OrdinaryITPostAd

রমজানের রোজা সম্পর্কে ছোট ছোট হাদিস সমগ্র!

রোজা বা সিয়াম হচ্ছে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের ভিতর তৃতীয় স্তম্ভ।আর রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।ইসলামে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক।তাই বিভিন্ন হাদিস শরীফে রমজান নিয়ে  রোজা সম্পর্কে  ছোট হাদিস উদ্ধৃত হয়েছে।সঠিক নিয়মে সিয়াম পালনের জন্য রমজানের  রোজা সম্পর্কে ছোট ছোট হাদিস জানা জরুরী।তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা রমজান নিয়ে ছোট হাদিস সমূহ আলোচনা করব।



অনুচ্ছেদ সূচি - রোজা সম্পর্কে ছোট ছোট হাদিস

  1. হাদিস কী
  2. রোজার বিধান নিয়ে হাদিস
  3. রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে হাদিস
  4. প্রশ্ন-উত্তর পর্ব 
  5. লেখকের মন্তব্য 

১.হাদিস কী? -  রমজান নিয়ে ছোট হাদিস

যেকোনো হাদিস পড়ার আগে আমাদের জানতে হবে মূলত হাদিস কী এবং কোন হাদিসগুলো সহীহ বা শুদ্ধ আর কোনগুলো জাল বা মিথ্যা হাদিস।তাই রমজান নিয়ে ছোট হাদিস আলোচনার পূর্বে আমরা হাদিস কী এই বিষয়ে জানব।

হাদীস আরবী শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ কথা, বানী, সংবাদ, উপদেশ ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় হাদীস হচ্ছে- রাসূল (সঃ) এর কথা, কাজের বিবরণ কিংবা কথা ও কাজের সমর্থন ও অনুমোদন। হাদিস বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে প্রমানিত হতে হবে। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেন - "রাসূল (সঃ) এর কথা, কাজ ও মৌন সম্মতিই হল হাদীস।"হাদিসকে সুন্নাহ বা সুন্নাতও বলা হয়।

ইসলামি শরীয়তের চারটি উৎস হলো কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস।এর মধ্যে কুরআন হলো আল্লাহ তায়ালার প্রেরিত কিতাব। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ মানবজাতির পরিপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তবে কিছু ব্যাপার রয়েছে যা সংক্ষিপ্ত আকারে কুরআনে উল্লেখ রয়েছে কিন্তু এর বিস্তারিত রাসুল (সাঃ) ব্যাখ্যা করেছেন।  যেমন কুরআনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার কথা বলা হয়েছে, কিন্তু নামাজ কিভাবে পড়তে হবে, কখন পড়তে হবে ইত্যাদি ব্যাখ্যা কুরআনে নেই। রাসুল (সাঃ) এগুলো ব্যাখ্যা করেছেন যা হাদিসে সংরক্ষিত রয়েছে। তাই হাদিসকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে হাদিস জানতে হবে, মানতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে।

২.রোজার বিধান নিয়ে হাদিস - রোজা সম্পর্কে ছোট ছোট হাদিস

রমজান মাসে রোজা ফরজ হওয়ার বিষয় আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদে অনেক আয়তে উল্লেখ করেছেন। আর মহানবী (সঃ) রোজার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যেটা হাদিসে সংরক্ষিত রয়েছে। রমজান নিয়ে ছোট হাদিস আর্টিকেলের এই অংশে আমরা রোজার বিধান নিয়ে কয়েকটি হাদিস জানব।

সেহেরি নিয়ে হাদিস:

  • আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, "সেহরী খাওয়াতে বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা খেতে ছেড়ো না; যদিও তাতে তোমরা এক ঢোক পানিও খাও। কেননা, যারা সেহরী খায় তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন এবং ফিরিশতা দুআ করতে থাকেন।"                             (আহমাদ, মুসনাদ, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৩৬৮৩নং হাদীস)
  • আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, যায়দ বিন ষাবেত তাঁকে জানিয়েছেন যে, তাঁরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সেহরী খেয়ে (ফজরের) নামায পড়তে উঠে গেছেন। আনাস বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, "সেহরী খাওয়া ও আযান হওয়ার মধ্যে কতটুকু সময় ছিল?'উত্তরে যায়দ বললেন, 'পঞ্চাশ অথবা ষাটটি আয়াত পড়তে যতটুকু লাগে।'                                    (বুখারী ৫৭৫) 
ইফতার নিয়ে হাদিস:
  • হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, "আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।" (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১)।
  • হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যেকোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (তিরমিজি ৭৬৬,) আল্লাহর কাছে সাওমকারীর মুখের গন্ধ মিসকের সুগন্ধি হতেও উত্তম (বুখারী ৭৪৯২)
  • আবদুল্লাহ ইবনু 'আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইফতারের সময় রোযাদারের অবশ্যই একটি দু’আ আছে, যা রদ হয় না (কবুল হয়)।  ইবনু আবূ মুলাইকা (রহ.) বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে ইফতারের সময় বলতে শুনেছিঃ "হে আল্লাহ্! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর উপর পরিব্যপ্ত, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন"।       (ইবনে মাজাহ ১৭৫৩)
  • নবীজি (সা.) বলেন, ‘যখন রাত্র সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে ও দিন এদিক থেকে চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায়, তখন রোজাদার ইফতার করবে।’ (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩০)
  • হজরত সাহল ইবনে সাআদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'যত দিন লোকেরা ওয়াক্ত হওয়ামাত্র ইফতার করবে, তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।' (বুখারি, সাওম অধ্যায়, হাদিস: ১৮৩৩)

