জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি [সর্বশেষ আপডেট]
কৃষ্ণের জন্মদিন বা জন্মাষ্টমী হলো হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য বিশেষ একটি দিন। এই দিনটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নানান রকমের আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করে। তাই জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি সম্পর্কে অনেকে জানতে চান। আজকের আর্টিকেলে আমরা জন্মাষ্টমী কী, এই দিনে কি কি করতে হয় এবং জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি সম্পর্কে আলোচনা করব।
সংক্ষেপে জেনে নিন | |
---|---|
প্রশ্ন | জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি |
উত্তর ধাপ ০১. | জন্মাষ্টমী হলো হিন্দুধর্মের অনুসারীদের একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব। শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়। |
উত্তর ধাপ ০২. | চলতি বছর জন্মাষ্টমী হবে ৬ এবং ৭ই সেপ্টেম্বরে। জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টা ৩৭ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪.১৪ টায়। |
উত্তর ধাপ ০৩. | জন্মাষ্টমীর দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উপবাস করেন এবং পূজোর মাধ্যমে জন্মাষ্টমী পালন করেন। |
আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)
- জন্মাষ্টমী কী
- জন্মাষ্টমীর সময়সূচি
- জন্মাষ্টমী কিভাবে পালন করা হয়
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১.জন্মাষ্টমী কী - জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি
সংক্ষেপেঃ জন্মাষ্টমী হলো হিন্দুধর্মের অনুসারীদের একটি বিশেষ ধর্মীয় উৎসব। শ্রী কৃষ্ণের জন্মদিন উপলক্ষে জন্মাষ্টমী পালন করা হয়।
জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি নিয়ে আলোচনা করার আগে আমরা জন্মাষ্টমী লী তা নিয়ে আলোচনা করব। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা যদিও এই বিষয়ে অবগত তারপরেও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছে হিন্দুধর্মের টই বিশেষ দিনটির তাৎপর্য তুলে ধরতে জন্মাষ্টমী কী তা আলোচনা করব।
কৃষ্ণ হলেন দেবকী এবং বাসুদেবের অষ্টম সন্তান। পুরাণ , মহাভারত, ভাগবতের বর্ণনা এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের গণনা অনুসারে কৃষ্ণের জন্মর তারিখ হল খ্রীষ্টপূর্ব ৩২২৮ সালের ১৮ জুলাই এবং তার মৃত্যুর দিন খ্রীষ্টপূর্ব ৩১০২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি।কৃষ্ণ মথুরার যাদববংশের বৃষ্ণি গোত্রের মানুষ ছিলেন। মানুষের হিংসা যখন চরম আকার নেয়, চারিদিকে যখন অরাজকতা ছড়িয়ে পড়ে তখনই ভগবান বিষ্ণু অবতার রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসেন বলে মনে করা হয়। তেমনই মথুরার রাজা কংসের অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেলে তাঁরই বোনের গর্ভে জন্ম নেন কৃষ্ণ। এবং মামাকে বধ করে রক্ষা করেন পৃথিবীকে। কৃষ্ণের জন্মতিথিকেই জন্মাষ্টমী হিসেবে পালন করা হয়। হিন্দু পঞ্জিকা মতে, সৌর ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন রোহিণী নক্ষত্রের প্রাধান্য হয়, তখন জন্মাষ্টমী পালিত হয়। উৎসবটি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে, প্রতি বছর মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-সেপ্টেম্বরের মধ্যে কোনো এক সময়ে পড়ে। এর অপর নাম কৃষ্ণাষ্টমী, গোকুলাষ্টমী, অষ্টমী রোহিণী, শ্রীকৃষ্ণজয়ন্তী ইত্যাদি।
আরও পড়ুনঃ সরস্বতী পূজার উপকরণ ও ফর্দমালা
২.জন্মাষ্টমীর সময়সূচি - জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি
