OrdinaryITPostAd

সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

 সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বের সর্বোচ্চ শক্তিশালী সংগঠনের মধ্যে অন্যতম। তবে পরে তা ভেঙ্গে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তা নিয়ে প্রশ্নের শেষ নেই। এটি বিশ্ব রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অন্যতম ঘটনা। সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তা সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা এ আর্টিকেলে দেওয়া হয়েছে। তাই সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় সম্পর্কে জানার জন্য আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ করা হলো।


আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. সোভিয়েত ইউনিয়নের ধারণা
  2. সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন
  3. সোভিয়েত ইউনিয়নের আয়তন এবং অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ
  4. সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল
  5. সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়
  6. সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের পরবর্তী অবস্থা
  7. বর্তমান সোভিয়েত ইউনিয়ন
  8. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
  9. লেখকের মন্তব্য

1. সোভিয়েত ইউনিয়নের ধারণা সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় 

সাধারণভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন অনেকগুলো প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সম্মিলিত দেশ যেখানে কোন ব্যক্তি মালিকানা ছিল না, সমস্ত সম্পত্তি সামাজিক বা রাষ্ট্রের অধীনে ছিল। এটি একটি একদলীয় রাষ্ট্র ছিল। মূল পার্টি ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি। এই সমাজতান্ত্রিক দেশের রাজধানী ও সর্বাধিক জনসংখ্যা বিশিষ্ট শহর হল মস্কো, তিবিলিসি ও ইয়েরেভান।
 এছাড়া অন্যান্য বৃহৎ নগর গুলো হল লেনিনগ্রাদ,কিয়েভ, মিনস্ক, তাশখন্দ, আলমাতি ইত্যাদি। এই দেশে মোট ১১ টি টাইমজোন ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল সেই সময়ের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রায় ১০০ এর বেশি বৈচিত্রের মানুষ বসবাস করত। তা সত্ত্বেও সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় এই বিষয়ে কৌতূহল সকলের মনেই রয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকারি ভাষা ছিল রুশ, আর্মেনীয় ও জর্জীয়। এছাড়াও স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা ছিল ইউক্রেনীয়, বেলারুশিয়, উজবেক, কাজাখ, আজারবাইজানি, লিথুয়ানিয়, মলদোভিয়, লাটভিয়, কিরগিজ, তাজিক, তুর্কমেন ও এস্তোনিয়। সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রায় ৭০% পূর্ব স্লাভ, ১২% তুর্ক, ১৮% অন্যান্য নৃগোষ্ঠী বসবাস করত। সেখানে নাস্তিক্যবাদ সর্বাধিক সমাদৃত ছিল। তবে খ্রিস্ট ধর্ম ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং কিছু ইসলাম বৌদ্ধ ও জরাথ্রিস্টবাদী জনগোষ্ঠী বসবাস করত। জনগণ নিজেদেরকে সোভিয়েত হিসেবে পরিচিত করত। সরকার ব্যবস্থা ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় মার্কসবাদী- লেনিনবাদী একদলীয় সমাজতান্ত্রিক। রুশসাম রাজ্যের বাকি অংশ এবং তুর্কির জর্জীয়-আর্মেনীয় অংশ একত্রিত হয় ১৯১৮ সালের ১১ নভেম্বর।

সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতাদের নাম:
  • ভ্লাদিমির লেনিন
  • জোসেফ স্তালিন
  • গেওর্গি মালেনকোভ
  • নিকিতা ক্রুশ্চেভ
  • লিওনিদ ব্রেজনেভ
  • ইউরি  আন্দ্রোপভ
  • কনস্তানতিন চের্নেনকো
  • মিখাইল গর্ভাচেভ
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রথম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন মিখাইল কালিনিন। সর্বশেষ রাষ্ট্র প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মিসাইল গর্ভাচেভ
সর্বপ্রথম সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন  ভ্লাদিমির লেনিন। সর্বশেষ সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইভান সিলায়েভ।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আইনসভা ছিল দুই কক্ষ বিশিষ্ট। সোভিয়েত ইউনিয়নের আইনসভার উচ্চকক্ষের নাম ছিল ঐক্যের সোভিয়েত। নিম্নকক্ষের নাম ছিল জাতীয়তার সোভিয়েত।
সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসংখ্যা ছিল ২৯,৩০,৪৭,৫৭১ জন। তাদের মুদ্রার নাম ছিল সোভিয়েত রুবল।



