OrdinaryITPostAd

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল? বিস্তারিত আলোচনা

 
বিশ্বযুদ্ধ  মানবসভ্যতার  ইতিহাসে এক ভয়ংকর বিভীষিকাময় অধ্যায়। তাই স্বভাবতই আমাদের মধ্যে প্রশ্ন জাগে যে পৃথিবীতে এই ভয়ংকর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল ! । বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল সে সম্পর্কে খুব সহজেই  সকল তথ্য জানা সম্ভব। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল এ বিষয় সম্পর্কে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল তার কারণগুলো  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে সম্পূর্ণ পড়ুন।




আর্টিকেল সূচিপত্র ( যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 
  3. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণসমূহ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 
  4. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 
  5. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল
  6. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন- উত্তর 
  7. লেখকের মন্তব্য

 ১. বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 

বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে মানবসভ্যতা প্রথম বারের মতো বিশ্ব যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছিল । বিশ্বযুদ্ধ শব্দটি সাধারণত বিশ শতকে ঘটে যাওয়া দুটি অভূতপূর্ব দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় । বিশ্বযুদ্ধ একটি আন্তর্জাতিক সংঘাত যা বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ প্রধান পরাশক্তি ও জনবহুল দেশগুলো জড়িত থাকে। বিশ্বযুদ্ধ ( World War) এমন একটি যুদ্ধকে নির্দেশ করে যেখানে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ জাতিই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে । ইতিহাস বর্ণিত ভয়ংকর এই বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় ও সাধারণ মানুষের জীবযাত্রা হুমকির মুখে পড়ে ।বিশ্বে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে । পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মোট দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
  1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এর সময়কাল (১৯১৪-১৮) পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয় ।
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল (১৯৩৯-৪৫) দীর্ঘ ছয় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।  তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যার ফলে হতাহত ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক গুণ বেশি হয় । প্রায় ৬১ টি দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং টা চলতে থাকে দীর্ঘ ছয় বছর ।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৮) পর  প্রায় দুই দশকের ব্যবধানে আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয় , যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় অধ্যয়। ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর জার্মান অনাক্রমন চুক্তি ভেঙে পোল্যান্ড কে আক্রমণ করে ,যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেয়। এই  যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল প্রায় ছয় বছর (১৯৩৯-৪৫) পর্যন্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কে গ্লোবাল ওয়ার হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কারণ একমাত্র এই যুদ্ধেই পৃথিবীর  প্রায় অধিকাংশ দেশ  অংশগ্রহণ করে এবং দেশের সাধারণ নাগরিকগণ ও যোগদান করে। এছাড়াও  পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় ।  ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশ পর্যন্ত   বিশ্বযুদ্ধ বিস্তৃত হয়ে থাকে । এতে প্রায়  ৩০ টি দেশের দশকোটি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে । 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে দুইটি  শক্তিজোট যুক্ত ছিলো - অক্ষ শক্তি ও মিত্রশক্তি ।
  1.  অক্ষশক্তি - তে জার্মান,ইতালি,জাপান,তুরস্ক , হাঙ্গেরী, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া দেশসমূহ যুক্ত ছিল। অক্ষশক্তির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- জার্মানির চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপ্রতি অ্যাডলফ হিটলার , জাপানের প্রধামন্ত্রী হিদেকি তোজো ও সম্রাট হিরোহিতো , ইতালির প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি।
  2. মিত্রশক্তি - তে ব্রিটেন, ফ্রান্স,ব্রাজিল,কানাডা,চীন , ডেনমার্ক , গ্রিস ও নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যুক্ত ছিল।মিত্র শক্তিতে পরবর্তীতে মহাশক্তিধর রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়।মিত্রশক্তির নেতৃত্বে ছিল - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল , ফ্রান্সের পল রেনো, রুশ প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্ট্যালিন,মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান এবং অন্যান্যরা।
১৯৪৫ সালে জার্মান  ও জাপান দুই দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। 

৩. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণসমূহ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 

