OrdinaryITPostAd

রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত

রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে আপনারা অনেকেই জানতে চেয়েছেন। তাই আজকে আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করবো রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত নিয়ে। রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত এর পাশাপাশি রমজান মাসে মৃত্যু নিয়েও আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. রমজান মাসের ফজিলত
  2. রমজান মাসে মৃত্যু
  3. রমজান মাস শেষ হলে কি কবরের আজাব আবার শুরু হয়?
  4. রমজানে মারা গেলে কি কবরের আজাব মাফ?
  5. লেখকের মন্তব্য

১.রমজান মাসের ফজিলত | রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত

রমজান মাস শক্তি অর্জন ও দানের মাস। এ মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম মক্কা বিজয়ের জন্য যুদ্ধ করেছেন। তখন তিনি এবং সমস্ত মুসলমান সিয়াম অবস্থায় ছিলেন, আর এ রমজানেই বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হয়ছিল।
 এ সমস্ত যুদ্ধে ইসলামের পতাকা সমুন্বত হয়েছিল, মূর্তি এবং পৌত্তলিকতার পতাকা অবনমিত হয়েছিল। এ মাসে মুসলমানদের অনেক যুদ্ধ জিহাদ এবং কুরবানি সংঘঠিত হয়েছে।রমজানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম ও তাঁর সাহাবারা অধিক পরিমাণে শক্তি, সজিবতা এবং ইবাদতের জন্য ধৈর্য ধারণ করার উদ্যম অনুভব করতেন, তাইতো রমজান মাসকে সৎকাজ, ধৈর্য ও দানের মাস বলা হয়।
 রমজান দুর্বলতা, অলসতা, ঘুমানোর মাস নয়। কোন কোন সিয়াম পালনকারীকে হাত পা ছেড়ে দিয়ে, দিনের বেলায় ঘুমাতে, কাজ কম করতে দেখা যায়। এমন আচরণ সিয়ামের তাৎপর্যের বিরোধী। সিয়ামের উদ্দেশ্যের সাথে মিলে না।

পূর্বেকার মুসলমানেরা রমজান যাপন করতেন তাদের অন্তর এবং অনুভূতি দিয়ে। রমজান আসলে তারা কষ্ট করতেন। ধৈর্যের সাথে দিন যাপন করতেন। আল্লাহর ভয় এবং পর্যবেক্ষণের কথা তাদের স্মরণ থাকত।
 তার সিয়াম নষ্ট হয় অথবা ত্রুটিযুক্ত হয় এমন সব কিছু থেকে দুরে থাকতেন। খারাপ কথা বলতেন না, ভাল না বলতে পারলে নীরব থাকতেন।তারা রমজানের রাত্রি যপন করতেন সালাত, কোরআন তেলাওয়াত, আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামের অনুসরণ করেই।
 সিয়ামের উপকার অথবা ফজিলত অনেক। তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। তবে খেলাধুলা ও রং তামাশায় মত্তব্যক্তিরা কিংবা অলস শ্রেণির লোকজন যারা সারাদিন ঘুমিয়ে কাটায়, এবং রাত্রে বাজারে ঘুরে বেড়ায় তারা রমজানের এসব ফজিলত থেকে বঞ্চিত থাকবে। চলুন দেখে নেয়া যাক রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে।

২.রমজান মাসে মৃত্যু | রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত

রহমত,বরকত,মাগফেরাত ও নাজাতের মাস রমজান। কোনো ঈমানদার মুসলমান যদি রমজানের কোনো অংশ পেয়ে থাকে আর নিজের গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারে তবে তার জন্য পরকালের সুখ-শান্তি ও নাজাত সুনিশ্চিত। আর হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী রমজানে কবরের আজাব বন্ধ থাকে। 
সে দিক থেকেও রমজানে মৃত্যুবরণকারী পুরো রমজান মাস আজাব বা শাস্তিমুক্ত থাকবে।সুতরাং যেসব ব্যক্তি জুমার দিন ও রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করবে আর তারা যদি ঈমান ও আমলি জীবন-যাপন করে মৃত্যুবরণ করে তবে সেসব ব্যক্তির জন্য জুমার দিন ও রমজান মাসই নয় বরং কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে অনাবিল সুখ আর শান্তি। তারা পরকালের জীবনে থাকবে নিরাপদ।

এ জন্যই ঈমানদার মৃতব্যক্তির জন্য পরকালে জান্নাতের সুসংবাদে কোরানে ঘোষণা করা হয়েছে, যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে তাদের জন্য নেয়ামত ও সফলতার সুসংবাদ। যদিও পরকালে যে কোনো নেক আমল তথা ভালো কাজের প্রতিদানের জন্য শর্ত হলো ঈমান।
 আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ঈমান। আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত বান্দা ও রাসুল- শুধু এ বিশ্বাস স্থাপন করবে।তারা দুনিয়ার জীবনের সব নেক আমল তথা ভালো কাজের প্রতিদান পাবে। এছাড়া ঈমানহীন কোনো ব্যক্তির কোনো ভালো কাজের প্রতিদান পরকালে পাওয়া যাবে না।
 তবে হ্যাঁ, দুনিয়ার নেক আমল তথা ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়াতে কোনো না কোনোভাবে পাওয়া যাবে। আশা করি রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

৩.রমজান মাস শেষ হলে কি কবরের আজাব আবার শুরু হয়? | রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত

আমরা জানি যে রমজান মাসে কবরের আজাব বন্ধ থাকে। কিন্তু রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত এর পাশাপাশি রমজানের পর তাদের কবরের আজাব কি আবার শুরু হয়, নাকি কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়? এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন।এই মর্মে কোনো হাদিস অথবা কোনো দলিল আসেনি। 
একটি হাদিস থেকে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে কেউ কেউ একটা বিষয় উৎঘাটন করেছেন। সেটি হচ্ছে এই, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে তখন রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়।’রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, কবরের আজাব তো মূলত জাহান্নাম থেকে আসে, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, কবরের আজাবগুলো বন্ধ হয়ে থাকে। এটা একদল ওলামায়ে কেরামের উৎঘাটন। এই উৎঘাটনটুকু যথাযথ নয়।

কারণ হচ্ছে, কবরের আজাব জাহান্নাম থেকে হচ্ছে নাকি অন্য কোনো জায়গা থেকে হচ্ছে, এই সম্পর্কে রাসুল (সা.)-এর হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, জাহান্নাম থেকে কবরের আজাব হয়, কিন্তু অন্য স্থান থেকে, অন্য কোনো উৎস থেকে কবরের আজাব হয় না, এই মর্মে রাসুল (সা.)-এর কোনো বক্তব্য প্রমাণিত হয়নি।
 বরং রাসুল (সা.)-এর সহিহ বুখারীর যে হাদিসটি রয়েছে, সেখান থেকে বোঝা যায় যে, কবরের আজাব শুধু জাহান্নাম থেকে হয় না, বিভিন্ন অপরাধের কারণেও কবরের আজাব হতে পারে। যেটি আল্লাহর নবী (সা.) হাদিসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। তাই কবরের আজাব রমজান মাসে বন্ধ থাকে এই বক্তব্য যথাযথ নয়, সঠিকও নয়।

দ্বিতীয়ত হচ্ছে, যদি ধরে নেওয়া হয় যে, রমজান মাসে কবরের আজাব বন্ধ থাকবে, এর অর্থ হচ্ছে শুধু রমজান মাসের জন্য বন্ধ থাকবে। রমজান মাসের পরে আবার কবরের আজাব শুরু হবে।যে কবরের আজাবের জন্য উপযুক্ত, তাঁর আজাব বজায় রাখা হবে। শুধু রমজান মাসকে বিশেষ গুরুত্বের কারণে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা হয়তো তাঁদের শাস্তি লাঘব করবেন, এটা হতে পারে।

৪.রমজানে মারা গেলে কি কবরের আজাব মাফ? | রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত

আমাদের দেশে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে যে, রমজান মাসে মারা গেলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়।রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত অনেক।তাই অনেকে পবিত্র এ মাসে মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে থাকেন।কথাটা লোকমুখে বেশ প্রসিদ্ধ। কিন্তু এ সম্পর্কিত সুস্পষ্ট কোনো হাদিস প্রসিদ্ধ হাদিসগ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় না। 

এই কথাটি যারা বলে থাকেন, তারা খুব সম্ভবত এই হাদিসের ভিত্তিতে এটা বলেন, ‘আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় আর জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৩২৭৭) কিন্তু এই হাদিসে কবরের আজাব মাফ হওয়ার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। 
উপরন্তু এর ব্যাখ্যায় 'ফাতহুল বারি'তে বলা হয়েছে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার মর্ম হচ্ছে, এই মাসে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে নেক কাজের তাওফিক দেন, যেমন রোজা, কিয়ামুল লাইল ও অন্যান্য কাজ।পাশাপাশি নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দেন।কেননা এই নেক কাজগুলো করা আর নিষিদ্ধ কাজ থেকে বিরত থাকাই তো জান্নাতে প্রবেশ করা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ।

এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ হজরত আনাস (রা.) এর একটি বক্তব্যকে দলিল হিসেবে পেশ করে থাকেন। ‘আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজান মাসে মৃত ব্যক্তি থেকে কবরের আজাব উঠিয়ে নেওয়া হয়।কিন্তু এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। এটি ইমাম রজব হাম্বলি তার ‘আহলুল কুবুর ওয়া আহওয়ালু আহলিহা ইলান নুশুর’ গ্রন্থে (পৃ. ১০৫) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এর কোনো সনদ কিংবা হাদিসগ্রন্থের নাম তিনি উল্লেখ করেননি। তাই এটি জাল না জয়িফ কিছুই নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না। 

কেউ কেউ আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.)-এর হাদিসটি দলিল হিসেবে পেশ করে থাকেন, ‘রমজান সমাপ্তির সময়ে যার মৃত্যু সংঘটিত হয় সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’। (হিলইয়াতুল আওলিয়া: ৫/২৩) কিন্তু এটি দলিল হিসেবে সঠিক নয়। কারণ প্রথমত এর সনদ নিতান্তই দুর্বল। দ্বিতীয়ত এখানে জান্নাতে প্রবেশের কথা বলা হয়েছে। কবরের আজাব সংক্রান্ত কিছুই বলা হয়নি। অর্থাৎ এটি সহিহ বুখারির প্রথমোক্ত হাদিসটির মতোই।

রমজান মাসে মৃত্যুবরণ করলে কবরের আজাব মাফ হয়ে যায়, এটি সরাসরি কুরআন-হাদিস দ্বারা প্রমাণিত কথা নয়। সুতরাং এমন কথা প্রচার না করাই কাম্য।

৫.লেখকের মন্তব্য | রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত

আজকে আমরা আপনাদের সাথে রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলাম।আশা করছি রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।রমজান মাসে মৃত্যুর ফজিলত সম্পর্কে আপনাদের যেকোন প্রশ্ন অথবা মতামত আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। রমজান মাস সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য জানতে আমাদের ওয়েবসাইট THE DU SPEECH ভিজিট করতে পারেন।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা 
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
জেলা: নাটোর

আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাতের সমস্যায় যা যা করবেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url