OrdinaryITPostAd

ইফতার সামনে রেখে দোয়া

রমজান হলো রহমতের মাস। এ মাসে রোজাদার মুসলমান সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতার করে।রোজার উদ্দেশ্য হলো আল্লহর সন্তুষ্টি লাভ এবং তাকওয়া অর্জন।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রোজাদারদের ইফতার সামনে রেখে দোয়া করলে তা কবুল করে নেন। এজন্য প্রত্যেক রোজাদারদের উচিৎ ইফতার সামনে রেখে দোয়া করা। আজকের আর্টিকেলে আমরা ইফতার সামনে রেখে দোয়া করার জন্য সুন্নাহ মোতাবেক কিছু দোয়া ও ইস্তেগফার নিয়ে আলোচনা করব। 

অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন) 

  1. ইফতারের দোয়া
  2. ইফতারের পর পড়ার দোয়া
  3. ইফতারের সময় দোয়া করার ফজিলত 
  4. লেখকের মন্তব্য 

১.ইফতারের দোয়া | ইফতার সামনে রেখে দোয়া

ইফতারের সময় দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়।ইফতারের সময় তাই দোয়া করার ফজিলত অনেক।ইফতার সামনে রেখে দোয়া করার জন্য কিছু দোয়া ও ইস্তেগফার নিয়ে আর্টিকেলের এই অংশটি সাজানো হয়েছে।

ইফতারের আগ মুহূর্তে ইফতার সামনে নিয়ে তাসবিহ তাহলিল, দোয়া ও ইস্তেগফার আল্লাহর কাছে অনেক পছন্দনীয় আমল। এসময় আমরা এই ইস্তেগফার ও দোয়া পড়তে পারি:

ইস্তেগফার: "আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।"

অর্থ: আমি সর্বশক্তিমান  আল্লাহর কাছে  ক্ষমা প্রার্থনা করছি - যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, চিরন্তন, এবং আমি তাঁর কাছে তওবা করি।

ইস্তেগফার: ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী। অর্থঃ হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)

দোয়া: আলহামদুলিল্লাহি আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরাহমাতিকাল্লাতি ওয়াসিআত কুল্লা শাইয়িন আন তাগফিরলি।’

অর্থ : ‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য; হে আল্লাহ! আমি তোমার দরবারে তোমার সর্ববেষ্টিত রহমতের উসিলায় প্রার্থনা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)

হজরত মুয়াজ ইবনে যুহরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন, তখন এ দোয়া পড়তেন-

কারো দাওয়াতে ইফতার করতে গেলে এই দোয়া পড়া যায়:

দোয়া: আফতারা ইনদাকুমুস সায়িমুন ওয়া আকালা তাআমুকুমুল আবরার ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালাইকা।

অর্থঃ আল্লাহ করুন যেন রোজাদারগণ তোমাদের বাড়ীতে রোজার ইফতার করে এবং নেক লোকেরা যেন তোমাদের খানা খায় এবং ফেরেশতাগণ যেন তোমাদের উপর রহমতের দু‘আ করে। (আসসুনানুল কুবরা, নাসাঈ ৬:৮১)

২.ইফতারের পর পড়ার দোয়া | ইফতার সামনে রেখে দোয়া 

ইফতার হলো আল্লাহ তায়ালার রহমত। সারাদিন রোজা রাখার পর রোজাদার ব্যক্তি যখন ইফতার করেন তখন এক অনাবিল প্রশান্তি অনুভব করেন। এই সময় আল্লাহর রহমত ও নিয়ামতের প্রশংসা করা অতি উত্তম। ইফতার সামনে রেখে দোয়া করা যেমন আল্লাহর কাছে পছন্দনীয় তেমনি ইফতারের পর দোয়া করাও। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইফতারের পর পড়ার দোয়া উল্লেখ করব।

ইফতারের পর দোয়া:

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন:

বাংলা উচ্চারণ: ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’

অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)

এছাড়াও ইফতারের পর আরও দোয়া হাদিসে বর্ণিত রয়েছে। 

দোয়া -১:

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিযকিকা আফতারতু। 

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম। (আবূ দাঊদ: ১/৩২২)

দোয়া-২:

বাংলা উচ্চারণ: "আল‘হামদু লিল্লা-হিল্লাযী আত‘আমানী হা-যা ওয়া রাযাক্বানীহি মিন গাইরি ‘হাওলিম মিন্নী ওয়ালা- ক্বুওয়াহ।"

অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ খাদ্য খাইয়েছেন এবং আমাকে তা প্রদান করেছেন আমার কোনো অবলম্বন ও ক্ষমতা ছাড়াই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যদি কেউ খাদ্য গ্রহণ করে এ কথাগুলো বলে তাহলে তার পূর্বাপর গোনাহ ক্ষমা করা হবে।"  [তিরমিযী (২৬-কিতাবুল আতয়িমা, ৪৭-বাব..তাসমিয়া) ৪/২৫৪, নং ১৮৫৮ (ভারতীয় ২/৭)]

দোয়া-৩:

বাংলা উচ্চারণ: "আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফীহি ওয়া আত্ব্‘য়িমনা খাইরান মিন্হু।

অর্থ: হে আল্লাহ আপনি এতে বরকত প্রদান করুন এবং আমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম কিছু খাওয়ান।

