OrdinaryITPostAd

পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা

  
বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ।বাংলাদেশের ৬৪ জেলার প্রত্যেকটি জেলায় বিপুল পরিমান  জনসংখ্যা রয়েছে।তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা  তুলনামূলক কম।অনেকেই পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার পরিমাণ জানতে আগ্রহী। প্রযুক্তির এ যুগে এখন ঘরে বসেই পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যার পরিমান জানা সম্ভব।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেল হলো পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা । পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংখ্যা জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার অনুরোধ রইলো।

আর্টিকেলের সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ইতিহাস 
  2. পার্বত্য চট্রগ্রামের বর্তমান জনসংখ্যার পরিমাণ
  3. পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ধর্মীয় অবস্থা
  4. পার্বত্য চট্রগ্রামের জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা
  5.   পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ঘনত্ব 
  6.  পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার
  7. পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ
  8. পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
  9. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন -উত্তর
  10. লেখকের মন্তব্য

1.পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ইতিহাস|পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল তখন এর নাম ছিল 'চকোমাস'।তবে এর পূর্বেই, বঙ্গদেশের ইতিহাস সূত্রে জানা যায়,অতি স্মরণাতীত কাল থেকে খ্রিস্টীয় দশম(১০) শতাব্দী পর্যন্ত চট্রগ্রাম অঞ্চল ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে সংযুক্ত ছিল।
অর্থাৎ তখন থেকে এ অঞ্চলে বসবাস করে আসছে ত্রিপুরারা। দশম শতাব্দীর পরবর্তীকালে চট্রগ্রাম অঞ্চলের উপর শাসন কর্তৃত্ব নিয়ে প্রথমে ত্রিপুরা রাজের সাথে আরাকান রাজের এবং দ্বাদশ শতাব্দীর পরবর্তীকাল থেকে ত্রিপুরা, আরাকান ও গৌড়বঙ্গের মধ্যে ত্রিমুখী যুদ্ধ বিগ্রহাদি সংঘটিত হয়।মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবাহ বাংলার অধীনে শাসন করে।১৭৬০ সালে  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে আনে।
১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়।ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগং হিল ট্র্যাক্টস বা পার্বত্য চট্রগ্রাম। এটি চট্রগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল।১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের  অংশ হয়।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের জেলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।১৯৮০ এর দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্রগ্রামকে তিনটি জেলায় বিভক্ত করা হয়। তিনটি জেলা হলো-
  1. রাঙ্গামাটি 
  2. বান্দরবান ও
  3. খাগড়াছড়ি। 
ত্রিপুরাদের পর পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী চীনা-তিব্বতি ভাষা পরিবারের অন্তর্গত মঙ্গোলয়ড ১১ টি জাতিগোষ্ঠী এখনে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে।প্রধান তিনটি সম্প্রদায় -
  1. চাকমা
  2. মারমা এবং
  3. ত্রিপুরা 
পূর্বে পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বেশি ছিলো নাহ।সময়ের স্রোতে ধীরে ধীরে জনসংখ্যার বৃদ্ধি ঘটতে থাকে।
এভাবেই এখানকার জনসংখ্যার পরিমাণ ও বাড়তে থাকে।পার্বত্য চট্রগ্রামের জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই মঙ্গোলীয় শ্রেণিভুক্ত। প্রধান ।১৯৯১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী ুএখানকার জনসংখ্যা ছিলো ১০ লক্ষ ৫ হাজার ৩৬২ জন।বর্তমানে জনসংখ্যা আরও বেশি।পার্বত্য এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব কম তুলনামূলক। 


2.পার্বত্য চট্রগ্রামের বর্তমান জনসংখ্যার পরিমাণ |পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা ছিলো ১৬ লক্ষ ১৩ হাজার  ৯৮৯ জন।এর মধ্যে বাঙালি ছিলো ৭ লক্ষ ৬১ হাজার ৪৪৯ জন এবং অবাঙালি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছিলো ৮ লক্ষ ৫২ হাজার ৫৪০ জন।সর্বশেষ বাংলাদেশের জনশুমারি ও গৃহগণনা
২০২২ অনুযায়ী পার্বত্য চট্রগ্রামের বর্তমান জনসংখ্যা ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার ৮১৫ জন।এর মধ্যে বাঙালি ৯ লক্ষ ২২ হাজার ৫৯৮ জন এবং অবাঙালি বা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৯ লক্ষ ২০ হাজার ২১৭ জন।২০১১ সালের আদমশুমারীর তুলনায় শতাংশের দিক থেকে বাঙালি বেড়েছে ২.৮৮%।অন্যদিকে ুএকই সময়ের ব্যবধানে পার্বত্য চট্রগ্রামে অবাঙালি তথা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী জনসংখ্যার পরিমাণ শতাংশের দিক থেকে কমেছে ২.৮৮%।


