OrdinaryITPostAd

কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এই সম্পর্কে আপনারা অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না। তাই আজকে আমরা আলোচনা করবো কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এই বিষয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস, যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণ, যুদ্ধের সমাপ্তি এবং কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এসব বিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে আজকের আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন। আশা করছি আজকের আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ার মাধ্যমে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে আপনারা ভালো একটি ধারণা লাভ করতে পারবেন।

আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ
  3. যেভাবে শুরু হয় যুদ্ধ
  4. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি
  5. যেসব দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়
  6. লেখকের মন্তব্য

১.দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ | কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এ যাবৎকাল পর্যন্ত সংঘটিত সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল, এই ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংগঠিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসেবে গণ্য করা হয়।তৎকালীন বিশ্বে সকল পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং দুইটি বিপরীত সামরিক জোটের সৃষ্টি হয়; মিত্রশক্তি আর অক্ষশক্তি। এই মহাসমরকে ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত যুদ্ধ বলে ধরা হয়, যাতে ৩০টি দেশের সব মিলিয়ে ১০ কোটিরও বেশি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে। অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্রসমূহ খুব দ্রুত একটি সামগ্রিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং সামরিক ও বেসামরিক সম্পদের মধ্যে কোনরকম পার্থক্য না করে তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা প্রয়োগ করা শুরু করে।

এছাড়া বেসামরিক জনগণের উপর চালানো নির্বিচার গণহত্যা, হলোকস্ট (হিটলার কর্তৃক ইহুদীদের উপর চালানো গণহত্যা), পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় কুখ্যাত এই যুদ্ধে প্রায় ৫ কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এসব পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম যুদ্ধ।

পূর্ব এশিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষে জাপান ইতোমধ্যেই ১৯৩৭ সালে প্রজাতন্ত্রী চীনে আক্রমণ করে।[২] পরবর্তীতে ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি পোল্যান্ড আক্রমণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। দ্বিতীয় ঘটনাটিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা বলে গণ্য করা হয়।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ | কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। তবে এ নিয়ে একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যা অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য। এই কারণটি যুদ্ধোত্তর সময়ে মিত্রশক্তির দেশসমূহের মধ্যে তোষণ নীতির মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় যা নির্দেশক শক্তির ভূমিকা পালন করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি এবং জাপানের আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদকে দায়ী করে এই কারণটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে যার বিস্তারিত এখানে উল্লেখিত হচ্ছে।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি তার সম্পদ, সম্মান এবং ক্ষমতার প্রায় সবটুকুই হারিয়ে বসে। এর সাম্রাজ্যবাদী চিন্তাধারার মূল কারণ ছিল জার্মানির হৃত অর্থনৈতিক, সামরিক এবং ভূমিকেন্দ্রিক সম্পদ পুনরুদ্ধার করা এবং পুনরায় একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা। এর পাশাপাশি পোল্যান্ড এবং ইউক্রেনের সম্পদসমৃদ্ধ ভূমি নিয়ন্ত্রণে আনাও একটি উদ্দেশ্য হিসেবে কাজ করেছে। জার্মানির একটি জাতীয় আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর সম্পাদিত ভার্সাই চুক্তি হতে বেরিয়ে আসার। এরই প্রেক্ষাপটে হিটলার এবং তার নাৎসি বাহিনীর ধারণা ছিল যে একটি জাতীয় বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে সংগঠিত করা সম্ভব হবে।

যুদ্ধের মূল কারণ ছিল মিত্র শক্তির এক পক্ষ চুক্তি। মিত্র শক্তির এই এক পক্ষ চুক্তি জার্মানিরা মেনে নিতে পারেনি তারা ভাবে যে তাদের সাথে পক্ষপাত্তি করা হয়েছে। তাই তাদের মনে একটা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।

৩.যেভাবে শুরু হয় যুদ্ধ | কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে?

নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিষ্ক্রিয় রাখার জন্য জার্মানি অনাক্রমণ চুক্তি করে। অন্যদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের সাথে সহায়তা চুক্তি করে। ১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ড অভিযান শুরু হয়। ৩ সেপ্টেম্বর মিত্রবাহিনী জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।

প্রথম দিনই জার্মান ঝটিকা বাহিনী পোল্যান্ডকে ছিন্ন-বিছিন্ন করে দেয়। ফরাসি ও ব্রিটিশ বাহিনী সাহায্য করারও সুযোগ পায়নি। এটি পশ্চিমের বিশ্বাসভঙ্গতা হিসেবে পরিচিত। ১৭ই সেপ্টেম্বর গোপন সমঝোতা অনুসারে সোভিয়েত বাহিনীও যুদ্ধে যোগ দেয়। পরদিনই পোলিশ কর্তাব্যক্তিরা দেশ ছাড়েন। ওয়ারস পতন হয় ২৭শে সেপ্টেম্বর। শেষ সেনাদল কক্ দুর্গে যুদ্ধ করে ৬ই অক্টোবর পর্যন্ত।

৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি | কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে?

