OrdinaryITPostAd

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়? জানুন বিস্তারিত


সোভিয়েত ইউনিয়নের গঠন ও পতন রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং কৌতূহল উদ্দীপক ঘটনা। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে কয়টি রাষ্ট্র হয়েছিল তা বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন। রাজনীতিবিদ থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই জানতে চান সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র গঠিত হয়েছিল এবং তাদের বর্তমান নাম ও ইতিহাস অত্যন্ত জনপ্রিয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়েছিল এ সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আর্টিকেল সূচিপত্র(যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. সোভিয়েত ইউনিয়ন কি?
  2. সোভিয়েত ইউনিয়ন কবে গঠিত হয়?
  3. সোভিয়েত ইউনিয়ন কবে ভেঙ্গে যায়?
  4. সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়?
  5. সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল?
  6. সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার কারণ কি ছিল?
  7. মিখাইল গর্ভাচেভের প্রযুক্ত নতুন নীতি
  8. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর
  9. লেখকের মন্তব্য

1. সোভিয়েত ইউনিয়ন কি? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রের ঐক্যতন্ত্র, যাকে সংক্ষেপে সোভিয়েত ঐকতন্ত্র বা সোভিয়েত ইউনিয়ন বলা হত, তা ছিল একটি ইউরেশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত সমাজতান্ত্রিক দেশ। ১৯১৮ সালে রুশ সাম্রাজ্য ভেঙে যায় এবং ফিনল্যান্ড স্বাধীন হয়ে যায়। রুশ সাম্রাজ্যের বাকি অংশ এবং অটোমান সাম্রাজ্যের জর্জিয়া দক্ষিণ ওশেটিয়া- আর্মেনিয়া অংশ নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হয়।

১৯২২ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে রাশিয়ান কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ভ্লাদিমির লেনিন সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠন করেন। প্রথমে রাশিয়া, বেলারুশ, ইউক্রেন ও ককেশাসীয় অঞ্চলের ইউনিট বর্তমান জর্জিয়া, হয়  আরমেনিয়া ও আজারবাইজান মিলে এই চুক্তি স্বাক্ষর করে।পাশাপাশি অন্যান্য দেশেরও সোভিয়েত ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তির জন্য নমনীয় নীতি রাখা হয়। ১৯৪০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ টি দেশ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয় পরবর্তীকালে সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠনকারী কমিউনিস্ট পার্টির উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করে তোলা। কমিউনিস্ট পার্টি লিডার অর্থাৎ বলশেভিক পার্টির নেতৃত্ব প্রদানকারী  ভ্লাদিমির লেনিন যার স্বপ্ন ছিল মার্কস এর আদর্শে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করা। এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করা যেখানে শাসক এবং শাসিত থাকবে না, যেখানে সবাই হবে সমান।

2. সোভিয়েত ইউনিয়ন কবে গঠিত হয়? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

১৯০৩ সালে মার্কসবাদী রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টি দুই ভাগে ভাগ হয়। এই দুটি দল হল:
  • বলশেভিক পার্টি(Bolshevik Party)
  • মেনশেভিক পার্টি(Menshevik Party)
ইংরজীতে Bolshevik শব্দটির উৎপত্তি রাশিয়ান bol'shinstvo থেকে, যার অর্থ-majority বা সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
আর Menshevik শব্দটির উৎপত্তি রাশিয়ান men'shinstvo থেকে,যার অর্থ-minority বা সংখ্যালঘুতা।

একটি গুরুত্বপূর্ণ ভোটে ১৯৮৬ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় প্রথম দলটির নাম হয় বলশেভিক এবং অপর দলটি কম ভোট অর্জন করায় তার নাম হয় মেনশেভিক। বলশেভিক দলের নেতৃত্ব দেন  ভ্লাদিমির লেনিন। বলশেভিকরা মূলত কৃষক ও শ্রমিক তথা নিম্ন শ্রেণীর লোকেদের সমর্থক ছিল। তৎকালীন সময়ে রাশিয়াতে ছিল জারতন্ত্র।১৯১৭ সালে রাশিয়ান বিপ্লবের পর রাশিয়ান সম্রাট বা জারের পতনের পর রাশিয়া ও আশেপাশের একই আদর্শের কয়েকটি রিপাবলিক নিয়ে গড়ে ওঠে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯১৭ এর পরের কয়েকটি বছর গৃহযুদ্ধ ও পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধের কারণে রাশিয়া ও সংলগ্ন এলাকা বেশ অস্থিতিশীল ছিল।