৩.রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে হাদিস |  রমজান নিয়ে ছোট হাদিস

রোজার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কুরআন ও হাদিসে কুদসিতে রোজাদারদের অনেক খুশির সংবাদ দিয়েছেন। রমজান নিয়ে ছোট হাদিস আর্টিকেলের এই অংশে আমরা রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত নিয়ে কিছু হাদিস জানব ইনশাআল্লাহ।  
  1. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "জান্নাতে রাইয়্যান’ নামক একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীগণ ছাড়া অন্য কেউ তাদের সাথে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কিয়ামতের দিন সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীদেরকে ডেকে বলা হবে, সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। অতঃপর সিয়াম (রোজা/রোযা) পালনকারীদের শেষ লোকটি প্রবেশ করার সাথে সাথে তা বন্ধ করে দেয়া হবে। অতঃপর সে দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।"   (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৫২)
  2. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, "আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও সিয়াম পালন করে, আল্লাহ্ তার মুখমন্ডলকে দোযখের আগুন হতে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।"  (বুখারী,হাদিস ২৮৪০)
  3. আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রমাযানের সিয়াম ব্রত পালন করে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।" (সহীহ বুখারী, হাদিস ৩৮)
  4. আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলাল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ মানব সন্তানের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব দশ গুণ থেকে সাতশ গুণ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। মহান আল্লাহ বলেন, “কিন্তু সিয়াম (রোজা/রোযা) আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিফল দান করব। বান্দা আমারই জন্য নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং পানাহার পরিত্যাগ করেছে।" সিয়াম পালনকারীর জন্য দুটি আনন্দ রয়েছে। একটি তার ইফত্বারের সময় এবং অপরটি তার প্রতিপালক আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সময়।      (সহীহ মুসলিম, হাদিস ১১৫১)
  5. ইবনু ’উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমাযানকে স্বাগত জানাবার জন্য বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জান্নাতকে সাজানো হতে থাকে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, বস্তুত যখন রমাযানের প্রথম দিন শুরু হয়, ’আরশের নীচে জান্নাতের গাছপালার পাতাগুলো হতে ’’হূরিল ’ঈন’’-এর মাথার উপর বাতাস বইতে শুরু করে। তারপর হূরিল ’ঈন বলতে থাকে, হে আমাদের রব! তোমার বান্দাদেরকে আমাদের স্বামী বানিয়ে দাও। তাদের সাহচর্যে আমাদের আঁখি যুগল ঠাণ্ডা হোক আর তাদের চোখ আমাদের সাহচর্যে শীতল হোক।            (মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদিস ১৯৬৭)

৪.প্রশ্ন-উত্তর পর্ব | রমজান নিয়ে ছোট হাদিস

আর্টিকেলের এই অংশে রমজান নিয়ে ছোট হাদিস সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।
  1. প্রশ্ন:হাদিস বিশ্বাস করা কি আবশ্যক?            উত্তর: অবশ্যই।হাদিস হলো ইসলামী শরীয়তের অন্যতম উৎস।
  2. প্রশ্ন: রোজা রাখার ফজিলত কি?                  উত্তর: রোজা রাখার অনেক ফজিলত রয়েছে।রোজা হলো দেহের সাদকা এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন স্বয়ং রোজার প্রতিদান দেবেন।

৫.লেখকের মন্তব্য |  রমজান নিয়ে ছোট হাদিস

আজকের আর্টিকেলে আমরা রমজান নিয়ে ছোট হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্ন, মতামত কিংবা অভিযোগ কমেন্ট করে জানাতে পারেন আমাদের কমেন্ট বক্সে।  এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট  The DU Speech ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url