OrdinaryITPostAd

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম | ব্যাংক একাউন্ট খুলতে শিখুন

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন ঘরে বসেই ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম  সম্পর্কে সহজেই ধারণা লাভ করা সম্ভব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে। ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।


আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. ব্যাংক একাউন্ট এর প্রয়োজনীয়তা
  2. ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
  3. ব্যাংক একাউন্টের ধরন
  4. ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
  5. প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যা প্রয়োজন
  6. সতর্কতা
  7. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
  8. লেখকের মন্তব্য

১.ব্যাংক একাউন্ট এর প্রয়োজনীয়তা | ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ব্যাংক একাউন্ট থাকাটা এখন একরকম অপরিহার্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিত্য দিনের অজস্র প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হয়। আপনার টাকার নিরাপদ আবাসস্থল হতে পারে ব্যাংক। এছাড়া বিভিন্ন রকম টাকা-পয়সার লেনদেন করতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমেই। তাই ব্যাংক একাউন্ট না থাকার মানেই হচ্ছে আপনি অন্যদের চেয়ে বেশ খানিকটা পিছিয়ে আছেন। কাজেই, ব্যাংক একাউন্ট না থাকলে দ্রুত একটি একাউন্ট খুলে নেওয়া আসলেই জরুরী। এই আর্টিকেলে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

২.ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

অনেকেরই ধারণা, ব্যাংক একাউন্ট খোলার  মতো ঝামেলার কাজ বোধহয় আর দ্বিতীয়টি নেই। এই ঝামেলা এড়ানোর জন্য অনেকেই ব্যাংক একাউন্ট খুলতে আগ্রহী হন না। সত্যি বলতে কী, ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম মোটেও তেমন একটা ঝামেলার কাজ না। বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের জানা না থাকার কারণেই এমন অমূলক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, খুব সহজেই একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে ফেলা যায়। 

ব্যংক একাউন্ট ফর্ম -

বাংলাদেশে সাধারণত দুই রকমের ব্যাংক ফর্ম পাওয়া যায়:

  • ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম
  • প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম

ব্যক্তিগত একাউন্ট ফর্ম

নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এটি মূলত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহৃত হবে এমন একাউন্ট। যে একাউন্টের শিরোনাম, অর্থাৎ টাইটেল অব একাউন্ট কোনো ব্যক্তির নামে হয়, সেগুলো ব্যক্তিগত একাউন্ট হিসেবে বিবেচিত। এই ধরনের ফর্মের মাধ্যমে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে একাউন্ট খোলা যাবে।

প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্ট ফর্ম

এই ধরনের ফর্মে ব্যাংক একাউন্টের শিরোনাম বা টাইটেল অব একাউন্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে হয়। এ একাউন্ট গুলো অব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট হিসেবে গণ্য হবে।

৩.ব্যাংক একাউন্টের ধরন | ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ব্যাংকে নানা ধরনের একাউন্ট রয়েছে। ব্যাংক ভেদে এই নিয়মের কিছুটা তারতম্য হতে পারে, তবে সাধারণ কাঠামো মোটামুটি সব ব্যাংকেই একই।

১। চলতি হিসাব বা কারেন্ট একাউন্ট:

প্রধানত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কারেন্ট একাউন্ট সবচেয়ে বেশি উপযোগী। কারেন্ট একাউন্ট থেকে দিনে যত বার খুশি তত বার টাকাপয়সা লেনদেন করা যায়। যেকোনো সময় টাকা তোলা যায় এবং জমা রাখা যায়। এ ক্ষেত্রে কোনো সুদ প্রদান করা হয় না, বরং বছর শেষে কিছু পরিমাণ টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে কেটে রাখা হয়।

২। সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট:

যে কেউ এ ধরনের একাউন্ট খুলতে পারে। সপ্তাহে একবার বা দুইবার টাকা তোলা যায় এবং জমা রাখা যায়। জমাকৃত টাকার উপর বার্ষিক ৪% থেকে ৬% হারে সুদ প্রদান করা হয়। যাদের সব সময় টাকা লেনদেনের প্রয়োজন হয় না, তাদের জন্য এই একাউন্ট উপযোগী।