প্রতিটা যুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার পেছনে কোনো না কোনো কারন থাকে আর এই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পশ্চাতে রয়েছে মূলত প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পরে জয়ী দলের  (  থেকে জারিকৃত জার্মানির ওপর কিছু কঠোর নীতিমালা । বিশ্ব যুদ্ধ কোনো একক কারনে হয় না এর পেছনে নানাবিধ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণ বিদ্যমান থাকে ।

  • ভার্সাই চুক্তি (২৮ শে জুন , ১৯১৯)- মূলত ভার্সাই চুক্তি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আত্মসমর্পণ পত্র । আর এই চুক্তিতে যুদ্ধে জয়ী মিত্রশক্তির পক্ষ থেকে সাক্ষরিত নীতি অনুযায়ী জার্মানিকে লাগামহীন মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এই চুক্তির ৪৪০ টি শর্তের প্রায় বেশির ভাগ শর্ত জার্মান দের জন্য অন্যায় এবং অপমানজনক ছিলো । মিত্রশক্তি জার্মান কে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের যুদ্ধপরাধী হিসেবে ঘোষণা করে বিদ্ধস্ত জার্মান কে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৬০ কোটি পাউন্ড দাবি করে । এছাড়া দেখা যায় , ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম এর কাছে জার্মান রাজ্যের পশ্চিম অঞ্চল গুলোর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে যায় অন্যদিকে পূর্ব অঞ্চলে একটি নতুন রাষ্ট্র পোল্যান্ড তৈরি করে । যার ফলে এ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় জার্মানদের কে বিভিন্নভাবে হেয়পন্য করতে থাকতে । এবং পাশাপাশি জার্মানদের সামরিক , নৌ,শিল্প বাণিজ্য শক্তিকে সংকুচিত করে মিত্রশক্তি নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে । এমনকি জার্মানে ট্যাংক- কামান ও বিমানবাহিনী না রাখার বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল ।ফলে জার্মানবাসীদের প্রতিশোধ স্পৃহাকে জাগ্রত হয় । যার দরুণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পরে।
  • লীগ অফ ন্যাশন এর ব্যর্থতা-পৃথিবীর ইতিহাসে লীগ অফ ন্যাশন এই প্রথম আন্ত্জাতিক সংস্থা যা বর্তমানে জাতিসংঘ নামে পরিচিত।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম আরেকটি কারণের মধ্যে রয়েছে লীগ অফ ন্যাশন এর ব্যর্থতা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান ও শান্তি রক্ষার জন্যই মূলত লীগ অফ ন্যাশন গঠন করা হয়েছিলো। কিন্তু লীগ অফ ন্যাশন ব্যর্থ হয়েছিল যার পশ্চাতে কারণ সমূহের মধ্যে রয়েছে বৃহৎ শক্তিবর্গের অংশগ্রহণ না করা (আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র) নিরস্ত্রকরনে ব্যর্থতা , সামরিক বাহিনীর অভাব ও সাংগঠনিক ত্রুটি। এছাড়াও সদস্য রাষ্ট্রের ভেটো প্রয়োগ পদ্ধতির ত্রুটি। জাপান , জার্মান প্রথমে লীগ অফ ন্যাশন এ যুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে তারা বেরিয়ে যায় । কারণ হলো লীগ অফ ন্যাশন এ এমন কোনো বিধিনিষেধ ছিলো না যে কোনো দেশ যদি তাদের সংরক্ষিত নীতি ভেঙে ফেলে তাহলে তাদের শাস্তি পেতে হবে । এক পর্যায়ে লীগ অফ ন্যাশন আন্তর্জাতিক সমস্যা সমাধানে ও শান্তি রক্ষার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয় ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পরে।রাষ্ট্রগুলো সামগ্রিক চিন্তা না করে নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার নীতি গ্রহণ করে ফলে লীগ অফ নেশনস পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
