OrdinaryITPostAd

মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম

মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম ছেলেদের থেকে ভিন্ন নয়।মেয়েরাও ছেলেদের মতো মসজিদে গিয়ে কিংবা বাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে, তবে মেয়েদের বাড়িতে নামাজ পড়াই উত্তম।প্রাপ্তবয়স্ক সকল মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।কেননা তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আজকের এই আর্টিকেলে মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। 



অনুচ্ছেদ সূচি ( যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. তারাবির নামাজ কী এবং কখন পড়তে হয়
  2. তারাবি নামাজের নিয়ম 
  3. তারাবির নামাজ কত রাকাত
  4. লেখকের মন্তব্য 

১.তারাবির নামাজ কী এবং কখন পড়তে হয়|মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম 

তারাবি একটি আরবি শব্দ এর আভিধানিক অর্থ আরামের সহিত,ধীরে ধীরে,বিশ্রাম নিয়ে।আয়তনে একটু বেশি হওয়ায় এবং এশার সালাতের পর এই সালাত আদায় করতে হয় বলে ধীরে ধীরে,সময় নিয়ে,বিশ্রামের সহিত এই সালাত আদায় করতে হয়, তাই একে তারাবি বা কিয়ামুল্লাইল (রাতের সালাত) বলা হয়।

তারাবির নামাজ রমজানের প্রথম দিন‌ (চাঁদ দেখা সন্ধ্যা) থেকে শুরু হয়ে রমজানের শেষ দিন (দ্বিতীয় চাঁদ দেখা সন্ধ্যা) পর্যন্ত পড়া হয়।এই নামাজ টি ইসলামী বর্ষপঞ্জির রমজান মাসে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে পড়তে হয়। তারাবি মূলত রাতের প্রথম প্রহরে পড়া হলো সুন্নাহ।তবে কোন কারনে যদি কারো এই সময়ে নামাজ আদায় সম্ভব না হয় তাহলে সেহরির সময় অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্তের আগে পর্যন্ত এই সালাত আদায় করে নেওয়া যাবে।কিন্তু তারাবি নামাজের মূল ওয়াক্ত সন্ধ্যারাতে এই সালাত আদায় করা উত্তম।

২.তারাবি নামাজের নিয়ম|মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম 

তারাবিহ নামাজ মূলত দুইটি নিয়মে পড়া হয়। একটি হলো খতম তারাবি আর একটি সূরা তারাবি।খতম তারাবির ক্ষেত্রে ২৯/৩০ দিনের তারাবি নামাজে পুরো কুরআন শরীফ শেষ করা হয়।আর সূরা তারাবির ক্ষেত্রে কুরআান শরীফের যেকোনো সূরা এক বা একাধিকবার পড়ে নামাজ শেষ করা হয়।বেশিরভাগ মেয়েরা সূরা তারাবি পড়ে থাকে।মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে তাই মেয়েদের সূরা তারাবি নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

  • নিয়ত করা: তারাবি নামাজের প্রচলিত একটি নিয়ত রয়েছে যা হলো : "নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'য়ালা রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা'য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর"। নিয়ত হচ্ছে অন্তরের ইচ্ছার নাম।কোনো কাজ করার জন্য আমরা মনে মনে যে ইচ্ছা পোষণ করি তাই নিয়ত।তারাবি নামাজের প্রচলিত এই নিয়তটি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত না।তাই এই নিয়ত পড়া গ্রহনযোগ্য না।
  • তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলার পর বুকে হাত বেধে প্রথমে সানা পড়তে হবে৷সাধারণ নামাজের মত তারাবির নামাজের প্রত্যেক  দুই রাকাতের শুরুর রাকাতে সানা পড়া সুন্নাত।সানা:"সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআ-লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গায়রুক"
  • সানা পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।খতম তারাবির ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর সূরা বাকারাহ'র এক রূকু পরিমান আয়াত তিলাওয়াত করতে হয়।সূরা তারাবির ক্ষেত্রে যেকোন একটা সূরা পড়তে হবে।এক্ষেত্রে প্রথম ১০ রাকাতে সূরা ফিল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পড়ে পরের ১০ রাকাতে একই নিয়মে পড়তে পারে।
  • এরপর সাধারন নামাজের মতো রুকু সিজদা করে দুই রাকাত পর আত্তাহিয়াতু,দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত করতে হবে।( কেউ মুনাজাত না করে একেবারে নামাজ শেষেও মুনাজাত করতে পারে)
  • তারাবি নামাজের দোয়া:"সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’ তারাবি নামাজে প্রচলিত এই দোয়া প্রতি ৪রাকাতের শেষে পড়তে হয়।তবে এই দোয়া কুরআন কিংবা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।আর কুরআন, সুন্নাহ ব্যতিত কোনো আমলকে ইবাদত হিসেবে গন্য করা উচিত নয়।
  • তারাবি নামাজের মুনাজাত:"আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’ অনেকেই প্রতি ৪রাকাত পর পর মুনাজাত করেন আবার অনেকেই নামাজ শেষ করে মুনাজাত করেন।মুনাজাত একেবারে শেষে করলেও সমস্যা নেই।
তারাবি নামাজের প্রচলিত যে দোয়া ও মুনাজাত রয়েছে তা কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।সুতরাং এসব দোয়া ও মুনাজাত না পড়লে নামাজ হবে না এমন ধারনা করা ঠিক না।
রমজান জুড়ে বিশ্বনবী (স:) কিছু ইসতেগফার বেশি বেশি পড়তেন। তারাবি নামাজের ৪রাকাতের পর এগুলো আমরা পড়তে পারি। 
  • আরবি উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
  • আরবি উচ্চারণ:"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।"

