OrdinaryITPostAd

মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এর পেছনের বৈজ্ঞানিক রহস্য!

বর্তমানে মুড সুইং বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। অনেকে কটূক্তি করেও বলে থাকেন, আরে তোমার তো মেয়েদের মতো মুড সুইং করে বা মেয়েরা তো কিছু হলেই মুড সুইংয়ের দোহাই দেয়।তবে মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? অথবা মুড সুইং কী, এ ব্যাপারে অনেকেই সঠিক ধারণা রাখেন না। তাই আজকে আমরা মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এ ব্যাপারে আপনাদের সাথে আলোচনা করব। মেয়েদের মুড সুইং কেন হয় এবং এই সমস্যার সমাধানে কি করনীয় সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে। মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হলে আজকের আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।

আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. মুড সুইং
  2. মেয়েদের মুড সুইং
  3. মেয়েদের মুড সুইং এর কারণ
  4. বয়:সন্ধিকাল এবং মেনোপজ
  5. মুড সুইং বুঝার উপায়
  6. মুড সুইং সমস্যার সমাধানের জন্য করণীয়
  7. লেখকের মন্তব্য

১.মুড সুইং | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

মুড সুইং হলো মেজাজ দ্রুত পরিবর্তন। এই ধরনের মেজাজের পরিবর্তন সমস্যা সমাধানের প্রচারে এবং নমনীয় অগ্রগতির পরিকল্পনা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে। যখন মেজাজের পরিবর্তনগুলি অস্বাভাবিকভাবে হয় সেগুলি তখন বাইপোলার ডিসঅর্ডার হিসেবে বলা হয়।মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এই বিষয়ে অনেকেই জানেন না।

মেজাজ পরিবর্তন যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে ঘটতে পারে।আর তা মাইক্রোস্কোপিক থেকে বাইপোলার ডিসঅর্ডারের জন্য ও হতে পারে।আবার সাইক্লোথিমিয়ার, একটি বিষণ্নতাজনিত রোগ আত্মসম্মানের স্বাভাবিক সংগ্রাম থেকেও হতে পারে।তবে বেশিরভাগ মানুষের মেজাজের পরিবর্তন মানসিক উত্থান-পতনের হালকা থেকে মাঝারি পরিসরে থাকে।বাইপোলার মেজাজের পরিবর্তনের সময়কালও পরিবর্তিত হয়। এগুলি কয়েক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে।আল্ট্রারপিড  বা দিনব্যাপীও হতে পারে। চিকিৎসকরা মনে করেন যে শুধুমাত্র যখন চার দিন একটানা হাইপোম্যানিয়া বা সাত দিন ম্যানিয়া দেখা দেয়, তখনই বাইপোলার ডিসঅর্ডার বলা ন্যায়সঙ্গত। এই ধরনের ক্ষেত্রে, মেজাজের পরিবর্তন কয়েক দিন, এমনকি সপ্তাহ পর্যন্ত হতে পারে।এই সময়ে হতাশা এবং উচ্ছ্বাসের অনুভূতিগুলির মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকে। আজকে আমরা আলোচনা করব মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এই বিষয়ে।


২.মেয়েদের মুড সুইং | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

নারীদের একটি উচ্চসংখ্যা মুড সুইংয়ে আক্রান্ত। অনেকেই জানতে চান মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? ধরুন, একজন নারী হাসিমুখে কথা বলতে বলতে হঠাৎ মুড খারাপ হয়ে গেল, পরক্ষণেই আবার ঠিক হয়ে গেল, এটাকেই সংক্ষেপে মুড সুইং বলে। পিরিয়ড শুরু হওয়ার কিছুদিন আগে থেকে অনেক মেয়ের ক্ষেত্রেই কিছু মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়, যা খুব দ্রুত বদলাতে থাকে। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট এই সময়ে অস্বস্তি, ক্রোধ, খিটখিটে মেজাজ থেকে শুরু করে মানসিকভাবে একদম ভেঙেও পড়তে পারে মেয়েরা। এই লক্ষণগুলোকে একসঙ্গে বলা হয় প্রি–মিনস্ট্রুয়াল সিনড্রোম বা পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগের সিন্ড্রোম। যা সংক্ষেপে পিএমএস নামে বেশি পরিচিত। অনেকেই আবার মুড সুইংকে ইমোশনের রোলার কোস্টার ও বলে থাকেন।

