OrdinaryITPostAd

ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন যেভাবে!

কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীদের আমানত ফেরত পাওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেকটা জটিল হয়ে যায়। ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ কিভাবে পাওয়া যাবে তা নিয়ে অনেকেরই বিভ্রান্তি থাকে, অনেকের আবার ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ নিয়ে সংশয় থাকে আদৌ তারা আমানত ফেরত পাবে কি না।আজকের আর্টিকেলে আমরা ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ কিভাবে পাওয়া যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন) 

  1. ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার শর্ত 
  2. ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ 
  3. ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ প্রদানে সীমাবদ্ধতা 
  4. প্রশ্ন-উত্তর পর্ব 
  5. লেখকের মন্তব্য 

১.ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার শর্ত | ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ 

কোন ব্যক্তি,প্রতিষ্ঠান বা দেশ যখন পাওনাদার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তখন উক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেউলিয়া হিসেবে গণ্য করা হয় আর এই অবস্থাকে দেউলিয়াত্ব বলে। কোনো ব্যাংক নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে চাইলেই তা পারবে না। কেননা ব্যাংক বা যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান জনগণের আমানত নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় আমানতকারীদের।তাই ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার জন্য শর্ত রয়েছে যা কোনো ব্যাংকের সার্বিক অবস্থার সাথে মিলে গেলই কেবল ব্যাংক দেউলিয়া হতে পারবে।

একটি ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা মূল্যায়ন করা হয় তিনটি সূচকের উপর ভিত্তি করে।সূচক গুলো হলো:

  1. খেলাপি ঋণের পরিমান: কোনো কারণে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পর যখন কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি ফেরত পাওয়া না যায়,তখন ঐ ঋণকে খেলাপি ঋণ বলে। ব্যাংকের অর্থ কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট শর্তসাপেক্ষে ঋণ হিসেবে প্রদান করার পর কোনো কারণে ঋণগ্রহীতা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করলে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়ে যায় এবং ব্যাংক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে।
  2. প্রভিশন : সব ধরনের ব্যাংক যেসব ঋণ বিতরণ করে, তার গুণমান বিবেচনায় নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে জমা রাখতে হয়। একেই প্রভিশন বলে।
  3. মূলধনের পরিমাণ: কোনো ব্যাংকের নিজস্ব যে পরিমাণ সম্পদ নিয়ে ব্যাংকের কার্যক্রম সচল রাখে তাকে মূলধন বলে। মূলধন বেশি হলে ব্যাংকের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো থাকে অন্যদিকে মূলধন কমে গেলে ব্যাংকের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়।
এই সূচকের ভিত্তিতে কোনো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ যদি বেড়ে যায় এবং ব্যাংকের সম্পদ দ্বারা আমানতদারদের আমানত পূরণ অসম্ভব হয় তাহলে সেই ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা আসঙ্কাজনক বলে বিবেচনা করা হয়। এই শর্তে উক্ত ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষণা করা যাবে। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বা অন্য কোনো কারণে কারও ঋণ পরিশোধের মতো সক্ষমতা না থাকলে দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।

.ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ | ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ 

ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীদের ক্ষতিপূরণ কিভাবে দেওয়া হয় তা নিয়ে আলোচনা করব। 

কোন ব্যাংক দেউলিয়া বা অবসায়িত হয়ে গেলে লিক্যুইডর নিয়োগ দেওয়া হয়।লিক্যুইডর অবসায়িত ব্যাংকের সম্পদ কেমন আছে এবং আমানতকারীদের পাওনা কত আছে তার একটি তালিকা তৈরি করবে। সেই তালিকা অনুযায়ী অবশিষ্ট অর্থ হতে আগে ছোট আমানতকারী ও পরে বড় আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়।

ব্যাংক কোম্পানি আইন এর ৭৪ ধারা মতে আদালত কোন ব্যাংকের অবসায়নের আদেশ দিলে তিন মাস বা  নব্বই দিনের ভিতর সরকারী অবসায়ক আমানতকারী ও আমানতের তালিকা বীমা ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে দাখিল করবেন। এই তালিকা অনুযায়ী সবার আগে টাকা ফেরত পাবে ব্যক্তিশ্রেনির আমানতকারীরা,এরপর ফেরত দেওয়া হবে বন্ড ইস্যুকারী বন্ডহোল্ডার ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের টাকা। এরপরও টাকা থাকলে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক ও কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা।

