OrdinaryITPostAd

বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী | সমাজবিজ্ঞানের জনক কে

 আমাদের মধ্যে যারা সমাজবিজ্ঞানে পড়াশোনা করছি কিংবা সমাজবিজ্ঞানে আগ্রহী তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিজ দেশের- বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। আবার,অনেকেই জানতে আগ্রহী সমাজবিজ্ঞানের জনক কে। কেমন ছিলো সমাজবিজ্ঞানীদের ব্যাক্তি এবং কর্মজীবন? প্রিয় পাঠক,বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানের জনক সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক নাজমুল করিম,অধ্যাপক রঙ্গলাল সেনের জীবন সম্পর্কে এবং সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ সম্পর্কে জানবো। চলুন পাঠক,আর দেরি না করে শুরু করা যাক।



সূচিপত্র (আর্টিকেলের যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন) 

1.বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা|বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী 

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করেন অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।প্রফেসর নাজমুল করিম একসময় অনুভব করেন,বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান।গোটা সমাজকে বিস্তৃতভাবে দেখায় সমাজবিজ্ঞান। সেকারণে তিনি ১৯৫৭ সালে ইউনেস্কোর সহয়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু করেন।এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ১৯৭০ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়।এরপর আস্তে আস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজগুলোতেও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা পায়।সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় অধ্যাপক নাজমুল করিমের পাশাপাশি আরো কাজ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন, অনুপম সেন,এফ আর খান,অধ্যাপক আফসার উদ্দীন,আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীসহ প্রমুখ।তাঁদের মহান অবদানের কারণেই বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।আমরা তাঁদের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।


2.বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান চর্চা|বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী 

স্বাধীনতার পূর্বেই অধ্যাপকের নাজমুল করিমের হাত ধরে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।পৃথিবীর সমাজকে বুঝতে হলে সমাজবিজ্ঞান পড়ার বিকল্প নেই। বাংলাদেশে সামাজিক বিজ্ঞানের অত্যন্ত মর্যাদাবান বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে সমাজবিজ্ঞান। অবিভক্ত বাংলার কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র, আবুল ফজলের আইন-ই আকবরী সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে। তাঁদের লেখায় ভারতবর্ষের সমাজ,সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা প্রভৃতি উঠে এসেছে। এগুলো বাংলাদেশের সমাজকে বুঝতে সাহায্য করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকরা নিরলসভাবে পাঠদান করে যাচ্ছেন ভবিষ্যৎ দক্ষ সমাজবিজ্ঞানী তৈরি করার কাজে।


3.বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী |বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী 

বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করে চিরদিনই অমর হয়ে থাকবেন অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম। অন্যান্য বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীরা হলেন অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন,অনুপম সেন,এফ আর খান,অধ্যাপক আফসার উদ্দীন,আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক ডক্টর মাহবুব উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। তাঁদের অবদান ছাড়া বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান এত দূর অবধি আসতে পারতো না।


4.অধ্যাপক এ কে নাজমুল করিম|বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী 

পুরো নাম আবুল খায়ের নাজমুল করিম।পাঠক,পূর্বেই উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করায় অধ্যাপক নাজমুল করিমের অসামান্য অবদান বিদ্যমান। তিনি শুধু বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠাই করেননি,তা এই দেশে জনপ্রিয়ও করে তুলেছেন। শিক্ষায় তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত করে।

জন্মঃ প্রফেসর আবুল খায়ের নাজমুল করিমের জন্ম পহেলা আগস্ট,১৯২২ খ্রিস্টাব্দে। কোনো কোনো জায়গায় তাঁকে ইবনে রশীদ নামেও সম্বোধন করা হয়। তাঁর জন্ম হয়েছিলো তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ববঙ্গে,বর্তমান বাংলাদেশের নোয়াখালী জেলার লক্ষ্মীপুরে। যদিও নাজমুল করিমের পিতৃনিবাস ছিলো কুমিল্লা জেলার ফাল্গুনকরা গ্রামে। অধ্যাপক নাজমুল করিমের পিতা আবু রশীদ নিজামউদ্দিন এবং মাতা মোছাম্মৎ শামসুন নেদা খাতুন। তিনি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী নাজমুল করিমের পিতার পরিবারে দেওয়ান ও ম্যাজিস্ট্রেট ছিলো। তাঁর মাও এসেছিলেন জমিদার পরিবার থেকে। এই দম্পতির আটজন সন্তানের মধ্যে সপ্তম ছিলেন আমাদের প্রফেসর। 