৩.মেয়েদের মুড সুইং এর কারণ | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

এই অংশে আলোচনা করা হবে মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? বা মেয়েদের মুড সুইং এর কারণ কি তা নিয়ে।পিএমএস বা মুড সুইংয়ের কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা স্ত্রী হরমোনকেই দায়ী করে থাকেন। নারীদের পিরিয়ড সাইকেলকে কার্যক্রম অনুসারে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। যার মধ্যে শেষ পর্যায়টিতে নারী পিএমএসে আক্রান্ত হন। এরপর শুরু হয় পিরিয়ড, অর্থাৎ নতুন সাইকেল বা চক্র। মেয়েদের শরীরে থাকা স্ত্রী হরমোনের নিঃসরণ মাসের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম পরিমাণে হয়। একটা পিরিয়ড শেষ হলে প্রধান ফিমেল হরমোন ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ অল্প অল্প করে বাড়তে থাকে। ১৪-১৫ দিনের মাথায় তা পৌঁছে যায় তার সর্বোচ্চ মাত্রায়। যাকে বলে ওভল্যুশন। এরপর তরতরিয়ে কমতে থাকে ইস্ট্রোজেন নিঃসরণ। আবার পরের পিরিয়ড শুরুর পর থেকে অল্প অল্প করে নিঃসরণ বাড়ে। ইস্ট্রোজেনের এই উত্থান-পতনই মেয়েদের মানসিক অবস্থায় প্রভাব ফেলে এবং পিএমএসজনিত সমস্যা সৃষ্টি করে।

কিছু গবেষণায় বলা হয়, নারীবিশেষ হরমোনগুলো কিছু ব্রেইন কেমিক্যালকে কমিয়ে মুডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে অন্যতম হলো সেরেটোনিন। এ বিষয়ে আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে চিকিৎসকেরা মনে করেন। সেরেটোনিনের মাত্রা কমে গেলে হতাশা, বিষণ্নতা, অস্থিরতা তৈরি হয়। এ ছাড়া পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে স্বাভাবিকভাবেই একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম শারীরিক বা মানসিক লক্ষণ দেখা যায়। অনেকের ক্ষেত্রেই পেটের পেশিতে টান, খেতে অনিচ্ছা, শরীরে অস্বস্তি বা মাথাধরা ইত্যাদি জানান দেয়, এবার পিরিয়ড শুরু হবে। এ জন্যও অনেকের মুড সুইং হতে পারে। এগুলো ছাড়াও মেয়েদের মুড সুইং এর আরো কিছু কারণ রয়েছে। চলুন জেনে আসা যাক মেয়েদের মুড সুইং এর আরো কিছু কারণ সম্পর্কে এবং মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? সে সম্পর্কে।

৪.বয়:সন্ধিকাল এবং মেনোপজ | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

বয়ঃসন্ধি একটি শিশুর জীবনে মানসিক, শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তনের সময়। জীবনের এই পর্যায়ে মেজাজ পরিবর্তন হওয়া খুব স্বাভাবিক।এই সময় মেয়েদের মুড সুইং হয়।

জীবনের আরও একটি বড় পরিবর্তন মেনোপজ।মেয়েদের মুড সুইং এর ভান্ডার বলা হয় একে। ৩৫ থেকে ৪০ বছরের নারীদের বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু দুখঃজনক হলেও সত্যি আমাদের দেশে এ বিষয় নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথাই নেই। আমাদের মা-খালারা উপসর্গ হিসেবে শরীরে গরম ঝলকানি, অনিদ্রা এবং যৌনতায় অনীহাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগতে থাকে যা আমাদের মা-খালাদের জীবনকে রঙহীন বানিয়ে ফেলে। তাই এসময় আমাদেরকেই তাদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে সময় বেশি দিতে হবে এবং মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? তা জানতে হবে।

৫.মুড সুইং বুঝার উপায় | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? বা মুড সুইং বুঝার উপায় গুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

