OrdinaryITPostAd

রাঙ্গামাটি ভ্রমণ গাইড ও রিভিউ



 দুগ্ধ পান করালেই শুধু মা হওয়া যায় এমনটা কে বলেছে? একেকটা সুউচ্চ শৃঙ্গ ও কি সগৌরবে মাতৃস্নেহের গল্প নয়?

আসলে প্রতিটি প্রজন্মই একেকটা গল্প। সে গল্পে নিজেকে সামিল করতে প্রয়োজন দেখা, শোনা ও অনুভব করা।

এ প্রজন্মের গল্প থেকে নিজেকে যেনো বঞ্চিত করতে না হয় তাই সাধ্যের মধ্যে ছুটে চলেছি অবিরাম। আর এ ছুটে চলাই জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে বাচিঁয়ে রাখতে শেখাচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিখছি আর গল্প জমাচ্ছি!! আজকের খোশ গল্পের আসরে থাকছে লাল পাহাড়ির দেশ!!

আরও পড়ুনঃ পার্ট টাইম জব করুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনে

সকাল সকাল রাঙ্গামাটি শহরে পৌঁছে প্রথমেই নাস্তার পাঠ চুকিয়ে নিলাম। অতপর, রিজার্ভ বাজার থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ভাড়া করে সেই নৌকাই হয় আমাদের সারাদিনের বাহন! এই নৌকার মাঝিই সারাদিন ঘুরালেন একেকটা স্পট।

নৌকা ধেয়ে চলে কাপ্তায় লেকের বুক চিরে।

আহা কাপ্তায়!!! টলটলে নীলাভ জল আর দুধার ঘিরে সুউচ্চ সবুজাভ শৃঙ্গ। চক্ষু শীতলকারী সেসব শৃঙ্গের কোনায় কোনায় সাদা মেঘের ভেলা। আহারে! ওহোরে! যাবেন নাকি পাহাড়ে??

আরও পড়ুনঃ ইংরেজি শেখার সহজ উপায়

যাইহোক প্রায় ঘন্টা খানেক পর নৌকা এসে ভিড়লো লেকের এক তীরে। উদ্দেশ্য আদিবাসী পল্লি। ঢালু কাপ্তাইয়ের পাড় ধরে কিছুটা ট্রাকিং করে পৌঁছালাম সে পল্লিতে। খোপড়ার মতো সারিবদ্ধ সব দোকান-পাট। বাঁশ আর কাঠের তৈরি এসব খোপড়ায় স্থান পেয়েছে পাহাড়িদের নিপুণ হাতে তৈরি নান্দনিক সব পোশাক আর বহুজাতিক শিল্প। ভ্রমণসঙ্গীরা যে যার মতো কেনাকাটায় মেতে উঠেছে। হঠাৎ পাহাড়ি ঐতিহ্যের বুননে তৈরি একটি কামিজের দিকে নজর গেলো। দাম কত জিজ্ঞেস করাই মিষ্টি চেহারার দোকানি মেয়েটি বললো- "এতা পাশছ তাকা, আপু"

বাংলা এদের মাতৃভাষা না হয়েও কত্ত মধুর করে বুলি আওড়ায় এরা। কি চমৎকার! বর্ণমালাগুলো যেনো কর্ণকূহরের টিমপ্যানিক পর্দায় মিষ্টি করে টোকা দেয়।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন মুড সুইং এর আসল কারণ

এ পল্লির আরেক মজা পাহাড়ি ফল-ফলাদি। একেবারে টাটকা আর নির্ভেজাল। ডাব,কলা,পেঁপে, ১০ টাকা দরে জাম্বুরা, আনারস আর জিভে জল আনা তেতুল তো আছেই। আচ্ছা, পাহাড়ের সবকিছু এতো নির্ভেজাল কেন এবিষয়ে আপনার মতামত কি??

