OrdinaryITPostAd

২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা

ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর হলো একটি আর্থিক ইবাদত।পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করতে সবারই কিছু কিছু ভুলত্রুটি হয়ে যায়।সেসকল ভুলত্রুটির সংশোধন বা ক্ষতিপূরন হিসেবে সাদাকাতুল ফিতর দান করতে হয়।ফিতরার জন্য নির্ধারিত পরিমাণ পন্যের দাম জায়গা ও সময় ভেদে ভিন্ন হতে পারে।তাই ফিতরার অর্থও ভিন্ন হতে পারে।২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা আর্টিকেলে আমরা ফিতরা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।সেই সাথে ২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা তা নিয়েও আলোচনা করব।ফিতরা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা আর্টিকেলটি পড়ুন।

অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন) 

  1. ফিতরা কী
  2. ফিতরা প্রদানের নিয়ম 
  3. ফিতরার পরিমাণ
  4. এবছর ফিতরা কত টাকা 
  5. প্রশ্ন-উত্তর পর্ব 
  6. লেখকের মন্তব্য 

১.ফিতরা কী|২০২৩ সালে ফিতরা কত টাকা

২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ফিতরা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা তুলে ধরব।

ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর বা যাকাতুল ফিতর হলো আরবি শব্দ।সাদাকা মানে কোন কিছুর বিনিময় না আশা করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য দান করা। আর ফিতর’ মানে হলো ‘রোজা ছাড়া’। অর্থাৎ রমজানের রোজা ছাড়ার কারণে বিনিময় আশা না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যে দান বা সাদকা করা হয় তাকে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা বলে।যেহেতু ফিতরার মাধ্যমে পালন করা রোজার যাবতীয়  ভুলগুলো থেকে আত্মশুদ্ধি ও আত্মার আমলকে নির্মল করার জন্য অসহায়দের মাঝে দেয়া হয়, তাই এর নাম ফিতরা।অন্য কথায় একে যাকাতুল ফিতর বা রোজা ভঙ্গের যাকাত বলা হয়।

ফিতরা হলো একটি ওয়াজিব বা আবশ্যক ইবাদত । সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ গম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং নামাজের পূর্বে তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ’ -সহিহ বোখারি ও মুসলিম। 

রাসুল (সা:) আল্লহর ওহি ছাড়া কোনো আদেশ করতেন না।সুতরাং মহানবী (সঃ) এর আদেশ অবশ্যই আল্লহর পক্ষ থেকে আসা।আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, 'যে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হুকুম মান্য করল, সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল, আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।'

সোর্স : সূরা আন-নিসা, আয়াত ৮০

অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা পালন করা মুসলমানের জন্য আবশ্যিক একটি আর্থিক ইবাদত।

২.ফিতরা প্রদানের নিয়ম|২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা 

ফিতরা যেহেতু একটি আর্থিক ইবাদত সেহেতু ফিতরা প্রদানের নিয়ম রয়েছে।ফিতরা প্রদান ওয়াজিব তবে যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই তাদের জন্য ফিতরা প্রদান করা সুন্নাত বা নফল।২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ফিতরা প্রদানের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

সাদকাতুল ফিতর সম্পর্কে আবু সাঈদ খুদরি (রাঃ) বলেন,"রাসূল (সা:) আমাদের মাঝে বর্তমান থাকা অবস্থায় আমরা সাদকাতুল ফিতর বাবদ এক সা' খাদ্য (গম,খেজুর,যব ,কিসমিস, পনির দান করতাম" (সহিহ বুখারী খন্ড ১; পৃষ্ঠা ২০৫)

অন্য হাদিসে আরও পাওয়া যায়, "রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক স্বাধীন-ক্রীতদাস, নারী-পুরুষ, ছোট-বড় মুসলমানের যাকাতুল ফিতর এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব ওয়াজিব করেছেন। তিনি লোকদের ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বেই তা আদায় করার আদেশ দিয়েছেন।"

 সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম

ফিতরা সাধারণত খাদ্যসশ্য দিতে হয়।তবে কেউ যদি চায় এর পরিবর্তে সমপরিমাণ অর্থ দিতে পারে।এক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিমাণ খাদ্যসশ্যের বাজারদর অনুযায়ী টাকা দিতে হবে।তবে ফিতরায় খাদ্যসশ্য দেওয়া উত্তম।রমজানের শেষের দিকে হতে ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত ফিতরা প্রদান করতে হবে।

