OrdinaryITPostAd

বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? | বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস

বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস জানতে হলে বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? তা জানা জরুরী। তাই আজকে আমরা আপনাদের সাথে  বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস এবং বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এ বিষয়ে জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত ভালোভাবে পড়ুন।



আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. বারো ভূঁইয়া
  2. বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস
  3. বারো ভূঁইয়াদের উত্থান পতন
  4. ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের অবদান
  5. আকবরের বারো ভূঁইয়া দমন
  6. বারো ভূঁইয়াদের পতন
  7. লেখকের মন্তব্য

১.বারো ভূঁইয়া | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

বাংলাদেশের ইতিহাসে বারো ভূঁইয়া নামটি দেশপ্রেম, বীরত্ব ও ত্যাগের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়ে থাকে।বারো ভূঁইয়া কথার অর্থ বারো জন ভূম্যধিকারী বা জমিদার।জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন স্বাধীনচেতা জমিদারের উত্থান ঘটেছিল যাঁরা মুঘলদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রাম চালিয়েছিলেন।

ভূঁইয়া শব্দের অর্থ ভূই মালিক, ভূম্যধিকারী, রাজা বা জমিদার। সেসময় প্রভাবশালী রাজা, জমিদার ও স্থানীয় শাসক এই উপাধি গ্রহণ করতেন। অনেক সময় খন্ড রাজ্য বা এক বা একাধিক পরগনার জমিদারীর মালিকেরা ভূঁইয়া উপাধি গ্রহণ করত। ভূঁইয়াদের ব্যক্তিগত বীরত্ব ও নিজস্ব বাহিনীর শক্তির উপর তাদের রাজ্যের সম্মান ও প্রতিপত্তি নির্ভর করত। তারা শুধু রাজস্ব আদায় ও জমিদারী ভোগ দখল নিয়ে ব্যস্থ থাকত না বরং তারা শাসন কার্য পরিচালনার জন্য সীমিত সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সহায়তায় শাসন ও যুদ্ধ পরিচালনা করত। 

তবে বারো ভূঁইয়া কথাটি কীভাবে এসেছে বা এর দ্বারা নির্দিষ্ট কোন বারো জন ভূম্যধিকারীর কথা বলা হয়েছে,তা আজও স্পষ্ট নয়। কারণ আলোচ্য সময়ে বারো জনের বেশি জমিদারের সন্ধান পাওয়া যায়,যাঁরা মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নিজেদের স্বাধীন অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।যাই হোক,স্বাধীনচেতা ও মুঘল বিরোধী জমিদারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সোনার গাঁও-এর ঈশা খাঁ ও তাঁর পুত্র মুসা খা, শ্রীপুর-এর কেদার রায়, যশোর খুলনার প্রতাপাদিত্য,ময়মনসিংহের উসমান খাঁ,বাকলার রামচন্দ্র প্রমুখ।চলুন দেখে নেয়া যাক বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস সম্পর্কে এবং বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য


২.বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এ বিষয়ে জানতে হবে।অনেকে অনুমান যে অতি প্রাচীনকালে হয়তো বাংলায় বারো সংখ্যক শক্তিশালী সামন্তরাজা ছিলেন যার ফলে বারো ভূঁইয়া শব্দটি জনশ্রুতিতে পরিণত হয়।বারো ভূঁইয়াদের সংখ্যা ১৩ জন ছিল। এছাড়া এদের কিছু বিবরণ অসমের ইতিহাসেও দ্রষ্টব্য,কামরূপের এক অধিপতি গৌড়রাজের ভূঁইয়া ছিলেন বলেও জানা যায়। মধ্যযুগের উত্তর ভারতের শাসকরাও অনেক সময় বাংলাকে বারো ভূঁইয়ার মুল্ক বলে উল্লেখ করতেন।এদের অনেক বিবরণ আবুল ফজলের আইন-ই-আকবরি ও মির্জা নাথানের বহরিস্তান-ই-ঘইবিতে পাওয়া যায়। এর কারণ হল যে বাংলার অধিপতি যেই হোক না কেন, পরম্পরাগতভাবে মূল শাসক এই ভূঁইয়ারাই ছিলেন।

কিছু উদাহরণ প্রাচীনকালে পাল,সেন ও গুপ্তদের আমলেও দেখা যায়। রামপাল যখন বরেন্দ্র পুনরুদ্ধারের প্রস্তুতি করছিলেন তখন তাকে বিপুল সংখ্যক সামন্তকে ভূমিদানসহ বিভিন্ন উপঢৌকনের প্রলোভন দেখিয়ে নিজের পক্ষে টানতে হয়েছিল। সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিত কাব্যে এ বিষয়ের বিবরণ দ্রষ্টব্য। বলাবাহুল্য, মূল রাজার অনুপস্থিতিতে বা অরাজক অবস্থায় এরাই হয়ে উঠতেন রাজ্যের প্রধান হর্তা কর্তা। বাংলায় পাঠান বংশের রাজত্ব দূর্বল হয়ে পড়লে বাংলাদেশের সোনারগাঁও, খুলনা, বরিশাল প্রভৃতি অঞ্চলে কিছু সংখ্যক জমিদার স্বাধীন রাজার মতো রাজত্ব করতে থাকেন। সম্রাট আকবর ১৫৭৫ সালে বাংলা দখল করার পর এসকল জমিদার ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোগল সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।