"আমানত সুরক্ষা আইন ২০২০" এর ৭(১) ধারা অনুযায়ী কোন বীমাকৃত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়নের আদেশ প্রদান করা হলে, ব্যাংক কোম্পানি আইন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন এ উল্লিখিত অবসায়ন সংক্রান্ত বিধানাবলী ক্ষুন্ন না করে,বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রাথমিকভাবে ঐ অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক আমানতকারীকে তার বিমাকৃত আমানতের সমপরিমাণ টাকা অথবা সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা অথবা সরকারের পুর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত টাকা প্রদান করা হবে।

অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোন আমানতকারী একাধিক হিসাব থাকলে এবং ঐ সকল হিসাবে একত্রে ২ লক্ষ টাকার অধিক স্থিতি থাকলেও তাকে সর্বাধিক দুই লক্ষ টাকা কিংবা সরকারের  পূর্বানুমোদনক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পরিশোধ করা হবে তবে এই রূপ পরিশোধ অবসায়িত ব্যা্ংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর নীট সম্পদের বিপরীতে লিক্যুইডর কর্তৃক আমানতকারীদিগকে দেয় অংকের সহিত সমন্বয় করা হবে।

অবসায়িত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ক, যে নামে ই অভিহিত হোক না কেন, তার কার্যতার গ্রহণের পর অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত ছকে আমানতকারী আমানতের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক এর নিকট দাখিল করবে।

একই আইনের ধারা ৭ এর উপ ধারা (৩) অনুযায়ী  আমানতকারীদের তালিকা প্রাপ্তির পর ট্রাস্টি বোর্ড  অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে উপ ধারা ১এর বিধান মতে আমানতকারীদের প্রাপ্য টাকা পরিষদের ব্যবস্থা করবে।তহবিলে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ পরিশোধিব্য টাকা হতে কম হইলে সরকার ঘাটতি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক হইতে ব্যাংক রেটে ধার করে তহবিলে প্রদান করিবে।
এই ধারায় যা কিছুই থাকুক না কেন, আমানতকারী আমানতের পরিমাণ নির্ধারণকালে বীমাকৃত ব্যাংক  ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনগতভাবে আমানতকারীর নিকট কোন পাওনা থাকলে তা বাদ দিয়ে তার পাওনা নির্ধারণ করবে।

.ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ প্রদানে সীমাবদ্ধতা | ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ 

কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পদ্ধতিতে একটু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।
ব্যাংক কোম্পানি আইন ও আমানত সুরক্ষা আইন অনুযায়ী ব্যাংক দেউলিয়া বা অবসায়িত হলে কোন কোন আমানতকারী কী পরিমাণ ক্ষতিপূরণ পাবে তা জানা যায়।এক্ষেত্রে দেখা যায় প্রত্যেক আমানতকারী সর্বাধিক দুই লক্ষ টাকা পাবেন,যদি তার একাধিক একাউন্ট থাকে তবুও। এই আইন অনুযায়ী আমানতকারীর ক্ষতিপূরণ প্রদানে সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন: কোনো ব্যক্তি যদি উক্ত ব্যাংকে এক কোটি টাকা আমানত রাখেন তবুও তিনি সর্বাধিক দুই লক্ষ টাকাই পাবেন। এক্ষেত্রে আমানতকারীর ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি এবং সেই অনুযায়ী তার ক্ষতিপূরণ প্রদানে এই আইন ব্যর্থ। সুতরাং ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ প্রদানে সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা কাটিয়ে উঠলেই কেবল ব্যাংকে টাকা জমানো নিরাপদ হবে আমানতকারীদের জন্য।

.প্রশ্ন-উত্তর পর্ব | ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ 

ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর নিয়ে আর্টিকেলের এই অংশটি সাজানো হয়েছে। 
  1. প্রশ্ন: ব্যাংক দেউলিয়া হলে আমানতকারীরা কী শতভাগ ক্ষতিপূরণ পাবে?                              উত্তর: না। বড় অংকের টাকা বা সম্পদ বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যাংক দেউলিয়া হলে শতভাগ ক্ষতিপূরণ পাওয়া সম্ভব না।
  2. প্রশ্ন: ব্যাংক কি নিজেই নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারে?                                             উত্তর: না। ব্যাংকের আর্থিক সংকট দেখা দিলে এবং তা কোনোভাবেই মোকাবিলা করা সম্ভব না হলে ব্যাংক দেউলিয়া বিষয়ক আদালতে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করার জন্য আবেদন করতে পারবে।

৫.লেখকের মন্তব্য | ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ 

ব্যাংক হলো আধুনিক কল্যাণরাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। তবে সেই ব্যাংকের আর্থিক অসংগতি দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। আজকের আর্টিকেলে আমরা ব্যাংক দেউলিয়া হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন, মতামত কিংবা অভিযোগ, পরামর্শ আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনাদের প্রত্যেকটি কমেন্টের রিপলে দেওয়ার চেষ্টা করব। এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url