  • জাপানের আগ্রাসন/ সাম্রাজ্যবাদ নীতি -দুরপ্রাচ্য জাপান প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তার সাম্রাজ্য বৃদ্ধির লক্ষে মিত্রশক্তি পক্ষে যোগদান করেছিল । বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরে তার আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল । কিন্তু এক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন এর সাথে সংঘাত বেধে যায় কারণ এটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এর আধিপত্য বিস্তারে ও নিজস্ব স্বার্থ হাসিলে বাধা হয়ে দাঁড়াবে । অর্থাৎ এক পর্যায়ে মিত্রশক্তির সঙ্গে জাপানের বিরোধ তৈরি হয়। ফলে জাপান জার্মান এবং ইতালির সাথে জোটবদ্ধ হয়। ১৯৩১ সালে জাপান চীনের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের মাধ্যমে নিজেদের দখলে নেয়। এবং চীন জাপান যুদ্ধ দীর্ঘ দিন চলতে থাকে। ১৯৪১ সালে এসে জাপান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারেে  এ আক্রমণ করে যার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। সুতরাং জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তারের এই আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেকটি অন্যতম কারণ ।
  • বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামন্দা-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯২৯ সালের শেষের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম অর্থ সংকট দেখা দেয় । এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক গবেষকরা এরূপ অর্থনৈতিক ছন্দ পতন যে ইতিহাসে মহামন্দা বা গ্রেট ডিপ্রেসন বলে অভিহিত করেছেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় । এতে অনেক দেশেই চরম মুদ্রা স্পৃথি দেখা দেয় বিশেষ করে জার্মানিতে। এছাড়াও আমেরিকাতে বড় বড় শেয়ার বাজার গুলোতে ধস নামে ফলে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বিশ্ববাণিজ্য ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বেশ কিছু দেশ এই পরিস্থিতি থেকে দেশবাসী কে বেরিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করে।
  • উগ্র জাতীয়তাবাদ-হিটলারের 'হেরেনভক তত্ব ' ( প্রভু জাতি) থেকেই উগ্র জাতীয়তাবাদ নীতির উত্থান হয় । এই জন্যই হিটলার মনে করতেন প্রভু জাতি হিসেবে তাদের অন্য সকল জাতির ওপর শাসন কায়েম করার ক্ষমতা রয়েছে। এই উগ্রবাদী নীতির জন্যই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনস্বীকার্য হয়ে পড়ে।
  • নিরস্ত্রীকরণে ব্যর্থতা - জেনেভায় অনুষ্ঠিত হওয়া নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনে জার্মানির সামরিক শক্তি হ্রাস করার জন্য উঠেপড়ে লাগে অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলো। যদিও নিজেদের সামরিক শক্তি কমাতে কোনো মতেই রাজি নন । এই রকম খামখেয়ালীপন / অন্যায় কার্যক্রমের ফলে জার্মান নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সুযোগ না থাকায় এক পর্যায়ে নিরস্ত্রকরণ সম্মেলন ত্যাগ করে। পরবর্তীতে নিজেদের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে যার ফল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামক সংঘাত।
  • হিটলারের নাৎসি বাহিনী- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে হিটলারের যুদ্ধ ও বলা হয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ জার্মানবাসীদেরকে কোণঠাসা করে রাখে। পাশাপাশি পুঁজিবাদী ইহুদীদের অত্যাচার ও ক্ষুব্ধ করে তোলে । এমন পরিস্থিতিতে জার্মানরা প্রতিশোধের নেশায় মত্ত হয়ে উঠে । ফলে এসব অত্যাচার ও অনাচার কে জব্ধ করতে উগ্র জার্মান জাতীয়তাবাদ আদর্শে গড়ে তোলে নাৎসি বাহিনী। নাৎসি বাহিনীর প্রধান হয়ে হিটলার ক্ষমতায় আসে এবং একপর্যায়ে পুরো জার্মানদের উপর তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে । একে একে ভার্সাই সন্ধির সকল শর্ত ভেঙে ফেলে ও ইহুদীদের সম্পদ বায়েজাপ্রাপ্ত করে । এছাড়া নাৎসি বাহিনী তাদের সামরিক বাহিনী অনেক বেশি শক্তিশালী করে তোলে যা এক পর্যায়ে যুদ্ধ ঘোষণা করার মত অবস্থা সৃষ্টি করে ।