2. সোভিয়েত ইউনিয়নের গঠন সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

সেই সময় রাশিয়াতে ছিল জার-সাম্রাজ্য। তবে সেটি ছিল অত্যন্ত নিপীড়নমূলক এবং সাধারণ জনগণ তাতে অত্যাচারিত এবং নিষ্পেষিত হতো। অবশেষে রাশিয়াতে জারবিরোধী মার্ক্সবাদী রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি গঠিত হয়। ১৯০৩ সালে এই দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। একটি দলের নাম বলশেভিক পার্টি এবং অপরটির নাম মেনশেভিক পার্টি। একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় প্রথম দলটির নাম হয় বলশেভিক কারণ বলশেভিক অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। অপরদিকে মেনশেভিক অর্থ সংখ্যালঘুতা।

বলশেভিক পার্টির নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন ভ্লাদিমির লেনিন। ১৯১৭ সালের ৭ই নভেম্বর সেন্ট পিটার্সবার্গে সংঘটিত হয় একটি সশস্ত্র অভ্যুত্থান। এ ঐতিহাসিক অবস্থানকে অক্টোবর বিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়, তবে নভেম্বর বিপ্লব কিংবা বলশেভিক বিপ্লব নামেও পরিচিত। এই বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শ্রমিক শ্রেণী। তারা হাত মিলিয়েছিলেন গরীব কৃষকদের সাথে। ঐদিন সন্ধ্যায় তৎকালীন রুশ বুর্জোয়াড় সরকারের শেষ খাঁটি শীত প্রাসাদের উপর বিজয়ী আক্রমণ চালায় বিপ্লবীরা। ওই সময় জরুরী অধিবেশনে ভ্লাদিমির লেনিন জানান,"যে শ্রমিক ও কৃষক বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তার কথা বলশেভিকরা সর্বদা বলে এসেছে তাই ঘটলো।"

অক্টোবর বিপ্লবের বিজয়ের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হয় এর ফলে একচেটিয়া পুঁজিবাদ অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার কবল থেকে মুক্তি পায় বিশ্বের এক ষষ্ঠাংশ ব্যাপী বিস্তৃত বিশাল একটি দেশের জনগণ। রাশিয়া বিশ্বের চোখে হয়ে ওঠে রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর একটি রাষ্ট্র। এই বিপ্লবকে সারা বিশ্বে কমিউনিস্ট বিপ্লব নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ভৌগোলিকভাবে পাশাপাশি সমমনা অঞ্চল গুলোকে একইভূত করে ১৯১৮ তে সৃষ্টি হয় সোভিয়েত ঐক্য। বিভিন্ন সময়ে এর বৃদ্ধি পরিবর্তিত হয় তবে সর্বশেষ ব্যক্তির পরের এর ব্যাপ্তি দাড়ায় বাল্টিক রাষ্ট্র সমূহ, পূর্ব পোল্যান্ড ও বিসার্বিয়া পর্যন্ত। 
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় এই কারণ নির্ণয় করা কঠিন ছিল এর গঠনের কারণেই। 

3. সোভিয়েত ইউনিয়নের আয়তন এবং অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রসমূহ সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত মূল রাষ্ট্রগুলো ছিল রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ এবং ট্রান্সককেশিয়ান দেশগুলো যার সাথে ১৯২৪ সালের তুর্কমান ও উজবেক যোগ দেয়। পরবর্তীতে ১৯২৯ সালে তাজিক সোভিয়েত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক এবং ১৯৩২ সালে কিরিগ ও কাজাক সোভিয়েত সোশ্যালিস্টরা ইউনিয়নে যোগ দেয়।
  