৩। ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম) একাউন্ট: 

বলা হয়ে থাকে, ভবিষ্যতের ভাবনা ভাবাই জ্ঞানীর কাজ। ভবিষ্যতের জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এছাড়াও বিশেষ কোনো পরিকল্পনা অনুযায়ী টাকা সঞ্চয় করতে হয় অনেক সময়। তাই প্রতি মাসে খরচ বাদ দিয়ে যতটুকু বাকি থাকে, তা সঞ্চয় করে রাখা দরকার। আর টাকা ঘরে রাখলে সেটার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা তো থেকেই যায়। এজন্য ব্যাংকে একাউন্ট খুলে টাকা সঞ্চয় করা যেতে পারে। ডিপিএস একাউন্ট মূলত এ উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়। যে কোনো ব্যাংকে ডিপিএস অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে নিয়মিত টাকা জমা রাখা যায়।

৪। এফডিআর (ফিক্স ডিপোজিট রিসিট) একাউন্ট:

পোশাকি সংজ্ঞা দিতে গেলে, ফিক্স ডিপোজিট রিসিট বা এফডিআর হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য জমা রাখা, যার সুদ আপনি মাসিক, পাক্ষিক, অর্ধবার্ষিক কিংবা বার্ষিক হিসেবে তুলতে পারবেন। এই একাউন্ট খোলার জন্য বড় অংকের টাকা জমা রাখতে হয়। সাধারণত ২৫ হাজার টাকার কমে এফডিআর একাউন্ট করা যায় না। এক্ষেত্রে বার্ষিক সুদের পরিমাণ প্রায় ৯% থেকে ১২% পর্যন্ত হয়ে থাকে।

৪.ব্যাংক একাউন্ট খুলতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র | ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্র ও তথ্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সাধারণত প্রায় সব ধরনের ব্যাংক একাউন্ট খুলতে কিছু কাগজপত্রের অবশ্যই দরকার পড়ে। 

পূরণকৃত ফর্ম

আপনার পছন্দের শাখা থেকে একাউন্ট খোলার ফর্ম সংগ্রহ করুন। যদি একাধিক ব্যক্তির নামে (যৌথ) হিসাব হয় তবে ফর্মের “ব্যক্তি সংক্রান্ত তথ্যাবলী” প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফটোকপি করে নিন।

স্পেসিমেন সিগনেচার কার্ড

অনেক ব্যাংক এটি একাউন্ট খোলার ফর্মের সাথে দিয়ে দেয়। এতে ব্যাংক অফিসারের সামনে একাউন্ট হোল্ডার স্বাক্ষর করবেন।

পরিচয়দানকারী

সাধারণত ঐ ব্যাংকের কোন গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। কারেন্ট একাউন্ট খুলতে হলে কেবল অন্য কোনো কারেন্ট একাউন্ট হোল্ডার গ্রাহক পরিচয়দানকারী হবেন। পরিচয়দানকারী একাউন্ট ফর্মের নির্ধরিত স্থানে নমুনা স্বাক্ষর, নাম, ঠিকানা, অ্যাকাউন্ট নম্বর ইত্যাদি লিখবেন। তিনি একাউন্ট খোলার দিন উপস্থিত না হলেও চলবে। বেশিরভাগ ব্যাংকেই এখন আর একাউন্ট খুলতে পরিচয়দানকারীর প্রয়োজন হয় না। 

ফটো

একাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির ২-৩ কপি করে পাসপোর্ট সাইজ ফটো লাগবে। ফটোগুলো সত্যায়িত হতে হবে। নমিনীর ১ কপি ছবি লাগবে যা হিসাব পরিচালনাকারী কর্তৃক সত্যায়িত হবে।