আমার মনে হয় প্রকৃতি এদের যে মাতৃস্নেহ দেয় তা থেকেই এরা  মহৎ আর মানবিক হয়ে ওঠে।

যাইহোক আদিবাসী পল্লি আর মন্দির দর্শন শেষ করে আমরা  নৌকার বুকে ফিরে এলাম নতুন গন্তব্যের নিশানায়। এবারের নিশানা বরকল উপজেলার শুভলং ঝর্ণা। 

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন বাংলাদেশের সকল শিক্ষাবৃত্তির তথ্য

বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণার ভরা যৌবন। যা শুনেছি শুভলং তা প্রমাণও করেছে। পাহাড়ের কালো পাথরে পিঠ ঠেকিয়ে ঝর্ণার নির্মল যে জলধারা শরীরে আঁচড়ে পড়ে তা হৃদয়েও এক ভিন্ন অনুভূতির কাপন তোলে। সচক্ষে না দেখলে কল্পনায় তার প্রতিরুপ সৃষ্টি অসম্ভব।

সকাল পেরিয়ে ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২ টা। ছোটাছুটিতে ফল-ফলাদি খেয়ে কি আর পোষায়?? হাজার হোক আমরা তো বাঙালি। যে রেস্টুরেন্টে দুপুরের খাবার খেতে নৌযাত্রা শেষ করলাম তা ছিলো আরেক তৃপ্তি! ছোটবেলা থেকেই দ্বীপের সঙ্গা পড়েছি পুস্তকে- "চারিদিক পানিবেষ্টিত ভূখণ্ডকে দ্বীপ বলে"

কাপ্তাইয়ের মাঝে এ রেস্টুরেন্টটি যেনো একটুকরা দ্বীপ।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন সরকারিভাবে বিদেশ যাওয়ার উপায়

ভরাপেটে পরের গন্তব্য "ঝুলন্ত সেতু- The symbol of Rangamati." বহুরঙা এ ঝুলন্ত সেতুটি মূলত দুটি সুউচ্চ পাহাড়ের মাঝে সংযোগ স্থাপন করেছে। সেতু পারাপারের সময় বেশ ভয়ংকর আরামদায়ক এক অনুভূতি পাওয়া যায়। এই সেতুর এডভেঞ্চার নেওয়ার পরেই আপনি কাপ্তাইয়ের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে বাধ্য।

যাইহোক সেদিনের শেষ বারের মতো আবারো নৌকার ছাদে বিছানা পেতে বসে পড়লাম। নানান ধরনের বাঙালি, ভাটিয়ালি গানে মেতে উঠলাম সবাই। সাথে শেষ বিকেলের মনোমুগ্ধকর কাপ্তাই বারবার তাকে হৃদয়ে স্থান দেওয়ার আকুতিতে তার সৌন্দর্য যেনো পূর্ণরুপে মেলে ধরেছে। নির্মল বাতাসে শ্বাস নিতে নিতে চনমনে মন নিয়ে পৌছালাম শেষ গন্তব্য পলওয়েল পার্কে।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ

কাপ্তাই লেকের ঠিক গা ঘেঁষে অভিনব বাঙালি ঐতিহ্যে তৈরি এই পার্ক। বাঙালি নারীদের ধান ভানা আর কলসি কাকে গাঁয়ের বধুর ভাস্কর্য আমার সংস্কৃতি ভাবনাকে পুনরায় যেনো জাগিয়ে তুলেলো।

নানান ঘটনার মধ্য দিয়ে পার হয়েছে সুন্দর একটি দিন। ক্ষণিকের জন্য দেখা হয়েছে কিছু ভ্রমণপিপাসুদের সাথে। যাত্রা শেষে যে যার মতোন আবারো হারিয়ে গেছে নিজ গন্তব্যে।  তবুও রেখে গেছে কিছু স্মৃতি আর বন্ধুত্ব। 

এবারের ভ্রমণ থেকে আমি পাহাড়ের যৌবন আর পাহাড়িদের কোমলতা দেখেছি যা আমার হৃদয়কে আরো মানবিক করে তুলবে বলে আশাবাদী। 

যারা স্বপ্ন দেখতে চান। জীবনের প্রতি শ্বাসে উড়তে চান, বাঁচতে চান, বাঁচাতে চান তারা ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন লাল পাহাড়ির দেশে!! আজ অথবা কাল!!

লেখকঃ তানবিরা ইয়াসমিন অনু 

১৮-০৯-২০২২


আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাতের সমস্যায় যা যা করবেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url