মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম ছেলেদের থেকে ভিন্ন নয়।মেয়েরাও ছেলেদের মতো মসজিদে গিয়ে কিংবা বাড়িতে তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবে, তবে মেয়েদের বাড়িতে নামাজ পড়াই উত্তম।প্রাপ্তবয়স্ক সকল মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে।কেননা তারাবির নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। আজকের এই আর্টিকেলে মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
অনুচ্ছেদ সূচি ( যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)
১.তারাবির নামাজ কী এবং কখন পড়তে হয়|মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
তারাবি একটি আরবি শব্দ এর আভিধানিক অর্থ আরামের সহিত,ধীরে ধীরে,বিশ্রাম নিয়ে।আয়তনে একটু বেশি হওয়ায় এবং এশার সালাতের পর এই সালাত আদায় করতে হয় বলে ধীরে ধীরে,সময় নিয়ে,বিশ্রামের সহিত এই সালাত আদায় করতে হয়, তাই একে তারাবি বা কিয়ামুল্লাইল (রাতের সালাত) বলা হয়।
তারাবির নামাজ রমজানের প্রথম দিন (চাঁদ দেখা সন্ধ্যা) থেকে শুরু হয়ে রমজানের শেষ দিন (দ্বিতীয় চাঁদ দেখা সন্ধ্যা) পর্যন্ত পড়া হয়।এই নামাজ টি ইসলামী বর্ষপঞ্জির রমজান মাসে এশার নামাজের পর এবং বিতরের আগে পড়তে হয়। তারাবি মূলত রাতের প্রথম প্রহরে পড়া হলো সুন্নাহ।তবে কোন কারনে যদি কারো এই সময়ে নামাজ আদায় সম্ভব না হয় তাহলে সেহরির সময় অর্থাৎ ফজরের ওয়াক্তের আগে পর্যন্ত এই সালাত আদায় করে নেওয়া যাবে।কিন্তু তারাবি নামাজের মূল ওয়াক্ত সন্ধ্যারাতে এই সালাত আদায় করা উত্তম।
২.তারাবি নামাজের নিয়ম|মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
তারাবিহ নামাজ মূলত দুইটি নিয়মে পড়া হয়। একটি হলো খতম তারাবি আর একটি সূরা তারাবি।খতম তারাবির ক্ষেত্রে ২৯/৩০ দিনের তারাবি নামাজে পুরো কুরআন শরীফ শেষ করা হয়।আর সূরা তারাবির ক্ষেত্রে কুরআান শরীফের যেকোনো সূরা এক বা একাধিকবার পড়ে নামাজ শেষ করা হয়।বেশিরভাগ মেয়েরা সূরা তারাবি পড়ে থাকে।মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম আর্টিকেলের এই অংশে তাই মেয়েদের সূরা তারাবি নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
- নিয়ত করা: তারাবি নামাজের প্রচলিত একটি নিয়ত রয়েছে যা হলো : "নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা'য়ালা রাকাআতাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা'য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবর"। নিয়ত হচ্ছে অন্তরের ইচ্ছার নাম।কোনো কাজ করার জন্য আমরা মনে মনে যে ইচ্ছা পোষণ করি তাই নিয়ত।তারাবি নামাজের প্রচলিত এই নিয়তটি কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত না।তাই এই নিয়ত পড়া গ্রহনযোগ্য না।
- তাকবিরে তাহরিমা (আল্লাহু আকবার) বলার পর বুকে হাত বেধে প্রথমে সানা পড়তে হবে৷সাধারণ নামাজের মত তারাবির নামাজের প্রত্যেক দুই রাকাতের শুরুর রাকাতে সানা পড়া সুন্নাত।সানা:"সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআ-লা জাদ্দুকা, ওয়ালা ইলাহা গায়রুক"
- সানা পড়ার পর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে।খতম তারাবির ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহার পর সূরা বাকারাহ'র এক রূকু পরিমান আয়াত তিলাওয়াত করতে হয়।সূরা তারাবির ক্ষেত্রে যেকোন একটা সূরা পড়তে হবে।এক্ষেত্রে প্রথম ১০ রাকাতে সূরা ফিল থেকে সূরা নাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পড়ে পরের ১০ রাকাতে একই নিয়মে পড়তে পারে।
- এরপর সাধারন নামাজের মতো রুকু সিজদা করে দুই রাকাত পর আত্তাহিয়াতু,দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে মুনাজাত করতে হবে।( কেউ মুনাজাত না করে একেবারে নামাজ শেষেও মুনাজাত করতে পারে)
- তারাবি নামাজের দোয়া:"সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইয্যাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিব্রিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রূহ।’ তারাবি নামাজে প্রচলিত এই দোয়া প্রতি ৪রাকাতের শেষে পড়তে হয়।তবে এই দোয়া কুরআন কিংবা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।আর কুরআন, সুন্নাহ ব্যতিত কোনো আমলকে ইবাদত হিসেবে গন্য করা উচিত নয়।
- তারাবি নামাজের মুনাজাত:"আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।’ অনেকেই প্রতি ৪রাকাত পর পর মুনাজাত করেন আবার অনেকেই নামাজ শেষ করে মুনাজাত করেন।মুনাজাত একেবারে শেষে করলেও সমস্যা নেই।
- আরবি উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
- আরবি উচ্চারণ:"আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আ’ন্নি।"
আরও পড়ুনঃ কোন কোন ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারে
৩.তারাবির নামাজ কত রাকাত|মেয়েদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
- তাবেঈ ইবনে আবি জুবাব (রহ.) বলেন, "ওমর (রা.)-এর যুগে রমজানের তারাবি ছিল ২৩ রাকাত।" ( ২০রাকাত তারাবি ৩ রাকাত বিতর)(মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ৭৭৩৩)
- প্রখ্যাত তাবেঈ আবদুল আজিজ ইবনে রুফাই (রহ.) বলেন, "উবাই ইবনে কাব (রা.) রমজানে মদিনায় লোকদের নিয়ে ২০ রাকাত তারাবি ও তিন রাকাত বিতর পড়তেন।" (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : হাদিস : ৭৭৬৬)
- পৃথিবীর প্রথম সহিহ হাদিসগ্রন্থ ‘মুয়াত্তা মালিক’সহ অন্যান্য কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, তাবেঈ ইয়াজিদ ইবনে রুমান (রহ.) বলেন, "উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগে লোকেরা রমজানে ২৩ রাকাত তারাবি পড়তেন।" (মুয়াত্তা মালিক, হাদিস : ৩৮০; আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকি, হাদিস : ৪২৪৯)
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url