3.পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ধর্মীয় অবস্থা |পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করা বাঙালিদের অধিকাংশই মুসলিম সম্প্রদায়ের। আর উপজাতিদের মধ্যে চাকমা, ত্রিপুরা,পাংখো,বম,থেয়াং,মারমা,মগ,মুরং,চাক,বনজোগী,লুসাই,সিন্দেজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একেকে উপজাতি একেক ধর্মে বিশ্বাসী। নিম্নে কিছু উপজাতির ধর্ম উল্লেখ করা হলোঃ-
  • চাকমা-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী 
  • মারমা-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী 
  • মগ-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী 
  • ত্রিপুরা -হিন্দু ধর্মাবলম্বী 
  • বম- খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ও
  • খিয়াং- খ্রিস্টান  ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী 
  • চাক-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী 
  • পাংখোয়া-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী 
  • মুরং-বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী 
  • লুসাই -খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী 
উপজাতিরা তাদের নিজস্ব ধর্ম অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে,ধর্মীয় উৎসব পালন করে,যা ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করে তাদের।

চাকমাঃ চাকমা উপজাতি প্রধানত থেরাবাদ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। চাকমারা পূর্বে মহাযানী বৌদ্ধ ধর্ম চর্চার পাশাপাশি কিছু কিছু হরি ধর্মও চর্চা করত পরবর্তীতে সবাই মহাযান থেকে হীনযান বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে।প্রায় প্রত্যেক চাকমা গ্রামে বৌদ্ধ মন্দির  রয়েছে।বৌদ্ধ সন্যাসীদের ভান্তে বলা হয়।তারা ধর্মীয় উৎসব ও অনুষ্ঠান তত্ত্বাবধায়নের কাজ পরিচালনা  করে থাকে।তাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হল বিজু উৎসব।বাংলা বছরের শেষ দু'দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করা হয়।এ কয়েকটা দিন নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনগুলোকে বরণ করে নেওয়া হয়।অত্যন্ত প্রফুল্লের সাথে এ উৎসব পালন করা হয়।

চাকমারা হিন্দু দেব-দেবীর পূজাও করে থাকে।চাকমারা বিশ্বাস করে,কিছু আত্মা পৃথিবীতে জ্বর ও রোগব্যাধি নিয়ে আসে এবং এসব আত্মাদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য এরা ছাগল,মুরগী,হাঁস, ইত্যাদি বলি দেয়।

মারমাঃচাকমাদের মতো মারমারাও  থেরবাদ বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাস করে।বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী হলেও তারা জড়বাদে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে।তাদের ধর্মীয় বিধি নিষেধের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্ম ও আদিম ধর্ম- বিশ্বাসের সংমিশ্রণ ঘটেছে।এদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে মাঘী পূর্ণিমা। তারা তাদের গৃহদেবতার সন্তুষ্টির জন্য জীবজন্তু বলিদান করে।তারা মাঝে মাঝে পূর্নিমা তিথিতে মহামতি গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ, বুদ্ধত্ব লাভ ও মহাপরিনিবার্ণ লাভ করেন।এটি একটি ধর্মীয় উৎসব।প্রত্যেক বছরেই অনেক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে দিয়ে দিনটি মহাসমারোহে উৎসবটি পালন করা হয়।

মগঃ মগ সম্প্রদায় ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। মগরা ভিক্ষু ও ধনপতিদের মৃতদেহ বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে দাহ করে,কিন্তু সাধারণ মানুষের মৃতদেহ মাটিতে দাফন করা হয়।পালি ভাষায় লিখিত ত্রিপিটক হচ্ছে মগদের পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ। ধর্মীয় বিষয়াবলির ক্ষেত্রে তারা দুই দলে বিভক্ত;
  1. সন্ন্যাসী সম্প্রদায় 
  2. অপেশাদার সম্প্রদায় বা লেইতি
ভিক্ষুগণ কৌমার্যব্রত পালন করে,গেরুয়া রঙের ঢিলেঢালা বস্ত্র পরিধান করে এবং সন্ন্যাস আশ্রমে বাস করে।পক্ষান্তরে, লেইতিগণ স্ত্রী,সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে পারিবারিক জীবনযাপন করে।মগদের অধিকাংশ উৎসবই প্রতি মাসের পূর্ণিমার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।তারা বিশ্বাস করে,অধিকাংশ ধর্মীয় ঘটনাবলি মাসের কোনো না কোনো পূর্ণিমা রাত বা দিনে ঘটেছে।এ উপলক্ষ্যে খাদ্য-দ্রব্য, ফল-মূল, ফুল ও মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালিয়ে প্রভু বুদ্ধের মূর্তি পূজা করা হয়।বৌদ্ধধর্মীয় অনুশীলনের পাশাপাশি তারা প্রাকৃত পূজার প্রথানুযায়ী গাছপালা এবং বড় বড় নদীর উপাসনা করে।
 