শিক্ষাজীবনঃ অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র নাজমুল করিম ১৯৩৯ সালে ঠাকুরগাঁও ইংরেজি হাই স্কুল (বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়) থেকে অত্যন্ত  কৃতিত্বের সাথে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৯৩৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। এবারো প্রথম বিভাগে। অতঃপর ১৯৪৪ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিএ(সম্মান),১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন।অসামান্য মেধার অধিকারী এই ব্যাক্তিটি পূর্ব পাকিস্তানে রাজ্য বৃত্তি নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পান। ১৯৫৩ সালে তিনি সরকার ও সমাজবিজ্ঞান নিয়ে আলাদাভাবে স্নাতকোত্তর করেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখানে ভালো ফলের দরুণ ১৯৬৪ তে রকফেলার বৃত্তি নিয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকস এন্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সে ডক্টরেট করার সুযোগ পান। টি বি বটমোরের অধীনে সমাজবিজ্ঞানে তিনি ডক্টরেট করেন। তাঁর থিসিস পেপারের শিরোনাম ছিলো - The Modern Muslim Political Elite In Bengal. যার অর্থ করলে দাঁড়ায়,বাংলায় মুসলিম রাজনৈতিক অভিজাত সমাজ। এই পেপারটি ১৯৮০ সালে আরো বৃহৎ পরিসরে - The Dynamics of Bangladeshi Society (বাংলাদেশ সমাজের গতিপ্রকৃতি) শিরোনামে প্রকাশ করে বিকাশ পাবলিশিং হাউজ প্রাইভেট লিমিটেড। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন,কতটা মেধাবী ছিলেন আমাদের এই অধ্যাপক। 

কর্মজীবনঃ নাজমুল করিমের কর্মজীবন শুরু হয় ফেনী কলেজ থেকে। এরপর ঢাকা কলেজ। দুটোরই পদ অধ্যাপক। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপনা করেন। প্রিয় পাঠক, এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠা পেলো তা আমরা জানবো। অধ্যাপক নাজমুল করিম রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অগ্রণী একজন অধ্যাপক ছিলেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন কোর্সে সমাজবিজ্ঞান সহায়ক কোর্স হিসেবে পড়ানো হতো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক হবার সুবাদে পরিচয় হয়েছিলো সমাজবিজ্ঞানের অনেক শিক্ষকের সাথেও। এরকম বহু কারণে সমাজবিজ্ঞানকে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণা পান আমাদের এই প্রিয় অধ্যাপক। অবশেষে তাঁর অগ্রণী ভূমিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনেস্কোর তৎপরতায় বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান আলাদা বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ইউনেস্কোর বিশেষজ্ঞ ড. পেরি বেসাইনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। তাঁর সঙ্গে অধ্যাপক নাজমুল করিমসহ আরো দুজন - সর্বমোট চারজন এই বিভাগে যোগদান করেন। পরবর্তী বছরে(১৯৫৮ সালে) নাজমুল করিম সমাজবিজ্ঞানের লিডার হিসেবে যোগ দেন এবং প্রথম স্থায়ী অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সমাজবিজ্ঞানে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি ইবনে রশীদ ছদ্মনামে গবেষণাপত্র ও ছোট গল্প লিখতেন।

ব্যক্তিগত জীবনঃ অধ্যাপক নাজমুল করিম সৈয়দা জাহানারা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্ত্রী জাহানারা বেগম ছিলেন বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ। এই দম্পতির তিনজন কন্যা ছিলো। তারা হলেন - শেহেরনাজ ইয়াসমিন, শাহনাজ নাসরিন এবং লামিয়া নাজনীন। 

মৃত্যুঃ অত্যন্ত এই মেধাবী ব্যাক্তিটির জীবনবসান ঘটে ১৯৮২ সালের ১৮ ই নভেম্বর। ডায়াবেটিস সৃষ্ট জটিলতায় তাঁর মৃত্যু ঘটেছিল।