  • ইতালিতে  ফ্যাসিবাদের উত্থান - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে মুসোলিনির নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইতালি তার সাম্রাজ্য বিস্তারের লক্ষ্যে মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধ করে। কিন্তু যুদ্ধের পর মিত্রশক্তি (ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স) ইতালির সঙ্গে করা চুক্তি ভেঙে ফেলে। ফলে ইতালি মিত্রশক্তি থেকে বেরিয়ে আসে এবং পরে ডানপন্থী সদস্যদের নিয়ে ফ্যাসিস্ট বাহিনী গঠন করে ।১৯২২ সালে ইতালি থেকে সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে দুর্বল করতে রাজা তৃতীয় ইমানুয়েল ফ্যাসিস্ট বাহিনী কে সরকার গঠনের দায়িত্ব দেয় । ১৯২৯ সালে একদলীয় সরকার হিসেবে ফ্যাসিস্ট বাহিনী ক্ষমতায় আসে। একপর্যায়ে জার্মানের হিটলারের সাথেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলে। এছাড়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রশক্তি নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই সুযোগ নিয়ে মুসোলিনি তার ফ্যাসিবাদী শক্তির বিস্তার করতে থাকে, যা দ্বিতীয় বিশ্বদ্ধের জন্য অন্যতম কারণ ।
  • ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের তোষণ নীতি - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেক টি অন্যতম কারণ হয়ে দাড়ায় ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডের ভ্রান্ত তোষণ নীতি। এই তোষণ নীতির সুযোগ নিয়ে জার্মানিতে হিটলার ও ইতালিতে মুসোলিনির নেতৃত্বাধীন তাদের নিজস্ব শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে । সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়া কে অপদস্ত ও সামরিক ভাবে দুর্বল করার লক্ষ্যে ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড তোষণ নীতির মাধ্যমে জার্মান কে এই সুযোগ করে দেয় । কিন্তু এই ভ্রান্ত তোষণ নীতি আসলে কোনো কাজেই আসেনি বরং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য করে তোলে ।
  • আদর্শগত দ্বন্দ্ব - প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আদর্শগত মতবিরোধ দেখা দেয় । ফলে নিজস্ব আদর্শের ভিত্তিতে এসব রাষ্ট্র গুলো দুই ভাবে বিভক্ত হয়ে যায় । ইতালি,জার্মান ,স্পেন, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলো স্বৈরতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অপরদিকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড , যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশ গুলো গণতন্ত্রের আদর্শে পরিচালিত হয়। এছাড়া সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী রাষ্ট্র ছিলো সোভিয়েত রাশিয়া। দেশগুলোর মধ্যে এসব নানাবিধ আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ও বিশ্ব রাজনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। 
  • চীন - জাপান যুদ্ধ -দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো চীন জাপান মধ্যে সাম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ। আগ্রাসী জাপান ১৯৩১ সালে রাজতান্ত্রিক চীনের মাঞ্চুরিয়ায় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই আক্রমণ করে । এছাড়া মার্কোপলো সেতু দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে চীন জাপান যুদ্ধ শুরু হয় । পরবর্তীতে আগ্রাসী জাপান চীনের বিভিন্ন স্থানে যেমন সাংহাই , নানকিং এসব জায়গায় বোমা নিক্ষেপ করে । এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ হতাহত হয় । যা পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে ।
  • প্রত্যক্ষ কারণ - প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর অক্ষশক্তি তথা জার্মান , জাপান ও ইতালি জোটবদ্ধ হয়। একপর্যায়ে হিটলার পোলিশ করিডর দখল করে চায়। এমন পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স কোনো মতেই হিটলারের দাবি রাজি নয়। তারা দরকার হলে পোল্যান্ডের হয়ে যুদ্ধ করবে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের এসব জবাব উপেক্ষা করে ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর জার্মান পোল্যান্ডে আক্রমণ শুরু করে দেয় । যার পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ৩ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের হয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । এইভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামক বিপর্যয় শুরু হয়ে যায় বিশ্বে যা চলতে থাকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর।