ত্রিপুরাঃধর্ম বিশ্বাসে ত্রিপুরা জাতি সনাতন ধর্মের অনুসারী। মধ্যযুগে একমাত্র ত্রিপুরা রাজ্যটি হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে আখ্যায়িত ছিল।বর্তমানকালে ত্রিপুরীদের অনেকে খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হচ্ছে।ত্রিপুরীদের রয়েছে বৈচিত্র্যমন্ডিত পূজা পার্বণ।প্রধান পূজার নাম বৈষু।ত্রিপুরীদের বৈসু উৎসবে যে অনুষ্ঠান করার রীতি রয়েছে তার পুরোটাই প্রকৃতি জগতের রূপ-রসের ব্যঞ্জনায় পুষ্ট।প্রতি বছর তালতুক মাসের(শকাব্দের শ্রাবণ)কৃষ্ণপক্ষের প্রথম দিনে কের পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।ত্রিপুরা জাতি গোমতী নদীকে দুগ্ধ স্রোতরূপী মাতৃনদী হিসাবে শ্রদ্ধা ও পূজা করে থাকে।গোমতী পূজা উৎসব অনুষ্ঠিত হয় ত্রিপুরাব্দের তালতুং(শকাব্দের জ্যৈষ্ঠ) মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে।ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় প্রতিষ্ঠিত আছে চতুর্দশ দেব মন্দির। তাছাড়া কৃষি ক্ষেত্র প্রস্তুত করার আগে ধরিত্রীকে আহ্বান করে পূজা উৎসব করা হয় ত্রিপুরা সমাজ ব্যবস্থায়, এর নাম 'হাবা 'পূজা উৎসব। হাবা পূজা মানে কৃষি পূজা।
ত্রিপুরা সমাজে দুই ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রচলিত, যথা দাহক্রিয়া ও শ্রাদ্ধক্রিয়া এবং তারা নারী ও পুরুষের জন্য দু'ধরণের শ্মশান তৈরি করে থাকে।

বমঃপূর্বে বমরা প্রকৃতি পূজা,গো হত্যা উৎসব ও বিভিন্ন অলৌকিক বিশ্বাসসহ নানা রকম প্রাচীন ঐতিহ্যে বিশ্বাস করতো। সময়ের পরিক্রমায়, তারা খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পর তাদের অনেক নিজস্ব সংস্কৃতি, রীতিনীতির পরিবর্তন ঘটেছে।খ্রিস্টান মিশনারিগণ বমদের মধ্যে ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করা শুরু করে।তখন থেকে বমরা খ্রিস্টান হতে থাকে।বম সমাজে দুঃখ ও শোকের দিনে বিশেষ ধরনের গান ও নৃত্য পরিবেশিত হয়।এই বিশেষ গান ও নৃত্যের নাম হল চেরাউ নৃত্য ও সঙ্গীত। 

খিয়াংঃঅতীতে খিয়াংরা ছিল প্রকৃতি পূজারি।তারা সৃষ্টিকর্তাকে বলতো 'হৃাদাগা'।পরবর্তীতে তারা বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেয়।তবে তাদের আদি দেব- দেবীদের পূজা করতেও দেখা যায়।খিয়াং সম্প্রদায়ের কিছু অংশ খ্রিস্টান আর কিছু অংশ বৌদ্ধ ধর্মের অনুশাসন মেনে চলে।যারা বৌদ্ধ ধর্মের অনুশাসন মনে চলে, তাদের বলা হয় খেয়াং।অন্যদিকে,যারা খ্রিষ্টান ধর্মের অনুশাসন মেনে চলে তাদের বলা হয় খিয়াং।ব্রিটিশ শাসনামলে মূলত অনেকে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হয়।উভয়েরা হিয়ৌ নামে পরিচয় দেয় নিজেদের মধ্যে