নমিনী

ব্যক্তিগত একাউন্টে সর্বনিম্ন একজন নমিনীর পরিচয় প্রদান করতেই হবে। প্রাতিষ্ঠানিক একাউন্টে নমিনী দেয়া যায় না। নমিনীর স্বাক্ষর প্রয়োজন নেই। তবে নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে হবে। নমিনীর যেকোন একটি পরিচয়পত্র দিলে ভালো হয়।

টাকা

নির্ধরিত জমা স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবের জন্য ব্যাংক ভেদে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা লাগবে। ডিপিএস এর জন্য কিস্তি সমপরিমাণ ও এফডিআর এর জন্য এফডিআর সমপরিমাণ টাকা লাগবে।

অন্যান্য কাগজপত্র

একাউন্ট পরিচালনাকারী প্রত্যেক ব্যক্তির পরিচয়পত্রের ফটোকপি লাগবে। এক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র ও কমিশনার/ মেয়র/ চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিক সনদ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। উক্ত পরিচয়পত্রের অনুপস্থিতিতে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, চাকরি পরিচয়পত্র, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ইত্যাদি থেকে যেকোনো দুইটি উপস্থাপন করতে হবে।


৫. প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত যা প্রয়োজন | ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

যেকোন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সাধারণত একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। অতিরিক্ত যা যা লাগবে:
১। প্রত্যেক একাউন্ট পরিচালনাকারীর নাম-পদবীসহ সিল।
২। ট্রেড লাইসেন্স।
৩। প্রতিষ্ঠানটি একক মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান না হলে রেজ্যুলেশন লাগবে যাতে থাকে নির্দিষ্ট ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় একাউন্ট খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত ও একাউন্টটি কে পরিচালনা করবে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত। রেজ্যুলেশনে পর্ষদ/ বোর্ড/ গভর্নিং বডির সদস্যরা স্বাক্ষর করবেন।

৬.সতর্কতা | ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে কিছু সতর্কতা:
১. সংযুক্ত সকল কাগজের মূল কপি সাথে রাখবেন।
২. একাউন্ট খোলার দিন ও প্রথম বার চেক বই উঠানোর দিন আপনাকে অবশ্যই নিজে যেতে হবে।
৩. আপনার বর্তমান ঠিকানায় ব্যাংক থেকে চিঠি আসতে পারে। বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
৪. চেক বই তোলার জন্য ওই দিনই নিধারিত ফর্মে আবেদন করবেন।
৫. জমা স্লিপ ও হিসাব নাম্বার সংরক্ষণ করুন।
৬. ব্যাংকের ডাটাবেজে আপনার নামের বানান সঠিকভাবে তোলা হয়েছে কিনা চেক করে নিন।
৭. ডেবিট কার্ড নেয়ার জন্য আলাদাভাবে আবেদনের প্রয়োজন থাকলে করে নিন।

৭. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর  | ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম

প্রশ্ন ১: এই আর্টিকেলে প্রদত্ত তথ্য দিয়ে কোন কোন ব্যাংকে একাউন্ট খোলা যাবে?
উত্তর: এই আর্টিকেলে যেসব কল তথ্য দেওয়া হয়েছে তা দিয়ে বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংক একাউন্ট খোলা যাবে।
প্রশ্ন ২: বাংলাদেশে মোট কতটি ব্যাংক রয়েছে।
উত্তর: বাংলাদেশে মোট ব্যাংক আছে ৬৩ টি।
প্রশ্ন ৩: এফ ডি আর একাউন্ট করতে সর্বনিম্ন কত টাকা লাগে?
উত্তর:সাধারণত ২৫ হাজার টাকার কমে এফডিআর একাউন্ট করা যায় না। 
প্রশ্ন ৪: ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়াটি কি জটিল কিনা?
উত্তর: ব্যাংক একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া খুবই সহজ ।আপনি আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়লে এই সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবেন।

৮. লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের সাথে ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে অথবা যে কোন বিষয়ে আপনাদের কোন অভিযোগ বা মতামত নিজের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল সংগঠন The DU Speech এর পাশেই থাকবেন। ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে হোক বা যেকোন বিষয়ে আমরা আপনার মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করব।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url