৩.বারো ভূঁইয়াদের উত্থান পতন | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে ভূঁইয়াদের প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেলেও,তা কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না।বস্তুত বাংলার সুলতানদের দুর্বলতার সুযোগে বাংলাদেশে বেশ কিছু বড়ো জমিদার স্বাধীন হয়ে উঠেন।এদের মধ্যে হিন্দু মুসলমান উভয়েই ছিল।এদের দমন করার ইচ্ছা বা শক্তি কোনোটাই বাংলার সুলতানদের ছিল না।দাউদ করনানির পতনের পর বাংলাদেশ আইনত মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হলেও,বাস্তবে মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লেগেছিল।এক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিল এইসব স্বাধীনচেতা জমিদারেরা।এঁরা নিজ নিজ এলাকায় একধরনের স্বাধীন রাজত্ব শুরু করে দিয়েছিলেন।দীর্ঘ যুদ্ধের পর আকবরের আমলে এই ভূঁইয়াদের অবসান ঘটেছিল।বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এ সম্পর্কে নিচে আরো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

৪.ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের অবদান | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের অবদান প্রসঙ্গে আধুনিক গবেষকগণ ভিন্ন মত পোষণ করেছেন।অতীতে প্রতাপাদিত্যকে শিবাজীর সমতুল্য ভেবে স্মরণ করা হত।কিন্তু আধুনিক গবেষকদের মতে বারো ভূঁইয়াদের কীর্তিকলাপকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ার কোনো কারণ নেই।কারণ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন জমিদারি ভোগ করা ছাড়া এঁদের কোনো মহৎ উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ছিল না।দেশপ্রেম বা বাংলার স্বাধীনতার চিন্তা এঁরা করেননি।শাসক হিসেবে এঁরা প্রজাহিতৈষী ছিলেন এমন কথাও বলা যায় না। প্রতাপাদিত্যের নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর চরিত্রকে কেন্দ্র করে বাংলা উপন্যাসও রচিত হয়েছে।এঁদের প্রতিরোধ কোনো রকম গণ সমর্থন ছিল না।এমনকি এঁদের নিজেদের মধ্যেও কোনো প্রকার ঐক্য, সহযোগিতা বা সংহতি ছিল না। ফলে এঁদের প্রতিরোধ ছিল বিক্ষিপ্ত ও দুর্বল।

৫.আকবরের বারো ভূঁইয়া দমন | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

এই অংশে আলোচনা করা হবে বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? তা নিয়ে।বারো ভূঁইয়াদের দমন করার জন্য সম্রাট আকবর ১৫৮৩ খ্রিষ্টাব্দে শাহবাজ খান, ১৫৮৫ খ্রিষ্টাব্দে সাদিক খান, ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দে উজির খান এবং ১৫৯৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজা মানসিংহকে বাংলার সুবাদার করে পাঠান। তাঁরা ঈসা খাঁন ও অন্যান্য জমিদারের সাথে বহুবার যুদ্ধ করেন। কিন্তু বারো ভূঁইয়াদের নেতা ঈসা খানকে সম্পূর্ণ পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। তিনি সম্রাট আকবরের আনুগত্য স্বীকারের বিনিময়ে নিজের আধিপত্য বজায় রাখেন। অন্যদিকে তিনি মুঘলদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে ‘মসনদ-ই-আলা’ উপাধি ধারণ করেছিলেন।

৬.বারো ভূঁইয়াদের পতন | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খানের সঙ্গে জমিদারদের যুদ্ধ শুরু হয়। মূসা খানের কদম রসুল দুর্গ সহ অন্যান্য দুর্গ মুঘলদের অধিকারে আসে।মূসা খান জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে সোনারগাঁও চলে যান। মুঘল সৈন্যরা সোনারগাঁও অধিকার করে নেন। জমিদার গণ আত্মসমর্পণ করেন। কোন উপায় না দেখে মূসা খানও শেষ পর্যন্ত মুঘলদের নিকট আত্মসমর্পণে বাধ্য হন। ইসলাম খান, মূসা খানকে অন্যান্য জমিদারদের মতো তাঁর জমিদারিতে মুঘলদের অধীনস্থ জায়গিরের দায়িত্ব দেন।এরপর মূসা খান সম্রাটের অনুগত জায়গিরদার হিসেবে বাকি জীবন অতিবাহিত করেন। মূসা খানের আত্মসমর্পণে অন্যান্য জামিদারগণ নিরাশ হয়ে মুঘল সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করেন। এভাবে বাংলার বারো ভূঁইয়াদের শাসনের অবসান ঘটে। আশা করি বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এ বিষয়ে ভালো একটি ধারণা লাভ করতে পেরেছেন

৭.লেখকের মন্তব্য | বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে?

বাংলাদেশের ইতিহাসে বারাে ভূঁইয়া একটি গৌরবােজ্জ্বল অধ্যায়। এই বারাে ভূইয়ারা ছিলেন বীর যোদ্ধা। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী। মুঘল সাম্রাজ্যের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিলেন। মুঘল শাসকদের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে তারা ছিলেন সােচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ। তারা কোনাে রাজবংশের সন্তান না হয়েও অদম্য সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে বাংলার দক্ষিণ ও পূর্ব অঞ্চলে প্রায় তিন দশক মুঘল আক্রমণ সফলভাবে প্রতিহত করেন। আশা করছি আপনারা বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস এবং বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এই বিষয়ে সকল খুঁটিনাটি তথ্য ভালোভাবে বুঝতে পেরেছেন।বারো ভূঁইয়াদের দমন করেন কে? এই বিষয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে সেটি আমাদের জানাতে পারেন। এছাড়াও বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের কি মতামত সেটি আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। বারো ভূঁইয়া ছাড়াও অন্য যে কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট THE DU SPEECH ভিজিট করতে পারেন।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা 
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
জেলা: নাটোর

আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাতের সমস্যায় যা যা করবেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url