OrdinaryITPostAd

বাংলাদেশ বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে?

বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালি জমিদার হলো বারো ভূঁইয়াগণ। বাংলার ইতিহাসে এই বারো ভূঁইয়াদের ভূমিকা অনেক। তাই বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে এই বিষয়ে সবার জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আজকের আর্টিকেলে আমরা বারো ভূঁইয়াদের পরিচিতসহ বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে তা নিয়ে আলোচনা করব। 

সংক্ষেপে জেনে নিন
প্রশ্ন বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে? 
উত্তর ধাপ ০২.  মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে।
উত্তর ধাপ ০৩. বাংলায় আফগান শাসনের অবসানের পর ক্ষমতায় আসে মোগল সম্রাট আকবর। তবে তিনি সম্পূর্ন বাংলায় রাজত্ব করতে অক্ষম ছিলো বারো ভূঁইয়া খ্যাত কিছু স্বাধীনচেতা জমিদারদের কারনে।বারো ভুঁইয়াগণ নিজেদের অঞ্চলে নিজস্ব শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। 
উত্তর ধাপ ০৪. বারো ভূঁইয়াদের দমন করার জন্য সম্রাট আকবর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও তাঁদের একতা ও শক্তির কাছে আকবর পরাজিত হন। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীর বারো ভূঁইয়াদের দমনে সক্ষম হন।

আর্টিকেল সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন) 

  1. বারো ভূঁইয়া কারা
  2. বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস
  3. বারো ভূঁইয়াদের পতন
  4. লেখকের মন্তব্য

১.বারো ভূঁইয়া কারা - বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে 

সংক্ষেপে: বাংলায় মোগল সম্রাট আকবরের সময় দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলার কিছু অঞ্চলে স্বাধীনচেতা জমিদারদের অভ্যুত্থান ঘটে। এই জমিদারগণকেই বারো ভূঁইয়া বলা হয়। 

বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে তা জানার আগে আমাদের বারো ভূঁইয়া কারা এবং তাদের পরিচয় কী তা জানতে হবে। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বারো ভূঁইয়াদের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করব। 

বারো ভূঁইয়া :সংস্কৃত ভৌমিক শব্দ হতে ভূইয়া শব্দের উৎপত্তি যার অর্থ জমির মালিক বা জমিদার। ভুইঁয়া বলতে ভূ- স্বামী বা জমিদার কে বোঝানো হয়। তবে বারো ভূঁইয়া বলতে নির্দিষ্ট করে বারো জন জমিদারকে বোঝায় এমন না। বারো শব্দটি এখানে অনির্দিষ্ট সংখ্যক বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। মধ্যযুগের শেষের দিকে এবং আধুনিক যুগের গোড়ার দিকে মোগল শাসনামলে গড়ে ওঠা আসাম ও বাংলার স্বাধীনচেতা, সৈনিক- ভূস্বামীদের জোটকে বারো ভূঁইয়া বলা হয়। ভূঁইয়া ছিলেন ১২ মতান্তরে ১৩ জন। বারো ভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন ঈশা খাঁ। বারো ভূঁইয়াদের নাম ও যে অঞ্চলের শাসক ছিলেন তা নিচে তুলে ধরা হলো :
  • ঈশা খাঁ - সোনারগাঁও
  • প্রতাপাদিত্য - যশোর বা চ্যাণ্ডিকান
  • চাঁদ রায় ও কেদার রায় - শ্রীপুর বা বিক্রমপুর
  • রাজা রাজবল্লভ সেন,কন্দর্প রায়  ও রামচন্দ্ররায় - বাক‌লা বা চন্দ্রদ্বীপ
  • কিঙ্কর সেন - পিরোজপুর
  • লক্ষ্মণমাণিক্য - ভুলুয়া,
  • মুকুন্দরাম রায় ও সত্রাজিৎ রায় -  ভূষণা বা ফতেহাবাদ,
  • বীর হাম্বির - বিষ্ণুপুর
  • ফজল গাজী - ভাওয়াল ও চাঁদপ্রতাপ,
  • কংসনারায়ন রায় - তাহিরপুর,
  • রাজা রামকৃষ্ণ - সাতৈর বা সান্তোল,
  • পীতম্বর ও নীলাম্বর সেন - পুঁটিয়া, এবং রঙ্গপুর
  • ঈশা খাঁ লোহানী ও উসমান খাঁ লোহানীঃ - উড়িষ্যা ও হিজলী।