খিয়াংদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে 'সাংলান।গৌতম বুদ্ধকে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে এ উৎসব শুরু হয়।খিয়াং সমাজে মৃত ব্যক্তিকে দাহ করা হয়।

চাকঃচাকরা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তবে অনেকে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীও আছেন।

পাংখোয়াঃপাংখোয়া জনগোষ্ঠী নিজেদের ধর্মবিশ্বাসে বৌদ্ধ বলে দাবি করে থাকে।তবে একাধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মতো প্রকৃতি উপাসনাও পাংখোয়া সমাজে প্রচলিত। তাদের সৃষ্টিকর্তার নাম' প্রত্যেন'।পাংখোয়াদের বিশ্বাস, গভীর অরণ্যে খোজিং দেবতার অবস্থান। মূল খোজিং পূজা শ্রাবণ মাসে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।এই পূজা পাংখোয়া সমাজে সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচিত হয়।পাংখোয়া জনগোষ্ঠীতে মৃতদেহ কবর দেওয়ার রীতি প্রচলিত।

মুরংঃমুরং সম্প্রদায় অনেক ধর্মে বিভক্ত। সর্বপ্রাণবাদ,বৌদ্ধ ধর্ম,খ্রিষ্টধর্ম,ইসলাম ধর্ম এবং হিন্দু ধর্ম, সব ধর্মেই তারা গোত্র ভেদে বিশ্বাস করে।তবে তাদের অধিকাংশই বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। তারা পরকালে বিশ্বাস করে না।তাদের কাছে ইহকালই স্বর্বস্ব।তাদের ধর্মবিশ্বাসে আকীর্ণ প্রধান উৎসবের নাম হলো 'চিয়া-চট-প্লাই' অর্থাৎ গো-হত্যা উৎসব।গো-হত্যাকে ধর্মীয় অনুষঙ্গ হিসাবেই পালন করা হয়।এছাড়া এ সম্প্রদায়ের পরিবারের কারো অসুখ বিসুখ হলে তারা রোগ বালাই থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে 'চিয়া-চট-প্লাই'পালনের মানত করে থাকে।তারা'চাম্পুয়া' নামে অপর একটি উৎসব পালন করে থাকে।সৃষ্টিকর্তা তাদের ধর্মীয় বিধান কলাপাতায় লিপিবদ্ধ করেছিল বিশ্বাসে তারা কলাপাতা কেটে এ উৎসব করে থাকে।

মুরং সম্প্রদায়ের কোনো লোকের মৃত্যু হলে মৃতদেহ সপ্তাহ পর্যন্ত ঘরের মধ্যে রাখা হয়।মৃত ব্যক্তির পাশে শুকুর,ছাগল ও মোরগ জবাই করে পরিবেশন করা হয়।মৃতকে নদী তীরবর্তী চিতায় দাহ করার আগ পর্যন্ত গান বাজনা ও নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে উল্লাস করা হয়।

লুসাইঃঅতীতে লুসাই সম্প্রদায় প্রকৃতি পূজা করলেও বর্তমানে শতভাগ লুসাই খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। তারা পরকালে বিশ্বাস করে।প্রত্যেকে তার নিজ নিজ কর্মফলের বিচার পাবে এটাতেও এরা বিশ্বাস করে। 


4. পার্বত্য চট্রগ্রামের জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা |পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 


পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী রয়েছে।তাদের প্রত্যেকের  জীবনধারা অন্যদের থেকে পৃথক।তাদের পোশাক,খাদ্যাভাস,চলাফেরা, চিন্তা-চেতনা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান,বিশ্বাস প্রভৃতি সবকিছুই ভিন্ন।নিম্নে পার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত কিছু জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা নিয়ে আলোকপাত করা হল-

বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা 
সুপ্রাচীন কাল থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি ছাড়াও বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।পাকিস্তান আমলে কাপ্তাই বাঁধের কাজ করার জন্য প্রচুর সংখ্যক সেনা সদস্য ও বাঙালিকে সেখানে পুনর্বাসন করা হয়।

নিচে তাঁদের সাংস্কৃতিক জীবনধারা উল্লেখ করা হলঃ-
  • বাঙালি জাতির অধিকাংশই মুসলিম।তারা তাদের ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী জীবন-যাপন করে।
  • পুরুষরা সাধারণত পায়জামা-পাঞ্জাবি,লুঙ্গি পরিধান করে।আর মহিলারা সেলোয়ার-কামিজ এবং ঘরের বাহিরে গেলে বোরকা পরিধান করে।
  • তাদের প্রধান খাদ্য ভাত।তাছাড়া,মাছ,মাংস,ডিম ও তাদের পরম উপাদেয় খাবার।