তখন রাশিয়ার অভ্যন্তরের মূল সংঘাত চলছিল কমিউনিস্ট সমর্থক এবং জাতীয়তাবাদের সমর্থকদের মাঝে। জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের একটি অংশ ছিল সাবেক রাজতন্ত্রের সমর্থক। তবে শেষ পর্যন্ত বলশেভিক পার্টি ক্ষমতা সুসংহত তো করতে সক্ষম হয়। বলশেভিকরা বিভিন্ন রিপাবলিকের ক্ষমতা দখল করে ঘোষনা করে জমি, কলকারখানা ও অন্যান্য সম্পদ একটা যৌথ সমবায় ব্যবস্থার অধীনে নিয়ন্ত্রিত হবে, যা দিয়ে অভিজাতন্ত্রের স্বার্থের বদলে কৃষক ও শ্রমিকসহ সকল স্বার্থ রক্ষা করা যাবে। ১৯২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাজতন্ত্র সমর্থকদের চূড়ান্ত পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন দেশ যুক্ত হতে শুরু করলে সোভিয়েত ইউনিয়নের আকার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।
পরবর্তীকালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয় এবং রাষ্ট্রগুলোর আয়তন কেমন হয় তা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়।

অক্টোবর বিপ্লব: এটি সাধারণভাবে লাল অক্টোবর, অক্টোবর বিদ্রোহ, বলশেভিক বিপ্লব, বলশেভিক অভুত্থান নামেও পরিচিত যা ভ্লাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে সম্পন্ন হয়। এর আনুষ্ঠানিক নাম মহান অক্টোবর সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব। এই বিদ্রোহের সূচনা ঘটে ১৯১৭ সালের ২৫ শে অক্টোবর পেট্রা গেড থেকে। ওই একই বছর ফেব্রুয়ারি বিপ্লব কে অনুসরণ করে এই বিপ্লবকে অগ্রসর করা হয়েছিল। জার দ্বিতীয় নিকোলসের পদত্যাগের পরে তার ভাই গ্রিস ডুক মাইকেল ক্ষমতাগ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান এই বিদ্রোহের প্রেক্ষিতে।
এই সময়ে শহরের শ্রমিকরা কাউন্সিল গঠন করেন এবং বলশেভিক ও অন্যান্য বামপন্থী দলেরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচন করেন। ১৯১৮ সালের ১৭ জুলাই জার এবং তার পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এটি বিপ্লব হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত না হওয়ায় রুশ গৃহযুদ্ধ সংগ্রাম নামেও পরিচিত হয়েছিল। ১৯১৭ সালের ১২ই নভেম্বর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেই সাংবিধানিক বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বলশেভিকরা ৭১৫ আসনের বিধানসভায় ১৭৫ টি আসনে জয়লাভ করে। সাংবিধানিক বিধানসভা প্রথমবার ১৯১৭ সালের ২৪ নভেম্বর পূরণ করা হয় তবে এ সমাবর্তন ছিল  জানুয়ারি ১৯১৮ সালে। বলশেভিক পার্টি এই সভার সমাবর্তনের বিলম্ব ঘটায়। সবার প্রথম দিনেই দ্বন্দ্ব শুরু হয় এবং পরবর্তীতে সোভিয়েতের কংগ্রেসের আদেশ অনুসারে গণভোট হয়।
পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অক্টোবর বিপ্লবের পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে লেনিনের বলশেভিক দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন নামক একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র উদ্ভাবন করতে সাহায্য করে।

আয়তন: সোভিয়েত ইউনিয়ন আনুমানিক পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত ৬৮০০ মাইল (১০,৯০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর সর্ব পশ্চিমে ছিল বলটিক সাগর এবং সর্ব পূর্বের ছিল বেয়ারিং স্ট্রেইট। এটি উত্তর দক্ষিণে আনুমানিক ২৮০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল যা আফগানিস্তানের বর্ডার পর্যন্ত গিয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের মোট আয়তন ছিল ২,২৪,০২,২০০ বর্গ কিলোমিটার।

3. সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল?।সোভিয়েত  ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী ছিল মস্কো, তিবিলিসি ও ইয়েরেভান এই তিনটি স্থানে। তাদের সরকারি ভাষা ছিল তিনটি-রুশ, আর্মেনীয় ও জর্জীয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বীকৃত আঞ্চলিক ভাষা গুলো ছিল ইউক্রেনীয়, বেলারুশীয়, উজবেক, কাজাখ, জর্জীয়, আজারবাইজানি, লিথুনিয় এবং আরো কিছু ভাষা। রাশিয়ার ৭০% নৃগোষ্ঠী ছিল পূর্ব স্লাভ, ১২% ছিল তুর্ক এবং ১৮% ছিল অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর জনগন। তারা নিজেদের সোভিয়েত নামে পরিচিত করত।

সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার ব্যবস্থা ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয় মার্কসবাদী-লেনিনবাদী এক দলীয় সমাজতান্ত্রিক। তাদের সর্বপ্রথম প্রধান নেতা ছিলেন ভ্লাদিমির লেনিন। তাদের সর্বপ্রথম রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন মিখাইল কালিনিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের আইনসভা ছিল দুই কক্ষ বিশিষ্ট। প্রথমটি ছিল উচ্চকক্ষ যা ঐক্যের সোভিয়েত নামে পরিচিত ছিল। দ্বিতীয়টি ছিল নিম্ন কক্ষ যা জাতীয়তার সোভিয়েত নামে পরিচিত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের জনসংখ্যা ছিল ২৯,৩০,৪৭,৫৭১ জন। সোভিয়েত ইউনিয়নের মুদ্রা ছিল সোভিয়েত রুবল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন পরিচালিত হত কার্ল মার্কস ও ভ্লাদিমির লেনিনের দর্শনানুসারে। তাদের অর্থনীতি ছিল কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত। ভূমি ও বাড়ির ব্যক্তিগত মালিকানা সোভিয়েত ইউনিয়নে বৈধ ছিল না। রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক বিনামূল্যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সেবা লাভ করত। পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন পর্যন্ত সবাইকে বিনামূল্যের শিক্ষা দেয়া হতো। তাদের বিভিন্ন সেবা খাতে রাষ্ট্র প্রচুর পরিমাণে ভর্তুকি প্রদান করত যার ফলে নাগরিকদের এ সকল খাতে খরচ খুব কম ছিল। পরবর্তীকালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যায় তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র গঠন হয়েছিল এবং তাদের নাম শাসন ব্যবস্থা কেমন ছিল তা নিয়ে অনেক আলাপ আলোচনা হয়েছিল।

জোসেফ স্তালিন এর শাসন ব্যবস্থা: জোসেফ স্তালিন ক্ষমতায় আসেন ১৯২৪ সালে। এ কিছু পূর্বে লেনিনের মৃত্যু হয়। স্তালিন ১৯৫৩ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন। তিনি  ভঙ্গুর ও অনুন্নত কৃষিভিত্তিক রাষ্ট্রকে একটি শিল্পের উন্নত ও সামরিক পরাশক্তিতে রূপান্তর করতে চেয়েছিলেন। এর ভিত্তিতে তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সিদ্ধান্ত নেন এবং তার ফলে সমগ্র সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটাতে সমর্থ হন। ১৯২৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যেই সামগ্রিক অর্থনীতিকে রাষ্ট্রের আয়ত্ত করা হয়। অধিকাংশ জনগণকে শহরে থাকতে বাধ্য করা হয়। সমস্ত মালিকানাধীন সম্পত্তি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

তবে এই উন্নয়নের অন্যদিকও ছিল। ৩০ এ দশকের শুরুর দিকে তার নীতির কারণে সোভিয়েত ইউনিয়ন জুড়ে এক খাদ্য সংকটে অনেক নাগরিক মৃত্যুবরণ করে। স্তালিনের শাসনামলের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো বিরোধী শক্তিকে ব্যাপক আকারে বিশোধন করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক বিরোধিতা কারীদের এমন ৬০,০০০  জনগণকে হত্যা করা হয়। অনেক মানুষকে লেবার ক্যাম্পেও পাঠানো হয়।

4. সোভিয়েত ইউনিয়ন কবে ভেঙে যায়? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়


সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয় তা সকলেই জানতে চায়।১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে ১৫ টি নতুন প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়।১৯৮৬ সালে সুপ্রিম সোভিয়েত কাউন্সিলের পরিবর্তে কংগ্রেস অফ পিপল্স ডেপুটিজ গঠন করা হয়। ভাঙ্গনের শুরুটা হয় সেই সময় থেকেই।

