OrdinaryITPostAd

ছাত্রশিবিরের ইতিহাস | ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানুন|

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির একটি রাজনৈতিক ছাত্রশিবির। এটি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নামক ইসলামী দলের ছাত্র সংগঠন। এটি শুধু শিবির নামেও পরিচিত। পাকিস্তান আমলে এই সংগঠনের নাম ছিল 'ইসলামী ছাত্র সংঘ'। এই আর্টিকেলটিতে আমরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো‌। এই ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।

আর্টিকেলের সূচিপত্র (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

এই উপমহাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে ছাত্রদের রাজনীতিতে অংশগ্ৰহণকরণ একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য বহন করে। ইসলামী ছাত্রশিবির এদেশের একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । এটি ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গঠিত হয়। এটি ইসলামী দল বাংলাদেশ  জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন। এই দলের পূর্ব নাম ছিল 'পাকিস্তান ছাত্র সংঘ'।
 
ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে দেখা গেছে, সাধারণত মুসলিম ছাত্র ছাড়া অন্য কেউ এই সংগঠনের সদস্য হতে পারে না। তবে ছাত্রদের মধ্যে যে কোনো ধর্ম বা মতবাদের অনুসারীরা এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবে।

2. শিবিরের আত্মপ্রকাশের সময়কাল|ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

কোনো প্রয়োজন ছাড়া কোনো সংগঠন জন্ম হয় না। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এর ৬ বছর পর ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ছাত্রশিবিরের মাত্রা শুরু হয়। ছাত্রশিবিরের ইতিহাসের সূচনালগ্নে শিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মীর কাশেম আলী। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিল মাত্র ছয় জন।

ছাত্রশিবিরের শপথ ছিল-
" পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে আমরা শিবির গড়ছি
শপথের সঙ্গীন হাতে নিয়ে সকলে নবীজীর রাস্তা ধরেছি"।

3. ছাত্রশিবিরের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য| ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে দেখা গেছে যে, তাদেরও অন্য সংগঠনের মতো নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য রয়েছে। সেটা হলো - আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল (সা:) প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা।

4. ছাত্রশিবিরের তহবিল | ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকেই এই সংগঠনের সদস্যগণ তাদের সংগঠনটি পরিচালনার জন্য অর্থ তাদের দলের সঙ্গী, সদস্য, কর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে আদায় করে থাকে। তাদের মে সাংগঠনিক প্রকাশনী রয়েছে, সেগুলোর মুনাফা ও যাকাত বায়তুল মালের অন্যতম আয়ের উৎস। তবে যাকাতের অর্থ
আলাদা করে শরিয়তের নিয়ম অনুযায়ী ব্যয় করা হয়।  

5. গুমের শিকার| ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে অন্যান্য সাধারণ ঘটনা ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আর ফিকহ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আল মুকাদ্দাস ও দাওয়াহ ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ আনুমানিক ১:০০টায় সাভার থেকে গ্ৰেপ্তার হয়েছিল বলে অভিযোগ ও গুম হবার খবর পাওয়া গিয়েছিল। গ্ৰেপ্তারকরীগণ নিজেদের ডিবি পুলিশ হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। 

তারা দুজনই ছাত্রশিবিরের সদস্য ছিল। তাদের অবস্থান এখনো অজানা রয়ে গেছে। যদিও সেই  ডিবি পুলিশরা তাদের দুজনের গ্ৰেপ্তারের বিষয়ে অস্বীকার করেছে। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কয়েকটি প্রতিবেদন এই অস্বীকৃতিটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সহ বেশ কয়েকটি অধিকার সংস্থা এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে।

6.দমন-পীড়ন|ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে দেখা গেছে, ২০১০ সাল থেকে শিবিরকে বারবার পুলিশ ক্র্যাকডাউন করে টার্গেট করেছে।এ নিয়ে যদিও সরকার জোরালো কন্ঠে বলেছে যে, জনশৃঙ্খলা ও পুলিশের উপর হামলা বন্ধের জন্য এটা জরুরী, তবুও অ্যামনেস্টি তাদেরকে রাজনৈতিক ক্র্যাকডাউন হিসেবে দেখছে।

7. বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ|ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে অনেক নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরিচালনার ঘটনা রয়েছে। ২০২০ সালে নোয়াখালীতে ছাত্রশিবিরের সশস্ত্র হামলায় আহত হয় ছাত্রলীগ নেতা রাবিকুল ইসলাম। একই দিন খুলনায় ছাত্রলিগের সাধারণ সম্পাদক রাসেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। 

