নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন | জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া ২০২২
The DU Speech ✅
11 Aug, 2022
বর্তমানে একটি শিশুর সকল রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোগ করতে হলে জন্ম নিবন্ধন অপরিহার্য। শিশুর নতুন জন্ম নিবন্ধন সকল সুবিধা ভোগের জন্য জরুরী। আপনি যদি আপনার শিশু বা অন্য কারো নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে চান তবে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি লাগে, কিভাবে আবেদন করতে হবে এবং নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন সংশ্লিষ্ট সকল প্রশ্নের উত্তর আজকের আর্টিকেলে দেওয়া হবে।
১.জন্ম নিবন্ধন কী? নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রকিয়া
জন্মের পর সরকারি খাতায় প্রথম নাম লেখানোই জন্ম নিবন্ধন। জন্ম নিবন্ধন প্রতিটি শিশুর অধিকার। নবজাতকের জন্মনিবন্ধন তার জাতীয়তা নিশ্চিতের আইনগত প্রাথমিক ধাপ। একটি শিশুর জন্ম দেশে ও বহির্বিশ্বকে জানানোর একমাত্র উপায় হল জন্ম নিবন্ধন করা। দেশের অন্যান্য নাগরিকের মতো সে সমান ভাবে এক কাতারে শামিল হয় জন্ম নিবন্ধন করার মাধ্যমে। জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে একটি শিশুর নতুন নাম হয় যা তার সারা জীবনের পরিচয় বহন করে। জন্ম নিবন্ধন এর মাধ্যমে একটি শিশু প্রাথমিকভাবে দেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন।
২.জন্ম নিবন্ধন আইন | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুসারে, শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। বিভিন্ন কারণে ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে না পারলে অবশ্যই শিশুর ৫ বছরের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। কারণ ৫ বছর পেরিয়ে গেলে পরে জন্ম নিবন্ধন করতে অনেক অতিরিক্ত ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয় এবং অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করা উচিত। জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪, জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও শিশু অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে ৩ জুলাই ২০১৬ সালে আইনটি কার্যকর করা হয়। জন্ম নিবন্ধন আইনে বলা হয়েছে বয়স, জাতি-গোষ্ঠী, ধর্ম কিংবা জাতীয়তা নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্মগ্রহণ করা প্রত্যেকটি মানুষের জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।
৩. অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু হয়েছে। বাংলাদেশে সরাসরি জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের পাশাপাশি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করা যায়। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সব জেলায় এবং বিদেশে অবস্থিত অনেক দূতাবাসে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু রয়েছে। বাংলাদেশ প্রায় শতভাগ মানুষ জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম এর আওতায় এসেছে। বর্তমানে ডিজিটাল যুগে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার চাহিদা বেড়ে গেছে সবাই এখন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করে থাকে। কেননা এতে নিজে আবেদন করা যায় এবং কোনো তথ্য ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। প্রথাগতভাবে করলে কর্মরত ব্যাক্তিরা অনেক সময় নাম বা বানানে ভুল করে থাকে। তাই অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন নির্ভুলভাবে করতে পরবর্তী ধাপগুলো অবশ্যই পড়বেন।