১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরিতে কমিউনিস্ট শাসন অব্যাহত রাখতে সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজেদের শক্তি প্রয়োগ করেছিল। স্নায়ুযুক্ত সময় এই ধরনের আচরণের মাধ্যমে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশ্বকে এটা জানিয়েছিল যে তারা তাদের ভূ- রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারে। আবার ১৯৬৮ সালে প্রাক বসন্ত দমনের জন্য সোভিয়েত সেনারাতে প্রবেশ করেছিল। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে ও প্রবেশ করেছিল। এই প্রবেশ থেকে আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তা থেকে পরবর্তীতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সহিংসতার জন্ম হয়েছিল এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পেছনে এই কারণগুলো জড়িত রয়েছে।

বৈষম্যহীন এক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ার যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন যাত্রা শুরু করেছিল তা বেশিদিন ধরে রাখতে সক্ষম হয়নি। দেখা গিয়েছে জারের শাসনামলের মতো সোভিয়েত সমাজ দুই ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। উচ্চ ধনী বুর্জোয়া শ্রেণি এবং অপরদিকে অভাবগ্রস্থ নিপীড়িত সাধারণ জনতা। যদিও লেনিনের স্বপ্ন ছিল ভেদাভেদ বিহীন রাষ্ট্র তৈরি করা। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গন একদিনে হয়নি। ধীরে ধীরে বিভিন্ন অবস্থা নীতি এবং রাজনৈতিক কৌশলের ভিত্তিতে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গিয়েছিল।


5. সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়? । সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়


সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয় তার উত্তর সুস্পষ্ট।সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে মোট ১৫ টি প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়।
এগুলো হলো:
এস্তেনিয়া
  1. লাটভিয়া
  2. লিথুনিয়া
  3. রাশিয়া
  4. আর্মেনিয়া
  5. বেলারুশ
  6. কাজাখস্তান
  7. জর্জিয়া
  8. ইউক্রেন
  9. মলদোভা
  10. কিরঘিস্তান
  11. উজবেকিস্তান
  12. তাজিকিস্তান
  13. তুর্কমেনিস্তান
  14. আজারবাইজান
উল্লিখিত প্রত্যেকটি রাষ্ট্র অনেকদিন থেকেই সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হওয়ার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছিল। তার বিভিন্ন কারণ রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অর্থনৈতিক মন্দা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলীয় দ্বন্দ্ব বৈদেশিক রাজনীতি ইত্যাদি।
পরবর্তীতে লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের যোগ দেয় এবং বাকি ১২টি সার্বভৌম রাষ্ট্র কমনওয়েলথ অফ ইনডিপেন্ডেন্ট স্টেটসে যোগ দেয়। অপরদিকে জর্জিয়া কমনওয়েলথ থেকে বের হয়ে যায়। বাকি ১১ টি সোভিয়েত রিপাবলিক নিজেদের ভিতর নতুন বলয় তৈরি করতে শুরু করে যা নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য ও অন্যান্য বিষয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছে।

6. সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গার কারণ কি ছিল? সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

১৯৮৬ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে কংগ্রেস অফ পিপলস ডেপুটিস গঠন করা হয়। পরিবর্তিত কংগ্রেসে কমিউনিস্ট পার্টি সদস্য ছাড়া অন্যান্য নাগরিকদের নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ ছিল। নতুন কংগ্রেসে বিজ্ঞানী ও পন্ডিতদের জন্য কিছু আসন সংরক্ষিত করা ছিল। কংগ্রেসেরসদস্য সংখ্যা ছিল ২,২৫০ জন, যারা উন্মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারি ভোটে নির্বাচিত হতো। গঠিত হওয়া পিপলস ডেপুটিস এর মধ্য থেকে ৫৪২ জন সদস্য বিশিষ্ট নতুন সুপ্রিম কাউন্সিল গঠিত হয় যার চেয়ারম্যান হতেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট।

