OrdinaryITPostAd

২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য

২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য লিখে প্রকাশ করার মতো নয়।তারপরও বাঙালীর অস্তিত্বের সাক্ষী এই দিনকে বিশ্ব প্রাঙ্গণে উপস্থাপন করার জন্য আজকের এই '২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য ' শীর্ষক আর্টিকেলটি লেখা।এই দিনটি বাংলাদেশের স্বধীনতা দিবস।বাঙালীর ইতিহাস,সংগ্রামের কথা জানতে, বাঙালীর অপূরনীয় আত্মত্যাগের মর্মবাণী শুনতে ২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য আর্টিকেলটি পড়ুন।



অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. ২৬ শে মার্চ এর ইতিহাস
  2. স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র
  3. জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য 
  4. প্রশ্ন- উত্তর পর্ব 
  5. লেখকের মন্তব্য 

১.২৬শে মার্চ এর ইতিহাস|২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য 

২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দিবস।স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ একদিনে,এমনি এমনি হয় নি,এর পিছনে রয়েছে এক মর্মস্পর্শী ইতিহাস।২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য আর্টিকেলের এই অংশে আমরা স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানব।

বাঙালির অধিকার আদায়ের সুচনা হয় মূলত ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে।দেশভাগের পর রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায়ের দাবিতে ১৯৫২ সালে ভাষা শহীদ রফিক,জব্বার,বরকত,সালাম,শফিক এর রক্তে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ বপিত হয়। তখন থেকেই বাঙালির মানসপটে অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল যে স্বাধীনতাই বাঙালির সত্যিকারের মুক্তির দলিল।এরপর ধারাবাহিকভাবে ১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন,১৯৬৬ এর ছয় দফা,১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে বাঙালির সংগ্রামী চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।১৯৭০ এর নির্বাচনে জেতার পরও যখন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে না দিয়ে আলোচনার নামে টালবাহানা করছিল তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান তখনই বাঙালি জাতি এগিয়ে যেতে থাকে ২৫শে মার্চের করুন ইতিহাসের দিকে। 

১৯৭১ সালের ৭মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ঐতিহাসিক ভাষনে যখন বলেছিলেন,"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম" তখনই বাঙালি বুঝে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা আন্দোলনের ইঙ্গিত। সেই জ্বালাময়ী ভাষণে বাংলার মানুষের রন্ধে রন্ধে পৌঁছে যায় স্বাধীনতার নেশা। চলতে থাকে যুদ্ধের প্রস্তুতি। এরই প্রেক্ষিতে ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ , টিক্কা খান,জেনারেল রাও ফরমান আলী,জেনারেল নিয়াজি,এদের মাস্টারপ্লানে সরাসরি বাঙালী কে হত্যার মহোৎসব "অপারেশন সার্চলাইট" সংঘটিত হয়।সেই কালরাতে পশ্চিম পাকিস্তানের দোসররা ঘুমন্ত বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পারেন যে এখনই সময় বাঙালির জেগে ওঠার। তাই গ্রেফতারের পূর্বেই বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তিনি। এটিই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা।এই ঘোষণার মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়।তাই ২৬শে মার্চ কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

২.স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র|২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য

২৫শে মার্চ ১৯৭১ রাত্রি দ্বিপ্রহরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার পূর্বে তিনি রাত ১২ টা ২০মিনিটে বেতারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।২৬শে মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য আর্টিকেলের এই অংশে আমরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র টি উপস্থাপন করব।

ইংরেজিতে: "This may be my last message, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved."

বাংলায়:"এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন এবং আপনাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শেষ পর্যন্ত দখলদার সেনাবাহিনীকে প্রতিহত করুন। পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর শেষ সৈনিককে বাংলাদেশের মাটি থেকে বিতাড়িত করে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তোমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।"

- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান 

একই সময় বঙ্গবন্ধু আরও একটি বার্তা প্রেরণ করেন তা হলো:

ইংরেজিতে: "Today Bangladesh is a Sovereign and Independent state.On Thursday night West Pakistan armed forces suddenly attacked the police barracks at RajarBagh and the EPR the headquarters at pilkhana in Dhaka.many innocent and unarmed people have been killed in Dhaka city and other places of Bangladesh.Violent clashes between the East Pakistan Rifles and police on the one hand and the armed forces of Pindi on the other are going on. The Bengalis are fighting the enemy with great courage for and indipendent.Resist the treacherous enemy in every corner of Bangladesh.May God aid us in our fight for freedom.Joy Bangla"