সংক্ষেপেঃ চলতি বছর জন্মাষ্টমী হবে ৬ এবং ৭ই সেপ্টেম্বরে। জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টা ৩৭ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪.১৪ টায়।
প্রতি বছর মধ্য আগস্ট থেকে মধ্য সেপ্টেম্বরের কোনো একটা সময়ে জন্মাষ্টমী পড়ে।আর্টিকেলের এই অংশে জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি নিয়ে আলোচনা করব।
প্রতি বছর জন্মাষ্টমী একই দিনে পড়ে না। চলতি বছর জন্মাষ্টমী তিথির বিস্তার ২ দিন ধরে। পঞ্জিকা অনুসারে ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর পড়েছে জন্মাষ্টমী তিথি। কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী তিথি শুরু হবে ৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩ টা ৩৭ মিনিটে এবং শেষ হবে ৭ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪.১৪ টায়।
পুরাণ অনুসারে, রাত্রি বারোটায় রোহিণী নক্ষত্রে শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল। এই বিশ্বাস অনুসারে, ৬ সেপ্টেম্বর গৃহস্থরা জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করতে পারেন। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নিয়ম অনুসারে জন্মাষ্টমী একটু তারতম্য হয়। তাঁরা শ্রী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালন করবে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ।
যেহেতু জন্মাষ্টমীর পুজো রাতে হয়, তাই ৬ সেপ্টেম্বর তারিখটিই অনেকে বেছে নিচ্ছেন কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী পালনের জন্য।
জন্মাষ্টমীর গুরুত্বপূর্ণ সময় :
- রোহিণী নক্ষত্র : রোহিণী নক্ষত্রের সূচনা- ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , সকাল ৯ টা ২০ মিনিট এবং রোহিণী নক্ষত্রের শেষ ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , সকাল ১০ টা ২৫ মিনিট
- জন্মাষ্টমীর শুভ মুহূর্ত : শ্রী কৃষ্ণ পূজার সময় - মধ্যরাত ১২.০২ - মধ্যরাত ১২.৪৮ (৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ), পূজার সময়কাল - ৪৬ মিনিট, উপবাসের সময় - ৭ সেপ্টেম্বর ৬.০৯ টা।
আরও পড়ুনঃ শুভ জন্মাষ্টমী! পূজা করার পদ্ধতি
৩.জন্মাষ্টমী কীভাবে পালন করা হয় - জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি
সংক্ষেপেঃ জন্মাষ্টমীর দিন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উপবাস করেন এবং পূজোর মাধ্যমে জন্মাষ্টমী পালন করেন।
জন্মাষ্টমী পালনের কিছু নিয়ম কানুন আছে। এসব নিয়ম হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে নির্ধারণ করা হয়। জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি আলোচনার পাশাপাশি আমরা জন্মাষ্টমী পালনের নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করব।
ব্রত পালনের নিয়ম :
- জন্মাষ্টমীর আগের দিন নিরমিষ অন্ন খেয়ে সংযম পালন করতে হবে এবং রাত ১২টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। ঘুমানোর আগে অবশ্যই ভাল করে মুখ ধুয়ে ঘুমতে হবে।
- জন্মাষ্টমীর দিন সকাল থেকে মধ্য রাত্রি পর্যন্ত উপবাস এবং জাগরণ। উপবাস থেকে হরিনাম জপ, কৃষ্ণ লীলা শ্রবণ, ভগবানকে দর্শন, ভক্ত সঙ্গে হরিনাম কীর্তন, অভিষেক দর্শন করতে হবে এবং ভগবানকে অভিষেক করে একাদশীর দিনের মতো অনুকল্প প্রসাদ সেবন করতে হবে।
- তবে যাঁদের উপবাস পালনে সমস্যা, অসুস্থ, তাঁরা অবশ্যই দুপুর ১২ টার পরে, কৃষ্ণের কাছে ক্ষমা চেয়ে, একটু দুধ, বা ফল খেতে পারবেন। তবে এই ব্রতে একাদশীর মতোই অন্ন-সহ পঞ্চ রবি শস্য খাবার বিধান নেই।
- জন্মাষ্টমীর পরের দিন সকালে স্নান করা শেষে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পারণ মন্ত্র পাঠ করে শ্রীকৃষ্ণের প্রসাদ দিয়ে পারণ করবেন।