সম্মাননা ও স্মারকঃ প্রফেসর নাজমুল করিমের সম্মাননা ও স্মারকের তালিকা নিম্নরূপঃ
  • ১৯৮৩ সালে র‍্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন
  • ২০১২ সালে মরণোত্তর একুশে পদকে ভূষিত হন
  • ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের "নাজমুল করিম শিক্ষাকেন্দ্র" তাঁর নামে নামকরণ করা হয় 
  • ১৯৮৩ সাল থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকারীকে ড. নাজমুল করিম স্মারক স্বর্ণ পদক দেয়া হয়
  • ২০১৪ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি এবং নৃতত্ত্ব বিভাগের একজন করে ছাত্রীকে তাঁর স্ত্রীর নামে প্রিন্সিপাল মিসেস সৈয়দা জাহানারা করিম বৃত্তি প্রদান করা হয়।
প্রকাশনাঃ অধ্যাপক নাজমুল করিমের প্রকাশনাগুলো নিম্নরূপঃ

  • ফাল্গুনকরা, সিসেম বুক কর্নার, ঢাকা, আগস্ট ১৯৫৮
  • সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ, নওরোজ কিতবিস্তান, ঢাকা, ১৯৭৩
  • Changing Society in India and Pakistan। করাচি: ,অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস ১৯৫৬। পরে নওরোজ কিতাবিস্তান থেকে Changing Society in India, Pakistan and Bangladesh শিরোনামে প্রকাশিত হয়।
  • The Dynamics of Bangladesh Society, Vikas Publishing House Private Ltd., New Delhi, 1980
  • Social Life of the Tiparas, The Pakistan Observer, 14 August 1949
  • Pakistan and the Islamic State, The Muslim World, October, 1953
  • New Nationalism in Pakistan, The Islamic Review, London, 1955
  • Political Ideas Behind Pakistan, The New Values, Dhaka, January, 1955
  • Social and Economic Background of Islam, The New Values, Dhaka, March, 1955
  • The Concept of Islamic Community and Modern Theories of Nationality, The Islamic Review, August, 1955
  • Some Aspects of Popular Beliefs among Muslims of Bengal, Eastern Anthropologist, Vol: IX, No. 1 (Lucknow, September–November, 1955)
  • Pakistan: An Outcome of Historical Process, The Republic, December, 1957
  • Museums and the Preservation of our Dying Cultures, The Republic, Vol: 2, No. 3, August, 1959
  • Crime in East Pakistan since 1947, International Review of Criminal Policy, No. 16, October, 1960, New York (in co-operation with Mr. Md. Badrud Doza)
  • The Methodology for a Sociology of East Pakistan, Social Research in East Pakistan, Pierre Bessaignet (ed.), The Asiatic Society of Pakistan, Dhaka, 1960
  • The Aim of Development, Sociology in East Pakistan, John E. Owen (ed.), The Asiatic Society of Pakistan, Dhaka, 1962
  • Social Stratification Patterns among the Muslims of Certain Districts of East Pakistan, Sociology in East Pakistan, John E. Owen (ed.), The Asiatic Society of Pakistan, Dhaka, 1962
  • Changing Patterns of a East Pakistan Family, Women in the New Asia, Barbara Ward (ed.), UNESCO, 1965 (in co-operation with Mr. Md. Badrud Doza)
  • Political Elite and Agrarian Radicalism in East Pakistan, Holiday Forum, Dhaka, 12 September 1965
  • Growth and Nature of Urban Agglomeration in Pakistan, Civilizations, Brussels, 1967 (in co-operation with Mr. Md. Badrud Doza)

  • The Concept of Crime, The Morning News, Dhaka, 19 January 1968 (in co-operation with Mr. Md. Badrud Doza)
  • Social Science in Bangladesh, Symposium on Social Science Research Development in Asia. Jakarta, Indonesia. 18–22 February 1974 sponsored and published by UNESCO
  • Max Weber's Theory of Prebendalization and Bangladesh Society, Bangladesh Journal of Sociology, edited by Professor Md. Afsaruddin, Vol: I, No. 1, 1983 (Posthumous publication)

অত্যন্ত প্রতিভাবান ছিলেন বাংলাদেশী এই সমাজবিজ্ঞানী। বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান যতদিন থাকবে, ততদিন থাকবে অধ্যাপক নাজমুল করিমেরও নাম। তিনি বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীদের একজন তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


5. অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন |বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী 

বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন। সুপ্রিয় পাঠক,এবার আমরা তাঁর সম্পর্কে জানবো।