ট্রান্স ককেশিয়ান অংশটি আর্মেনিয়ান, জর্জিয়ান ও আজারবাইজান এসএসআরএ বিভক্ত করা হয়। ১৯৪০ সাল নাগাদ লাটভিয়ান, লিথুনিয়ান, এস্তোনিয়ান ও মালদোভা সহ বাল্টিক সাগর পাড়ের আরো কিছু অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের যুক্ত করা হয়। ১৯৯১ সালে ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়লে এ রিপাবলিকগুলো স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ২,২৪,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। যা ছিল তৎকালীন সময়ের সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্র পূর্ব ইউরোপ থেকে শুরু হয়ে মধ্য এশিয়া হয়ে উত্তর এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত প্রজাতন্ত্র সমূহ:
সোভিয়েত ইউনিয়নের ঐক্যের উৎপত্তি হয়েছিল চারটি প্রজাতন্ত্র হতে। তবে ১৯৫৬ হতে ১৯৯১ সালে ভেঙে যাবার আগ পর্যন্ত এই ইউনিয়নে প্রজাতন্ত্রের সংখ্যা দাঁড়িয়ে ছিল পনেরটিতে। এই প্রজাতন্ত্রসমূহ হল:
  1. আর্মেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  2. আজারবাইজানি সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  3. বেলারুশিয়া সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  4. এস্তোনিয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  5. কাজাখ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  6. কিরগিজ সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  7. জর্জীয় সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের প্রজাতন্ত্র
  8. লিথুনিয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  9. লাটভিয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  10. রুশ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  11. মলদোভিয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  12. তুর্কমান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  13. তাজিক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  14. উজবেক সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
  15. ইউক্রেনীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তা প্রত্যেকটি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রই বুঝতে পেরেছিল।

4. সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থিত সুপ্রিম কাউন্সিল অফ দা ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিক এর নিকট সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হস্তান্তর করা ছিল। এই কাউন্সিল ছিল দুইটি চেম্বারে বিভক্ত, যার ভেতরের একটি ছিল ৭৫০ সদস্যের সোভিয়েত অফ দ্যা ইউনিয়ন এবং অপরটি ছিল ৭৫০ সদস্যের ইউনিয়ন অফ ন্যাশনালিটিস। দুইটি কক্ষেই নিয়মিত নির্বাচিত করা হতো। নির্বাচনে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি নির্ধারণ করত কারা কোন পক্ষে সদস্য হবেন। শাসন ব্যবস্থা থেকেই ধারণা করা যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে গিয়েছিল।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা: সত্তরের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনীতির স্বর্ণযুগ ছিল। ১৯৯০ সালে ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি ছিল। ১৯৯১ সালের হিসাব অনুযায়ী সোভিয়েত ইউনিয়নের জিডিপি ছিল ২.৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং গড় আয় ছিল ৮৭০০ মার্কিন ডলার। তবে ব্ল্যাক মার্কেটের কারণে সোভিয়েতের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অনুমান করা হয় যে সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্ল্যাক মার্কেটের আয়তন ছিল সোভিয়েত জিডিপির প্রায় ১০%। এবং এর মূল নেতারা ছিলেন কমিউনিস্ট নেতারা যারা অত্যাধিক ক্ষমতার ফলে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কমিউনিস্ট নেতা ও পলিটব্যূরোদের সীমাহীন দুর্নীতি সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়েছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ছিল কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। ভূমি ও বাড়ির ব্যক্তিগত মালিকানা সোভিয়েত ইউনিয়নে নিষিদ্ধ ছিল। যদিও বলা হতো সকল সম্পদের মালিক সোভিয়েত জনগণ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সম্পদের মালিক ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সরকার। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুসারে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হতো ফলে আগামী পাঁচ বছর কি পরিমান শস্য উৎপাদন করা হবে এবং কি পরিমান পণ্য কারখানায় উৎপাদন করা হবে তা পাঁচ বছর আগেই নির্ধারিত হতো। ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান তৈরির মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরির ব্যবস্থা সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিল না।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নে নাগরিক সুবিধা: সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত হতো কার্ল মার্কসের দর্শনানুসারে। রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিল। পোস্ট গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত সবাই বিনামূল্যে শিক্ষা পেত পানি গ্যাস সেন্ট্রাল হিটিং সহ নাগরিকদের বিভিন্ন সুবিধায় রাষ্ট্র প্রচুর পরিমানে ভর্তুকি প্রদান করায় নাগরিকদের হাতে তেমন কোনো খরচ হতো না। পেশা ও চাকুরীর শর্তানুসারে বেতন নির্ধারিত হতো, ছাত্রদেরকেও রাষ্ট্র বেতন প্রদান করত সকল চাকরিজীবীকে ডরমেটরি তে আবাসন প্রদান করা হতো পরবর্তীতে সকলকেই নিজস্ব ভাষার প্রদান করা হতো।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে অন্যান্য রাষ্ট্রের বৈদেশিক সম্পর্ক: সেই সময় বিশ্ব রাজনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্কেও সোভিয়েত ইউনিয়ন নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে শুরু করে। গর্ভাচেভ পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত  ব্লকভুক্ত দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ বন্ধ করে দেন। ফলে তারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন বিষয়ে স্বাধীন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে শুরু করে। তিনি পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির একত্রীকরণকে সমর্থন করেছিলেন। ইউরোপে ন্যাটো এবং ওয়ারস চুক্তিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যে শীতল যুদ্ধ চলছিল তা গরভাচেভের নীতির কারণে যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে শুরু করে।
  • অভ্যন্তরীণ দেশগুলোর স্বাধীন হওয়ার তৎপরতা: সোভিয়েত ইউনিয়নের তিনটি প্রজাতন্ত্র রাশিয়া ইউক্রেন এবং বেলারুশের নেতারা সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য গোপনে একটি চুক্তিতে সই করেছিলেন। এই চুক্তিটি সই করা হয়েছিল ১৯৯১ সালে ডিসেম্বর মাসে। এই চুক্তি সম্পর্কে বাকি প্রজাতন্ত্রগুলোর কেউই জানতো না। এই চুক্তিটি স্বাক্ষর হওয়ার পরেই সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্ভাচেভ পদত্যাগ করেন এবং তার পরেই সোভিয়েত ইউনিয়ন পরে ভেঙে যায়।
  • স্তালিনের একনায়কতন্ত্র: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে বেশ শক্তিশালী ছিল। ১৯৪২ সালে নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নে আক্রমণ করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের মতে এ সময় জার্মানরা সাড়ে তিন লাখ সোভিয়েত লাল ফৌজ কে হত্যা করেছিল। এছাড়াও সাধারণ মানুষদেরও হত্যা করা হয়েছিল। জোসেফ স্তালিন ১৯৪১ সালের ৬ নভেম্বর জার্মান হামলার মুখে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। এটি ছিল জাতির উদ্দেশ্যে তার দ্বিতীয় ভাষণ। তিনি তার ভাষনে দাবি করেন যে জার্মান হামলায় সোভিয়েত বাহিনীর সাড়ে ৩ লাখ সৈন্য নিহত হলেও ৪৫ লাখ জার্মান সেনা ও নিহত হয়েছে এবং বিজয় সুনিশ্চিত। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন এই সংখ্যা ছিল কাল্পনিক।
রাশিয়ার পক্ষে জার্মান সেনাদের থামানো প্রায় অসম্ভব ছিল। তবে রাশিয়ার প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া জার্মান সেনাদের যুদ্ধের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়ে।স্তালিন ব্রাদের যুদ্ধে জার্মানদের পরাজিত করতে সোভিয়েত মার্শাল এর সঙ্গে  স্তালিন একসঙ্গে কলা কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রসমূহ এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্র সমূহের মধ্যকার জটিল এক অবস্থার নাম ছিল স্নায়ুযুদ্ধ যাকে cold war ও বলা হয়। এই অবস্থার সৃষ্টি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরবর্তী সময়ে। মূলত ১৯৪০ এর দশকের মাঝেমাঝে থেকে ১৯৮০ এর দশকে শেষ পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ছিল। এই দীর্ঘ সময় ব্যাপী ২ শক্তিশালী দেশের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং রাজনৈতিক মতানৈক্য আন্তর্জাতিক রাজনীতির অবস্থা নিয়ন্ত্রণ করত।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রদের সমূহ গুলো ছিল সাম্যবাদ বা সমাজতন্ত্রপন্থী, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো ছিল গণতন্ত্র ও পুঁজিবাদের পক্ষে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন ইউনিয়নের পক্ষে ছিল পূর্ব ইউরোপের অনেকগুলো রাষ্ট্র- বুলগেরিয়া চেকাস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি, পোলান্ড, পূর্ব জার্মানি ও রোমানিয়া। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলো ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি, জাপান ও কানাডা। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন কিছুকাল কিউবা এবং চীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে সমর্থন করেছিল। কিছু দেশ ছিল যারা কোন পক্ষকেই সমর্থন করেনি তাদের বলা হতো নিরপেক্ষ দেশ। অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের পরিবর্তন এবং ভাঙ্গনের মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

5. সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন ছিল বহুল আলোচনার বিষয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তা নিয়ে সকলের মনে ছিল হাজারো প্রশ্ন। ১৯১৭ সালের বলশেভিক বিপ্লবের মাধ্যমে রাশিয়ার জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে এই সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন শুরু হয় মিখাইল গরবাচেভের আমলে এবং এই ভাঙ্গন সম্পন্ন হয় বরিস ইয়েলৎসিনের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন সময়ে।

সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের কারণগুলো নিম্নরূপ:
  • দুর্বল অর্থনৈতিক অবস্থা: কট্টর সাম্যবাদী শাসনামলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে। সোভিয়েত ইউনিয়নের গড় জাতীয় আয়ের ৩০ শতাংশই ব্যায় হতো সামরিক বিভাগে। পূজির অভাবে ভোগ্য পণ্য ও শিল্প উৎপাদন মার খায় যার পরিণামে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ব্যাহত হয়। কৃষি ও শিল্পে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণের ফলে দেশীয় সম্পদের সর্বত্র ব্যবহার না হওয়ায় জনগণের মাথাপিছু আয় কমে যায়। লেনিনের নয়া অর্থনৈতিক নীতি বা এন ই পি বাতিল করে স্ট্যালিন কৃষি কাজে যে বাধ্যতামূলক যৌথ চাষ ব্যবস্থার প্রচলন করেন, তাতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি কৃষকদের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়।
  • একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা: সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির জন্য এক দলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসন অনেকাংশে দায়ী ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় তৎপর হয়। সর্বহারার একনায়কত্ত্বের বদলে প্রতিষ্ঠিত হয় ব্যক্তি ও দলের একনায়কত্ব। ফলে দল ও সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য না থাকায় শাসনব্যবস্থায় জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোনো প্রতিফলনই ঘটছিল না। এভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের যে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠিত হয় তা সোভিয়েতের পতনকে নিশ্চিত করে দেয়।
  • শিল্প ক্ষেত্রে সংকটাপন্ন অবস্থা: সোভিয়েত ইউনিয়নে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ায় কৃষির মত শিল্প ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দেয়। শিল্পক্ষেত্রে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগের ফলে সম্পদের অপচয়, অদক্ষতা ইত্যাদি উৎপাদন ক্ষেত্রে এক গভীর সংকটের সৃষ্টি করে। শিল্পজাত পণ্য সামগ্রির অভাব সাধারণ মানুষকে অস্থির ও অসহায় করে তোলে।
  • সামাজিক ও সংস্কৃতিতে হস্তক্ষেপ: সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের অন্যতম একটি কারণ ছিল। কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী, চলচ্চিত্র নির্মাতা এমনকি বিজ্ঞানীর চিন্তায় হস্তক্ষেপ করা হতো প্যাসটারনিক,সোলঝেনিৎসিনের মত সাহিত্যিক, সাখারভের মত বিজ্ঞানীরা সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির সমালোচনা করেছিলেন বলে তাদেরকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। সরকারের এই ভূমিকা সোভিয়েতের পতনে অনেক ভূমিকা রেখেছিল।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের কাঠামোগত কিছু ত্রুটি: রাষ্ট্রীয় কাঠামো গত কিছু ত্রুটির জন্য বিভিন্ন জাতির সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে আশা-আকাঙ্ক্ষা নানা সময়ে নানাভাবে দমিত হয়ে এসেছে। আসলে রাশিয়াতে জারতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে বলশেভিক তন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ঘটলেও পূর্বতন যার সাম্রাজ্যের কাঠামোই অনেকটা বজায় ছিল। স্টালিনের আমল পর্যন্ত সোভিয়েত সাম্রাজ্য সম্প্রসারণের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে কিন্তু রাষ্ট্রীয় কাঠামোর আধুনিকীকরণের ও উদারীকরণের প্রতিষ্ঠা না থাকায় সোভিয়েত ইউনিয়নের পুরাতন কাঠামো ভেঙে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলো একে একে বেরিয়ে আসে।
  • প্রশাসনিক সংকট: রাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর পার্টির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বনাশ ডেকে এনেছিল। প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে চূড়ান্ত কেন্দ্রীয়করণের ফলে অলসতা, পরিশ্রম বিমুখতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেশকে সর্বনাশের পথে টেনে নিয়ে যায়। অপরিণাম দর্শী আমলাদের খেয়ালখুশীমতো আদেশ-নির্দেশে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয।
  •  গর্ভাচেভের দায়িত্ব: গর্ভাচেভের নতুন নীতি অর্থাৎ পুনর্গঠন ও মুক্তচিন্তার নীতি সোভিয়েত শাসন ব্যবস্থায় যে খোলা বাতাসের অনুপ্রবেশ ঘটায় তা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন জাতির এতদিনের অবদমিত আশা-আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করার সুযোগ এনে দেয়। গর্ভাচেভের উদারীকরণের রাস্তায় হাঁটায় সোভিয়েত রাশিয়ার পুঁজিবাদের লক্ষণ ফুটে ওঠে। তার নীতির কারণে সোভিয়েত রাশিয়ায় নির্বাচনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রচুর প্রার্থী পরাজিত হয়। শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার এই নীতি। যদিও তিনি এই নীতিগুলো প্রণয়নের মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির স্বৈরতন্ত্র ও একনায়তন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে সার্বজনীন ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিকরণ এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থনীতির পরিবর্তে মুক্তবাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন।
  • কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব: সোভিয়েত কমিউনিস্ট দলের ভেতরকার দ্বন্দ্ব ক্রমশ দলকে দুর্বল করে তোলে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দ থেকেই সোভিয়েত রাজনীতি দুই পরস্পর বিপরীত মেরুতে ভাগ হয়ে যায় বরিস ইয়েলৎসিন, আলেকজান্ডার ইয়াকভলেভ, এডওয়ার্ড শেভারনাদজে প্রভৃতি ২৮ তম পার্টি সম্মেলনে কমিউনিস্ট দলকে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক দলের রূপান্তরের প্রস্তাব রাখে। অপরদিকে ইগার লিগাচেভ,ভি আই ভারোতনিকভ প্রমুখের প্রচেষ্টায় এক রক্ষণশীল গোষ্ঠীর উদ্ভব ঘটে। দলীয় কোন্দলে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির ঐক্য ও শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে। সেই সুযোগে বিভিন্ন অঙ্গ রাষ্ট্র সোভিয়েত রাষ্ট্রীয় সংহতিকে বিপন্ন করে তোলে।

6. সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের পরবর্তী অবস্থা সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং ১৫ টি আলাদা নতুন রাষ্ট্র তৈরি হয়। এবং পরিষ্কার হয়ে যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙ্গে যায়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গঠিত হওয়া রাষ্ট্রগুলো হল: আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, বেলারুশ, এস্তোনিয়া, জর্জিয়া, কিরগিজস্তান, কাজাখাস্তান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মলদোভিয়া, রাশিয়া, তাজিকিস্তান, তুর্কিমেনিস্তান ,ইউক্রেন এবং উজবেকিস্তান।

১৯৪৫ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে অবসান পর্যন্ত সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে লিপ্ত একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী পরাশক্তি। সোভিয়েত পতনের সঙ্গে সঙ্গে শেষ হয়ে যায় মার্কিন পুঁজিবাদের সঙ্গে এ অঞ্চলের স্নায়ুযুদ্ধ। এ সময় উল্লেখিত ১৫ টি প্রজাতন্ত্রের ১১ টি নিজেদের মধ্যে গঠন করে স্বাধীন দেশের একটি শিথিল রাষ্ট্র মন্ডল।বাল্টিক রাষ্ট্রত্রয়-লিথুনিয়া লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া এতে যোগ দেয়নি ।পরবর্তীতে ২০০৪ সালে এ তিনটি রাষ্ট্র যোগ দেয় ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে। প্রায় ১৫টি  রাষ্ট্র নিজেদের নতুন পরিচয় তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।

সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজম এর সমাপ্তি ঘটে ১৯৯১ সালের ১৮ই আগস্ট। তবে কমিউনিস্ট পার্টিরা তাদের ধ্বংসের মুখে এসে গিয়েছিল ১৯৮৫ সালে গর্ভাচেভের সংস্কার নীতি প্রকাশনার পর থেকেই। কমিউনিস্ট পার্টি যতই বাইরে তাদের ক্ষমতা প্রকাশ করুক না কেন, জনগণ খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিল যে তাদের দিন শেষ। সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি আধুনিক ও গতিশীল রাষ্ট্র পরিণত করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য জনগণ তাদেরকে দায়ী করেছিল। ১৯৮০ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের আর্থিক অবস্থা।