- জন্মাষ্টমী ব্রত পালনের জন্য উপকরণ হিসেবে ফুল, আতপ চাল, ফলের নৈবেদ্য, ফুল, তুলসীপাতা, দূর্বা, ধূপ, দীপ, পঞ্চগব্য, পঞ্চগুড়ি, পাট, বালি, পঞ্চবর্ণের গুড়ো, মধু পর্কের বাটি, আসন-অঙ্গুরী সংগ্রহ করতে হয়। এইদিনে উপবাসে থেকে উপকরণগুলি দিয়ে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করতে হয়। একটি শান্ত ও কোলাহল মুক্ত স্থান প্রয়োজন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের একটি ছবি অথবা মূর্তির সঙ্গে গণেশ মূর্তিও স্থাপন করা হয়ে থাকে। পাশে রাখতে হবে প্রদীপ ৷ মিষ্টি, ফল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী থালায় সাজিয়ে রাখতে হবে।
- গোপালের প্রিয় খাবারগুলির মধ্যে রয়েছে মাখন মিছরি, ননী,নাড়ু, তালের বড়া,ক্ষীর, রাবরি, মালাই , মালপোয়া ইত্যাদি, যা সাজিয়ে গোপালের সামনে ভোগ হিসেবে নিবেদন করতে হবে৷ প্রথমে শ্রী গণেশের প্রার্থনা(ওম শ্রী গণেশায় নমহা) করতে হবে ৷ এরপর কিছুক্ষণ ধ্যান করতে হবে মন যাতে শান্ত থাকে। প্রদীপ জ্বালাতে হবে। শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা (‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’)করতে হবে। এরপর ফুল অর্পন করতে হবে। তুলসি পাতা থাকলে ভাল হয়। তাছাড়া ধূপ জ্বালাতে হবে।
- ফুল অর্পন করার সময় ঘন্টা বাজানোর রেওয়াজ আছে। ‘ওম নমঃ ভাগবতে বাসুদেবায়’ উচ্চারন করে যেতে হবে। এরপর ফল, মিষ্টি এবং অন্যান্য খাদ্য অর্পন করতে হবে। প্রার্থনা শেষে কিছুটা জল ছিটিয়ে দিতে হবে। কৃষ্ণ ভগবানের এই মন্ত্র বেশ কয়েকবার মনে মনে উচ্চারন করা যেতে পারে। এরপর ফল,মিষ্টি ও অন্যান্য খাদ্য প্রসাদ হিসাবে সবাইকে বিতরণ করতে হবে। পুজো শেষে ভগবত গীতা পাঠ করা হয়ে থাকে।
৪.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন-উত্তর - জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি
জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা তেমনি কিছু প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রশ্ন ১: রোহিণী নক্ষত্র কী?
উত্তর: রোহিণী একটি লোহিত দানব, আকাশের উজ্জ্বল প্রভার বৃষরাশির নক্ষত্র। সৈন্ধান্তিকরা একে রোহিণী নামে চিহ্নিত করে। ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান অনুসারে ২৮ নক্ষত্রের ৪র্থ এ সদস্যার প্রাচীন তথা ঋগ্বেদের ঋষিদের দেয়া নাম বিধাতা , প্রজাপতি , ব্রহ্মা , স্বপস্যমান বা স্বয়ম্ভূ , সূনুর্দ্দাধার(সূনু=সৃষ্টি+দায়+আধার) ইত্যাদি।
প্রশ্ন ২: হিন্দু শাস্ত্রমতে জন্মাষ্টমীর উপবাস করার তাৎপর্য কী?
উত্তর: হিন্দুধর্মের শাস্ত্রে আছে, কেউ যদি এক বার শ্রীকৃষ্ণের এই জন্মাষ্টমী উপবাস পালন করেন, তা হলে তাঁকে আর এই জড় জগতে জন্ম, মৃত্যু, ব্যাধি, কষ্ট ভোগ করতে হয় না ও পুনর্জন্ম গ্রহণ করতে হয় না।
প্রশ্ন ৩: জন্মাষ্টমী দুইদিন পালন করতে হয় কেন?
উত্তর: শ্রীকৃষ্ণ মধ্যরাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তাঁর জন্মবার্ষিকী, জন্মাষ্টমী দুই দিন পালিত হয়।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিন অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ
৫. লেখকের মন্তব্য - জন্মাষ্টমী ২০২৩ সময়সূচি
আজকের আর্টিকেলে আমরা হিন্দুধর্মের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জন্মাষ্টমী ২০২৩ সমসূচি ও জন্মাষ্টমী পালনের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে আলোচনা করেছি। আাশা করি পাঠক জন্মাষ্টমী সম্পর্কে কিঞ্চিৎ পরিমানে হলেও তথ্য পেয়েছেন। তারপরেও যদি আর্টিকেল সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর
আরও পড়ুনঃ আক্কেল দাঁতের সমস্যায় যা যা করবেন
ল
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url