OrdinaryITPostAd

কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে

মানুষ সহ সকল প্রাণীর রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।রিজিক একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র যার সর্বনিম্ন স্তর হচ্ছে টাকা-পয়সা,অর্থ -সম্পদ।রিজিক বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হয়।তাই অনেকে কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে তা জানতে আগ্রহী। আজকে আমরা কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে তা নিয়ে আলোচনা করব। কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে এবং কি আমল করলে রিজিক বৃদ্ধি হয় তা নিয়েই আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করব।



অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. রিজিকের ধারণা
  2. রিজিক বৃদ্ধির দোয়া 
  3. রিজিক বৃদ্ধির জন্য ইস্তেগফার ও তাসবীহ
  4. লেখকের মন্তব্য 

১.রিজিকের ধারণা | কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে 

কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে তা জানার আগে আমাদের রিজিক সম্পর্কে জানতে হবে। কেননা দোয়া কবুল হওয়ার জন্য দোয়া যথাযথ এবং সঠিক হওয়া জরুরি। যদি আমরা রিজিক সম্পর্কে বিস্তারিত না জানি তাহলে সঠিকভাবে দোয়া করতে পারব না।তাই আর্টিকেলের এই অংশে আমরা রিজিক নিয়ে আলোচনা করব।

রিজিক আরবি শব্দ। রিজিক হলো, মহান আল্লাহর বিশেষ দান। বিখ্যাত আরবি অভিধানপ্রণেতা আল্লামা আবু নসর জাওহারি (রহ.) বলেন, "যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, তা-ই রিজিক। তদ্রুপ রিজিক মানে বিশেষ দানও।" (আস সিহাহ : ৪৪০)

রিজিক দু’প্রকার।

১.দেহের জন্য; যেমন খাদ্য, 

২.অন্তর ও আত্মার জন্য; যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞান।’ (লিসানুল আরব : ৫/২৩৯)

মোটকথা, রিজিক হলো আল্লাহর এমন বিশেষ দান, যা দ্বারা সময় অনুযায়ী দেহ ও আত্মার উপকার লাভ হয় এবং যা লাভ করার পর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হয়। তবে এসবের মধ্যে মূল অর্থ হলো খাদ্য; যা দ্বারা প্রাণ বেঁচে থাকে ও দেহের বৃদ্ধি ঘটে।

রিজিকের সর্বনিম্ন স্তরঃ টাকা, পয়সা, অর্থ, সম্পদ ।

সর্বোচ্চ স্তরঃ শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা।

সর্বোত্তম স্তরঃ পুণ্যবান স্ত্রী ও পরিশুদ্ধ নেক সন্তান

পরিপূর্ণ স্তরঃ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি।

রিজিক খুব গভীর একটি বিষয়। প্রতিটি মানুষ পুরো জীবনে কী পরিমাণ খাদ্যগ্রহন করবে, কত টাকা উপার্জন করবে,তার শারীরিক সুস্থতা কেমন হবে সকল কিছু পূর্বনির্ধারিত। আল্লাহ মানুষের জন্মের সাথে সাথেই এসব নির্ধারণ করে দেন যার অণু পরিমাণ কম বা বেশি রিজিক পাওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু মানুষের দোয়া আল্লাহ কখনও ফিরিয়ে দেন না। তাই দোয়ার মাধ্যমে মানুষ তার রিজিক বৃদ্ধির অনুরোধ করতে আল্লাহর কাছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দার দোয়া কবুল করে অফুরন্ত রিজিক দান করতে পারেন।

২.রিজিক বৃদ্ধির দোয়া | কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে 

আল্লাহ হলেন রাজ্জাক বা রিজিকদাতা। তিনিই সকল প্রাণীর রিজিকের মালিক। যদিও রিজিক পূর্ব নির্ধারিত একটি বিষয় তবুও মানুষ যেন রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়া করতে পারে তাই অনেক দোয়া ও আমল আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) আমাদের শিখিয়েছেন। কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে সে সম্পর্কে কিছু দোয়া থাকছে আর্টিকেলের এই অংশে।

দোয়া-১:

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মাকফিনী বিহালা-লিকা ‘আন হারা-মিকা ওয়া আগনিনী বিফাদ্বলিকা ‘আম্মান   সিওয়া-ক।

অর্থ: "হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট কর। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর।"

আলী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, একটি চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা’আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। অতঃপর তিনি উপরিউক্ত দোয়াটি বললেন।   (সুনান আত তিরমিজী, হাদিস ৩৫৬৩)

দোয়া-২:

বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-‘আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিনাল-বুখলি ওয়াল-জুবনি, ওয়া আ‘ঊযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজা-ল।

বাংলা অর্থ: "হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।  (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২৮৯৩)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রাসুল তাকে বললেন, আবু উমামা! ব্যাপার কী, নামাজের সময় ছাড়াও তোমাকে মসজিদে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে?আবু উমামা বললেন, ইয়া রসুলাল্লাহ! অনেক ঋণ এবং দুনিয়ার চিন্তা আমাকে গ্রাস করে রেখেছে। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু কালিমা শিখিয়ে দেব, যেগুলো বললে আল্লাহ তায়ালা তোমার চিন্তাকে দূর করে দেবেন এবং তোমার ঋণগুলো আদায় করে দেবেন।