১৯৯১ সালের আগস্টে মিখাইল গরবাচেভের বিরুদ্ধাচারীরা বিদ্রোহ করার চেষ্টা চালায় যা পরবর্তীতে ব্যর্থ হয়। তবে এ ঘটনার সোভিয়েত ইউনিয়নের কাঠামোকে একেবারে দুর্বল করে তোলে এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহ নিজ নিজ অঞ্চলের জন্য আরও বেশি স্বাধীনতা দাবি করতে শুরু করে। ১৯৯১ এ ডিসেম্বরে দা ফার্স্ট প্রেসিডেন্ট অফ দা সোভিয়েত ইউনিয়ন এর অফিস বিলুপ্ত হয়ে যায়।

মিখাইল গর্ভাচেভ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত আলাদা রিপাবলিক গুলোকে নিয়ে একটি কমনওয়েলথ অফ ইনডিপেন্ডেন্ট স্টেটসের প্রস্তাব দেন। লিথুনিয়া, লাটভিয়া ও এস্তোনিয়া প্রস্তাবিত কমনওয়েলথে ঢুকতে অস্বীকৃতি জানায় এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে নিজেদের স্বতন্ত্র বজায় রাখার ঘোষণা দেয়।


১৯৯১ সালের ১৮ আগস্ট অভ্যুত্থানের ব্যর্থতা সোভিয়েত ইউনিয়নে কমিউনিজম এর অবসান ঘটায়। তবে তা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। কারণ ১৯৮৫ সালে গর্ভাচেভের সংস্কার আমল থেকে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাব কমতে শুরু করেছিল। অবদানের ব্যর্থতা কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবের অবশিষ্টাংশ প্রকাশ করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি আধুনিক এবং গতিশীল রাষ্ট্র ও সমাজে পরিণত না করতে পারার ব্যর্থতা পার্টির মনোবলকে ভেঙে ফেলেছিল। ১৯৮০ দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের আর্থিক দুরাবস্থা, জাতিগত দ্বন্দ্ব, আঞ্চলিকতাবাদ, জাতীয়তাবাদ প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বাড়তে শুরু করেছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সরকার ব্যবস্থা এই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। যার ফলে গোটা সোভিয়েত সাম্রাজ্যের বিভক্তি করন এবং সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।

স্নায়ুযুদ্ধ: Cold war, যা বাংলায় স্নায়ুযুদ্ধ নামে পরিচিত, ঘটেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার মিত্রশক্তি সমূহ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রশক্তি সমগ্রের মধ্যে। এটি কোন খোলামেলা যুদ্ধ ছিল না, মূলত রাষ্ট্রগুলোর অন্তর্গত সম্পর্কের টানাপোড়নের এক অবস্থা ছিল। ১৯৪০ দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৮০ দশকের শেষ পর্যন্ত এই স্নায়ুযুদ্ধের বিস্তৃতি ছিল।
সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার শত্রুভাবাপন্ন অবস্থার শুরু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে শেষের দিক থেকে। ১৯১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জাপান রাশিয়াতে সামরিক অভিযান চালায় যা লেনিনের কমিউনিস্ট সরকার আক্রমণ হিসেবে গণ্য করে। আরেকটি কারণ হিসেবে বলা যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। এছাড়া বড় বিভিন্ন কারণ রয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ হওয়ার।
ইউরোপকে কেন্দ্র করে এবং আমেরিকা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ ঘটলেও তা ক্রমে সারা বিশ্বের ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক ঘটনার সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর মার্কিন নেতৃত্ব অটুট থাকলেও এই যুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও বিশ্বে কিছু শক্তিশালী রাষ্ট্রের আবির্ভাব হয় এবং বিভিন্ন ইসলামিক দেশগুলো তাদের মতাদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র লড়াই শুরু করে।

১৯৯১ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ১৫ টি প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতার স্বীকৃতিতে ঘোষণা নং ১৪-হ হিসাবে জারি করা হয়। এ সকল কথা পর্যালোচনা করলেই দেখা যায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়।