২.বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস - বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে 

সংক্ষেপেঃ বাংলায় আফগান শাসনের অবসানের পর ক্ষমতায় আসে মোগল সম্রাট আকবর। তবে তিনি সম্পূর্ন বাংলায় রাজত্ব করতে অক্ষম ছিলো বারো ভূঁইয়া খ্যাত কিছু স্বাধীনচেতা জমিদারদের কারনে।বারো ভুঁইয়াগণ নিজেদের অঞ্চলে নিজস্ব শাসনব্যবস্থা কায়েম করে। 

জাতীয় জীবনে ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা অতিব জরুরি একটি বিষয়। বাংলার ইতিহাসে বারো ভূঁইয়াদের অবদানও অনস্বীকার্য। তাই বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যত্থান ঘটে কার শাসনামলে তা নিয়ে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব। 

বারো ভূঁইয়াদের ইতিহাস : ১৫৭৬ সালে রাজমহলের যুদ্ধে কররানী বংশের শেষ শাসক দাউদখান কররানী আকবরের সেনাপতি মুনিম খানের নিকট পরাজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলায় আফগান শাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলার সিংহাসন মুঘল শাসকদের দখলে চলে যায়। এসময় সম্রাট আকবর পশ্চিম বাংলা ও উত্তর বাংলার অধিকাংশই দখল করে নেন। কিন্তু দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) দখল করতে পারেননি। কারণ সেসময় এ অঞ্চলে অনেক আফগান জমিদার, হিন্দু সামন্ত প্রধান, স্থানীয় জমিদার এবং ভূঁইয়ারা স্বাধীনভাবে শাসন করছিল। এসব জমিদারদের নিজস্ব নৌবহর ও সৈন্যদল ছিল। তারা সম্মিলিতভাবে মোগল আধিপত্যের বিরুদ্ধে সম্রাট আকবরের খ্যাতনামা সমরনায়কদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতেন। এই স্থানীয় শাসকবর্গ মুঘল কেন্দ্রীয় শক্তির অস্তিত্ব অস্বীকার করে সম্রাট আকবরের বাংলা জয়ের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিল। ইতিহাসে এই ভূঁইয়ারাই বারাে ভূঁইয়া নামে পরিচিত। সম্রাট আকবরের রাজত্বের শেষ ২৯ বছর (১৫৭৬-১৬০৫) এবং সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বের প্রথম ছয় বছর (১৬০৫-১৬১১) তৎকালীন দক্ষিণ ও পূর্ব বাংলার প্রকৃত শাসক ছিলেন মূলত এই বারো ভূঁইয়ারা। বারো ভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন ঈশা খাঁ। তিনি তৎকালীন সোনারগাঁও এ বাংলার রাজধানী গড়ে তোলেন। 

৩.বারো ভুঁইয়াদের পতন - বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে 

সংক্ষেপেঃ বারো ভূঁইয়াদের দমন করার জন্য সম্রাট আকবর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করলেও তাঁদের একতা ও শক্তির কাছে আকবর পরাজিত হন। এরপর সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১১ সালে বারো ভূঁইয়াদের দমনে সক্ষম হন।

বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে এই প্রশ্নের উত্তরে সম্রাট আকবরের নাম উল্লেখ হলেও বারো ভূঁইয়াদের পতন ঘটে কার শাসনামলে এই প্রশ্নের উত্তর অনেকটা জটিল। কেননা বারো ভূঁইয়াদের পতন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া ছিলো। একদিনে বারো ভূঁইয়াদের পতন ঘটেনি। আর্টিকেলের এই অংশে আমরা বারো ভূঁইয়াদের পতন নিয়ে আলোচনা করব। 