  • ধর্মীয় ২টি বড় উৎসব (ইদ) আনন্দের সাথে ছোট-বড় সবাই মিলে উপভোগ করে।

এখন কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা নিয়ো আলোচনা করা যাক-

চাকমা জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা 

নিম্নে চাকমা জাতিগোষ্ঠীর  কিছু সংস্কৃতি নিয়ে আলোচনা করা হলো-
  1. বিবাহের ক্ষেত্রে চাকমাদের মধ্যে অমাবস্যা,পূর্ণিমা ও গ্রহণের সময় বিবাহ নিষিদ্ধ। 
  2. চাকমাদের বিধান মতে,তালাক বিধিসম্মত হলেও তা কদাচিৎ দেখা যায়।আর যদি তলাক হয় গোত্রপতিদের সম্মতিতে হবে।এক্ষেত্রে তালাকপ্রাপ্ত নারীর বাচ্চা থাকলে, স্বামী সে বাচ্চার ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
  3. চাকমা মেয়েরা চুড়ি,খাড়ু,গলায় টাকার ছড়া এবং  বড় ছিদ্র করে কানবালা পরে।
  4. চাকমা নর-নারীরা ধূমপানে অভ্যস্ত।টক ও পঁচা চিংড়ির প্রস্তুত খাবার তাদের প্রিয়।
  5. চাকমা প্রসূতিরা বাচ্চা প্রসবের পর কয়েকদিন গোসল করে না।
  6. বাঁশের অঙ্কুর হল চাকমাদের ঐতিহ্যগত খাদ্য।
  7. চাকমারা কোমর জড়ানো গোড়ালি পর্যন্ত পোশাক পরে যাকে পিনোন বলা হয়।
  8. চাকমাদের একই উপগোষ্ঠী সদস্যদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। বয়স্ক বিবাহ চাকমা সমাজে আদর্শ হিসেবে দেখা হয়।
  9. চাকমারা দুধকে অপছন্দ করে।
  10. সামাজিক অনুষ্ঠানে অবাধে মদ খাওয়া তাদের এক প্রকারের ঐতিহ্য
মারমা জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা 
মারমা জাতিগোষ্ঠীর  কিছু সংস্কৃতি নিচে আলোচনা করা হলো-
  1. বিবাহের ক্ষেত্রে সাধারণত অভিভাবকরা বিবাহের ব্যবস্থা করে তবে প্রেমের বিবাহও স্বীকৃত রয়েছে।তারা বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ করতে পারে।বাল্য বিবাহ ও যৌতুক প্রথা নিষিদ্ধ মারমা সমাজে।বিবাহ বিচ্ছেদ বৈধ এই সমাজে। তবে এ ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই সমান অধিকার রয়েছে।
  2. মারমাদের প্রধান খাদ্য হল কাঁচা মরিচ এবং লবন মিশ্রিত সিদ্ধ চালও শাকসবজি। তাঁরা দিনে দু'বার খাদ্য গ্রহণ করে।শুকনো মাছ তাদের প্রিয় খাবার।
  3. মারমা পুরুষরা অবসর সময়ে মদ ও তাস খেলে।তারা পাইপের মাধ্যমে ধূমপান করে।শুকনো মাছ তাদের প্রিয় খাবার।
  4. মারমারা পুরাতন বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সাংগ্রাই উৎসব পালন করে।
  5. মারমাদের সমাজব্যবস্থায় তিন স্তরবিশিষ্ট প্রশাসনিক পর্যায় রয়েছে সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য।
  6. মারমা মহিলাদের কাপড় বুনা একটি সাধারণ কাজ।তাছাড়া তাঁরা ফল ও সবজি চাষ,পোল্ট্রি পালন ও কুটির শিল্প  করছে।
  7. মারমা সমাজে আত্মীয়তার বন্ধন খুবই শক্তিশালী হয়।
  8. মারমা সমাজে পুরুষরা 'দেয়াহ্' (ধুতি) নামে এক প্রকার তাঁতে তৈরি কাপড় পরিধান করে।মেয়েরা 'বেদাই আঙগি'নামক এক ধরনের ব্লাউজ পরেন।
  9. মারমা সমাজে মেয়েরা মায়ের বংশ এবং ছেলেরা সব সময় বাবার বংশ পরিচয় লাভ করে থাকে।
  10. মারমা সমাজে পুত্র ও কন্যা উভয়েই পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার লাভ করে।
  লুসাই জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা 
লুসাই জাতিগোষ্ঠীর কিছু সাংস্কৃতিক জীবনধারা নিম্নে উল্লখ করা হল-