জন্মঃ অধ্যাপক রঙ্গলাল সেনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর তৎকালীন শ্রীহট্ট জেলার মৌলভীবাজার মহকুমার ত্রৈলোক্যবিজয় নামক গ্রামে। পিতা রমণ চন্দ্র সেন এবং মাতা গিরিবালা সেন। 

শিক্ষাজীবনঃ অধ্যাপক রঙ্গলাল সেনের জীবনের চলার পথ মসৃণ ছিলো না। নানা প্রতিকূল পরিবেশ তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছে।  কলাবিদ্যায় মাধ্যমিক পাশ করে স্কুলে শিক্ষকতা করেন দীর্ঘকাল। কিছুটা বেশি বয়সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র হিসেবে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্বের ব্যাপ্তি ছিলো ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত। ১৯৬২ সালে অনার্স এবং ১৯৬৩ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন। তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম ছাত্র যিনি এমএ তে প্রথম বিভাগে পাশ করেন। তিনি একটি বিরল কৃতিত্বের অধিকারী। ১৯৭৭ সালে ইংল্যান্ডের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

কর্মজীবনঃ বাংলাদেশের বিশিষ্ট এই সমাজবিজ্ঞানীর কর্মজীবনও ছিলো খুব উজ্জ্বল। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক পদে যোগ দেন। অধ্যাপক সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট,বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ও একাডেমিক পরিষদের সদস্য ছিলেন। জগন্নাথ হলের প্রথমে প্রথমে সহকারী হাউজ টিউটর এবং পরবর্তীতে পূর্ণ হাউজ টিউটর হিসেবে কাজ করেন। তিনি শিক্ষার্থীদের সবসময় পাশে থেকেছেন। হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সর্বোপরি তাঁর লক্ষ্য ছিলো হলের উন্নয়ন এবং হলের স্বার্থ সংরক্ষণ। ১৯৮১ সালে জগন্নাথ হলের হীরক জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত "বাসন্তিকা" নামের স্মরণিকা গ্রন্থটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকেন্দ্রিক প্রকাশনার শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে - যেটা খুবই উঁচুমানের ছিলো। অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন জগন্নাথ হলের ইতিহাস নিয়ে যে প্রবন্ধ রচনা করেন, তাতে সামগ্রিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনন্য প্রেক্ষাপটও উঠে এসেছে।

মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজনীতিঃ জাতীয় এই অধ্যাপক মহান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। রঙ্গলাল সেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা ছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সাথে যুক্ত ছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ ই মার্চ পরবর্তী উত্তাল অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বহু শিক্ষকের মতো তিনিও দেশের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে রঙ্গলাল সেন মৌলভীবাজার থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে করিমগঞ্জে আশ্রয় নেন। যোগ দেন ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে।  অধ্যাপক সেনকে শিলংয়ে প্রথম স্থাপিত বাংলাদেশ সরকারের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অফিসে তথ্য কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানেও তিনি জনপ্রিয় ছিলেন আশ্রয় গ্রহণকারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। আমরা জানি,একসময় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়।
১৯৯১ সালে পার্টির ৫ম কংগ্রেসে কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য এবং রমনা থানা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থার বিপর্যয়ের পর পার্টিতে যে বিপর্যয় আসে তা রোধ করা এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। ১৯৯৩ সালের জুন মাসে বিলোপবাদীরা পার্টি পরিত্যাগ করলে সেখানে বিভক্তি আসে। কমরেড রঙ্গলাল সেন বিভক্তির পর নিজেকে আর কোনো অংশেই যুক্ত করার আগ্রহ বোধ করেননি। তবে তাঁর আদর্শের প্রতি ছিলেন অটল,অবিচল। 

মৃত্যুঃ জাতীয় এই অধ্যাপক ২০১৪ সালের ১০ ই ফেব্রুয়ারী চট্টগ্রামের সার্জিস্কোপ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন কিডনি ও বার্ধক্যজনিত অন্যান্য জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। শেষ দুই মাস বড় মেয়ে ও জামাইয়ের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রামেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। দীর্ঘ ৩৭ বছরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা জীবনের সমাপ্তি ঘটে। রেখে যান স্ত্রী কমলা সেন, দুই কন্যা এবং এক পুত্র।