বিশ্ব রাজনীতিতে সোভিয়েত ইউনিয়নর ভাঙ্গনের প্রভাব:
  • সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের সাথে সাথে বিশ্ব দ্বিমেরু বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরাশক্তি বলের ভাঙ্গন থেকে একক পরাশক্তি বলের রাজনৈতিক বিশ্ব ব্যবস্থায় প্রবেশ করে।
  • পূর্ব ইউরোপের শক্তি ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়ে যায়। বিশ্ব রাজনীতিতে ন্যাটোর প্রভাব  তখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যায় এবং সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর পূর্ব ইউরোপের বাল্টক অঞ্চল প্রভৃতি স্থানে মোতায়ন রাখা বিশাল মার্কিন সৈন্য বাহিনী ও সরঞ্জাম সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পুনঃ মোতায়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
  • সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের ফলে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে লাভবান হলেও অর্থনৈতিকভাবে পূর্ণ সুবিধা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। তবে এই সুবিধাটি গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছে চীন। তাই বর্তমানে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়ন শক্তিশালী হয়। সাবেক সোভিয়েতের কিছু প্রজাতন্ত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে এবং এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোন তৈরি করতে সাহায্য করেছে। তারা একটি অভিন্ন মুদ্রা প্রচলন করেছে যার নাম ইউরো এবং এটি অত্যন্ত শক্তিশালী মুদ্রা হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি আদায় করতে সমর্থ হয়েছে।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছিল চীন। তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের বদলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। যার ফলে চীন কমিউনিস্ট শাসন ব্যবস্থা অব্যাহত রেখেছে এবং আর্থিক দিক দিয়েও লাভবান হয়েছে।
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের ফলে বিশ্বে এককেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। যার ফলে বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে বৈদেশিক নীতির পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে। এর প্রেক্ষিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি, রাজনীতি ও মূল্যবোধ প্রশ্নবিদ্ধ হতে থাকে।

7. মিখাইল গর্ভাচেভের প্রযুক্ত নতুন নীতি সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্ভাচেভের প্রযুক্ত নীতি। তিনি সোভিয়েতের নেতা হিসেবে এবং তার প্রায় সাড়ে ছয় বছরের শাসনামলে যে বিপুল পরিমাণে সংস্কার বাস্তবায়ন করেছিলেন তা সোভিয়েত ইউনিয়ন পতনের একটি অন্যতম কারণ। অনেকের মতে তার করা সংস্কার গুলোই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের প্রধান কারণ। ১৯৮৫ সালের ১১ই মার্চ কমিউনিস্ট পার্টি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতায় আরোহন করেন মিখাইল গর্ভাচেভ। ততদিনে কমিউনিস্ট পার্টির অত্যাচারে ও নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণ।

তবে গর্ভাচেভ অন্যান্য শাসকদের থেকে আলাদা ছিলেন। তিনি নিজের মতো করে গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে নতুন করে সোভিয়েত ইউনিয়নকে তৈরি করতে চেয়েছিলেন।
তিনি সংস্কার হিসেবে দুইটি নতুন নীতি প্রণয়ন করেন। এই দুইটি নীতির মাধ্যমে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি স্বৈরতন্ত্র ও একনায়তন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ভোটাধিকার, গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণাধীন অর্থনীতির পরিবর্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তার এই ব্যবস্থা গ্রহণের পরে প্রায় ৭ দশক ধরে চলে আসা কমিউনিস্ট পার্টির নির্যাতন থেকে চিরস্থায়ীভাবে বাঁচার চেষ্টা করে সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণ। তার এই ব্যবস্থা গ্রহণের পরে নাগরিকরা উন্নত জীবনযাপন স্বাধীনতা এবং কমিউনিজমের অবসান হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে।

 গর্ভাচেভ যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নকে পুনর্জীবিত করার জন্য পরিবর্তন এনেছিলেন কিন্তু তার করা এই সংস্কার গুলোই শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধ্বংস করে দেয়। তার নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্তের ফলে স্নায়ুযুদ্ধের কিছুটা উন্নতি সাধন হয়। স্নায়ু যুদ্ধে সমাপ্তিতে তার উদ্যোগে স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৮৮ সালে তাকে "ম্যান অফ দ্যা ইয়ার" বলে মনোনীত করেন টাইম ম্যাগাজিন। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে গর্ভাচেভ  "নোবেল" শান্তি পুরস্কার লাভ করে।

এ সকল বিষয় থাকা সত্ত্বেও মিখাইল গর্ভাচেভকে সোভিয়েত ইউনিয়নে ভাঙ্গনের অন্যতম কারণ হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে তার হাত ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি ঘটেছে। রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি এক দ্বৈত চরিত্র হিসেবে উল্লেখিত হয়ে থাকেন। তার উদ্দেশ্য ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নকে একটি আদর্শ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা, তবে তানিয়া কিছু সিদ্ধান্ত অবশ্যই সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। আবার স্নায়যুদ্ধের অবসানের জন্য বহুল প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। তাই তার চরিত্রে দুই রকমের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