  1. লুসাই সমাজে আগস্ট মাসে কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান বা বিনোদনমূলক উৎসব করা হয় না।বর্তমানেও এ রীতি মানা হয়।
  2. লুসাইদের প্রধান খাদ্য ভাত ও শাকসবজি। মাছ,মাংস দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে রাখার উদ্দেশ্যে লুসাইরা মাচার উপর আগুনের তাপে ঝুলিয়ে রাখে এবং পরে রান্না করে খায়।
  3. পাত্র-পাত্রীর পছন্দেই অধিকাংশ বিয়ে হয়ে থাকে।তবে উভয় পক্ষের অভিভাবকদের সম্মতিতে বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।একই সময়ে একাধিক বিয়ের অনুমতি নেই।
  4. লুসাই সমাজে মৃত্যুর পর মৃতদেহ কবর দেওয়া হয়।সমাজের আদি নীতি অনুসারে মৃতের আত্মার উদ্দেশ্যে পশু বলি দিয়ে ভোজের আয়োজন করা হয়।
  5. অতীতে তারা পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি পোশাক পরিধান করতো।পরবর্তীতে তুলা থেকে উৎপন্ন সুতা দিয়ে পোশাক তৈরি করে পরিধান  করা শুরু করে।
  6. লুসাইদের মধ্যে জেঠাতো বা কাকাতো ভাইবোনের বিয়ে হতে পারে না।তবে মামাতো ও খালাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হয়।
  7. লুসাই সমাজে বিয়েতে পণ প্রথা বিদ্যমান।

ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক জীবনধারা 

নিম্নোক্ত অংশে ত্রিপুরা জাতিগোষ্ঠীর কিছু সংস্কৃতিক জীবনধারা তুলে ধরা হল-

  1. ত্রিপুরা সমাজে সকল গোত্রের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক সিদ্ধ।তবে রক্ত সম্পর্কীয় তিন(৩)পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধন নিষিদ্ধ। লোকাচারে কোনো ত্রিপুরা যখন বিবাহের আয়োজন করে তখন তাকে অবশ্যই গীতি বাদ্য ও নাট্য সহকারে তা সম্পাদন করতে হয়।
  2. ত্রিপুরা সমাজে কোনো বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করলে তার আগমনী বার্তাও শঙ্খধ্বনির মাধ্যমে ঘোষিত হয়।
  3. ত্রিপুরা নারীরা অলংকার প্রিয়। তাদের ব্যবহৃত অলংকার সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে বারা,কুনচি,তাল,তয়া,সুরাম,সাংগে,নাকে,বাতাং ইত্যাদি।
  4. ত্রিপুরাদের জীবন-জীবিকা ও আচার-আচরণে গীতি, বাদন ও নৃত্য অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে জড়িয়ে আছে।
  5. ত্রিপুরাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বৈসুখ বা নববর্ষ।
  6. ত্রিপুরা গোষ্ঠীর সামাজিক প্রথা অনুযায়ী নবজাত শিশুর জন্য শুদ্ধি করা বাধ্যতামূলক।নবজাতকের নাভিরজ্জু শুকিয়ে ঝরে গেলে কমাসেং অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
  7. ত্রিপুরা সমাজে সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর ‘কুচাই’ নামক গাছের ফল অথবা পাতার সাথে কাঁচা হলুদ ও ঘিলার ভেতরে থাকা শাঁস নিয়ে একত্রে গুঁড়ো করে একটি বাঁশের চোঙায় অথবা পাত্রে পানির সাথে মেশানো হয়। সেই পানিতে আমপাতা থাকে।ঐ পানি দিয়ে উভয়কে ধৌত করা হয়।
  8. নবজাতকের মঙ্গল কামনায় নদীর পাশে পশু বলি দেওয়া হয়।

5.পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ঘনত্ব|পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