7. বর্তমান সোভিয়েত ইউনিয়ন সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কোন চিহ্ন আর বাকি নেই। সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রত্যেকটি রাষ্ট্র তাদের নিজেদের মতো করে নতুন আধিপত্য বিস্তার করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের অষ্টম এবং সর্বশেষ নেতা ছিলেন মিখাইল গড়বাচেভ। তিনি পদত্যাগ করার পর তার পদটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জন্য কোডগুলি নিয়ন্ত্রণ সহ রাশিয়ার নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বরিস ইয়েলৎসিন এর কাছে হস্তান্তর করেছেন।

বর্তমানে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত প্রত্যেকটি রাষ্ট্রই নিজেদের আলাদা পরিচিত করেছে এবং বিশ্বের মানচিত্রে নিজেদের আলাদা অবস্থান তৈরি করেছে।  সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিকগণ বিভিন্ন মতামত প্রদান করেছেন।

বেলারুশ এবং ইউক্রেন ১৯৪৫ সালে জাতিসংঘভুক্ত থাকা অবস্থায় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হয়েছিল। পরবর্তীতে নাম বদলে তারা ইউক্রেন ও রিপাবলিক অফ বেলারুশ হিসেবে আবার জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯১ সালে ১৭ ই সেপ্টেম্বর এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুনিয়া জাতিসংঘ ভুক্ত হয়। আর্মেনিয়া, মালদোভা, আজারবাইজান, কাজাখাস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান ১৯৯২ সালের ২ মার্চ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। জর্জিয়া জাতিসংঘের সদস্য হয় ১৯৯২ সালের ৩১ জুলাই।

8. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

সোভিয়েত ইউনিয়নে কয়টি টাইমজোনে ছিল?
উঃ ১১ টি।
১৯৮৬ সালের সুপ্রিম সোভিয়েত কাউন্সিলের পরিবর্তে কোন দল গঠন করা হয়?
উঃ কংগ্রেস অফ পিপলস ডেপুটিজ।
সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়?
উঃ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, দলীয় সংকট এবং অন্যান্য কারণে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন কবে আফগানিস্তানের প্রবেশ করে?
উঃ ১৯৭৯ সালে।
সোভিয়েত-ফিনিশীয় যুদ্ধ কত বছর চলে?
উঃ দেড় বছর।
সোভিয়েত-ফিনিশীয় যুদ্ধ কেন হয়েছিল?
উঃ সোভিয়েতের উত্তর দিকে সীমানাবৃদ্ধির ইচ্ছা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সোভিয়াতরা কাদের সাথে যোগ দেয়?
উঃ মিত্রশক্তির সাথে।


9. লেখকের মন্তব্যসোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়

তৎকালীন অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তার কারণ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অর্থনৈতিক মন্দা এবং তাদের রাজনৈতিক পার্টিদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।

সোভিয়েত ইউনিয়নের অর্থনৈতিক ক্রমশই তেল ও গ্যাস রপ্তানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যখন তেলের মূল্য কমে যায় তখন সোভিয়েত সরকারের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং তাদের বাজেটের ঘাটতি তৈরি করে। ফলে তাদের অর্থনীতি করুণ অবস্থার শিকার হতে থাকে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য সোভিয়েত সরকার বিভিন্ন সংস্কার মূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। তবে দীর্ঘদিন পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ১৯৮০ এর দশকে সোভিয়েত অর্থনীতি মারাত্মক মন্দার সম্মুখীন হয়। তাদের এই অর্থনৈতিক মন্দা কমিউনিস্ট পার্টি সম্পন্নভাবে উপেক্ষা করেছিল এবং নিজেদের দুর্নীতিতে ব্যস্ত ছিল।

আবার ১৯৩৯ সালের দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের উত্তর দিকের সীমানা বৃদ্ধির চেষ্টা করলে শুরু হয় সোভিয়েত-ফিনিশ যুদ্ধ। যদিও সোভিয়েত ভেবেছিল যুদ্ধ তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে তবে তা চলেছিল প্রায় দেড় বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধ করেছিল এই সমস্ত বিষয়গুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ সকল কারণ থেকে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় তা অনুমান করা সম্ভব।

সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায় এই প্রশ্নটি আজও রাজনৈতিকদের মনে চাঞ্চল্য ও সৃষ্টি করে। কারণ বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার কারণ সাধারণ ছিল না। এই ঘটনা থেকে রাজনৈতিকগণ বিভিন্ন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বিশ্বের সর্বপ্রথম এবং একমাত্র সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পতন ঘটে। লেনিনের স্বপ্ন ছিল মার্কসবাদী সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করার। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর বিলুপ্তির মাধ্যমে তার সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url