8.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্তর সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

সোভিয়েত ইউনিয়ন কত সালে গঠিত হয়?
উঃ১৯২২ সালে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পূর্ণ নাম কি ছিল?
উঃ দ্য ইউনিয়ন অফ সোভিয়েত সোশালিস্ট রিপাবলিকস।
সোভিয়েত ইউনিয়নের আয়তন কত ছিল?
উঃ ৮,৬৫০,০০০ বর্গমাইল।
সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উঃ  ভ্লাদিমির লেনিন।
সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী কোনটি?
মিখাইল গর্ভাচেভ কত বছর ক্ষমতায় ছিলেন?
উঃ সাত বছর।
উঃ মস্কো,টিবিলিসি ও ইয়েরেভান।
সোভিয়েত ইউনিয়ন কত সালে ভেঙে যায়?
উঃ ১৯৯১ সালে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন ভেঙে যায়?
উঃ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বৈদেশিক সহ বিভিন্ন কারণে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়?
উঃ ১৫ টি।

9. লেখকের মন্তব্য ।সোভিয়েত  ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয়

সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। এটি মার্ক্সবাদী শাসকদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।রাশিয়ায় জার সাম্রাজ্যকে উৎখাত করার পরে তারা সোভিয়েত ইউনিয়ন নামকরণের মাধ্যমে অনেকগুলো রিপাবলিককে একত্রিত করে একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের অগ্রগণ্য নেতা হিসেবে ভ্লাদিমির লেনিনকে উল্লেখ করা যায়। তিনি মূলত জারতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে বিপ্লবী মতবাদ প্রচার করেন এবং সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে রাশিয়াকে জারের সাম্রাজ্যবাদ থেকে মুক্ত করেন।  জারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে জার এবং তার পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছিল।

তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেনি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়টি রাষ্ট্র হয় সেই প্রশ্ন তখনই উত্থাপিত হয়।১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায় এবং ১৫ টি আলাদা রিপাবলিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ দায়ী ছিল। অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সরকার এবং নাগরিকদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙ্গনের পেছনে শুধুমাত্র আভ্যন্তরীন কারণগুলো দায়ী ছিল না। আমেরিকা এবং ব্রিটিশরা এই ধরনের শাসন ব্যবস্থাকে ভালো চোখে দেখেনি।

বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্থান অনেক ঘটনাবহুল ছিল। তবে তার ভাঙ্গন এত তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে এ বিষয়টি অনেকেই আন্দাজ করতে পারেননি। সোভিয়েত ইউনিয়নের অস্তিত্ব শেষ হয়ে গেলেও চীনে এখনো সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। লেনিনের সমাজতান্ত্রিক চিন্তা এখনো বেঁচে রয়েছে চীনের বুকে। যদিও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার কিছু সংস্কার হয়েছে চীনে। চীন ছাড়া আর কোন দেশে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রচলন নেই। বর্তমানে সর্বত্রই গণতন্ত্রের জয়জয়কার।

১৯৪৯ সালে আমেরিকা কানাডা এবং ইউরোপিয়ান মিত্র শক্তি ন্যাটো গঠন করে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙ্গনের পিছনে ন্যাটোর হস্তক্ষেপ কোনভাবেই অগ্রাহ্য করা যায় না। সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত বেশিরভাগ দেশী স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করেছিল। এবং স্বাধীন হওয়ার পরে তারা নিজেদের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছিল।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে সবগুলোর রিপাবলিক আলাদা হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শের দিকে কোন ঘাটতি ছিল না। লেনিনের পরে কমিউনিস্ট পার্টির চেহারা বদলে গিয়েছিল। কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যরা তাদের নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য সোভিয়েতের সামগ্রিক অবস্থাকে উপেক্ষা করেছিল।

 এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিল। তবে তাদের পরে যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন তারা সোভিয়েতের সম্পর্ক অবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে আয়ত্তে আনতে পারেননি। ফলে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশ সমূহ স্বাধীন হয়ে যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে। যদি সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে সঠিক রূপে পর্যালোচনা করতে পারতেন এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন তাহলে হয়তো সোভিয়েত ইউনিয়ন আজও পৃথিবীর বুকে অবস্থান করত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url