৪. জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য ও কাগজপত্র সংগ্রহ | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যের প্রয়োজন হয়। এই তথ্যগুলো সংগ্রহে থাকলে আবেদন করতে সুবিধা হবে। শিশুর বয়স ০-৪৫ দিন হলে ই পি আই কার্ডটির প্রয়োজন হয়।জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের জন্য নিচের ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হয়ঃ
পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
পিতামাতার ডিজিটাল বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের কপি
ই পি আই টিকা কার্ড
বাসার হোল্ডিং নাম্বার ও হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ
আবেদনকারী অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার৷৷
৫.আবেদনের প্রক্রিয়া | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদনের জন্য প্রথমে https://bdris.gov.bd/br/application এই লিংকে যেতে হবে। লিংকে প্রবেশ করলেই যে পেজটি আসবে সেখানে জন্মনিবন্ধন সম্পর্কিত কিছু নির্দেশনা আছে।
প্রথম পেজ | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
প্রথম পেজে কিছু নির্দেশনা থাকবে। নির্দেশনাগুলো ভালোভাবে পড়ার পর নিচের দিকে আপনি যে ঠিকানার অফিস থেকে জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে চান সেটা সিলেক্ট করতে হবে। এখানে ৪টি অপশন থাকবে
জন্মস্থান
স্থায়ী ঠিকানা
বর্তমান ঠিকানা
আপনি যদি বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে জন্ম নিবন্ধন নিতে চান তবে এটি নির্বাচন করুন
২য় পেজে একটি জন্ম নিবন্ধন আবেদনের একটি ফরম আসবে। ফরমটি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। এখানে নিবন্ধনকারীর ব্যাক্তির পরিচিতি সম্পর্কিত তথ্য দিতে হবে।
প্রথম দুইটি খালি ঘরে ব্যক্তির নাম দিতে হবে। প্রথম ফাঁকা ঘরে ব্যক্তির নামের প্রথম অংশ। দ্বিতীয় ফাকা ঘরে নামের দ্বিতীয় অংশ দিতে হবে। কারো নাম তিন শব্দের হলে সেক্ষেত্রে প্রথম ঘরে নামের প্রথম দুই অংশ এবং দ্বিতীয় ঘরে নামের শেষ অংশ দিতে হবে। তবে একটা কথা মনে রাখা জরুরি যে এই দুই ঘরে বাংলায় নাম লিখতে হবে। এর পরের ঘর দুটিও নামের। তবে এখানে নাম ইংরেজিতে লিখতে হবে। প্রথম ঘরে ইংরেজিতে নামের প্রথম অংশ এবং দ্বিতীয় ঘরে ইংরেজিতে নামের দ্বিতীয় অংশ লিখতে হবে।
এর পরের ঘরে আপনার আবেদনকারীর জন্ম তারিখ দিতে হবে। মনে রাখবেন এখানে যে জন্ম তারিখ দিবেন সেই অনুযায়ী আপনার জন্ম নিবন্ধনে জন্ম তারিখ আসবে। তাই সঠিক তারিখ দিয়ে ঘরটি পূরণ করবেন। জন্ম তারিখ দিয়ে ক্লিক করলে এখানে একটি নোটিশ আসবে। যেখানে আপনার জন্ম তারিখটি কতটুকু সত্য সে সম্পর্কিত ডকুমেন্ট আপনার কাছে আছে কি না জানতে চাইবে। নোটিশে দেওয়া আছে আপনার যদি পিএসসি, জেএসসি বা এসএসসি এর কোন ডকুমেন্টস যেমন সার্টিফিকেট বা রেজিষ্ট্রেশন থাকে তবে সেটা লাগবে। আর যদি না থাকে তবে বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড কাউন্সিল কর্তৃক স্বীকৃত এম বি বি এস বা তদুর্ধ ডিগ্রিধারী কোন ব্যাক্তির প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন হবে। আর আপনার স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কিত তথ্যের সত্যতার জন্য আপনার পিতা মাতা বা পিতামহীর দ্বারা স্বনামে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ঘোষিত আবাসস্থলের বিপরীতে হালনাগাদ কর পরিশোধের প্রমানপত্র অথবা আপনার পিতামাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপির প্রয়োজন হবে। আপনার যদি এই ডকুমেন্টগুলো থাকে তবে নোটিশের নিচের দিকে লেখা " আপনার কি এই ডকুমেন্ট গুলো আছে " লেখা এই অপশন ক্লিক করবেন। নিচে আরও একটি অপশন থাকবে যেখানে লেখা আছে " আমার কাছে এই ডকুমেন্টগুলো নেই"। তবে এখানে ক্লিক করবেন না। কারণ এখানে ক্লিক করলে অটোমেটিক ফরম থেকে বেরিয়ে আসবে। জন্ম নিবন্ধন করার জন্য এগুলো লাগবে তাই এগুলো সংগ্রহ করেই জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে হবে।