৩.তারাবির নামাজ কত রাকাত|মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম 

তারাবির নামাজ কত রাকাত এ বিষয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে।মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে আমরা তারাবির নামাজ কত রাকাত তা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

তারাবির নামাজ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি মতামত রয়েছে ৮ রাকাত ও ২০রাকাতের পক্ষে।মা আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) হতে বর্ণিত "রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রমজান মাস কিংবা অন্য মাসের রাতে এশার সালাতের পর আট রাকাতের ( বিতর ব্যতীত) বেশি সালাত আদায় করতেন না" ( সহীহ্ বোখারী, ১১৪৭)।মহানবী (সা:)তারাবির নামাজ ২০ রাকাত পড়েছেন এমন কোন শুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত দলিল নেই। সুতরাং তারাবির নামাজ ৮ রাকাত এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। 
তবে এই বর্ণনা দিতে গিয়ে অনেক উলামায়ে কেরামগণ মনে করেন এই হাদিসটি মূলত তাহাজ্জুদ সংক্রান্ত হাদিস।মহানবী (স:) প্রতি রাতে আট রাকাত তাহাজ্জুদের সালাত ও তিন রাকাত বিতরের সালাত আদায় করতেন।এই বিষয়ে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম) কতৃক নির্দিষ্ট কোনো হাদিস বর্ণিত হয় নি।রমজান মাসে তিনি তিন দিন এই নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করেছেন।তিনি নিয়মিত সম্মিলিতভাবে জামাতের সঙ্গে তারাবি নামাজ আদায় করলে তা ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল তাই পুরো রমজান তিনি জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করেননি।

মূলত নিয়মতান্ত্রিকভাবে তারাবির নামাজ পড়ার প্রচলন ঘটে ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর (রা:) এর যুগে।এ বিষয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হাদিস নিচে দেওয়া হলো:
  1. তাবেঈ ইবনে আবি জুবাব (রহ.) বলেন, "ওমর (রা.)-এর যুগে রমজানের তারাবি ছিল ২৩ রাকাত।" ( ২০রাকাত তারাবি ৩ রাকাত বিতর)(মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৭৩৩)
  2. প্রখ্যাত তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, "উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।" (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : হাদিস : ৭৭৬৬)
  3. পৃথিবীর প্রথম সহিহ হাদিসগ্রন্থ ‘মুয়াত্তা মালিক’সহ অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, "উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে ২৩ রাকাত তারাবি পড়তেন।" (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৩৮০; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪৯)
উপরোল্লিখিত হাদিস সমূহ দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে ওমর (রা:) এর খিলাফতের সময় ২০ রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করা হতো।আর মহানবী (সঃ), ' আমার ও আমার খুলাফায়ে রাশেদের সুন্নাত দৃঢ়ভাবে ধারন করা তোমাদের জন্য অপরিহার্য। " ( সুনানে আবু দাউদ,হাদিস:৪৬০৭,তিরমিজি, হাদিস:২৬৭৬,মুসনাদে আহমাদ,হাদিস ১৬৬৯২,সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদিস ৪২)
সুতরাং তারাবি নামাজ ২০ রাকাত এটি সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত এবং আমাদের জন্য অনুসরনীয়।তবে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত পড়াও শরীয়াহ বিরোধী নয়।তাই তারাবি নামাজ ৮ রাকাতও পড়া যাবে ২০ রাকাতও পড়া যাবে।

৪.লেখকের মন্তব্য|মেয়েদের তারাবির নামাজের নিয়ম

আজকের আর্টিকেলে আমরা মেয়েদের তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন, মতামত,পরামর্শ কিংবা অভিযোগ কমেন্ট করে জানাতে পারেন।এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url