পার্বত্য চট্টগ্রাম পূর্বে চট্রগ্রামের অংশ ছিলো।৮০'র দশকে ৩ টি জেলাকে চট্রগ্রাম জেলা থেকে আলাদা করে স্বতন্ত্র জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। মূলত এ ৩টি অঞ্চল সমতল নয়,পাহাড় পূর্ণ, তাই এ অঞ্চলের নাম দেওয়া হয় পার্বত্য অঞ্চল। যেহেতু চট্রগ্রামের অন্তর্ভুক্ত ছিলো,তাই সম্পূর্ণ নাম দেওয়া  হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম।সমতম ভূমি না হওয়ায় এ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে তোলা কষ্টকর। চাষাবাদ করার জন্য ও এ অঞ্চলের মানুষ পাহাড়ের ঢালু জায়গা ব্যবহার করে, যা খুবই কষ্টকর এবং ঝুকিপূর্ণ।পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় অধিক বৃষ্টিপাত হয় এখানে। যা ফলে পাহাড়ের মাটি নরম হয়ে যায় এবং মাঝে মাঝে পাহাড়ের ঢালু ধসে পরে বসতির ওপর,যার ফলাফল অনিবার্য  মৃত্যু।তাদের বসতবাড়িও সাধারণত বাঁশ, খড় দিয়ে তৈরি, যা আপাতদৃষ্টিতে মজবুত হয় না।তাই খুব সহজেই পাহাড় ধসে পরলে বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ে।

পাহাড়ি এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নত নয়। সমতল ভূমিতে যেভাবে রাস্তা তৈরি করা যায়,পাহাড়ি এলাকায়  তা সম্ভব নয়।সেজন্যই স্বাস্থ্যসম্মত খাবর, স্যানিটেশান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী অন্য অঞ্চল থেকে পাহাড়ি অঞ্চলে খুব সহজে বয়ে যায় না।তাছাড়া
পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষার জন্য ও ভালো বিদ্যালয় নেই।যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ শিক্ষার আসল আলো থেকে বঞ্চিত হয়।শিক্ষা জাতির মৌলিক অধিকার হলেও পাহাড়ি জাতি এদিক থেকেও পিছিয়ে আছে।যদিও পূর্বের তুলনায় পাহাড়ি অঞ্চলের অবস্থা এখন ভালো।মাঝে মাঝে কেন্দ্রীয় সরকার ও পাহাড়ি অঞ্চলের দিকে সুনজর দিতো নাহ প্রত্যন্ত অঞ্চল হওয়ায়।এতো এতো সমস্যার কথা মাথায় রেখেই অনেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে গিয়ে বসবাস করতে অনীহা প্রকাশ করে।সার্বিক দিক বিবেচনা করেই পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ঘনত্ব কম তুলনামূলক। বর্তমানে পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৭৩ জন প্রতি বর্গকিলোমিটারে, যেখানে বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১১১৯ জন।


6.পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার|পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

পার্বত্য অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা পূর্বের তুলনায় ভালো হলেও, গ্রামীণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এখনো সচেতনতার  বৃদ্ধি ঘটেনি।তাদের মাঝে নানা কুসংস্কার, অজ্ঞতা ও কূপমন্ডুকতা বিরাজমান থাকায় সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে না।অনেক সরকারি কর্মকর্তারা যোগাযোগ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের কারণ দেখিয়ে তাদের  উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে না।যার ফলে যেভাবে জনসংখ্যা কমা দরকার,সেভাবে কমছে না বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

তাছাড়া,এখানে নারী চিকিৎসকের অভাবে, বাচ্চা প্রসবের সময়  তারা ধাত্রীর কাছে শরণাপন্ন হয়।যা মা ও নবজাতক শিশু ২ জনের জন্যই ঝুকিপূর্ণ। পার্বত্য অঞ্চলে বাহ্য বিবাহের পরিমাণ অনেক।যা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোর-কিশোরীদের অপরিকল্পিতভাবে সন্তান গ্রহণ একটি ভয়াবহ বিষয়।শিক্ষার ব্যবস্থা ও উন্নত নয়,যার মাধ্যমে বাল্যবিবাহ,অধিক ও অপরিণত বয়সে  বাচ্চা নেওয়া,ধাত্রীর শরণাপন্ন হওয়ার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি করা যাবে।তাই পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।


7.পার্বত্য চট্রগ্রামে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ|পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির কিছু কারণ রয়েছ। নিচে তা উল্লেখ করা হল-

  • শিক্ষার হার কম।বিশেষ করে নারী শিক্ষা। 
  • অত্যধিক বাল্যবিবাহের প্রচলন।
  • জনসংখ্যার পরিমাণ সম্পর্কে সচেতনতার অভাব।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে  উদাসীন। 
  • জন্মনিরোধক সহজলভ্য নয়।
  • জন্মনিরোধকের সঠিক ব্যবহার করতে না জানা
  • প্রাচীন এবং কুসংস্কার ধারণার প্রসার
  • বেকারত্ব ইত্যাদি
প্রভৃতি কারণে পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা  দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