ইবন আব্বাস (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে এই বাক্যটি বলবে" [তিরমিযী (৪৯-কিতাবুদ্দাআওয়াত, ৫৫-বাব..ইযা আকালা তাআমান) ৫/৪৭৪ (ভারতীয় ২/১৮৩)]

কারো দাওয়াতে ইফতার করতে গেলে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া যায়:

  1. বাংলা উচ্চারণ: "আল্লা-হুম্মা, আত্ব‘ইম মান আত্ব‘আমানী, ওয়াসক্বি মান সাক্বা-নী।"          অর্থ: হে আল্লাহ, যে আমাকে খাইয়েছে তাকে আপনি খাদ্য প্রদান করুন এবং যে আমাকে পান করিয়েছে তাকে আপনি পানীয় প্রদান করুন।         [মুসলিম (৩৬-কিতাবুল আতয়িমা, ৩২-বাব ইকরামিদ দাইফ) ৩/১৬২৫, নং ২০৫৫ (ভা ২/১৮৪)
  2. বাংলা উচ্চারণ: "আল্লাহুম্মা বারিক'লাহুম ফি মা রঝাকতাহুম ওয়াগফির'লাহুম ওয়ারহাম'হুম। "  অর্থ: "হে আল্লাহ, আপনি এদের যে রিয্ক প্রদান করেছেন তাতে বরকত প্রদান করুন, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং তাদেরকে রহমত করুন।" 
আব্দুল্লাহ্ বিনু বিশ্র বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. আমার পিতার বাড়িতে আগমন করেন। তিনি কিছু খাদ্য পেশ করেন। তিনি তা থেকে কিছু খাদ্য গ্রহণ করেন। আমার পিতা তাঁর কাছে দু‘আ চান। তখন তিনি এ কথাগুলো বলেন।[মুসলিম (৩৬-কিতাবুল আশরিবা, ২২-বাব ইসতিহবাব ওয়াদয়িন্নাওয়া) ৩/১৬১৫ (ভারতীয় ২/১৮০)]

.ইফতারের সময় দোয়া করার ফজিলত | ইফতার সামনে রেখে দোয়া 

ইফতারের সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয় এবং এ সময় দোয়া করার অনেক ফজিলত রয়েছে।ইফতার সামনে রেখে দোয়া আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ইফতারের সময় দোয়া করার ফজিলত নিয়ে আলোচনা করব।

হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, "আমার বান্দাদের মধ্যে তারা আমার বেশি প্রিয়, যারা দ্রুত ইফতার করে।" (তিরমিজি, আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬০, পৃষ্ঠা: ১৩১)

এই হাদিসের আলোকে এটা বলা যায় যে তাড়াতাড়ি ইফতার করা আল্লাহ অনেক পছন্দ করেন।সারাদিন রোজা রেখে রোজাদার ব্যক্তিরা নানা রকম খাবার সামনে নিয়ে বসে থাকেন, এই দৃশ্য আল্লাহর কাছে অত্যন্ত পছন্দনীয়।বান্দার তাকওয়া, আল্লাহ ভীতি,ইমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্য যথেষ্ট।এই সময়ে বান্দা যে নেক দোয়া করবে, আল্লাহ তা কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।হাদিসের আলোকে আমরা দেখতে পাই:

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যেকোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (তিরমিজি ৭৬৬,) আল্লাহর কাছে সাওমকারীর মুখের গন্ধ মিসকের সুগন্ধি হতেও উত্তম (বুখারী ৭৪৯২)

আবদুল্লাহ ইবনু 'আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ইফতারের সময় রোযাদারের অবশ্যই একটি দু’আ আছে, যা রদ হয় না (কবুল হয়)।  ইবনু আবূ মুলাইকা (রহ.) বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ)-কে ইফতারের সময় বলতে শুনেছিঃ "হে আল্লাহ্! আমি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সব কিছুর উপর পরিব্যপ্ত, যেন আপনি আমাকে ক্ষমা করেন"।      (ইবনে মাজাহ ১৭৫৩)

সুতরাং ইফতারের সময় দোয়া করার ফজিলত অনেক।সকল মুমিন মুসলমানদের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়ার এই সময়টা নিঃসন্দেহে মোক্ষম সময়।

৪.লেখকের মন্তব্য | ইফতার সামনে রেখে দোয়া

অফুরন্ত রহমত আর বরকত নিয়ে বছর ঘুরে আবারও এসেছে মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজান।বছরের বারোটি মাসের মধ্যে রমজান হলো সর্বোত্তম মাস। এই মাসে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছিল।  রমজান আসে মুমিন মুসলমানদের অন্তর জগতে তাকওয়া ও খোদাপ্রেম জাগ্রত করতে। তাই এই পবিত্র রমজান মাসে আমাদের একটু ছোট্ট প্রচেষ্টা 'ইফতার সামনে রেখে দোয়া' আর্টিকেলটি। আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন, পরামর্শ কিংবা অভিযোগ,মতামত কমেনৃট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের প্রতিটি কমেন্টের যথাযথ উত্তর  দেওয়ার চেষ্টা করব। এরকম তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech  ভিজিট করুন।

আরও পড়ুনঃ রমজান মাসে স্বপ্নদোষ হলে করনীয়

 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url