৪. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলাফল| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 

  • স্নায়ুযুদ্ধের বিকাশ - স্নায়ুযুদ্ধ মূলত দুইটি পরাশক্তির মধ্যে আদর্শিক ও কূটনৈতিক মতবিরোধ । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং গণতান্ত্রিক আদর্শের জয়ের মধ্য দিয়ে এর অবসান হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্বের পরিবেশ সৃষ্টি হয় তার ফল ই স্নায়ুযুদ্ধ । দুই পক্ষের মধ্যে চরম স্নায়ুবিক উত্তেজনা তৈরী হয় একে অপরকে চাপে রাখার জন্য কিন্তু কোনো পক্ষই সরাসরি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে না। মোট কথা যুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করে তবে কোনো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়ায় না । এইভাবেই দুই আদর্শিক পরাশক্তির মধ্যে দীর্ঘদিন এমন উত্তেজনা বিরাজ করে ।
  • মানবিক বিপর্যয় - মানবসভ্যতার ইতিহাসে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এক রক্তক্ষয়ী আতংকের নাম । এই বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ অনাহারে , অপুষ্টিতে,নানারকম রোগ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। এই যুদ্ধে প্রায় ৬০-৭০ কোটি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। সমগ্র ইউরোপ ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়। এছাড়াও প্রায় আট কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • জার্মানীর পতন - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রথম পর্যায়ে অক্ষশক্তি জার্মান , জাপান একের পর এক সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকে । বলা হয় প্রথম দিকে অক্ষশক্তির জয়জয় কার চলতে থাকে । জাপান যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারে আক্রমণ করার পরই আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। এরপরই মিত্রশক্তির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । তারা একেরপর এক পর আক্রমণ করে যা একপর্যায়ে জার্মানি ও ইতালির পরাজয় ঘটে । ১৯৪৫ সালে জার্মান ও ইতালি মিত্রশক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে।
  • সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের উত্থান - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পুরো বিশ্ব দুইটি মতবাদের ভিত্তিতে দুই ভাগ হয়ে যায় - সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদ । একপক্ষ সমাজতন্ত্রের বলয়ে ও অন্যপক্ষ পুঁজিবাদের বলয়ে বিকশিত হয়। ইউরোপ পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপে বিভক্ত হয়ে যায় । এইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এর পর পুরো পৃথিবী পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র দুই আদর্শের বিকশিত হয় ।
  • জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট ১৯৪১ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে "অগাষ্টা যুদ্ধ জাহাজ " আটলান্টিক সনদপত্র স্বাক্ষর করে।১৯৪২ সালে ২৬ টি দেশের সম্মেলনে জাতিসংঘ কথাটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় । সর্বশেষ ১৯৪৫ সালে ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয় ।আটলান্টিক সনদে উল্লেখ করা হয় - সনদে যোগদানকারী সকল দেশ সমান মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ত্বের অধিকারী হবে,সকল প্রকার বিবাদ শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিষ্পত্তি করা হবে এবং প্রতি দেশের জনগণ তাদের ইচ্ছামত শাসনতন্ত্র তৈরি করার অধিকার পাবে।
  • আমেরিকার আধিপত্য - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসের সাক্ষী হয়েছে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ দেশ । অংশগ্রহণকারী অধিকাংশ দেশই যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল । যুদ্ধের কবল থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সংকট পোহাতে হয় । সেক্ষেত্রে দেখা যায় একমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়। যা পরবর্তীতে খুব কম সময়ের মধ্যেই অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় । এবং বিশ্বে একমাত্র শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আর্বিভাব হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।
  • বিশ্বরাজনীতিতে ফ্রান্স ও ব্রিটেনের ভঙ্গুর অবস্থা - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্রান্স ও ব্রিটেন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্রিটেন তার শক্তি ও সাম্রাজ্য দুটোই হারিয়ে বসে । স্বভবতই দীর্ঘ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাদের কৃষিজমি গুলো অনাবাদী হয়ে পড়ে । এছাড়া ব্রিটিশ পণ্যরপ্তানি বিশ্ববাজারে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় বললেই চলে । যুদ্ধ পরবর্তীতে পুনর্বাসন নিয়েও নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয় । পাশাপাশি তাদের সামরিক শক্তি হ্রাস পায়। সব মিলিয়ে অক্ষশক্তি ব্রিটিশ বিশ্ব রাজনীতিতে পতনের দিকে ধাবিত হয় । অন্যদিকে ফ্রান্স এর অবস্থাও ব্রিটিশদের থেকে ভয়াবহ পর্যায়ে । তাদের শিল্প বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। এছাড়াও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায় যার দরুণ ব্রিটেনের মত তাদের ক্ষমতা ও কমতে থাকে ।