তিনি বলেন, "জি হ্যাঁ ইয়া রসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন, তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপরোক্ত  দোয়াটি শিখিয়ে দেন এবং তা সকাল সন্ধ্যায় পড়তে বলেন।"

আবু উমামা বলেন, "আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ দোয়াটি পড়তে লাগলাম ফলে আল্লাহ তায়ালা আমার চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার ঋণগুলোও আদায় করে দিলেন।"

দোয়া-৩:

বাংলা উচ্চারণ : ওয়া মাই-ইয়াত্তাকিল্লাহা ইয়াজ আল্লাহু মাখরাজা। ওয়া ইয়ারযুকহু মিন হাইসু লা ইয়াহ তাসিব।   ওয়া মান ইয়া তা ওয়াক্কাল আলাল্লাহি ফাহু ওয়া হাসবুহু ইন্নাল্লাহা বালিগু আমরিহি কাদযায়াল্লাহু লিকুল্লি শাইয়িন কাদরা।

অর্থ: আর যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ বের করে দেবেন; তাকে ওই স্থান থেকে জীবিকা দেবেন, যেখানে তার কল্পনাও থাকে না এবং যে আল্লাহর উপর ভরসা করে,তবে তিনি তার জন্য যথেষ্ট।নিশ্চয় আল্লাহ তার কাজ পরিপূর্ণকারী। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ রেখেছেন।  ( সুরা-ত্বালাক, আয়াত ১,২)

উপরোক্ত আয়াতদ্বয় সকাল সন্ধ্যা তিনবার করে পাঠ করলে রিজিক বৃদ্ধি পায়।

৩.রিজিক বৃদ্ধির জন্য ইস্তেগফার ও তাসবীহ | কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে 

সর্বদা ইস্তেগফার (আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) করলে ও দরুদ শরীফ পড়লে যাবতীয় সমস্যা সমাধান হয়, অভাব দূর হয়। হাদিস শরীফে রয়েছে,

হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার (আল্লাহ পাকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা) করবে, (অর্থাৎ সর্বদা আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি.. শেষ পর্যন্ত পড়বে) আল্লাহ তার সকল সংকট থেকে উদ্ধারের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা দূর করে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস হতে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। ’ (উৎস: আবু দাউদ শরীফ: ১৫২০, ইবনে মাজা শরীফ:৩৮১৯) 

কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে আর্টিকেলের এই অংশে আমরা কয়েকটি ইস্তেগফার ও তাসবিহ নিয়ে আলোচনা করব যার দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে আমরা অভাব থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি।

ইস্তেগফার-১:

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়া বিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহ।

অর্থ: মহাপবিত্র আল্লাহ এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য; মহাপবিত্র আল্লাহ, যিনি সমুচ্চ, মহান; এবং সকল প্রশংসা তাঁর জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।

এ তাসবীহ যথাসম্ভব সুবহে সাদিক শুরু হওয়ার সাথে সাথে অথবা সকালের আগে ১০০ বার পাঠ করতে হবে।

ইস্তেগফার-২:

উচ্চারণ : লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লাবিল্লাহ- লা মালজায়া মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি।

অর্থ : আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলে মশগুল হওয়া সম্ভব না। আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

বিখ্যাত তাবেয়ি হজরত মাকহুল (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো সাতবার বলবে আল্লাহতায়ালা তার সত্তরটি অভাব দূর করবেন। (তন্মধ্যে) সবচেয়ে হাল্কা বিপদ হলো (মানুষের) অভাব। 

ইস্তেগফার -৩:

উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল মালিকুল হাক্কুল মুবিন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ, আস সাদিকুল ওয়াদিল আমিন।

অর্থ: সর্ব শক্তিমান আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের কেউ যোগ্য নয়, শুধুমাত্র তিনিই প্রকৃত মালিক। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, যিনি অঙ্গীকার রক্ষা করেন এবং ‍যিনি বিশ্বস্ত।

যদি কেউ এই দোয়া প্রতিদিন ১০০ বার পরে তবে তা দারিদ্রতার বিরুদ্ধে তাকে নিরাপত্তা দেবে,সম্পদ অর্জনের মাধ্যম হবে এবং কবরের পরীক্ষা থেকে সে মুক্ত থাকবে।   (তারিখে বাগদাদ,খণ্ড ১২ পৃষ্ঠা ৩৫৮,আল হিলিয়া,খন্ড ৮ পৃষ্ঠা ৩০৯)

৪.লেখকের মন্তব্য | কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে 

কোন দোয়া পড়লে টাকা আসে তা সকলের জানা দরকার এবং সেই অনুযায়ী আমল করা দরকার।রাসুল (সাঃ) বলেন- 'মানুষ ঋণী হলে, কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলে এবং অঙ্গীকার করলে, রক্ষা করে না। '     (বোখারি, হাদিস নং : ২৩৯৭) 

তাই আমাদের ঋণমুক্ত থাকা প্রয়োজন এবং আল্লাহর কাছে ঋণমুক্তি ও রিজিক বৃদ্ধির জন্য দোয়া করা প্রয়োজন।

আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন,মতামত,পরামর্শ কিংবা অভিযোগ কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech ভিজিট করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ ফিতরা কত টাকা

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url