বাংলায়:"আজ বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্র।বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী অতর্কিতভাবে রাজারবাগে পুলিশ ব্যারাকে এবং ঢাকার পিলখানায় ইপিআর সদর দপ্তরে হামলা চালায়।ঢাকা শহর ও বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে বহু নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।একদিকে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও পুলিশের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ চলছে অন্যদিকে পিন্ডির সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে।বাঙালিরা স্বাধীনতার জন্য প্রচণ্ড সাহসিকতার সঙ্গে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছে।বাংলাদেশের প্রতিটি কোণে বিশ্বাসঘাতক শত্রুকে প্রতিহত করুন। সৃষ্টিকর্তা আমাদের স্বাধীনতার লড়াইয়ে সাহায্য করুন।জয় বাংলা"

- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বার্তা দুইটি পূর্বপ্রস্তুত এবং রেকর্ড করা হয়েছিলো বলে ধারনা করা হয়।চট্টগ্রাম বেতারে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর হয়ে ২৬মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।২৭শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।এরপর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।

৩.জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য|২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য 

"স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন"

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই উক্তিটিতে জাতীয় জীবনে স্বাধীনতার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিবিড়ভাবে নিহিত আছে।আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য অনস্বীকার্য।কেননা অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা সংগ্রামের বিনিময়ে এই দিনটি আমাদের অর্জিত।এই দিনটি শুধু ঐতিহাসিক তাৎপর্যই অসাধারণ নয়,নবীন জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার শপথের ব্যক্ত করার দিন হিসেবে অনন্য সাধারণ।২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বাঙালির জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করব।

  • স্বাধীনতা দিবস আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে মনে করিয়ে দেয়,বাঙালি জাতি যে স্বৈরশাসনের হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের মুক্তির আশায় হাতে অস্ত্র নিয়েছিল সেই স্বাধীনতার চেতনাকে মনে করিয়ে দেয়।আর স্বাধীনতার চেতনা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করার দায়িত্ববোধকে ইঙ্গিত করে,মনে করিয়ে দেয় আমরা বাঙালি,মাথা উঁচু করে স্বাধীনভাবে বাঁচবো কারো কাছে মাথা নত করবো না।জীবনের বিনিময়ে হলেও এই স্বাধীনতা আমরা রক্ষা করব।
  • প্রতিবছর ২৬ শে মার্চ আমরা আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেদের অবয়ব দেখতে চেষ্টা করি। স্বাধীনতার মাধ্যমে শোষণ ও শৃঙ্খলের করাল গ্রাস থেকে নিজেদের মুক্তি ও আত্মউন্নয়নের পথে অগ্রসর হওয়ার যে সুযোগ আমরা পেয়েছি তার  সদ্ব্যবহার করতে পেরেছি কিনা,কতখানি আমাদের শুভ অর্জন তা মূল্যায়ন করে দেখে নিজেদের ঘাটতি অনুসন্ধান করে আত্মজিজ্ঞাসায় জর্জরিত হই এই দিনে।এ আত্মসমালোচনা অনুশোচনায় রূপ নিয়ে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করার চেতনায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়ার উজ্জীবনী শক্তি স্বাধীনতা দিবসে আমরা পাই।আমরা খতিয়ে দেখি আমাদের ব্যর্থতার নেতিবাচক দিকগুলো আর প্রত্যাশা রাখি সুন্দর আগামীর।
  • এই দিনটি আমাদের দেশপ্রেমের অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে। নিপীড়িত বঞ্চিত ও শোষিত মানুষের স্বপ্নসাধ পূরণের মহিমায় অমর এই দিনে বাঙালির অন্তর লাখো শহীদের স্মরণে শ্রদ্ধায়, ভক্তিতে,আনন্দে এবং জাতীয় চেতনায় উদ্বেলিত হয়ে ওঠে।

৪.প্রশ্ন- উত্তর পর্ব|২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য 

২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য নিয়ে অনেকেরই অনেক প্রশ্ন থাকে।আর্টিকেলের এই অংশে সেসব নিয়েই আলোচনা করব।
  1. ২৬ মার্চ কি জাতীয় দিবস নাকি আন্তর্জাতিক দিবস? উত্তর: ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস।এটি বাংলাদেশের একটি জাতীয় দিবস, আন্তর্জাতিক নয়।
  2. স্বাধীনতা দিবসে কি সরকারি ছুটি থাকে?উত্তর: হ্যাঁ।তবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করা হয়।
  1. ২৬ মার্চ ১৯৭১ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ? উত্তর: ২৫ মার্চ ১৯৭১ ছিলো বাঙালির কালরাত্রি।বাঙালিদের এই কালরাত্রি দূর করে আলোর দিশারি হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন,যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীনতা লাভ করে।তাই এই দিনটি বাঙালিদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

৫.লেখকের মন্তব্য|২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য 

২৬ মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা প্রত্যেকটি নাগরিকের দায়িত্ব।নতুন প্রজন্মকে এই দেশের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে,প্রত্যেকটি ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে হবে,স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে।তবেই কেবল বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব।

আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোনো প্রশ্ন,অভিযোগ,মন্তব্য কিংবা পরামর্শ কমেন্ট করে জানাতে পারেন।এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech এর সাথেই থাকুন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url