বারো ভূঁইয়াদের পতন: বারো ভূঁইয়াদের দমন করার জন্য সম্রাট আকবর সর্বপ্রথম পদক্ষেপ নেন। তিনি পর্যায়ক্রমে ১৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে শাহবাজ খান, ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে সাদিক খান, ১৫৮৬ খ্রিস্টাব্দে উজির খান এবং ১৫৯৪ খ্রিস্টাব্দে রাজা মানসিংহকে  বাংলার সুবেদার করে পাঠান। তারা ঈশা খাঁ ও অন্যান্য জমিদারের সাথে বহুবার যুদ্ধ করেও বারো ভুঁইয়াদের নেতা ঈশা খাঁ কে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারেন নি। ঈশা খাঁ নিজের আধিপত্য বজায় রাখতে সক্ষম হন এবং মুঘলদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করে "মসনদ- ই-আলা" উপাধি ধারণ করেছিলেন।

১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে ঈসা খাঁ এর মৃত্যু হলে তার পুত্র মুসা খাঁ বারো ভূঁইয়াদের নেতা হন। ১৬০১ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ কে আকবর দ্বিতীয়বারের মতো বাংলায় পাঠান। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে নৌ-যুদ্ধে ঈশা খা মানসিংহের হাতে পরাজিত হন। এরপরও চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে পারে নি মানসিংহ। এর আগেই সম্রাট আকবরের অসুস্থতার খবর এলে তিনি আগ্রায় ফিরে যান।

১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবরের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর দিল্লির সিংহাসনে আরোহন করেন। সম্রাট জাহাঙ্গীর পুনরায় মানসিংহকে বাংলায় পাঠান।১৬০৮ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুবেদার নিযুক্ত হন ইসলাম খান। তিনি শাসনভার গ্রহন করেই উপলব্ধি করেন মুসা খাঁ কে দমন করতে পারলেই অন্যান্য জমিদারকে বশীভূত করা সহজসাধ্য হবে। এই উদ্দেশ্যে তিনি বাংলার রাজধানী রাজমহল হতে ঢাকায় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে বেশ কয়েকজন জমিদার তার আনুগত্য প্রকাশ করে। 

১৬১১ খ্রিস্টাব্দে ইসলাম খানের সঙ্গে জমিদারদের যুদ্ধ শুরু হয়। মুসা খাঁ এর কদম রসুলপুর দূর্গসহ অন্যান্য দূর্গ মুঘলদের অধিকারে আসে। মুঘল সৈন্যরা সোনারগাঁও দখল করে নেয়। এরপর আর কোনো উপায় না পেয়ে মুসা খাঁ শেষ পর্যন্ত মুঘলদের নিকট আত্মসমর্পণ করে। মুসা খাঁ এর আত্মসমর্পণের পর অন্যান্য জমিদারগণ নিরাশ হয়ে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। এভাবেই বাংলায় বারো ভূঁইয়াদের শাসনের অবসান হয় এবং পতন ঘটে।

.লেখকের মন্তব্য - বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে 

আজকের আর্টিকেলে আমরা বাংলাদেশে বারো ভূঁইয়াদের অভ্যুত্থান ঘটে কার শাসনামলে তা নিয়ে আলোচনা করেছি৷ আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন, অভিযোগ, পরামর্শ কিংবা মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট  The DU Speech ভিজিট করতে পারেন।


এই আর্টিকেলের-
লেখক: মোছাঃ ফাতেমা খাতুন 
পড়াশোনা করছেন লালমনিরহাট নার্সিং কলেজে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি লেখালেখি করতে পছন্দ করেন।
জেলা: গাইবান্ধা 


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা
মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন
পড়াশোনা করছেন:  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
জেলা: নাটোর

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url