গ্রন্থতালিকাঃ বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক রঙ্গলাল  সেনের বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় সর্বমোট ২৩ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। সেগুলোর কিছু নিম্নরূপঃ

  • বাংলাদেশের সামাজিক স্তরবিন্যাস  (১৯৮৫)
  • Political Elites in Bangladesh (বাংলাদেশের রাজনৈতিক গণ্যমান্য) (১৯৮৬)
  • সমাজ কাঠামো পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র (১৯৯৭)
  • বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৩)
  • প্রারম্ভিক সমাজবিজ্ঞান (২০০৩)
  • সিভিল সোসাইটি, রাষ্ট্র ও অন্যান্য (২০০৬)

অনুবাদ

  • মানুষের সমাজ (১৯৭২)
  • সমাজবিজ্ঞান (১৯৭৩)

প্রিয় পাঠক,অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন যেমন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছেন,তেমনি ভূমিকা রেখেছেন বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানকে উন্নত করার কাজে। আমরা এই মহান অধ্যাপককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

6. অগাস্ট কোঁৎ | সমাজবিজ্ঞানের জনক কে? 

প্রিয় পাঠক,এবারে আমরা জানবো সমাজবিজ্ঞান পুরো বিশ্বে যার হাত ধরে যাত্রা শুরু করেছিলো তাঁর সম্পর্কে। আমরা অনেকেই সমাজবিজ্ঞানের জনক কে - এই প্রশ্নটির উত্তর জানি। জ্বী পাঠক,আপনি ঠিকই ধরেছেন। সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ সম্পর্কেই এবারে আমরা জানবো।তো চলুন,দেখে নেই কেমন ছিলো তাঁর জীবনের পথচলা। 

জন্মঃ পুরো নাম ইজিদর মারি অগাস্ট ফ্রান্সিস জাভিয়ের কোঁৎ। এই মহান ফরাসি দার্শনিক জন্মগ্রহণ করেন ১৭৯৮ সালের ১৯ শে জানুয়ারি ফ্রান্সের মোঁপোলিয়ে শহরে। অগাস্ট কোঁৎ লিসে জফ্র নামক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভ করেন। এরপর তিনি মোঁপেলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও তারপর একল পলিটেকনিকে অধ্যয়ন করেন। একল পলিটেকনিক ছিলো তৎকালীন ফ্রান্সের সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়।  ১৮১৯ সালে বন্ধ হয়ে যায় একল পলিটেকনিক, পুনঃনির্মাণের উদ্দেশ্যে। যার ফলে তিনি মোঁপেলিয়ে শহরে ফেরত আসেন এবং অঁরি দ্য সাঁ-সিমোঁ- র ছাত্র ও সহযোগী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এর সুবাদে অগাস্ট কোঁৎ বিভিন্ন মুক্তমনা ও বুদ্ধিজীবীদের সংস্পর্শে আসেন।

পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত জীবনঃ ১৮২৫ সালে সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ ক্যারোলিন মাসাঁ নামক নারীকে বিয়ে করেন। ১৮২৬ সালে তাঁকে মানসিক হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে পুরোপুরি আরোগ্য লাভ না করেই চলে আসেন। ১৮৪২ সালে মাঁসা-কোঁৎ দম্পতির বিচ্ছেদ হয়।

কর্মজীবনঃ ১৮২২ সালে অগাস্ট কোঁৎ তাঁর প্রথম প্লঁ দ্য ত্রাভো সিয়ঁতিফিক নেসেসের পুব রেয়র্গানিজে লা সোসিয়েতে - যার বাংলা করলে দাঁড়ায় "সমাজ পুনর্বিন্যস্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক গবেষণাকর্মের পরিকল্পনা" প্রকাশ করেন। তবে তা উচ্চশিক্ষার জন্য মনোনীত হয়নি। ১৮৩২ সাল থেকে ১৮৪২ সাল পর্যন্ত স্কল তিনি একল পলিটেকনিকে পাঠদান করেন। এছাড়া শ্রমজীবী মানুষের কাছে বিনামূল্যে বক্তৃতা দিতেন তিনি। 