এরপরে আপনি আপনার পিতা মাতার কততম সন্তান সেটি দিতে হবে। আপনি যদি আপনার পিতা মাতার ১ম সন্তান হয়ে থাকেন তবে ১ লিখলেই হবে। আর আপনি যদি ২য় সন্তান হয়ে থাকেন তবে শুধু ২ লিখলেই হবে। এভাবে আপনি যততম সন্তান হন সেই সংখ্যাটি লিখে দিতে হবে।
পরবর্তী ঘরে আপনার লিঙ্গ সিলেক্ট করতে হবে। এজন্য লিঙ্গের ফাঁকা ঘরে ক্লিক করলে অপশন আসবে। সেখান থেকে আপনার লিঙ্গ সিলেক্ট করে দিবেন। পরবর্তী ঘরগুলো আপনার ঠিকানা সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ আপনার জন্ম স্থানেরর ঠিকানা সম্পর্কিত।
যার প্রথম ঘরে আপনাকে দেশ নির্বাচন করতে হবে। দেশ অবশ্যই বাংলাদেশ হবে। কারণ এখানে কেবল বাংলাদেশি নাগরিকরাই জন্ম সনদের জন্য আবেদন করতে হবে।
এরপরে আপনি বিভাগ নির্বাচন করবেন। বিভাগ নির্বাচনের পর পরবর্তী করে আপনার ডাকঘরের নাম লিখবেন। তবে ডাকঘরের নাম অবশ্যই বাংলায় লিখবেন। এর পরবর্তী ঘরে আপনি ডাকঘরের নাম ইংরেজিতে লিখবেন।
পরের ঘরে আপনি যদি গ্রামের হয়ে থাকেন তবে সেই গ্রাম বা পাড়ার নাম দিবেন। আর শহরের অধিবাসী হয়ে থাকলে আপনার মহল্লার নাম দিবেন। তবে মনে রাখবেন এখানে দুই জায়গায় গ্রাম/ পাড়া / মহল্লার নাম দিতে হবে। প্রথম ঘরে বাংলায় আর পরবর্তী ঘরে ইংরেজিতে লিখতে হবে।
এরপর আপনার বাসা ও সড়কের নাম ও নম্বর দিতে হবে। এটিরও দুটি ঘর থাকবে। যার প্রথম ঘরে বাংলায় এবং দ্বিতীয় ঘরে ইংরেজিতে লিখবেন। এটি লেখার মাধ্যমে আপনার প্রথম পেজে লেখার কাজ শেষ হল। এবার আপনি পুরো পেজটি উপর থেকে দেখা শুরু করুন। সব তথ্য ঠিক আছে কি না চেক করুন। লেখা চেক করা হয়ে গেলে নিচের দিকে পরবর্তী লেখা বাটনে ক্লিক করতে হবে।
এবার তৃতীয় পেজটি আসবে। এই পেজেও বেশকিছু তথ্য দিতে হবে।
এই পেজের প্রথম অংশে আপনার পিতার কিছু তথ্য দিতে হবে। প্রথম ঘরে আপনার পিতার ডিজিটাল বা অনলাইন জনম সনদের নিবন্ধন নাম্বার দিতে হবে। এর নিচের ঘরে পিতার নাম বাংলায় এবং তার নিচে পিতার নাম ইংরেজিতে লিখতে হবে। তবে পিতার নাম লিখার ক্ষেত্রে পিতার জন্ম নিবন্ধনে যেভাবে আছে তার অনুরূপ পিতার নাম দিতে হবে। এরপর পিতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিতে হবে। তবে এটি আবশ্যকীয় নয়। আপনার পিতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর সংগ্রহে না থাকলে এড়িয়ে যাবেন। তবে নম্বর দিতে পারাটা সবচেয়ে বেশি উত্তম হবে। নিচে পিতার জাতীয়তা দিতে হবে। পিতার জাতীয়তা লেখা ঘরের ফাঁকা ঘরে ক্লিক করলেই জাতীয়তার অনেক অপশন আসবে। সেখান থেকে আপনার পিতার জাতীয়তা নির্বাচন করে দিবেন।
এর পরের অংশে আপনার মাতার তথ্য দিতে হবে। এ অংশের প্রথমেই মাতার ডিজিটাল জন্ম সনদের নম্বর দিতে হবে। এরপর মাতার নাম প্রথমে বাংলায় এবং পরের ঘরে ইংরেজিতে লিখবেন। মনে রাখবেন এখানেও মায়ের নাম সনদে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবেই দিবেন। পরে মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর এবং এরপরে মাতার জাতীয়তা পূর্বের মতো নির্বাচন করে দিবেন। তবে লক্ষ্য রাখবেন পিতা মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রে যে জাতীয়তা আছে সেটিই দিবেন।