৫. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর্যায়গুলিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়, ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ড এবং অন্যান্য দেশে জার্মানদের আক্রমণ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকা কর্তৃক জাপানে বোমা নিক্ষেপ । প্রতিটি পর্যায়কে ঐতিহাসিকগণ ভিন্নভাবে চিন্তা করেন, নিচে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি ব্যাখ্যা করা হলো যা যুদ্ধের গতিপথকে সংজ্ঞায়িত করে।

নকল বা বাজ যুদ্ধ (সেপ্টেম্বর ১৯৩৯ থেকে মে ১৯৪০)- ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল একে বজ্রযুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণের পর পোল্যান্ডের পতন এটি ছিল যুদ্ধের প্রথম পর্যায়। সীমিত ব্যতিক্রম ছাড়া এটি কোন সামরিক অভিযান ছিল না। অনেক মাস যাবত একমাত্র সামরিক সংঘর্ষ ছিল ফরাসি সীমান্তে এবং সমুদ্রে, বিশেষ করে জার্মান জাহাজের প্রয়োজনীয় টোলের পরিপ্রেক্ষিতে। এছাড়া ১৯৩৯ সালের নভেম্বর মাসে ফিনল্যান্ডে সোভিয়েত আক্রমণ করে যা ১৯৪০ সালের মার্চ মাসে ফিনিশদের আত্মসমর্পণের দিকে পরিচালিত করে।

ফ্রান্সের পতন এবং ব্রিটেন যুদ্ধ (মে ১৯৪০ থেকে অক্টোবর ১৯৪০ পর্যন্ত)- নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম আত্মসমর্পণ করে মে মাসের শেষের দিকে এবং ২৭ মে থেকে ৪ জুনের মধ্যে ডানকার্কে ফ্রান্স থেকে ব্রিটিশদের সরিয়ে নেওয়া হয় এর সাথে মিত্রশক্তির সামরিক পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে।
 ১৪ জুন জার্মান সেনাবাহিনী প্যারিসে প্রবেশ করে এবং ফ্রান্স ২২ জুন একটি যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর করে, যখন ইতালি ১০ জুন মিত্রদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৪০ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে ব্রিটেনে একের পর এক বোমা হামলা চালায় জার্মান সেনাবাহিনী । এটি ব্রিটেন যুদ্ধ নামে পরিচিত।

জাপানের অগ্রযাত্রা ও প্রবাল সাগরের যুদ্ধ - (ডিসেম্বর ১৯৪১ থেকে জুন ১৯৪২)- ৮ ডিসেম্বর জাপান থাইল্যান্ড এবং ফিলিপাইন মালয় আক্রমণ করে ও ১১ ডিসেম্বর বার্মা আক্রমণ করে। এর কিছুদিন পরেই ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ আক্রমণ করে। বার্মায় প্রথম রেঙ্গুন এবং মান্দালে দখল করা হয় এবং পরে মে মাসের প্রথম দিকে প্রবাল সাগরের যুদ্ধ শুরু হয় এই যুদ্ধ, এবং আরও
উল্লেখযোগ্যভাবে জুনে মিডওয়ের যুদ্ধ, জাপানদের অংশগ্রহণকে তীব্র করে তোলে।