অবদানঃ অগাস্ট কোঁৎ ছিলেন ১৯ শতকের একজন প্রভাবশালী ফরাসি চিন্তাবিদ ও লেখক। আমরা সবাই জানি,তাঁকে সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম সমাজবিজ্ঞানকে নির্দেশ করতে ফরাসি শব্দ "সোসিওলোজি" ব্যবহার করেন। সমাজবিজ্ঞানে প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করার জন্য তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি মনে করতেন, প্রাকৃতিক ঘটনাবলীকে যেমন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সাধারণ সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব,তেমনি সামাজিক ঘটনাবলীকেও বিজ্ঞানসম্মত সূত্র দ্বারা ব্যাখ্যা করা সম্ভব;ভবিষ্যদ্বাণীও করা সম্ভব। অগাস্ট কোঁৎ দৃষ্টবাদ তথা positivism নামক দর্শনের উন্নয়নে অনেক অবদান রাখেন। প্রিয় পাঠক,পূর্বেই উল্লেখ করেছিলাম, অগাস্ট কোঁৎ ফরাসি দার্শনিক অঁরি দ্য সাঁ - সিমোঁ-র শিষ্য ছিলেন। রাষ্ট্রদার্শনিক সাঁ - সিমোঁর সচিব হিসেবে তাঁর কল্পালৌকিক চিন্তার বিকাশ ঘটার ক্ষেত্রে সমাজবিজ্ঞানের এই জনক সহয়তা করেন। পরে মতপার্থক্যের কারণে দুজনে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। বিচ্ছিন্ন হবার পর তিনি গণিতের শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৪৮ সালে কোঁৎ দৃষ্টবাদী সমিতি গঠন করেন। ফরাসি বিপ্লবের পর ফ্রান্সে দুরূহ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তিনি দৃষ্টবাদী রাষ্ট্রদর্শনের যে বিস্তার ঘটিয়েছেন সেটা মূলত সাঁ - সিমোঁর ভাবেই রচনা করেছিলেন কোঁৎ। 
সাধারণভাবে ফরাসী বিপ্লবের গুণগান গাইলেও অগাস্ট কোঁৎ সাম্য,ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র‍্য,সার্বভৌমত্ব - সমজাতীয় তত্ত্বকে বিপ্লবের কারণ হিসেবে নিন্দা করেন। তিনি চাইতেন সমাজে একাধারে প্রগতি এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। আসলে অগাস্ট কোঁৎ ছিলেন একজন মধ্যপন্থী। বিপ্লব ও রক্ষণশীলতার মাঝামাঝি পথ খুঁজতে গিয়ে তিনি দৃষ্টবাদে পৌঁছান। মূলত,তিনি চাইতেন, সমাজের বিজ্ঞানসম্মত একটি রাজনৈতিক মতবাদ দাঁড় করাতে।
অগাস্ট কোঁৎ মানবমন ও সমাজের বিবর্তনে তিনটি স্তর দেখতে পেয়েছিলেন। এগুলো হলোঃ
  • দেবতত্ত্ব কিংবা কাল্পনিক 
  • অধিবিদ্যা কিংবা বিমূর্ত 
  • দৃষ্টবাদ
অগাস্ট কোঁৎ বিশ্বাস করতেন,জ্ঞানের বিকাশে আদিযুগ হচ্ছে ধর্মীয় যুগ। এই যুগে রহস্যের ব্যাখ্যায় মানুষ অতিপ্রাকৃত শক্তি কিংবা ঈশ্বরের ধারণা নিয়ে এসেছে। জ্ঞানের ইতিহাসে দ্বিতীয় যুগ হিসেবে দার্শনিক যুগকে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এখানে দর্শনের চরম সত্ত্বা দ্বারা মানুষ ও জগতের ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে৷ জ্ঞানের সর্বশেষ যুগ হচ্ছে দৃষ্ট প্রকৃতির যুগ কিংবা positivism. এই যুগে বিজ্ঞানের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা প্রকৃতিকে মানুষ চরম বলে স্বীকার করে নিয়েছে। এ যুগে মানুষ বুঝতে পেরেছে যে, বিজ্ঞানের বাইরে ঈশ্বর বা চরম সত্ত্বার অনুসন্ধান করাটা নিরর্থক একটি কাজ। 
অগাস্ট কোঁৎ এর কাজ কার্ল মার্ক্স, জন স্টুয়ার্ট মিল,জন ইলিয়ট,এমিল দুরখেইম,হার্বার্ট স্পেনসার, এডওয়ার্ড বার্নেট টেইলরসহ বহু সমাজ চিন্তাবিদকে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাছাড়া সমাজবিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব functionalism বা ক্রিয়াবাদেরও ধারণা দেন। 
সমাজবিজ্ঞানের জনক অগাস্ট কোঁৎ এর রচিত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলো হচ্ছে ১৮৩০ থেকে ১৮৪২ সালের মধ্যে ৬ খন্ডে প্রকাশিত "দৃষ্টবাদী দর্শনের পাঠ"( Cours de Philosophie Positive) এবং ১৮৫১ থেকে ১৮৫৪ সালের মধ্যে চার খন্ডে প্রকাশিত " দৃষ্টবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা" (Systeme de Politique Positive).