এরপর পুনরায় সকল আপনার প্রদত্ত সকল তথ্য ঠিক আছে কি না তা প্রথম থেকে দেখে নিন। সব তথ্য ঠিক থাকলে নিচের দিকে দেখবেন দুটি অপশন দেওয়া আছে। এখানে আপনি পরবর্তী বাটনে ক্লিক করবেন। তবে আপনি যদি মনে করেন পূর্বের অংশে যাবেন তবে পূর্ববর্তী বাটনে ক্লিক করতে পারবেন।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর একটি পেজ আসবে যেখানে উপরে লেখা রয়েছে। এর নিচে লেখা রয়েছেঃ আপনি নিচের কোন
ঠিকানাকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যাবহার করতে চান। এই লেখার নিচে কোনটিই নয় লেখাটিতে ক্লিক করতে হবে। লেখাটি ক্লিক করার পর জন্মস্থানের ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই হবে যাবে।
এটা সিলেক্ট করার পর নিচের দিকে স্ক্রল করে যাওয়ার পর নিচে লেখা আছে আপনি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান। এখানেও কোনটিই নয় সিলেক্ট করতে হবে। কোনটি নয় সিলেক্ট করার মাধ্যমে এখানেও স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই হবে। এখানে সব তথ্য ফিলআপ করার পর নিচের দিকে আসলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী নামে দুটি অপশন আছে। এখানে পরবর্তী বাটনে ক্লিক করতে হবে।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর যে নতুন পেজটি আসবে সেখানে বলা হবে যদি আপনার বয়স ১৮ এর কম হয়ে থাকে তবে আপনার অভিভাবকের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে আর যদি ১৮ বছর বা তার বেশি হয়ে থাকে তবে অভিভাবকের প্রয়োজন হবে না। এই লেখাটির পর নিচের দিকে নিজ ও অন্যান্য নামে দুটি অপশন থাকবে। যদি আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হয়ে থাকে তবে নিজ সিলেক্ট করবেন আর ১৮ বছরের কম হলে অন্যান্য সিলেক্ট করতে হবে। যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের নিচে হয়ে থাকে এবং আপনি অন্যান্য সিলেক্ট করে থাকেন তবে আপনার জন্য এখন যেভাবে বলব সেভাবেই তথ্য গুলো পূরণ করবেন।
অন্যান্য সিলেক্ট করলে প্রথমেই আপনার অভিভাবকের জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিতে হবে। এটি হতে পারে আপনার পিতা বা মাতার।
এরপর আপনার অভিভাবকের জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর দিতে হবে। যেহেতু আপনার বয়স 18 কম এবং আপনার অভিভাবক যেহেতু আবেদন করছে সুতরাং আবেদনকারীর নাম অপশনে আপনার অভিভাবকের নাম দিতে হবে
পরের অপশনে অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার দিতে বলা হয়েছে। সুতরাং এই অংশে আপনি আপনার অভিভাবকের মোবাইল নাম্বার দিবেন।
পরে ইমেইল এড্রেস চাওয়া হয়েছে। ইমেইল এড্রেস থাকলে আপনার ই-মেইল এড্রেসটি প্রদান করবে।ইমেইল এড্রেস না থাকলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আর যদি আপনার বয়স ১৮ বা তার বেশি হয়ে থাকে আর আপনি যদি নিজ সিলেক্ট করে থাকেন। তবে আবেদনকারি নাম অপশনে আপনার নাম প্রদান করবেন। পরের ঘরে আপনার ফোন নাম্বার দিতে হবে। এরপরের ঘরে আপনার ই মেইল প্রদান করবেন। তবে এটি আবশ্যক নয়। আপনার ইমেইল আইডির ইমেইল থাকলে ইমেইল প্রদান করবে। ইমেইল না থাকলে ইমেইল প্রদান করা দরকার নেই ।
এই তথ্যগুলো প্রদান করার পর নিচের দিকে স্ক্রল করে আসার পর এখানে সংযোজন নামে একটি বাটন আছে। আর্টিকেল এর শুরুতেই আমরা যে কাগজপত্রগুলো কথা বলেছিলাম সেগুলো এখানে যোগ করতে হবে। সংযোজন বাটনে প্রেস করে আপনাকে যে কাগজ গুলো যোগ করতে হবে সেগুলো হলো
জেএসসি বোর্ড এসএসসি সনদপত্র তবে সনদপত্র না থাকলে ডাক্তার কর্তৃক আপনার জন্মের সত্যায়িত পত্র লাগবে
