্বে 'পরিষদ বাতিল হইলে নব্বই দিনের মধ্যে' শব্দগুলি সন্নিবেশ করা হইবে।
২৩. ২৮ নম্বর ধারার তৃতীয় ও চতুর্থ পংক্তিতে অবস্থিত 'সরকারের 'শব্দটির পরিবর্তে ' মন্ত্রণালয়ের' শব্দটি প্রতিস্থাপন করা হইবে।
২৪. ২০ নম্বর ধারার উপ-ধারা (২) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই উপ- ধারাটি প্রণয়ন করা হইবেঃআপাততঃবলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ও তদনিম্ন স্তরের সকল সদস্য প্রবিধান বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং পরিষদ তাহাদের বদলি ও প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে তাহাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।তবে শর্ত থাকে যে,উক্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে জেলার উপজাতীয়দের অগ্রাধিককার বজায় রাখিতে হইবে। (খ) ২৮ নম্বর ধারার উপ-ধারা (৩) এর দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত আপাতাতঃ বলবৎ অন্য সকল আইনের বিধান সাপেক্ষে শব্দগুলি বাতিল করিয়া তদপরিবর্তে ' যথা আইন ও বিধি অনুযায়ী ' শব্দগুলো প্রতিস্থাপন করা হইবে।
২৫.২৪ নম্বর ধারার তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ' সহায়তা দান করা' শব্দগুলি বলবৎ থাকিবে।
২৬. ২৭ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারাটি প্রণয়ন করা হইবেঃ
ক) আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, পার্বত্য জেলার এলাকাধীন বন্দোবস্তযোগ্য খাসজমিসহ কোন জায়গা- জমি পরিষদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে ইজারা প্রদানসহ বন্দোবস্ত, ক্রয়,বিক্রয় ও হস্তান্তর করা যাইবে না।তবে শর্ত থাকে যে,রক্ষিত বনাঞ্চল, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা,বেতবুনিয়া ভূ- উপগ্রহ এলাকা,রাষ্ট্রীয় শিল্প কারখানা ও সরকারের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হইবে না।
খ)আপাততঃবলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন,পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণ ও আওতাধীন কোন প্রকারের জমি,পাাহড় ও বনাঞ্চল পরিষদের সাথে আলোচনা ও ইহার সম্মতি ব্যতিরেকে সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর করা যাইবে না।
গ) পরিষদ হেডম্যান, চেইনম্যান,আমিন, সার্ভেয়ার,কানুনগো ও সহকারী কমিশনারদের কার্যাদি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিবে।
ঘ) কাপ্তাই হ্রদের জলে ভাষা জমি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমির ৃূল মালিকদেরকে বন্দোবস্ত দেওয়া হইবে।
২৭. ২৯ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারা প্রণয়ন করা হইবে।আপততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন যাহা কিছুই থাকুক না কেন,জেলার ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ের দায়িত্ব পরিষদের হস্তে ন্যস্ত থাকিবে এবং জেলায় আদায়কৃত উক্ত কর পরিষদের তহবিলে থাকিবে।
২৮. ২৯ নম্বর ধারা সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ পরিষদে এবং সরকারি কতৃপক্ষের কার্যাবলীর মধ্যে সমন্বয়ের প্রয়োজন দেখা দিলে সরকার বা পরিষদ নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করিবে এবং পরিষদ ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে কাজের সমন্বয়ে বিধান করা যাইবে।
২৯. ৩০ নম্বর ধারার উপ-ধারা (১) সংশোধন করিয়া নিম্নোক্তভাবে এই উপ-ধারা প্রণয়ন করা হইবেঃ এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার,সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা পরিষদের সাথে আলোচনাচক্রমে বিধি প্রণয়ন করিতে পারিবে এবং কোন বিধি প্রণীত হওয়ার পরেও উক্ত বিধি পুনর্বিবেচনার্থে পরিষদ কর্তৃক সরকারের নিকট আবেদন করিবার বিশেষ অধিকার থাকিবে।
৩০. ২৮ ধারার উপ-ধারা (১) এর প্রথম ও দ্বিতীয় পংক্তিতে অবস্থিত 'সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে' শব্দগুলি বিলুপ্ত এবং তৃতীয় পংক্তিতে অবস্থিত ' করিতে পারিবে' এই শব্দগুলির পরে নিম্নোক্ত অংশটুকু সন্নিবেশ করা হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, প্রণীত পরিধানের কোন অংশ সম্পর্কে সরকার যদি মতভিন্নতা পোষণ করে তাহা হইলে সরকার উক্ত প্রবিধান সংশোধনের জন্য পরামর্শ দিতে বা অনুশাসন করিতে পারিবে।
উক্ত পার্বত্য শান্তি চুক্তির বেশির ভাগ ধারায় বাস্তবায়িত কিছুসংখ্যক ধারা অবাস্তবায়িত। তবে পার্বত্য শান্তি চুক্তির বেশিরভাগ ধারা ঐ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাংলাদেশ সংবিধান রীতিনীতি মোতাবেক করা হয়নি।যার জন্য অনেক ধারা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