১৯৪৫ সালের ৮ই মে৷ ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে৷ প্রায় সাড়ে ৬ কোটি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ জার্মানির মানুষ পরাজয়ের গ্লানি অনুভব করছে, যদিও অনেকে প্রায় ৬ বছরের যুদ্ধে বাবা, ভাই ও ছেলের মৃত্যুর পর যুদ্ধের সমাপ্তির ফলে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে৷ বছরের পর বছর ধরে বোমাবর্ষণ বন্ধ হওয়ায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শহরবাসীরা আবার বুকভরা নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে৷ তবে জার্মানির বেশিরভাগ মানুষের কাছে সেটা ছিল পরাজয়ের দিন৷ বিশেষ করে সৈন্যদের জন্য, যারা বন্দিশিবিরে বসে নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানার অপেক্ষায় ছিল৷ কিছু সৈন্য দ্রুত মুক্তি পেয়েছিল৷ অন্যদের প্রায় ১০ বছর পর্যন্ত সোভিয়েত বন্দি শিবিরে পাঠানো হয়৷ মিত্রশক্তি, অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, ক্যানাডা ও বেলজিয়ামের কাছে ৮ই মে শর্তহীন আত্মসমর্পণের দিন, জয়ের দিন৷ যারা ‘তৃতীয় রাইশ'-এর নিপীড়নের শিকার হয়েছিল, তাদের কাছেও দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে৷ ইহুদি, সমকামী, সিন্টি ও রোমা জনগোষ্ঠী, কমিউনিস্ট, সামাজিক গণতন্ত্রী, উদারপন্থি, খোলামেলা ও গোপন হিটলার-বিরোধীদের জন্য সেটা ছিল মুক্তি দিবস৷

৫.যেসব দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় | কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে?

১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র মিত্রশক্তির সাথে যোগ দেয়। মূলত জার্মানি এবং জাপান দুই অক্ষশক্তিই যুক্তরাষ্ট্রে আক্রমণ করার মাধ্যমে একে যুদ্ধে ডেকে আনে। অপরদিকে চীনের সাথে জাপানের ছিল পুরাতন শত্রুতা। ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয় চীন-জাপান যুদ্ধ চলছিল। এর ফলে চীনও মিত্রপক্ষে যোগদান করে। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

এই যুদ্ধে নব্য আবিষ্কৃত অনেক প্রযুক্তির ধ্বংসাত্মক প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রয়োগ ছিল পারমাণবিক অস্ত্রের। মহাযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই এই মারণাস্ত্র উদ্ভাবিত হয় এবং এর ধ্বংসলীলার মধ্য দিয়েই যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। সকল পুণর্গঠন কাজ বাদ দিলে কেবল ১৯৪৫ সালেই মোট ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই যুদ্ধের পরপরই সমগ্র ইউরোপ দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক অংশ হয় পশ্চিম ইউরোপ আর অন্য অংশে অন্তর্ভুক্ত হয় সোভিয়েত রাশিয়া। পরবর্তীতে এই রুশ ইউনিয়নই ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল। পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহের সমন্বয়ে গঠিত হয় ন্যাটো আর সমগ্র ইউরোপের দেশসমূহের সীমান্তরেখা নির্ধারিত হতে শুরু করে। ওয়ারস প্যাক্টের মাঝে অন্তর্ভুক্ত দেশসমূহ নিয়ে দানা বেঁধে উঠে স্নায়ুযুদ্ধ। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিশ্বমঞ্চে অভিনব এক নাটকের অবতারণা করে।

৬. লেখকের মন্তব্য | কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে?

কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এই সম্পর্কে আজকে আমরা আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আশা করছি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস, যুদ্ধের কারণ, যুদ্ধের সমাপ্তি এবং কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এ সম্পর্কে আপনারা ভালো একটি ধারণা লাভ করতে পেরেছেন। কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এই বিষয় যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে সেটি আমাদের জানাতে পারেন। কোন দেশের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে এই বিষয় ছাড়াও যেকোনো বিষয় সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন।
আর্টিকেলটি লিখেছেন: নুসরাত জাহান হিভা 
পড়াশোনা করছেন: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় 
লেখকের জেলার নাম: কুমিল্লা



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url