পিতার জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
মাতার জন্ম সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি
সব কটি জিনিস দিলে ভালো এতে আপনার আবেদনটি ফুলফিল হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সংযোজন বাটনে ক্লিক করে পর ফাইলস ও ক্যামেরা নামের অপশন দেখাবে। আপনি দুটির যেকোনো একটির মাধ্যমে আপনার ডকুমেন্ট গুলো প্রদান করতে পারবেন তবে মনে রাখবেন এখানে ফাইলগুলো ১০০ কিলোবাইটের বেশী হবেনা। অর্থাৎ ১০০ কিলোবাইটের বেশি পরিমাণ ডাটা গুলো এখানে অ্যাক্সেস হয়না। তাই যথা সম্ভব ১০০ কিলোবাইটের মধ্যে ডাটাগুলো রাখার চেষ্টা করবেন। ফাইলস ও ক্যামেরা এই দুটি অপশনের যেকোন একটির মাধ্যমে আপনার ডকুমেন্টগুলো সংযোজন করতে হবে সে ক্ষেত্রে আপনি যদি পড়বেই ছবি তুলে রাখেন বা স্ক্যান করে ফাইলে রাখেন তবে ফাইলস অপশন থেকে ডকুমেন্টগুলো সিলেক্ট করে নেবেন আর যদি আপনি ইনস্ট্যান্ট ছবি তুলে দিতে চান তবে ক্যামেরা তে ক্লিক করবেন। ক্লিক করলে ক্যামেরা চালু হয়ে যাবে এবং আপনি ছবি তুলে ডকুমেন্টগুলো সংযোজন করতে পারবেন তবে এ ক্ষেত্রে একটু অসুবিধা হতে পারে কেননা ছবি তুলে পাঠালে বেশিরভাগ সময়ই ছবিটির আয়তন ১০০ কেবির বেশি হয়ে যাবে। তাই আগে থেকে ছবি তুলে সেগুলো রিসাইজ করে ১০০ কেবির মধ্যে দেখি ফাইলে রাখলে আপনার জন্য সুবিধা হবে এবং কোন ধরনের ঝামেলা পোহাতে হবে না। আগে থেকে তৈরি করে রাখলে সংযোজন করতে সুবিধা হবে তাই আগে থেকে ডকুমেন্ট গুলোর ছবি তুলে রাখলে সুবিধা হবে। ডকুমেন্টগুলোর ছবি তুলে ফাইলসে রাখলে ফাইলে ক্লিক করবেন।এতে করে ফাইলে ঢুকে যাবে এবং যে ডকুমেন্ট গুলোর কথা বলা হয়েছে তার যেকোন একটির উপর ক্লিক করবেন। ধরুন আপনি প্রথমে আপনার যে জেএসএসি বা এসএসসি এর সনদ অথবা মেডিকেল প্রত্যয়ন পত্র এড করবেন ৷ সেক্ষেত্রে ঐ ডকুমেন্টটির ছবি তুলে নাম দিয়ে রাখবেন। ওই ডকুমেন্টের উপর ক্লিক করবেন এতে করে ঐ ডকুমেন্ট টি এড হয়ে যাবে। এড হয়ে যাওয়ার পর এর পাশে বাম পাশে থাকা start বাটনে ক্লিক করবেন। মনে রাখবেন সবগুলো ডকুমেন্ট একসাথে যোগ করা সম্ভব নয় তাই একটি একটি করে ডকুমেন্ট যোগ করতে হবে। একটি ডকুমেন্ট যোগ হয়ে যাওয়ার পর আবার সংযোজন বাটনে ক্লিক করতে হবে এবং আপনার পিতার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি এড করবেন। পরে যে পেজটি আসবে ডকুমেন্টের অপশনের বামপাশে start বাটনে ক্লিক করবেন এতে কপিটি আপলোড হতে শুরু করবে। এরপর আবার সংযোজন বাটনে ক্লিক করএ মাতার জন্ম সনদ বা জাতীয় পরিচয় পত্র এড করে দিবেন এবং start বাটনে ক্লিক করলেই ডকুমেন্ট আপলোড হয়ে যাবে।
পরবর্তী বাটনে ক্লিক করার পর একটি নতুন পেজ আসবে যেখানে আপনি এতক্ষন যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেই সব তথ্যগুলো ফরম আকারে আসবে। সমস্ত তথ্যগুলো প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভাল করে পড়বেন। কোন ভুল যাতে না হয় সেজন্য ভাল করে পড়বেন। কোন ভুল থাকলে তা সংশোধন করার সুযোগ আছে। যদি কোন ভুল থাকে তবে পূর্ববর্তী বাটনে ক্লিক করে তথ্য সংশোধন করতে হবে। পূর্ববর্তী বাটনে ক্লিক করে যদি তথ্য সংশোধন করেন তবে পূর্বের মতো আবার পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে বর্তমান জায়গায় আসবেন। সব তথ্য ঠিক থাকলে আপনি নিচে আসবেন এবং সাবমিট বাটনে ক্লিক করবেন। সাবমিট বাটনে ক্লিক করার মাধ্যমে আপনার আবেদনটি সম্পন্ন হবে।