7.পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ভূমিকা |পার্বত্য চট্টগ্রাম যুদ্ধ
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি ( ইংরেজি Chittagong Hill Tracts Peace Accord), যা পার্বত্য চট্রগ্রাম চুক্তি, ১৯৯৭ নামেও পরিচিত।এটি একটি রাজনৈতিক চুক্তি।যা বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে ১৯৯৭ সালের ২ রা ডিসেম্বর সাক্ষরিত হয়।চুক্তিটির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংখ্যা ও আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের লিখিত সনদ অর্জন হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে চলা, ২০ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটে।এ চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্রগ্রামের মানুষের মুখে হাসি ফুটে।তাদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রম অবশেষে সফলতার মুখ দেখে।তাদের জীবনে শান্তি চক্তির ভূমিকা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নাহ।এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্রগ্রামের মানুষ শুধু নিজেদের ন্যায্য অধিকারই লাভ করেনি, সাংবিধানিক ভাবেও স্বীকৃতি লাভ করে।
উপজাতিদের জীবনে পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তির ভূমিকা অপরিসীম। কারণ এর মাধ্যমেই তারা তাদের প্রাপ্ত অধিকার অর্জন করতে সক্ষম হয়।কথায় আছে,অধিকার কেউ কাউকে দেয় না,অধিকার অর্জন করে নিতে হয়। যখন অধিকার অর্জন করতে সক্ষম হওয়া যায়,তখনই অধিকার উপভোগ করা যায়।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে ইনকাম করার উপায়
8.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর|পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ
পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ সম্পর্কে আপনাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে।নিম্নে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলোঃ
প্রশ্ন১ঃ পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ কত সালে শুরু হয়?
উত্তরঃ১৯৭৭ সালে পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ শুরু হয়।
প্রশ্ন ২ঃ শান্তি চুক্তি কোন ২ পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত হয়?
উত্তরঃ সামরিক সরকার ও পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতি। এই ২ পক্ষের মধ্যে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়।
প্রশ্ন ৩ঃ পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রধান প্রতিষ্ঠতা ছিলেন কে?
উত্তরঃ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
প্রশ্ন ৪ঃ শান্তি চুক্তি কোন প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সম্পাদিত হয়?
উত্তরঃ জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হয়।
প্রশ্ন ৫ঃ শান্তি বাহিনি কত সালে গঠন করা হয়?
উত্তরঃ ১৯৭৩ সালে শান্তি বাহিনি গঠন করা হয়।
প্রশ্ন ৬ঃ শান্তি বাহিনি কাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে?
উত্তরঃ শান্তি বাহিনি সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে।
প্রশ্ন ৭ঃ পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংহতি সমিতি কেন যুদ্ধে জড়ালো?
উত্তরঃ নিজের অধিকার আদায় ও স্বায়ত্তশাসনের জন্য পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংহতি সমিতি যুদ্ধে জড়ায়।
প্রশ্ন ৮ঃ পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের স্থায়ীত্ব ছিল কতো বছর?
উত্তরঃ পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধের স্থায়ীত্ব ছিলো বিশ (২০) বছর।
আরও পড়ুনঃ ব্যাংক একাউন্ট খোলার উপায়
9.লেখকের মন্তব্য |পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ
প্রিয় পাঠক,আজ আমরা আপনাদের সাথে পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ বা অন্য যে কোনো বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত, আপনার কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল সংগঠন The DU Speech এর পাশেই থাকবেন।পার্বত্য চট্রগ্রাম যুদ্ধ বা অন্য যে কোনো বিষয়ে আপনার মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।
আরও পড়ুনঃ মুড সুইং কী, কেনো হয়
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url