মৃত্যুঃ ১৮৫৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে অগাস্ট কোঁৎ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। 
সমাজবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা যার হাত ধরে শুরু হয়েছিলো সেই মনীষিকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

7.ভবিষ্যৎ সমাজবিজ্ঞানীদের কাছে প্রত্যাশা | বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী | সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?

সমাজবিজ্ঞান বিষয়টি একদিনে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এটা বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত করতে যেমন বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী,দার্শনিক কাজ করেছেন,তেমনি বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী। তাঁদের অবদান ছাড়া সমাজকে কখনোই বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে যারা সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছে কিংবা ভবিষ্যতে সমাজবিজ্ঞান নিয়ে পড়বে তারা দায়িত্ব থেকে নিষ্কৃতি পায় না। এদেশে সমাজবিজ্ঞানকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সমাজবিজ্ঞানকে আরো জনপ্রিয় করে তুলতে হবে৷ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজবিজ্ঞানের জ্ঞান। শুধুমাত্র একজন সমাজবিজ্ঞানীই সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে জানবে এমনটা নয়,সবার মাঝে সমাজের ঘটনাবলীকে যুক্তি দিয়ে সমাজের ঘটনাবলীকে ব্যাখ্যা করার প্রবণতা থাকতে হবে। সর্বোপরি, একটি যুক্তিবাদী আধুনিক সমাজ গড়ে তুলতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

8.পাঠকের প্রশ্ন-উত্তর | বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী |সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?

প্রশ্ন-০১ঃ বাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তরঃ অধ্যাপক নাজমুল করিম।
প্রশ্ন-০২ঃ অধ্যাপক নাজমুল করিমের জন্ম কবে?
উত্তরঃ ১লা আগস্ট,১৯২২ সালে।
প্রশ্ন-০৩ঃ নাজমুল করিম সমাজবিজ্ঞানে অধ্যাওপনার পূর্বে কোন বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন?
উত্তরঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে।
প্রশ্ন-০৪ঃ কত সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৫৭ সালের ১৯ শে আগস্ট।
প্রশ্ন-০৫ঃ কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ ইউনেস্কো।
প্রশ্ন-০৬ঃ বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী কারা?
উত্তরঃ অধ্যাপক নাজমুল করিম, অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন, অনুপম সেন,এফ আর খান, আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আফসার উদ্দিন প্রমুখ।
প্রশ্ন-০৭ঃ অধ্যাপক নাজমুল করিমের একটি বইয়ের নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ সমাজবিজ্ঞান সমীক্ষণ। 
প্রশ্ন-০৮ঃ একজন মুক্তিযোদ্ধা সমাজবিজ্ঞানীর নাম উল্লেখ কর।
উত্তরঃ অধ্যাপক রঙ্গলাল সেন। 
প্রশ্ন-০৯ঃ সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?
উত্তরঃ অগাস্ট কোঁৎ  
প্রশ্ন-১০ঃ অগাস্ট কোঁৎ জাতিতে কী?
উত্তরঃ ফরাসি।


9.লেখকের মন্তব্য | বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী |সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?

প্রিয় পাঠক,বাংলাদেশের বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানের জনক কে - এই আর্টিকেলটির একদম শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। আর্টিকেলে আমরা দেখতে পাই, দেশ - বিদেশের বহু সমাজবিজ্ঞানী তাঁদের অবদান দিয়ে এই বিষয়টাকে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন,এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। আমরা তাঁদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। 
প্রিয় পাঠক,থাকতেই পারে আপঅনার কোনো মন্তব্য। অকপটে লিখে ফেলুন আপনার মনের কথা। সকলের জন্য শুভকামনা।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url