এই দুই হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানায় ছাত্রলীগ । 

8. সমালোচনা| ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে ছাত্রশিবির সংগঠনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্বারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধের বিচারে দণ্ডিত নেতাদের মুক্তির দাবির জন্য আন্দোলনের কারণে অনেক সমালোচিত হয়। 'ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি' এর অধীনে 'ন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম ফর স্টাডি অব টেরোরিজম অ্যান্ড রেসপন্স টু টেরোরিজম' এর ফাইলে ছাত্র শিবিরকে একটি ভয়াবহ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও কথা প্রচলিত রয়েছে যে পৃথিবীর অন্যান্য বড় বড় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে এর সম্পর্ক রয়েছে।

২০১৫ সালে্ ৩০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়।

9. ছাত্রশিবিরের নতুন সভাপতি 2022|ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাসে অনেকবার নির্বাচন হয়েছে।২০২২ সালের সেশনের ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচন ও সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে মনোনয়ন সম্পূর্ণ হয়েছে। পুরো দেশের সদস্যদের অনলাইনে দেয়া ভোটে কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে রাশেদুল ইসলাম। আর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রাজিবুল রহমান। শহীদ আব্দুল মালেক মিলনায়তনে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতির নাম ঘোষণা করেন ছাত্রশিবিরের ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার ও প্রাত্তন কেন্দ্রীয় সভাপতি মতিউর রহমান আকন্দ। পরে তিনি তাদের শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন।

২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর ১১টা হতে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১১টা পর্যন্ত সারা দেশব্যাপী অনলাইনের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। 

নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম পূর্বে সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক, দাওয়াহ সম্পাদক, শিক্ষা সম্পাদক, বিজ্ঞান সম্পাদক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

আর নবনির্বাচিত সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুল রহমান পূর্বে কেন্দ্রীয় দফতর, সাহিত্য ও দাওয়াহ, প্রকাশনা ও স্কুল কার্যক্রম বিভাগের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিও রাশেদুল ইসলামের মতো একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

আর্টিকেল সম্পর্কিত কিছু প্রশ্ন-উত্তর| ছাত্রশিবিরের ইতিহাস|

ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সম্পর্কে আপনাদের মনে নিশ্চয়ই বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন রয়েছে। আর্টিকেলের এই অংশে ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করি আপনাদের মনে যেসব প্রশ্ন রয়েছে সেগুলোর উত্তর এই অংশে পেয়ে যাবেন। 

প্রশ্ন (১) : ছাত্রশিবিরের প্রথম সভাপতি কে ছিলেন?
উত্তর: ছাত্রশিবিরের প্রথম সভাপতি ছিলেন হাসান রাশেদুল ইসলাম ‌।

প্রশ্ন (২) : ছাত্রশিবিরের ভাবাদর্শ কী?
উত্তর: ছাত্রশিবিরের ভাবাদর্শ হলো - ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ করা।

প্রশ্ন (৩) : ছাত্রশিবিরের সদর দপ্তর কোথায়?
উত্তর: ছাত্রশিবিরের সদর দপ্তর ঢাকার পুরোনো পল্টনে।

প্রশ্ন (৪) : ছাত্রশিবির কোন দলের ছাত্র সংগঠন?
উত্তর: ছাত্রশিবির জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন।

প্রশ্ন (৫) : ১৯৭১ সালের আগে এই ছাত্র সংগঠনটি নাম কী ছিল?
উত্তর:  ১৯৭১ সালের আগে এই ছাত্র সংগঠনটি নাম ছিল 'ইসলামী ছাত্র সংঘ'।

প্রশ্ন (৬) : শিবিরের বর্তমান সভাপতি কে?
উত্তর: শিবিরের বর্তমান সভাপতি রাশেদুল ইসলাম।

লেখকের মন্তব্য| ছাত্রশিবিরের ইতিহাস| 

প্রিয় পাঠক, আজ আপনাদের সাথে ছাত্রশিবিরের ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছি। ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সম্পর্কিত এই আর্টিকেল সম্পর্কে অথবা যেকোনো বিষয়ে আপনাদের যদি কোনো মতামত বা অভিযোগ থেকে থাকে, কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল সংগঠন The DU Speech এর ব্যাপারে হোক, এই ইসলামী ছাত্রশিবিরের ইতিহাস সম্পর্কে হোক বা অন্য যেকোনো বিষয় সম্পর্কে হোক, আপনার মতামত আমরা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url