  • হঠাৎ রেগে যাওয়া

ছোট ছোট ব্যাপারেই হঠাৎ রেগে যাওয়া, স্বাভাবিক একটা ব্যাপার মেনে নিতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে যাওয়া মেয়েদের মুড সুইং এর অন্যতম একটি লক্ষণ।

  • ডিপ্রেশন বা অবসাদ

মাসের নির্দিষ্ট একটি সময়ে আপনার মন ভার হয়ে থাকলে, বিগত নানা ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে মনের অজান্তেই আপনার হতাশা সৃষ্টি হলে বুঝবেন আপনার মুড সুইং হচ্ছে। শুধু ইস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন নয়, সেরোটোনিন হরমোনের মাত্রাও এই সময় কমে যায় বলেই, মন খারাপের এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।

  • কান্নাকাটি

পিএমএসের সময় এটি আরেকটি অতি সাধারণ ঘটনা। খুবই সামান্য কারণে মন খারাপ করে তা থেকে কান্না এলে এটি মুড সুইংয়ের একটি কারণ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়।

  • উদ্বেগ বা অ্যাংজাইটি

কাজ করতে করতে হঠাৎই মনে হলো আপনাকে দিয়ে কিছুই হবে না।আত্মবিশ্বাস কমে গেল নিমেষেই। দিনের বেশির ভাগ সময়েই এই উদ্বেগ তৈরি হলে এটিও পিএমএসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ।

  • অবসাদ গ্রস্ততা

অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে অনীহা ইত্যাদিও মুড সুইংয়ের জন্য দায়ী।

৬.মুড সুইং সমস্যার সমাধানের জন্য করণীয় | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

মুড সুইংয়ের কোনো স্থায়ী সমাধান না থাকলেও নানাভাবে আপনি আপনার এই সমস্যাকে আয়ত্তে আনতে পারেন।তবে এর জন্য আগে জানতে হবে মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? সেই সম্পর্কে।

  • ব্যায়াম

সকালে অথবা বিকেলে হাঁটতে বের হওয়া, বাড়িতে কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলে এই মুড সুইং থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেতে পারেন। এক্সারসাইজের সময় ব্রেইন থেকে এন্ডোরফিন নামের একটি কেমিক্যাল বের হয়, যেটি আমাদের মধ্যে একধরনের সুখানুভূতি তৈরি করে এবং পিএমএসের জন্য দায়ী ক্ষতিকর হরমোনগুলোকে প্রতিহত করে।

  • সঠিক খাদ্যাভ্যাস

এ সময় একটি হেলদি ফুডচার্ট মেইনটেইন করলে আপনি সুফল পেতে পারেন। এ ছাড়া এই সময়ে জাংক ফুড এবং ক্যাফেইন–জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো।

  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

আপনার স্ট্রেস গুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে মুড সুইং এর মাত্রা কম হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।

মুড সুইং আসলে এমন একটা জিনিস, যা আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। অনেক সময় দেখা যায়, ভিকটিম নিজেই তার মুড সুইং সম্পর্কে অবহিত না। যার প্রধান কারণ অজ্ঞত। তবে নারী-পুরুষ উভয়েরই মুড সুইং সম্পর্কে জানা উচিত। এটিকে কখনোই মেয়েদের ন্যাকামি কিংবা মানসিক সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। বরং মেয়েটির প্রতি সদয় হয়ে তাকে এই সমস্যা থেকে বের করা আনার প্রচেষ্টা চালাতে হবে এবং মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? সেই সম্পর্কে জানতে হবে।

৭.লেখকের মন্তব্য | মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়?

মুড সুইং এর প্রভাবে একজন মানুষ আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে। তাই, কারো মুড সুইং হচ্ছে মনে হলে তার সাথে সাবধনতার সাথে কোমল ব্যবহার করতে হবে। মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এই সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করি মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এ ব্যাপারে আপনারা সকল কিছু বুঝতে পেরেছেন। মেয়েদের মুড সুইং কেন হয়? এ সম্পর্কে আপনাদের যেকোন প্রশ্ন অথবা মতামত আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন।যেকোন বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট THE DU SPEECH ভিজিট করতে পারেন
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা 
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url