সাবমিট বাটনে ক্লিক করার পর নতুন পেজ আসবে যেখানে লেখা আসবে আপনার আবেদনটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই নতুন পেজে একটি নাম্বার থাকবে। এই নাম্বার টি অবশ্যই মনে রাখবেন অথবা কোথাও লিখে রাখবেন। কেননা নাম্বারটি মনে রাখা অবশ্যই জরুরি। সাবমিটের মাধ্যমে আবেদনটি সংশ্লিষ্টটি কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অনুসন্ধানের এখানে দেওয়া নাম্বারটি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এরপর নিচের প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে ফরমটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। ফরমটি প্রিন্ট করে তা সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।
কাগজপত্র জমা | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
এরপর পিতার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রে আর মাতার জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন ফরমটি নিয়ে নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদ অফিস বা পৌরসভা অফিস অথবা নির্বাচন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিতে হবে। অবশ্যই এই কাগজ গুলো ১৫ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে। ১৫ দিন পেরিয়ে গেলে তা আর কার্যকর থাকবে না।
৬.জন্ম নিবন্ধন সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর | নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে আবেদনকৃত জন্ম নিবন্ধন কোন অবস্থায় আছে তা দেখব কি করে?
আপনি চাইলেই অনলাইনে আবেদনকৃত জন্ম সনদের অবস্থা দেখতে পারবেন। এজন্য আপনাকে
https://bdris.gov.bd/br/application/স্ট্যাটাস
এই লিংকে যেতে হবে। এই লিংকে প্রবেশ করে আবেদন পত্রের অবস্থা, অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং আপনার জন্ম তারিখ প্রদান করলে আপনার আবেদন পত্রের অবস্থা দেখতে পারবেন
জন্ম নিবন্ধন' যাচাইয়ের উপায় কি?
আপনার জন্ম নিবন্ধন সঠিক কিনা তা যাচাই করতে আপনাকে একটি লিংকে গিয়ে শনাক্ত করতে হবে। https://everify.bdris.gov.bd/ এই লিংকে গিয়ে আপনার জন্ম সনদ যাচাই করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধনের তথ্য সংশোধনের উপায় কি?
যদি আপনার আগেই জন্ম নিবন্ধন থেকে থাকে এবং আপনি যদি আগের জন্ম সনদটি সংশোধন করতে চান তবে https://bdris.gov.bd/br/correction এই লিংকে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে পারবেন
জাতীয় আপনি ওয়েবসাইট ব্রাউজিং করে জন্ম নিবন্ধন এর কোনো তথ্য না পান তোর জন্ম নিবন্ধন নাম্বারটি ভালো করে দেখে আবার চেষ্টা করুন।যদি এই নাম্বারে কোন জন্ম নিবন্ধন খুঁজে না পান তবে বুঝবেন জন্ম নিবন্ধন তথ্য সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়নি। সেজন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ অফিস অথবা পৌরসভা অফিস অথবা নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিস এর কার্যালয়ে যোগাযোগ করবেন
৭. লেখকের মন্তব্য|নতুন জন্ম নিবন্ধন আবেদন প্রক্রিয়া
জন্ম নিবন্ধন বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকা উচিত। শিক্ষায়, বিবাহে, জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করতে, পাসপোর্টের আবেদন করতে, ব্যাংক একাউন্ট খুলতে সব ক্ষেত্রেই এটি প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে জন্ম নিবন্ধন এর প্রয়োজন হয় না। জন্ম সনদ হল একটি শিশুর দেশের নাগরিক হিসেবে প্রথম পরিচয় পত্র। তাই সবাই জন্ম সনদ করে নিবেন এবং অন্যকেউ সচেতন করে দিবেন। অবশ্যই শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন করে নিবেন।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url