8.পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার উপায় |পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

যেহেতু পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার তুলনামূলক বেশি,সেহেতু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এ সমস্যা সমাধানের জন্য।জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার দরকার নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো-

  • শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে পার্বত্য অঞ্চলে। বিশেষ করে নারী শিক্ষার বিস্তার করতে হবে আর শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে শিক্ষা সামগ্রী ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে।বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য বিভিন্ন প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।যাতে সবাই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলে এবং বাল্যবিবাহকে "না" বলে।
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং জন্মনিরোধক গুলো সহজলভ্য করতে হবে পার্বত্য অঞ্চলে।সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে সরকার ভতুর্কি প্রদান করতে পারে।শুধু সহজলভ্য করলেই হবে নাহ,অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার  মাধ্যমে এর ব্যবহার ও শিখাতে হবে।
  • ছেলে - মেয়ে উভয়ের কর্মের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা অধিক বাচ্চা নেওয়া থেকে বিরত থাকে।
  • কৃষিকাজ বা জুম চাষ করার জন্য সন্তান বেশি হলে সুবিধা হবে,এ ধরনের চিন্তা- ভাবনা পরিহার করতে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে।
পার্বত্য অঞ্চলের সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে হবে।তবে আশা করা যায়, উপরিউক্ত পদ্ধতি গুলো অনুসরণ করলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংখ্যায় নিয়ন্ত্রন আসবে।


9.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর|পার্বত্য চট্রগ্রামের  জনসংখ্যা 

পার্বত্য চট্রগ্রামের  জনসংখ্যা সম্পর্কে আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে।নিম্নে কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হলোঃ

প্রশ্ন ১ঃপার্বত্য অঞ্চলে কোন উপজাতির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি?
উত্তরঃপার্বত্য অঞ্চলে চাকমা সম্প্রদায়ের উপজাতি সবচেয়ে বেশি।

প্রশ্ন ২ঃপার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যার ঘনত্ব কেমন?
উত্তরঃ তুলনামূলক কম জনসংখ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে। 

প্রশ্ন ৩ঃপার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বাংলাদেশর কত ভাগ?
উত্তরঃপার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার দশ(১০) ভাগের এক(১)ভাগ।

প্রশ্ন৪ঃ পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কেমন?
উত্তরঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি।

প্রশ্ন৫ঃপার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত অধিকাংশ উপজাতি কোন ধর্মাবলম্বী? 
উত্তরঃ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত অধিকাংশ উপজাতি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। 

প্রশ্ন ৬ঃপার্বত্য চট্রগ্রামের বর্তমান জনসংখ্যা কতো? 
উত্তরঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান জনসংখ্যা ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার ৮১৫ জন।

প্রশ্ন ৭ঃপার্বত্য চট্টগ্রামের ত্রিপুরা উপজাতি কোন ধর্মাবলম্বী? 
উত্তরঃ পার্বত্য চট্রগ্রামের ত্রিপুরা উপজাতিরা সনাতন ধর্মাবলম্বী। 

প্রশ্ন ৮ঃচাকমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব কোনটি?
উত্তরঃচাকমাদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব হল বিজু উৎসব। 

প্রশ্ন ৯ঃপার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত বাঙালি উপজাতি কোন ধর্মাবলম্বী? 
উত্তরঃপার্বত্য চট্রগ্রামে বসবাসরত বাঙালি উপজাতির অধিকাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী।  

প্রশ্ন ১০ঃপার্বত্য চট্রগ্রাম কয়টি জেলা নিয়ে গঠিত?জেলাগুলো কী কী?
উত্তরঃপার্বত্য চট্রগ্রাম তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত। জেলাগুলো হলো -রাঙ্গামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। 

10.লেখকের মন্তব্য |পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা 

প্রিয় পাঠক,আজ আমরা আপনাদের সাথে পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা  সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি।পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা  বা অন্য যে কোনো বিষয়ে আপনার মূল্যবান মতামত, আপনার কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল সংগঠন The DU Speech এর পাশেই থাকবেন।পার্বত্য চট্রগ্রামের জনসংখ্যা  বা অন্য যে কোনো বিষয়ে আপনার মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url