OrdinaryITPostAd

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ও অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু তাই নয়, এটি দেশের সর্ববৃহৎ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান । ১৯১২ সালে গঠিত “নাথান কমিশন” এর মাধ্যমে ১৯২১ সালের ২০ জুলাই প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। 

আরো পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে সকল স্টেশনের ভাড়া তালিকা নির্ধারিত হয়েছে!

৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র স্বাধীনতা যুদ্ধসহ সব ধরনের আনদোলন,সংগ্রাম আর লড়াই এর পেছনে এটির অবদান অপরিমেয়।শুধু অতীত ইতিহাসে সমৃদ্ধ নয়,বর্তমানে দক্ষ শিক্ষক, গবেষক, রাজনীতিবিদ,অর্থনীতিবিদ,শিক্ষাবিদসহ রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপূ্র্ণ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বিশেষত বি.সি.এস ক্যাডার তৈরির কারখানা বলা হয় এটিকে।

আরো পড়ুন: সকল ব্যাংক ও সংস্থার শিক্ষাবৃত্তির আপডেট তথ্য

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল থেকেই ৪১ তম বিসিএস ক্যাডারে ৫০ জন নিয়োগ পায়।বাংলাদেশের ১৩জন রাষ্ট্রপতি,৭ জন প্রধানমন্ত্রী আর বাংলাদেশর একমাত্র নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী ছিল এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নকারী। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিও ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী।

আরো পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনে আর্টিকেল রাইটিং জব অফার!

দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অদম্য ইচ্ছা আর স্বপ্ন থাকে এখানে অধ্যয়নের। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে অনেকে জয় করে নেয় এটিকে ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমে , অনেকে ব্যর্থ হয়। আর এই প্রতিষ্ঠানের  বেশিরভাগ শিক্ষার্থী হলো গ্রাম থেকে উঠে আসা,নিম্নবিত্ত আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তবে যে স্বপ্ন নিয়ে তারা এখানে আসে তার অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে হলগুলোর বাস্তব পরিবেশ দেখে।

আরো পড়ুন: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনলাইন টিকেট কাটার নিয়ম!

যে সাপোর্টির সবচেয়ে বেশি তাদের  প্রয়োজন  তা হলো একটি নিরাপদ আশ্রয়ের।আবাসনের ব্যবস্থা না করতে পারার কারণে তাদের বাধ্য হয়ে রাজনৈতিকভাবে অবস্থান করতে হয় হলের গণরুমে, যেখানে ৪০-৫০ জন পর্যন্ত থাকে।অনুমান করা যায় কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেখানকার পরিবেশ, পড়াশোনার পরিবেশ থাকেই না।কিছু দিন আগে  “দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস” এ প্রকাশিত  হয় যে হলের গণরুমেই তিন বছর পার করে দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের বেশ কিছু  শিক্ষার্থী। 

আরো পড়ুন: পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির উপায়!

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে প্রতিবাদ মিছিল করে কারণ তৃতীয় বর্ষে উঠে গেলেও তারা  হলে একটি সিট পাচ্ছে না। এছাড়া আরেকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয় যে, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের এক শিক্ষার্থী গণরুমে থেকেই তার অনার্স -মাস্টার্স সম্পন্ন করে।এমন ভুক্তভোগীদের কাছে থেকে কিভাবে আমরা সর্বোচ্চ উৎকর্ষ আশা করতে পারি? একজন ছাত্র সারা রাত ছারপোকার কামড়ে পর্যাপ্ত ঘুম না পারার কারণে সুস্থ মস্তিষ্কে কিভাবে ক্লাসরুমে উপস্থিত হবে? গেস্টরুম আতংক তো আছেই।মিটিং -মিছিলে না গেলেই নির্যাতন করে বের করে দেওয়া হয় হল থেকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড.আখতারুজ্জামান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,” এটি মিথ্যা কথা যে হল থেকে জোর করে প্রোগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়”।

আরো পড়ুন: অনিয়মিত মাসিক হওয়ার কারণ!

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা কার্জন হল ক্যাফেটেরিয়া ও ফার্মেসি প্রতিষ্ঠার দাবিতে মানববন্ধন করলেও তা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ রক্ষার অজুহাতে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এবার আসা যাক শি্ক্ষাখাতে বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে। জাতিসংঘের মতে, কোনো দেশের বাজেটের ২০% বা জি.ডি.পি এর ৬% শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে শিক্ষাখাতে ২.৬-৭% এর বেশি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে না।২০২৩-২৪ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাজস্ব পায় ৯১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা,গবেষণায় মাত্র ১.৬৪%যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ১১ কোটি টাকা কম। হলের অস্বাস্থ্যকর আর নিম্নমানের খাবার,শিক্ষা উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি,শিক্ষা ও গবেষণা  খাতে বরাদ্দ কম,শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি ও উল্লেখযোগ্য কারণ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অভ্যন্তরীন করুণ দশার জন্য শিক্ষিত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পিতামাতা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে,তারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বসতবাড়ি বিক্রি করে হলেও পড়াতে চায়।এছাড়া ওয়ার্ল্ড রাংকে বিশে্বর সেরা ১০০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের অবস্থান নেই।প্রাচীন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তার মর্যাদা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও হারিয়ে ফেলছে ক্রমশ।প্রতিষ্ঠানটির শত বর্ষে এসেও তেমন গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনতে পারেনি।প্রশাসনিক উদাসীনতাই এর মূল কারণ বলে মনে করি।অচিরে এইসকল সকল সমস্যার সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর চাওয়া।

আরো পড়ুন: মাথা ব্যাথা কমানোর উপায়!

শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি পরিহার করে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা(দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের নিয়োগ),আবাসন সংকট সমাধান ( যদিও প্রশাসন একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তার জন্য দুই দয়ক অপেক্ষা করতে হবে), হলের ক্যান্টিনগুলোতে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার প্রদানের বিষয় নিশ্চিত করা, শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধিসহ প্রভৃতি সমস্যা সমাধান করতে হবে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সিট সংখ্যা বৃদ্ধি করা,টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ল্যাম্পপোস্ট এর ব্যবস্থা করতে হবে কারণ এই রাস্তা দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করিয়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা বা রাত হয়ে যায়,ছিনতাই বা জীবননাশের বড় আশংকা থেকে যায়।এসব সমাস্যার মধ্যে রেখে শিক্ষার্থীদের এক প্রকার পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে, তাদের সম্ভাবনাকে ধ্বংস করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতের আগমন নিয়ন্ত্রণ, শিক্ষা উপকরণের দাম কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির হারানো জৌলুশ ফিরে পেতে সমস্যাগুলোর সমাধান ব্যতিত আর কোনে উপায় দেখি না।একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করবে,গবেষণা করবে,নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে দেশ ও দশের কল্যাণ বয়ে আনবে- এটাই শিক্ষার্থী ও তাদের  অভিভাবকদের প্রত্যাশা।ডিজিটাল, স্মার্ট আর উন্নত  বাংলাদেশ গঠন করতে শিক্ষার সাথে আপোষ করা চলবে না।পরিশেষে, প্রতিষ্ঠানটির সর্বাঙ্গীণ সফলতা কামনা করি

আরো পড়ুন: মুড সুয়িং কেন হয়!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url