৩.ফিতরার পরিমাণ|২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা

ফিতরা প্রদান করার পরিমাণ আমাদের রাসুল (সা:) নির্ধারণ করে দিয়েছন।২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ফিতরার পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করব।

ফিতরা সম্পর্কিত বিভিন্ন হাদিস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এখানে ফিতরার পরিমাণ বুঝাতে সা' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।সা হলো আরব দেশের ওজন বা পরিমাপে ব্যবহৃত পাত্র।বিভিন্ন ফসলের সা' ওজন বিভিন্ন হয়।আধুনিক হিসেব অনুযায়ী সা' এর পরিমাণ হলো:

১ সা = ২৮০.৫০ তোলা

১ তোলা = ১১.৬৬ গ্রাম (প্রায়)

অতএব ১ সা = ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়) অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। এবং আধা সা = ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়) অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি।

খাদ্যশস্য দ্বারা ফিতরা প্রদান করলে এই পরিমাণ খাদ্যশস্য দান করতে হবে।আর অর্থ দিয়ে ফিতরা প্রদান করতে চাইলে সমপরিমাণ শস্যের বাজারদর হিসেবে টাকা দিতে হবে।

.এবছর ফিতরা কত টাকা|২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা 

বাংলাদেশের জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটি প্রতিবছর  পরিমাণ নির্ণয় করে থাকেন।আরৃটিকেলের এই অংশে আমরা ২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা তা নিয়ে আলোচনা করব।

এবছর বাংলাদেশের জাতীয় ফিতরা নির্ধারণ কমিটির ফিতরার পরিমাণ নির্ণয়ের জন্য এক বিশেষ সভা আয়োজন করা হয়।সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে শরীয়াহ মোতাবেক গম বা আটা দ্বারা ফিতরা আদায় করলে অর্ধ সা পরিমাণ অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১১৫ (এক শ পনের) টাকা প্রদান করতে হবে।যব দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ৩৯৬ টাকা, কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা, খেজুর দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ১ হাজার ৯৮০ টাকা ও পনির দ্বারা আদায় করলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজারমূল্য ২ হাজার ৬৪০ টাকা ফিতরা প্রদান করতে হবে।

যেহেতু দেশের সকল জায়গায় এসব পণ্যের বাজারদাম এক না তাই সব বিভাগ থেকে সংগৃহীত আটা, যব, খেজুর, কিশমিশ ও পনিরের বাজারমূল্যের ভিত্তিতে এ  একটি গড় দাম নির্বাচন করে জনপ্রতি ফিতরা নির্ধারণ করা হয়েছে।নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী উপর্যুক্ত পণ্যগুলোর যেকোনো একটি পণ্য বা এর বাজারমূল্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা যাবে।আবার যেহেতু উপর্যুক্ত পণ্যসমূহের স্থানীয় খুচরা বাজারমূল্যের তারতম্য রয়েছ সেহেতু স্থানীয় মূল্যে পরিশোধ করলেও ফিতরা আদায় হয়ে যাবে।

৫.প্রশ্ন-উত্তর পর্ব |২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা 

২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ফিতরা সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর সম্পর্কে জানব।

  1. প্রশ্ন: ফিতরা কাকে দেওয়া যাবে?                  উত্তর:যাকাতের খাতসমূহে ফিতরা দেওয়া যাবে।আল্লাহ তায়ালা বলেন,'মূলত সদাকা হলো ফকির, মিসকিন, জাকাতকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলাম সুরক্ষার জন্য), বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথসন্তানদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।' (সুরা-তাওবাহ, আয়াত: ৬০)
  2. প্রশ্ন: ফিতরার নিসাব কত?                          উত্তর: জাকাতের নিসাবের সমপরিমাণই ফিতরার নিসাব। অর্থাৎ কারো কাছে সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা তার সমমূল্যের নগদ অর্থ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত হয়ে ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় বিদ্যমান থাকলে তার ওপর ফিতরা ওয়াজিব হবে। যার ওপর সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব, তিনি নিজের পক্ষ থেকে যেমন আদায় করবেন, তেমনি নিজের অধীনদের পক্ষ থেকেও আদায় করবেন। তবে এতে জাকাতের মতো বর্ষ অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়। (ফাতহুল কাদির : ২/২৮১)

৬.লেখকের মন্তব্য|২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা 

আজকের আর্টিকেলে আমরা ২০২৩ সালের ফিতরা কত টাকা তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন, পরামর্শ, অভিযোগ কিংবা মতামত কমেন্ট করে জানাতে পারেন।এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url