১৯৪৪ জুন - ইউরোপের বলা যায় মূল ভূখণ্ড জার্মান কে দখল করার উদ্দেশে বিপুসংখ্যক সামরিক বাহিনী ফ্রান্সের নরমান্ডিতে অবতরণ করে মিত্রশক্তি । পরবর্তীতে জার্মান আত্মসমর্পণ করে ।ফ্রান্স ও নেদারল্যান্ডসকে মুক্ত করতে বাধ্য করতে মিত্রবাহিনীর পশ্চিম দিক থেকে এবং সোভিয়েত সৈন্যদের পূর্ব থেকে অগ্রসর হতে এগারো মাস লেগেছিল।

পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ ও জাপান আত্মসমর্পণ ১৯৪৫-  মে মাসে জার্মান নাৎসি বাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করে । ৬ আগস্ট হিরোশিমায় প্রথম পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয় এবং দ্বিতীয়টি নাগাসাকিতে ৯ আগস্ট। জাপান ১৫ আগস্ট আত্মসমর্পণ করে এবং ২ সেপ্টেম্বর নথিতে স্বাক্ষর করে 
লিটল বয় ও ফ্যাট ম্যান পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয় যাতে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করে সাথে বিপুল সংখ্যক স্থাপনা ক্ষয়ক্ষতি হয়।
১৯৪৫ সালে ১৪ আগস্টে রক্তক্ষয়ী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ রণাঙ্গন লড়াই শেষ হলেও একেই বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বশেষ জাপানের সৈন্য বাহিনী আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে।


৬.আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন- উত্তর

প্রশ্ন ১: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কত সালে হয়?
উত্তর: ১৯৩৯-৪৫ সালের মধ্যে, ছয় বছর স্থায়ী হয়।

প্রশ্ন ২: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কোন দেশকে আক্রমণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়?
উত্তর: ১ সেপ্টেম্বর,পোল্যান্ড কে আক্রমণের মধ্য দিয়ে।

প্রশ্ন ৩: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রধান কারণ কি ছিলো?
উত্তর: ভার্সাই সন্ধির কঠোরতা।

প্রশ্ন ৪ : হিটলার কিভাবে মারা যায়? 
উত্তর: আত্মহত্যা করে ।

প্রশ্ন ৫ : যুদ্ধে মিত্রশক্তি ছিল কারা কারা?
উত্তর: ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া , যুক্তরাষ্ট্র এছাড়াও বেলজিয়াম।
প্রশ্ন ৬ : যুদ্ধ শেষ হয় কখন ?
উত্তর:  ১৪ আগস্ট, ১৯৪৫ সালে ।

প্রশ্ন ৭: যুদ্ধে অক্ষশক্তি ছিল কোন কোন দেশ?
উত্তর: জার্মানি, ইতালি, জাপান এবং তুরস্ক।

প্রশ্ন ৮ : আমেরিকা জাপানের  কোথায় আক্রমণ করে ?
উত্তর:   জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে।

প্রশ্ন ৯ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চীন কোন পক্ষে ছিল ?
উত্তর:  মিত্র পক্ষে ।
প্রশ্ন ১০ : লিটল বয় ও ফ্যাট মান এইগুলো কিসের নাম ?
উত্তর: অ্যাটম বোম।
প্রশ্ন ১১: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন দেশ সর্বশেষ আত্মসমর্পণ করে ?
উত্তর : জাপানের সৈন্য বাহিনী ,  ১৯৪৫ সালে সেপ্টেম্বরে ।
প্রশ্ন ১২: আমেরিকার পার্ল হারবারে আক্রমণ করে কোন দেশ ?
উত্তর : জাপান।

৭.লেখকের মন্তব্য 

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ  কেন হয়েছিল সে সম্পর্কে বা যেকোনো বিষয়ে আপনাদের কোনো অভিযোগ বা মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠন The DU Speech এর সাথেই থাকবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কেন হয়েছিল এ বিষয় সম্পর্কে হোক বা যেকোনো বিষয়ে আমরা আপনাদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url